বাচ্চাদের হাম উঠলে করণীয় কি ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানুন

আপনার শিশুর যদি হাম ওঠে এক্ষেত্রে বাচ্চাদের হাম উঠলে করণীয় কি? এ সম্পর্কে যদি আপনার প্রাথমিক ধারনা থাকে, তাহলে আপনি প্রাথমিক চিকিৎসা করতে পারবেন। চলুন, বাচ্চাদের হাম হলে কি করবেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
অনেক অভিভাবকের অসচেতনতার কারণে শিশুদের হাম উঠে থাকে আবার আক্রান্ত শিশুর কাছাকাছি বা সংস্পর্শ থাকার কারণেও এই হাম উঠতে পারে। তাই বাচ্চাদের হাম উঠলে করণীয় কি? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃবাচ্চাদের হাম উঠলে করণীয় কি ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানুন

বাচ্চাদের হাম উঠলে করণীয় কি

ছোট বাচ্চাদের সাধারণত হাম উঠে থাকে কিন্তু বাচ্চাদের হাম উঠলে করণীয় কি? এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কিভাবে আপনি এই হামের চিকিৎসা নিবেন। সে সম্পর্কে চলুন, জেনে নেওয়া যাক।

বর্তমানে অনেক শিশুর সাধারণত হাম উঠছে, এটা সাধারণত অনেক শিশুর হয়ে থাকে। অভিভাবকের অসচেতনতার কারণে বাচ্চাদের এই হাম উঠে থাকে। অনেকে হামের টিকার ডোজ সময় মতো সম্পন্ন করে না। আবার অনেকে ১ ডোজ দেয়, আর দ্বিতীয় ডোজ দেয় না। এছাড়া আবার কিছু স্বাস্থ্যকর্মীর ভুল পদ্ধতিতে টিকা দেওয়ার কারণে বাচ্চাদের এই সমস্যা হয়ে থাকে। তাই এই বিষয় গুলো সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে, তাহলেই একজন শিশু সুস্থ থাকবে। এজন্য একজন অভিভাবকের উচিত সময় মতো শিশুকে হামের টিকা দেওয়া।

হাম যখন ওঠা শুরু করে প্রায় তিন দিন আগে এবং ছয় দিন পর্যন্ত এটা ছড়িয়ে থাকে। তাছাড়া হামে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি এখানে এসে চলে যায়, সে ক্ষেত্রে বাতাসের মাধ্যমে এই জীবাণু ১ ঘন্টা পর্যন্ত ছড়াতে পারে। কিন্তু যদি আপনার শিশুকে ৯ মাস এবং ১৫ মাসে হামের টিকা দিয়ে থাকেন, তাহলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য এই সময়ে টিকা দেওয়া খুবই জরুরী, ১ম ডোজ টিকা দেওয়ার কারণে প্রায় সফলতা দেখা যায় এবং দ্বিতীয় ডোজ যদি দেওয়া হয় প্রায় শতভাগ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে।

আবার অনেকেই এই টিকা ভুল পদ্ধতি দিয়ে থাকে অথবা সরকার অনুমোদন নাই, এই ধরনের হাসপাতাল থেকে টিকা নিয়ে থাকে। এর কারণেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকের টিকা দেওয়ার পরেও হাম উঠে, এটা নিয়ে হয়তো আপনি চিন্তিত হয়ে যান। এতে চিন্তা কারণ নাই, এর চিকিৎসা রয়েছে। এজন্য আপনি সরকার অনুমোদনকৃত হাসপাতাল থেকে আপনার শিশুকে টিকা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এরপরও যদি সমস্যা হয়, তাহলে অবশ্যই একজন রেজিস্টার চিকিৎসককে দেখিয়ে চিকিৎসা নেবেন। আশা করি সুস্থ হয়ে যাবে।

