কালোজিরার তেল মাখলে কি হয় জেনে নিন শরীরের জন্য নিরাপদ কিনা
অনেকে জানতে চায় যে, কালোজিরার তেল মাখলে কি হয়? আসলে কালোজিরা অনেক উপকার করে থাকে। তবে নিয়ম অনুযায়ী দিতে পারেন। চলুন, কালোজিরার তেলের উপকার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কালোজিরাকে এক ধরনের ঔষধ বলা হয়ে থাকে। যা প্রাচীন কাল থেকেই এই কালোজিরা বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এবং অনেক উপকার রয়েছে। তাই কালোজিরার তেল মাখলে কি হয়? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃকালোজিরার তেল মাখলে কি হয় জেনে নিন শরীরের জন্য নিরাপদ কিনা
কালোজিরার তেল মাখলে কি হয়
ত্বকে বা চুলে কালিজিরার তেল ব্যবহার করতে পারেন তাই কালোজিরার তেল মাখলে কি হয়? এ সম্পর্কে জানা থাকলে উপকার হবে এবং কিভাবে দিতে হবে সেটা জানতে পারবেন। চলুন, এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
কালোজিরা তেলের অনেক উপকার রয়েছে, কারণ এর মধ্যে থাকে ফ্যাটি এসিড, ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম আয়রণ ম্যাগনেসিয়াম সেলেনিয়াম ভিটামিন এ, ভিটামিন বি টামিন বি ২ ভিটামিন সি ফসফেট লৌহ ফসফরাস কার্বোহাইড্রেট তাছাড়া জীবাণু নাশক আরো পুষ্টিগুণ আছে। এটা ক্যান্সার প্রতিরোধ কেরোটিন ও শক্তিশালী হরমোন প্রসব সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে প্রতি বিরোধী উপাদান আছে। যা আমাদের শরীরে প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে, এছাড়াও কালোজিরা তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
যা গবেষণায় দেখা গেছে রক্তচাপ ও রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও এটা অনেক উপকার করে থাকে। এছাড়া ওজন কমাতে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে ভালো কাজ করে থাকে। এখন সৌন্দর্যের বিষয়ে চলুন জেনে নেওয়া যাক এই কালোজিরা তেল কি উপকার করে থাকে। কালোজিরা তেল সরাসরি ত্বক ও চুলে ব্যবহার করা ঠিক হবে না। কারণ এটা অম্লীয় জাতীয়, এতে ত্বক ও চুলের যত্নের ক্ষেত্রে কালোজিরা ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যায়।
চুলের বৃদ্ধির জন্য বা অনেকের কম বয়সে চুল পেকে যায়, সে ক্ষেত্রে কালোজিরার তেল ক্যাস্টর অয়েল ও নারিকেলের তেল একসঙ্গে ভালোভাবে মিক্সড করে নিয়ে তারপরে মাথার ত্বকে, চুলে লাগাতে পারেন। এরপর আধা ঘন্টা রেখে দিবেন, সারারাত রেখে দিল তেমন ক্ষতি হবে না। সপ্তাহে দুই তিনবার এভাবে একটানা অন্তত দুই থেকে তিন মাস ব্যবহার করতে পারেন অথবা সারা বছর ব্যবহার করতে পারবেন। ত্বকের দাগ ছপ কমাতে কালোজিরা তেল ও কাঠবাদামের তেল সমপরিমাণ নিবেন, এরপরে দুটি তেল একসঙ্গে ভালোভাবে মিক্সড করার পরে ক্রিমের মতো হয়ে যাবে।
এরপরে এই ক্রিমটা তিনবেলা ব্যবহার করবেন। একবার তৈরি করে বছর ভরাই আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। কাচের কৌটায় ফ্রিজে রাখতে পারবেন, সেটাই বাইরে রাখলে সমস্যা হবে না। তবে ত্বকের দাগ ছপ যদি সেরে যায় সে ক্ষেত্রে এই ক্রিম ব্যবহার করার প্রয়োজন নাই। আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় সে ক্ষেত্রে দাগ হতে পারে। এই ক্ষেত্রে কাঠবাদাম তেলে দিয়ে ক্রিম তৈরি করে নিবেন। এছাড়া ব্রণ দূর করার ক্ষেত্রে কালোজিরার তেল ও মধু নিতে হবে। এই দুইটা মিক্সড করে নিয়ে ব্রণের জায়গায় লাগিয়ে দিবেন। এরপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
কালোজিরা তেল ও গ্লিসারেন মিক্সড করে আপনি দিতে পারেন এবং এর সাথে অ্যালোভেরা জেল মিক্সড করে একটি ক্রিম তৈরি করবেন। যেটা আপনার ত্বকে রাত্রিতে লাগাতে পারেন, এতে আপনি সারা বছর ব্যবহার করতে চাইলে কাচের কৌটার মধ্যে রেখে ফ্রিজে রাখবেন। এভাবে আপনি ব্যবহার করলে আপনার ক্রিমটার ক্ষেত্রে ত্বকের বলিরেখা ক্ষেত্রে ভালো কাজ করবে।
কালোজিরা খেলে কি উপকার হয়
কালোজিরার মধ্যে বিভিন্ন ঔষধি গুণ ও উপকারিতা রয়েছে। তাই কালোজিরা খেলে কি উপকার হয়? এ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় করার জন্য কালোজিরা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে থাইমোকুইনন, নাইজেলিডিন, আলফা হেডারিন নামের বায়োএকটিভ যৌগ গুলো শরীরে ভালো কাজ করে থাকে। তাছাড়া এই কালোজিরার মধ্যে ভিটামিন, প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে মানব শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। চলুন, এটা কি উপকার করে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। কালোজিরার মধ্যে উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে কালোজিরা খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কমাতে দূর করতে সাহায্য করে থাকে। ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই কালোজিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, কারণ এর মধ্যে যে হাই অ্যান্টি এক্সিডেন্ট থাকে। যা আপনার ক্যান্সারের কোষগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে, এছাড়াও এই ব্যাকটেরিয়া দমন করতে সাহায্য করে। কালোজিরার মধ্যে সক্রিয় কিছু উপাদান থাকে, যা আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার কারণে যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে, তাদের লিভারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। যাদের রক্তের শর্করা পরিমাণ কমাতে চান তারা সেই ক্ষেত্রে কালোজিরা খেতে পারেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগী তাদের রক্তের শর্করা কমাতে হবে বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়মিত খেতে পারেন। কালোজিরার মধ্যে এন্টি ইনফ্লেমেটরি থাকার কারণে নাক বন্ধ হয়ে গেলে অস্বস্তিকর অবস্থা হয় সে ক্ষেত্রে এটি ইনহেলার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এতে এলার্জির সমস্যা থেকে দূর করবে এবং হাচি কাশি দেওয়ার কারণে আপনার নাক বন্ধ হওয়া সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
কালোজিরার মধ্যে ক্যালসিয়াম থাকে যা আপনার শরীরের হাড় শক্ত করতে পারবে এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে, বিশেষ করে গর্ভবতীদের খুবই উপকার হবে। তাছাড়া যদি আপনার সর্দি-কাশি হয়ে থাকে, সেই ক্ষেত্রে উপকার পেতে আপনি কালোজিরার সাথে তুলসী পাতার রস এবং সামান্য মধু মিক্সড করে যদি খেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার ঠান্ডা বা সর্দি কাশি দূর হয়ে যাবে, সাথে শরীরে ব্যথা, জ্বর ইত্যাদি কমে যাবে।
মধু ও কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম
ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি কালোজিরা খেলে কি উপকার হয়? সম্পর্কে জেনেছি। এখন জানবো মধু ও কালোজিরা কিভাবে খেতে হয় এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
হাজার বছর ধরেই বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে মধু এবং কালোজিরা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটা অনেকেই জানে তাই মধুর অনেক স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে। তার সাথে কালোজিরা যদি মিক্সড করে খাওয়া যায়, তাহলে আরো ভালো উপকার করা থাকে। কালোজিরা তেলের ক্ষেত্রে সবচাইতে ভালো উপকার করে থাকে, এই ক্ষেত্রে তার অন্য যদি ধরে রাখতে চান তাহলে কালোজিরা খেতে পারেন। তাছাড়া আরো বিভিন্ন কাজ করে থাকে এর মধ্যে প্রায় ২১ শতাংশ আমিষ ৩৮ শতাংশ শর্করা এবং ৩৫ শতাংশ ভেষজ তেল ও চর্বি থাকার কারণে আপনার শরীর অনেক উপকার পাবেন।
প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ খাবারের সাথে কালোজিরা ব্যবহার করে আসছে। কালোজিরা থেকে অনেকে তেল তৈরি করে। যা আমাদের শরীরে অনেক উপকার হয়। মধু এবং কালোজিরা খেলে যে উপকার গুলো পাওয়া যায়। সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে, নিয়মিতভাবে কালোজিরা খেলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভালো থাকে। এতে বিভিন্ন জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সকালবেলা কালোজিরা সাথে আপনি মধু মিক্সড করেও খেলে আপনার শরীরে অনেক উপকার পাবেন।
কালোজিরা ও মধু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ভালো কাজ করে, কালোজিরা ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। যার কারণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকবে, তাই আপনি কালোজিরা মধু একসাথে মিক্সড করে খেতে পারেন। কালোজিরা নিম্ন রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে এবং স্বাভাবিক রক্তচাপের মধ্যে বা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসে। পাশাপাশি দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে নিয়ে আসে। এছাড়াও শরীরের রক্তচাপের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। তাই কালোজিরার সাথে আপনি মধু মিক্সড করে খেলে আপনার শরীরে অনেক উপকার পাবেন।
নিয়মিতভাবে কালোজিরা মধু খাওয়ার কারণে নিয়ন্ত্রণ থাকবে বা ঠিকমতো কাজ করবে। এর কারণে আপনার মস্তিষ্ক রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে, যা আমাদের স্মৃতিশক্তি ভালো রাখার জন্য মধু ও কালোজিরা খাওয়া প্রয়োজন। হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট জনিত যাদের সমস্যা রয়েছে তারা কালোজিরা খেতে পারেন। এর সাথে যদি মধু খাওয়া যায় তাহলে আরো উপকার পাবেন। তবে কালোজিরা প্রতিদিন আপনি ভর্তা করে খেলে আপনার শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা অনেকটাই দূর হবে। তাছাড়া কালোজিরা ও মধু একসাথে খেলেও আপনার অনেক উপকার পাবেন।
অনেকের পিঠে ব্যথা করে এতে যদি আপনি কালোজিরা তেল মালিশ করতে পারেন। এটা আপনার পিঠের ব্যথা দূর হয়ে যাবে, তাছাড়া কালোজিরা ও মধু যদি খেতে পারেন। সে ক্ষেত্রেও আপনার এই পিঠের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করবে। শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য কালোজিরা ভালো উপকার করে থাকে। নিয়মিতভাবে কালোজিরার সাথে যদি মধু মিক্সড করে খাওয়াতে পারেন। তাহলে আপনার শিশুর দৈহিক ও মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং স্মৃতি ভালো রাখতে পারবে।

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url