শরীরের ছুলি দূর করার উপায় ও ডাক্তারি চিকিৎসা জানুন
অনেকের এই ধরনের চর্মরোগ হয় তাই এই ছুলি নিয়ে অনেক টেনশন করে থাকেন। এজন্য শরীরের ছুলি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানা থাকলে আপনার এ ধরনের কষ্ট পাওয়া লাগতো না। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
অনেকেই ধুলাবালির মধ্যে কাজ করে থাকে যার কারণে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও ত্বকে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি এ ধরনের ক্রিমগুলো মুখে ব্যবহার করতে পারেন। তাই শরীরের ছুলি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃশরীরের ছুলি দূর করার উপায় ও ডাক্তারি চিকিৎসা জানুন
শরীরের ছুলি দূর করার উপায়
অনেকের শরীরে সাধারণত ছুলি দেখা যায় এবং অনেকের চুলকানিও হয়ে থাকে। তাই শরীরের ছুলি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানা খুবই প্রয়োজন। তাহলে আপনি এর চিকিৎসা করানোর মাধ্যমে সুস্থ হতে পারবেন। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
এই চর্মরোগটি হওয়ার কারণে অনেকের শরীরে জ্বালাতন করে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি শুরু হয়। এই রোগটি সাধারণত বর্ষাকালে বেশি দেখা যায়। এটা সাধারণত মুখে হাতে কাঁধে পিঠে হয়ে থাকে, অনেকের পায়ে হয়ে থাকে।
সাধারণত ত্বকের মেলানিন এর পরিমাণ যখন বৃদ্ধি পায়, সে ক্ষেত্রে এই ধরনের চর্মরোগ দেখা যায়। তবে এটা চিকিৎসা করলে সাধারণত সেরে যায়। তবে সঠিকভাবে চিকিৎসা নিতে হবে, তাছাড়া আপনি ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে এই ছুলি দূর করতে পারবেন। চলুন, ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
লেবু ও চিনির মিশ্রণঃ এই উপাদানটি নিয়ে ব্যবহার করে দেখতে পারেন, অত্যন্ত কার্যকারিতা রয়েছে। এতে আপনার এই ধরনের সমস্যা দূর হবে, এজন্য একটি লেবু নিবেন তার মাঝখান দিয়ে কাটার পরে অর্ধেক অংশ এর উপরে হাফ চামচ চিনি ছিটিয়ে দিবেন এরপরে আপনার ছুলি আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিতে পারেন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করবেন এবং ম্যাসাজ করতে পারেন, এরপরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। ১ সপ্তাহ ব্যবহার করে দেখতে পারেন, আপনার ছুলি দূর হয়ে যাবে।
লেবুর রস দিয়ে মালিশঃ লেবুর রসের মধ্যে এক ধরনের অ্যাসিড থাকে এবং প্রাকৃতিক ব্লিচ থাকে যা ছুলি দূর করতে সাহায্য করবে। এজন্য লেবুর রস আপনার আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিবেন, এরপরে মালিশ করতে পারেন ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। প্রতিদিন দুইবার এভাবে মালিশ করতে পারেন তাহলে দেখবেন দ্রুত সফলতা পাবেন।
নারকেল তেলঃ নারকেল তেল প্রাকৃতিক ভাবে চুলকানি বা চর্ম রোগের বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। সেই হিসেবে আপনার ত্বকে যদি ছুলি হয়ে থাকে এটা দূর করার জন্য নারিকেলের তেল ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য আক্রান্ত স্থানে দিনে দুইবার ব্যবহার করবেন, এতে যদি তেলটা লাগিয়ে রাখতে পারেন এবং রাত্রিতে ঘুমানোর আগেও যদি এই তেল দিয়ে ঘুমাতে পারেন সে ক্ষেত্রেও ভালো কাজ করবে।
টমেটো রসঃ এর মধ্যে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে ছুলির দাগ দূর করার জন্য এটি ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ভালো কাজ করবে। তাই একটি পাকা টমেটো নিয়ে ভালো করে চটকিয়ে নিবেন এরপরে ছুলির আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিবেন ১৫ মিনিট মালিশ করতে পারেন, এরপরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করতে থাকেন তাহলে ছুলির সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরা থেকে জেল বের করে নেবেন এরপরে আপনার ত্বকে লাগিয়ে দিতে পারেন। এটা অনেক উপকার করে থাকে, আপনার ত্বকে যদি কোন সমস্যা নাও থাকে তাও আপনি এটা ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং ত্বক ভালো রাখবে। আর যাদের ছুলির সমস্যা রয়েছে তারা এটি ব্যবহার করতে পারেন, এজন্য এই জেলটা আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিবেন ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
বেকিং সোডাঃ এই বেকিং সোডার সাথে পানি মিশিয়ে নিতে পারেন এবং এই উপাদান তৈরি করবেন। এই মিশ্রণটি আক্রান্ত স্থানে লাগানো যেতে পারে এতে করে আপনার ছুলির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
পিয়াজঃ ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে এই উপাদানটি ব্যবহার করতে পারেন, এছাড়াও ছুলির ক্ষেত্রে পেঁয়াজের রস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা এর মাঝে থাকে এক্স ফলিয়েট উপাদান যা আপনার চর্ম রোগের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে। বিশেষ করে ছুলি দূর করার জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য পেঁয়াজের মাঝখানে কেটে নিতে হবে এবং অর্ধেক অংশ দিয়ে আপনার শরীরে যেখানে ছুলি হয়েছে সেখানে ঘষে নিবেন, দিনে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন।