যে সকল শিশুর অত্যন্ত জ্বর হয়, সাথে কাশি থাকতে পারে। তাছাড়া নাক ও চোখ দিয়ে পানি পড়ে। ৩দিন পর্যন্ত হালকা জ্বর থাকে আবার একটু কমে যায়, তখনই দেখা যাবে শিশুদের শরীরে র‍্যাশ ওঠছে। এই র‍্যাশ গুলো সাধারণত মাথার পিছনে এবং মুখে ছড়িয়ে পড়ে। তাই নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেওয়া কঠিন হয়ে যায়। এই ধরনের সমস্যাগুলো মূলত হামের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই এক্ষেত্রে আপনি নিজে কোন চিকিৎসা নেবেন না, অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করবেন। তাহলেই আপনার বাচ্চা সঠিক চিকিৎসা পাবে।
যদি আপনার শিশুর উপরোক্ত এই লক্ষণ গুলো দেখেন, তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় শিশুকে ঘন ঘন পানি খাওয়াতে পারেন এবং যে সকল শিশু বুকের দুধ খায় তাদেরকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াবেন। তাছাড়া শিশুর শরীরে যদি প্রচুর জ্বর থাকে, তাহলে জ্বরের ওষুধ খাওয়াবেন। সাধারণত শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া সমস্যা দেখা দিলে শিশুদের সাধারণত হাম উঠে থাকে। তাই এগুলো আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আবার অনেক শিশুর ভিটামিন-এ এর অভাব হয়ে থাকে, যার কারণে ও হাম উঠতে পারে। তাই এই বিষয় গুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

শিশুর হাম উঠলে এ সময় শিশুদের প্রচন্ড পরিমাণ শরীর ব্যথা হয়, এছাড়াও অনেকের প্রায় ১৪ দিন পর্যন্ত এই ভাইরাস সংক্রমণ করে থাকে। আবার অনেক শিশুর প্রচুর পরিমাণে জ্বর, সর্দি, কাশি হয়ে থাকে। এছাড়াও শিশুরা সাধারণত আলোর প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে। এছাড়াও মুখের ভিতর চোয়ালের পাশে ছোট ছোট সাদা দাগ হয়ে যায় এবং ফুসকুড়ি উঠতে পারে। এই সাদা দাগগুলো সাধারণত ছোট দানার মত ও লাল হয়ে যায়। তাই এই ধরনের সমস্যা গুলো হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের নিকট পরামর্শ নেবেন, তাহলে উপযুক্ত চিকিৎসা পাবেন।

আবার অনেক শিশুর হাম উঠলে চামড়ার উপরে সাধারণত ফুসকুড়ি হয়, এতে সাধারণত মুখ থেকেই শুরু হয়ে থাকে পরে সারা শরীরে অনেক সময় ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে সাধারণত মুখ, গলা, কানের পিছন দিয়ে হয়ে থাকে। তারপরে পিঠে, শরীরের অন্যান্য জায়গায় এই ফুসকুড়ি গুলো হতে পারে, এটা কয়েক দিন থাকতে পারে। তারপরে এই ফুসকুড়ি গুলো আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার কিছু নেই যে সমস্যা গুলো হয়ে থাকে, সেই সমস্যার চিকিৎসা নেবেন এবং প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুকে যত্ন নিবেন। আশা করি সুস্থ হয়ে যাবে।

শিশু হামে আক্রান্ত হওয়ার পর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে, ক্লান্ত লাগে, অস্বস্তি রকম দেখা যায়। শিশুটি অতিরিক্ত ক্লান্ত হওয়ার কারণে যে কোন কার্যকলাপে আগ্রহ থাকে না, খিদে লাগে না এবং কোন খাবারও খেতে চায় না। এই ধরনের লক্ষণ ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যা আপনার শিশুর জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এজন্য প্রাথমিক ভাবে লক্ষণ গুলো দেখা দিলেই চিকিৎসা নিতে হবে। তাছাড়া অনেক শিশুর হাম উঠলে ডায়রিয়া হয়ে থাকে, পরবর্তীতে ডায়রিয়া থেকে পানি স্বল্পতাও দেখা দিতে পারে। তাই শিশুর ডায়রিয়া হলে অবশ্যই খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।

আপনার শিশু হামে আক্রান্ত হলে অনেক সময় কানের সংক্রমণ দেখা যায়, শ্রবণ শক্তি কমে যেতে পারে, প্রচন্ড পরিমাণে কানে ব্যথা হয়। আবার অনেক শিশুর নিউমোনিয়া, ফুসফুস সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসযন্ত্রের ব্যথা, এই ভাইরাস মস্তিষ্ক দিয়েও ব্যাথা করতে পারে, সেফালাইটিস হয়ে থাকে। এছাড়াও এই শিশুর সাধারনত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাছাড়া অন্যান্য রোগের সংক্রমণ দেখা যেতে পারে। তাই আপনার শিশুর হাম হলে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিবেন। তাছাড়া বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

