গর্ভাবস্থায় কাশি হলে কি করনীয় ও যেসব ঔষধ খাওয়া নিরাপদ

গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত ঘন ঘন সর্দি-কাশি হয়ে থাকে, তাই গর্ভাবস্থায় কাশি হলে কি করনীয়? সম্পর্কে জানলে প্রাকৃতিকগত উপায়ে এর চিকিৎসা করা যাবে। চলুন, কিভাবে এর চিকিৎসা করলে কাশি দূর হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
অনেক গর্ভবতী মায়েরা সাধারণত ওষুধ খেতে চায় না, যার কারণে তাদের প্রাকৃতিক ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করলে অতি সহজেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া সর্দি কাশি সেরে যাবে। তাই গর্ভাবস্থায় কাশি হলে কি করনীয়? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃগর্ভাবস্থায় কাশি হলে কি করনীয় ও যেসব ঔষধ খাওয়া নিরাপদ

গর্ভাবস্থায় কাশি হলে কি করনীয়

গর্ভবতী মায়েদের কাশি হলে অনেক কষ্ট হয় তাই গর্ভাবস্থায় কাশি হলে কি করনীয়? এ সম্পর্কে যদি আপনি জানতে পারেন, তাহলে প্রাকৃতিক উপায়ে এই কাশি দূর করতে পারবেন। চলুন, কিভাবে কাশি দূর করবেন সেই সম্পর্কে জানা যাক।

চিকেন স্যুপঃ ঠান্ডা বা কাশি হলে সাধারণত তরল জাতীয় খাবার গুলো বেশি বেশি খাবেন। কেননা গবেষণায় দেখা গেছে যে, তরল জাতীয় খাবার গুলো খাওয়ার কারণে অনেক গর্ভবতীর সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা সহ আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো দূর হয়ে গেছে। তাই কোন গর্ভবতীর যদি এ সময় ঠান্ডা কাশির সমস্যা হয় তারা চিকেন স্যুপ খেতে পারেন। তাই গর্ভবতীরা দিনে ১ বার করে একবাটি পরিমাণ চিকেন স্যুপ খেতে পারেন। 

হাইড্রেশনঃ অনেক গর্ভবতী মায়েরা এ সময় পানি খেতে চায় না, যার কারণে হাইড্রেশনের সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি খাবেন এবং তরল জাতীয় খাবার গুলো খেতে হবে। যদি আপনার সর্দি কাশি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই তরল জাতীয় খাবার গুলো খাবেন এবং বেশি বেশি পানি পান করবেন। এতে আপনার সর্দি-কাশি অনেকটাই কমে যাবে। এছাড়া যদি তরল জাতীয় খাবার গুলো খেতে পারেন। 

গরম পানির ভাপ নেওয়াঃ গর্ভবতীদের এই সময় যেহেতু বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খাওয়া নিষেধ রয়েছে। তাই সর্দি কাশি লাগলে সাধারণত গরম পানির ভাপ নিতে পারেন। এতে দারুণ কাজ করে থাকে, দেখবেন আপনার নাকের ভিতর দিয়ে এই ভাপ গুলো চলে যাচ্ছে, এতে আপনার নাক পরিষ্কার হয়ে যাবে। এছাড়াও হালকা গরম পানি খেতে পারেন এতে করে আপনার খুশখুশি কাশি বন্ধ হয়ে যাবে এবং আপনার শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এতে আপনার অনেক ভালো লাগবে এবং কাশি কম হবে।

কুসুম গরম পানিতে গার্গল করাঃ গর্ভাবস্থায় আপনার যদি কাশির সমস্যা দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে কুসুম গরম পানিতে গার্গল করতে পারেন। এই পানির মধ্যে হালকা লবণ দিতে পারেন। এই লবণ পানির মিশ্রণটি খেলে আপনার কাশি অনেকটাই কমে যাবে। প্রতিদিন এইভাবে যদি সকাল বিকাল খেতে পারেন, তাহলে দেখবেন আপনার গলা ব্যথা ও কাশির সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এই গরম পানির সাথে যদি হালকা লবঙ্গ এবং আদা কুচি করে দিতে পারেন, সে ক্ষেত্রে দারুন কাজ করবে।