টক দইঃ এর উপকারিতা অনেক রয়েছে যা অনেকেই জানেন। এমনকি ত্বকের জন্য বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে থাকে, এর সাহায্যে ছুলির সমস্যা দূর করার জন্য টক দই ব্যবহার করতে পারেন। কেননা এর মাঝে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে যা আপনার এই ছুলি দূর করতে সাহায্য করবে। এর মধ্যে টাইরোসিনেজ নামের এনজাইম শরীরের মেলানিন ও অন্যান্য রঞ্জন পদার্থ উপস্থিতি আছে।
কেননা টাইরোসিনেজ অতিরিক্ত হাইপার পিগমেন্টেশন বাধা দিতে পারে, এজন্য ছুলির সমস্যা সমাধান করার জন্য তিন চামচ টক দই নিবেন এবং একটি কটন বাট নিতে হবে এর সাহায্যে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিবেন। ২০ মিনিটের মধ্যে ধুয়ে ফেলতে হবে, দিনে তিন থেকে চারবার এটা ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভেজিটেবল মাস্কঃ আপনার এই ধরনের সমস্যা দূর করার জন্য আক্রান্ত স্থানে ভেজিটেবল মাক্স ব্যবহার করা যেতে পারে। এজন্য প্রয়োজনমতো দুই টুকরো শসা দু টুকরো স্ট্রবেরি ও অলিভ অয়েল তেল এছাড়াও এর সাথে স্ট্রবেরি নিয়ে ব্যালেন্ডার করে নেবেন।
এই মিশ্রণটির ছুলির উপরে যদি ব্যবহার করতে পারেন আশা করি দ্রুত শুকিয়ে যাবে। তাই মিশ্রণটি আপনার ছুলির উপরে লাগাতে থাকবেন এর পরে শুকিয়ে গেলে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ত্বকে সপ্তাহে চারবার এটি ব্যবহার করতে পারেন।
টি ট্রি অয়েলঃ এর মধ্যে এন্টিফাঙ্গাল ও এন্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, যা আপনার বড় ধরনের ফাঙ্গাস ইনফেকশন থেকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে পারে। এজন্য একটি কাচের পাত্রের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয় ফোটা টি অয়েল দিতে হবে। এছাড়া অনেক অল্প পরিমাণ অলিভ অয়েল ও নারিকেলের তেল ভালো করে মিশিয়ে নিতে পারেন। এরপরে তুলার সাহায্যে আপনার আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিবেন আশা করা যায় ভালো উপকার পাবেন।
ওটস ও দুধের মিশ্রণঃ এটা ছুলির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই এটাও ব্যবহার করে আপনি দেখতে পারেন, এজন্য ওটস ২ চামচ ও দুধ একসাথে মিশে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিবেন, ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর পানি নিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।
শসার রসঃ ত্বকের ক্ষেত্রে এবং শরীরের ক্ষেত্রে শসার রস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা ত্বক থেকে ছুলির দাগ দূর করতেও সাহায্য করবে। শসার টুকরো পরিমাণ মত টুকরো টুকরো করে কেটে ছুলির উপর ঘোষতে হবে। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করবেন এরপর ম্যাসাজ করতে পারেন, প্রতিদিন এভাবে ব্যবহার করলে শরীরের দাগ কমে যাবে।
ডাক্তারি চিকিৎসাঃ প্রথম অবস্থায় ডাক্তাররা সাধারণত এন্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে থাকেন না। এজন্য অল্প কিছু পরিমাণ ওষুধ দিয়ে থাকেন, এক্ষেত্রে অনেকে সুস্থ হয়ে পড়ে। ছত্রাক বিরোধী কিছু ঔষধ ও মলম তৈরি করা হয়েছে তবে অনেকে বিশ্বাস করে শুধু মলম দিলেই নাকি সেরে যায়।
দিনে দুইবার করে একমাস যদি আপনি এভাবে ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে যদি অনেক দিন চিকিৎসা করলে আশা করি সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু আরো চুলকাচ্ছে এবং ছড়িয়ে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এর নিকট যেতে হবে।
রোগীদের উপদেশ অনেক আছে কিন্তু ক্ষতস্থানে স্বাভাবিকভাবে পরিষ্কার করেছেন কিনা সেটা আগে জানান, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দিয়ে থাকে এবং এক থেকে দেড় মাস খাওয়া লাগে ও সঙ্গে মলম দেওয়া যেতে পারে। রোগীর জন্য যেমন উপদেশ দেওয়া আছে ক্ষতস্থানে আক্রান্ত স্থানে সাবান বা শ্যাম্পু লাগানো যাবে না।
সাধারণত সাবান শ্যাম্পু এই ধরনের রোগ গুলো বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে গরমের দিনে সাবান শ্যাম্পু না দিলে কিভাবে পরিষ্কার হবে এর উপায় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আমরা সামগ্রিকভাবে এক মাস বা দুই মাসের জন্য সাবান শ্যাম্পু বন্ধ রেখে দিলে এসব বিশেষ বা কোন ক্ষতি করবে না।
আপনি সতর্ক থাকার পরেও যদি আপনার শরীর রোগ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে আপনার নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে যাবেন, ডাক্তার সাধারণত যে ওষুধগুলো প্রেসক্রিপশন করেন চলুন সে সম্পর্কে জানা যাক।
২% কিটোনোলাজল ব্যবহার করতে পারেন এতে ভালো ফলাফল পাবেন।
মুখের ভিতর অনেকের ছত্রাক হয়ে থাকে তাই এগুলো দূর করার জন্য ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
তাছাড়া মুখে খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক ওষুধ পাওয়া যায়, অবশ্য চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে এন্টিবায়োটিক খাবেন।
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url