হামের ঘরোয়া চিকিৎসা

আপনার শিশুর যদি হাম ওঠে সে ক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসা করতে পারেন। তাই হামের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জানা থাকলে, আপনার শিশু সুস্থ হয়ে যাবে। এরপরে চিকিৎসা নিলে অসুবিধা হবে না। নিম্নে ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো;
ছবি
চোখের যত্নঃ হামে আক্রান্ত শিশুর সাধারনত চোখে ব্যথা করে, আলো সহ্য করতে পারে না। এজন্য তার চোখে যেন ভালো না লাগে সে ধরনের জায়গায় রাখার চেষ্টা করবেন। এতে চোখে ব্যথা করবে না এবং নরম কাপড় দিয়ে আলতোভাবে পরিষ্কার করে দিতে হবে। তাছাড়া এই সময় শিশুটির শরীরে ব্যথা করে এজন্য হালকা গরম তেল দিয়ে ব্যথা স্থানে মালিশ করে দিতে পারেন। এতে করে শিশুর শরীরের রক্ত চলাচল দ্রুত করবে এবং ব্যথাও সেরে যাবে, এতে শিশুটা অনেক আরাম পাবে।

ভিটামিন এ ক্যাপসুলঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন সংস্থা গুলো বলে থাকে যে, হামে আক্রান্ত শিশুদেরকে সাধারণত ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো প্রয়োজন। এতে হামের জটিলতা সমস্যার সমাধান হবে এবং অন্ধত্ব দূর করতে সাহায্য করবে। আপনার শিশুর চোখের সমস্যা দূর করার জন্য ভিটামিন এ জাতীয় ওষুধ খাওয়াবেন। পাশাপাশি যে সকল খাবারের মধ্যে ভিটামিন-এ থাকে সেই খাবার গুলো বেশি বেশি খাওয়াতে পারেন। এতে করে আপনার শিশু রাতকানা রোগ হতে মুক্তি পাবে।

জটিলতা প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঃ হামে আক্রান্ত শিশুর এ সময় দেখা যায় জটিল আকার ধারণ করতে পারে। যেমন নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, কানে সংক্রমণ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য ওষুধ কাজ করে না। এতে জটিলতা দেখা দিতে পারে, এজন্য দ্রুত চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে হবে। তাহলে আপনার বাচ্চা সুস্থ হবে, এছাড়াও এই ধরনের সমস্যা গুলো দেখা দিলে আপনি প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসা নিবেন। এরপর দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
অন্যান্য রোগের প্রতিরোধঃ যে সকল শিশুর হাম হয়েছে, তাদের সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে। এজন্য সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য আপনাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রাখতে হবে এবং সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই আপনার শিশুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখার চেষ্টা করবেন এবং যদি তার জ্বর হয় তাহলে তাকে সুন্দর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে দিবেন। এছাড়া ভালো স্থানে রাখার চেষ্টা করবেন, তারপর তার শরীর থার্মোমিটার দিয়ে দেখতে হবে কি পরিমান জ্বর রয়েছে, সে অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াতে হবে।

পৃথকীকরণঃ আক্রান্ত শিশুটিকে অন্যান্য শিশুদের থেকে আলাদা করতে হবে। এতে করে রোগ ছড়াবে না। আর যদি ফুসকুড়ি দেখা যায় সে ক্ষেত্রে ৪ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। এজন্য আলাদা রেখেই আপনার সেবা দিয়ে যেতে হবে। কেননা আক্রান্ত শিশুর পাশাপাশি যদি অন্যান্য শিশু থাকে, তাহলে তারও আক্রান্ত হবে এবং এটি দ্রুত ছড়াতে থাকবে। এতে করে মহামারি আকার ধারণ করার সম্ভাবনা থাকে। তাই এদিকে আপনাকে সচেতন হতে হবে, তাছাড়া শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শঃ আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা করার জন্য শিশুর অবস্থা এবং শরীরের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করবে। যদি জটিলতা দেখা দেয় সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এরপরে চিকিৎসক পরামর্শ দেবেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসা করলে দ্রুত সুস্থ হবে। তাই আপনার শিশু যদি আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাবেন এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে আপনার শিশু দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।

শিশুদের হাম কেন হয়

এই রোগটি সাধারণত ভাইরাস জনিত রোগ যা শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে থাকে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য কয়েকটি প্রধান কারণ থাকতে পারে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক।