আদাঃ আদা সাধারণত প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় যদি আপনি এই আদা টুকরো টুকরো করে খেতে পারেন। এছাড়াও যদি চা এর সাথে খেতে পারেন, সেক্ষেত্রে দারুন কাজ করবে। কেননা এর মধ্যে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা আপনার কাশি, সর্দি, গলা, ব্যথা ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করবে। তাই একজন গর্ভবতী দিনে এক থেকে দুই কাপ আদা চা খেতে পারেন।

লেবু ও মধুঃ কাশির জন্য লেবু অত্যন্ত কার্যকারী উপাদান। কেননা এর মধ্যে ভিটামিন সি থাকে যা ঠান্ডা কাশি দূর করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও এক গ্লাস কুসুম গরম পানির মধ্যে ১ চামচ মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। তাই গর্ভাবস্থায় এই উপাদানটি কাশির জন্য দারুন কাজ করবে। তাই গর্ভাবস্থায় যদি ঘন ঘন ঠান্ডা কাশি হয় সে ক্ষেত্রে লেবু এবং মধু মিশ্রিত করে খেতে পারেন, এটা দারুন কাজ করবে।

রসুন খেতে পারেনঃ রসুনকে প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক বলা হয়ে থাকে। এর মধ্যে এন্টিভাইরাল থাকে যা ভাইরাসের ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য অল্প পরিমাণ রসুন কুচি কুচি করে মধুর সাথে মিক্স করে খেতে পারেন। বিশেষ করে গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে সর্দি কাশি যদি কোন ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে তাহলে এই ধরনের ভাইরাস ব্যাকটেরিয়াকে দূর করতে রসুন এন্টিবায়োটিকের মত কাজ করে থাকে।

আদা চা খেতে পারেনঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত অনেকেরই সর্দি কাশি লেগেই থাকে যার কারণে এই সময় ওষুধ খাওয়া যায় না। এজন্য আপনি আদা চা খেতে পারেন। কেননা এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকে যা আপনার ঠান্ডা কাশি থেকে মুক্তি দিবে। তাছাড়া গর্ভবতী মহিলারা বিকেল বেলায় হালকা নাস্তার পরে আদা দিয়ে চা বানিয়ে নিয়মিতভাবে খেতে পারেন। এতে করে আপনার সর্দি-কাশি দূর হয়ে যাবে, তাছাড়া শরীরের ভিতরে উষ্ণতা ভাব চলে আসবে।

মধু খেতে পারেনঃ এর মধ্যে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে যা আপনার সর্দি কাশি দূর করতে সাহায্য করবে। তাই গর্ভাবস্থায় সর্দি কাশি হলে মধু খেতে পারেন। এজন্য আপনি চায়ের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন এবং এর মধ্যে একটু লেবুর রস দিতে পারেন এতে ভালো উপকার পাবেন। এ মিশ্রণটা যদি সঠিকভাবে আপনি খেতে পারেন তাহলে আপনার যে কোন ধরনের কাশি থেকে মুক্তি পাবেন, তাই নিয়মিতভাবে এটা খেতে পারেন। 

কমলার রসঃ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা আপনার কাশি দূর করতে সাহায্য করে। যেহেতু গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এর প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রে কমলা রস খেতে পারেন। এছাড়াও কমলার রসের ভিটামিন সি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। কেননা গর্ভবতী মায়েদের এই সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাই ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলো বেশি বেশি খেতে হবে। এজন্য আপনি কমলার রস খেতে পারেন।