এ রোগটি সাধারণত হাঁচি কাশির মাধ্যমে ১ ঘন্টার মধ্যে এটা ছড়াতে পারে। এই ভাইরাসটি জীবিত জীবিত থাকা অবস্থায় এর মাঝে যদি কোন শিশু কাছাকাছি চলে আসে, তাহলে বাতাসের দ্বারা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে এই শিশুটির হতে পারে। আবার আক্রান্ত ব্যক্তির থুতু স্পর্শ যদি করে থাকে সে ক্ষেত্রে আপনার শিশু হাম রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই চেষ্টা করবেন আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে দূরে থাকার। তাই আপনার শিশুকে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন।

জনাকীর্ণ পরিবেশঃ হাম এমন একটি রোগ যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্য জোনাকীর্ণ এলাকায় অর্থাৎ যেমন স্কুলে বা বাচ্চারা যেখানে খেলাধুলা করে। এই সকল জায়গা থেকে এই রোগটা বেশি ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই আপনার শিশুকে এই সকল জায়গাতে যেতে দিবেন না এবং এই হাম ওঠা শিশুদের সাথে মেলামেশা করতে দেবেন না। এতে করে আপনার শিশুর ভিতর এই রোগটি ছড়াতে পারে। পরবর্তীতে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে এবং বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ভ্রমনের ক্ষেত্রেঃ কোন মানুষ যদি এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে চলে যায়, সে ক্ষেত্রে যদি হামের ভ্যাকসিনেশন না দেওয়া থাকে। তাহলে আবহাওয়া ও পরিবেশে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং দ্রুত গতিতে শিশুর শরীরের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে এবং অন্য শিশুর মাধ্যমে এই শিশুটির রোগের ঝুঁকি থাকে। তাই অবশ্যই এই ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। আপনি যখন স্থান পরিবর্তন করবেন অবশ্যই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং যদি এই অঞ্চলে এই রোগের পাদুর্ভাব দেখেন সে ক্ষেত্রে না যাওয়াই ভালো।

হামের উপসর্গগুলো কি কি

হামে আক্রান্ত শিশু সাধারণত যে উপসর্গ গুলো দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রচুর পরিমাণে জ্বর থাকবে, এছাড়াও লক্ষণ গুলো তেমন একটা বোঝা যায় না। এছাড়াও শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষেত্রে অনেকটাই সমস্যা দেখা যায়। শিশু একটানা কান্না করতে থাকে এবং দ্রুত শ্বাস নিতে থাকে। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া পর্যন্ত দেখা যায়, আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই ধরনের উপসর্গ দেখলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।

হামে আক্রান্ত শিশুর সাধারণত শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কষ্ট হয়। ফুসফুসে আক্রমণ করে যার কারণে শিশুটির অত্যন্ত কষ্ট হয়। এটি একটি জটিলতা লক্ষণ হতে পারে, তাছাড়া অনেক শিশুর ডায়রিয়া, হজমের সমস্যা দেখা যায়। এরকম সমস্যা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ক্রমে চিকিৎসা নিলে শিশুটি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। তাই এক্ষেত্রে কখনো বাড়িতে দেরি করবেন না, দ্রুত হাসপাতালে নিবেন।

হামে আক্রান্ত শিশু সাধারনত অতিরিক্ত ঘুমাতে চায় এবং শরীর দুর্বলতা লাগে। যার কারণে ভাইরাস মস্তিষ্কে আক্রমণ করতে পারে। এছাড়াও মাঝে মাঝে ঘুমাতে গিয়ে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হতে পারে। এজন্য আপনার শিশুটি যদি দেখেন প্রচুর পরিমাণে ঘুমাচ্ছে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে ঘুম থেকে উঠানোর চেষ্টা করবেন এবং পাশাপাশি তাকে বিভিন্ন ধরনের সেবা যত্ন করতে হবে। তাহলে দেখবেন আস্তে আস্তে সে সুস্থ হতে থাকবে। কখনোই তার সেবা যত্ন কমতি করা যাবে না।

শিশুদের হামের চিকিৎসা

আপনার শিশুর যদি হাম হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে শিশুদের হামের চিকিৎসা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকলে শিশুটা অনেকটাই সুস্থ হয়ে যাবে। পাশাপাশি জরুরী চিকিৎসা নিলে পুরোপুরি জটিলতা কেটে যাবে। এটা একটি ভাইরাস রোগ এর কোন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নির্দিষ্ট করে পাওয়া যায় না। যা এই ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারবে, তাই আপনি যদি সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে শিশুটা দ্রুত সুস্থ হবে, কিভাবে চিকিৎসা নিবেন। নিম্নে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হলো।
ছবি
আরাম ও পর্যাপ্ত বিশ্রামঃ হামে আক্রান্ত শিশুর এই সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। এতে শরীরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। তাই আরামদায়ক পরিবেশে রাখার চেষ্টা করবেন এবং বিশ্রাম দেবেন ও মানসিক ভাবে চাপমুক্ত থাকা লাগবে। এছাড়াও আপনার শিশুকে হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করবেন, যেন শিশুটি বুঝতে না পারে যে সে অসুস্থ। তাছাড়া তাকে ঘন ঘন খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন, বিশেষ করে তরল জাতীয় খাবার গুলো খাওয়াবেন। এতে অতি দ্রুত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পানি জাতীয় খাবার গ্রহণঃ এই রোগ হলে শিশুর অত্যন্ত জ্বর হয় এবং সংক্রমণ হওয়ার কারণে শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। এজন্য শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়াতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফলের রস জাতীয় খাবার গুলো বেশি বেশি খাওয়াবেন। এতে শরীরের পানির অভাব পূরণ করবে, পাশাপাশি শিশুটি ক্লান্ত হবে না। এজন্য আপনার শিশুকে তরল জাতীয় খাবার গুলো খাওয়াবেন, তাহলে শিশুর শরীরে শক্তি পাবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ফল মূল জুস করে খাওয়াতে পারেন, এতে আপনার শিশুর খাওয়ার প্রতি আগ্রহ হবে।
জ্বরের ওষুধ খাওয়াবেনঃ আক্রান্ত শিশুর অত্যন্ত জ্বর হতে পারে, এজন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে। ওষুধ খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। তাছাড়া ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ক্ষতি হবে। তাছাড়া জ্বরের ওষুধ সাধারণত জ্বর কমে গেল আর খাওয়ানো যাবে না। এতে করে শিশুটির সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাছাড়া প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের অবশ্যই পরিমাণ ও নিয়ম অনুযায়ী খাওয়াতে হবে। তা না হলে তার জ্বর কমবে না, শিশুর ওজন অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াতে হবে।

পুষ্টিকর খাবারঃ প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া লাগবে। কেননা হামে আক্রান্ত হলে শিশু খাওয়ার প্রতি তেমন একটা আগ্রহ থাকবে না। যার কারণে বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার দেবেন, এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। অতি সহজে যে সমস্যা গুলো দেখা দেয় তা দ্রুত সেরে উঠবে। তাছাড়া শিশুকে ভিটামিন জাতীয় খাবার গুলো বেশি বেশি খাওয়াতে হবে, তাহলে শিশুর মুখে রুচি ফিরে আসবে। এতে করে খাবারের প্রতি তার আগ্রহ থাকবে হবে। তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় আপনার শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাবার রাখুন।

হাম কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়

আপনার শিশু যদি হামে আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রে যেভাবে প্রতিরোধ করতে পারবেন, তাহল; এক্ষেত্রে অবশ্যই হামের টিকা দিতে হবে, টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ডোজ মেনে নিয়ম অনুযায়ী দিতে হবে। এটাই মূলত প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। এজন্য আমাদের দেশে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামের টিকা দিয়ে থাকে। আপনার শিশুকে দুটি হামের ডোজ কমপ্লিট করবেন। একটি নয় মাস বয়সে দিবেন এরপর ১৫ মাস বয়সে দিতে হবে।

উপসংহারঃ বাচ্চাদের হাম উঠলে করণীয় কি ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানুন

পরিশেষে বলা যায় যে আপনার বাচ্চার যদি হাম উঠে থাকে, সেক্ষেত্রে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা করতে পারেন। এছাড়াও আপনি যদি সতর্ক হোন তাহলে আপনার বাচ্চা অতি দ্রুত সুস্থ হবে। এছাড়াও অন্য কোন বাচ্চাকে আক্রান্ত করবে না। তাই বাচ্চাদের হাম উঠলে করণীয় কি? সম্পর্কে আর্টিকেলে সুন্দরমতে উপস্থাপন করা হয়েছে, আশা করি আপনি বুঝতে পারবেন। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু বান্ধবের নিকটে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url