পুষ্টিকর খাবার খাবেনঃ গর্ভাবস্থায় অবশ্যই পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে। এতে আপনার শরীর দুর্বল হবে না এবং রোগ ব্যাধি আক্রমণ করতে পারবে না। কেননা এই সময়ে যদি আপনার শরীর দুর্বল থাকে, তাহলে অল্পতেই ঠান্ডা কাশি লেগে থাকবে। এজন্য এই ঠান্ডা কাশি দূর করার জন্য পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
এজন্য আপনি খাবার তালিকায় সবুজ শাকসবজি, টমেটো, শাক এ ধরনের খাবার গুলো খেতে পারেন। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে।

হলুদঃ এর মধ্যে এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকে, যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে এবং সর্দি-কাশি গলা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করবে। এজন্য আপনি এক গ্লাস দুধের মধ্যে এক চামচ হলুদের গুঁড়ো দিতে পারেন এবং অল্প পরিমাণ লবণ দিতে পারেন। এরপরে এই মিশ্রণটি দিয়ে গার্গল করবেন। এতে আপনার সর্দি কাশি দূর হয়ে যাবে।

পর্যাপ্ত ঘুমঃ গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত এই সময় ঘুম কম হয়ে থাকে যার কারণে শরীরে সমস্যা দেখা দেয় এবং দুর্বল হয়ে যায়। এজন্য দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি আক্রমণ করতে থাকে, তাই অবশ্যই একজন গর্ভবর্তীকে থেকে ৭ থেকে ৯ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমাতে হবে। তাহলে শরীরে ইউমিনিটি বৃদ্ধি পাবে।

নারকেল তেলঃ এটা সাধারণত ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে যে উপাদান থাকে তা ভাইরাস দমন করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও ভাইরাস গুলো বড় হতে বাধা দিবে। এজন্য নারিকেলের তেল ব্যবহার করতে পারেন, সরাসরি সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য গরম পানির মধ্যে অল্প পরিমাণ নারিকেলের তেল মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার কাশি দূর হয়ে যাবে।

জিংক খাওয়া যেতে পারেঃ গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত সর্দি কাশি লেগেই থাকে এজন্য জিংক জাতীয় খাবার গুলো খাওয়া যেতে পারে। কেননা বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার কারণে সাধারণত সর্দি-কাশি লেগে থাকে, এই ধরনের ভাইরাস দূর করার জন্য জিংক খাওয়া যেতে পারে।

এজন্য অনেকে আবার জিংক জাতীয় সিরাপ খেয়ে থাকে, যা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই আপনি সিরাপ না খেয়ে পালং শাক, কুমড়ার বীজ, ভেড়ার মাংস, পাঁঠার মাংস খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণ জিংক থাকে।

মাথা উঁচু করে রাখতে পারেনঃ ঘুমানোর সময় অবশ্যই মাথা উঁচু করে রাখবেন, এতে কাশি অনেকটা কমে যাবে। এতে আপনার শ্বাস প্রশ্বাস নিতে খুবই সহজ হবে।

পরিছন্নতা থাকবেনঃ গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা খুবই প্রয়োজন। কেননা রাইনো ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় এবং সর্দি কাশি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তাছাড়া খাওয়ার আগে এবং পরে হাত অবশ্যই পরিষ্কার করবেন।

হ্যান্ড স্যানিটাইজারঃ গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত সচেতন থাকতে হবে এবং শরীরে যেন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে না পারে। এজন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাহিরে যখন যাবেন অথবা ভিতরে প্রবেশ করবেন তখনই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেনঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, যার কারণে ঘন ঘন সর্দি কাশি লেগে থাকে। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা করতে পারেন,কেননা অনেক সময় প্রাথমিক চিকিৎসায় আপনার এই সর্দি কাশি সারতে পারে। এছাড়া নিম্নোক্ত সমস্যা গুলো দেখা দিলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের কাছে যাবেন। চলুন, যে সমস্যাগুলো জেনে নেওয়া যাক।
  • যদি গর্ভবতীর জ্বর ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট থেকে বেশি হয়।
  • আপনার কাশির সাথে যদি রক্ত বের হতে থাকে।
  • কাশির সাথে শ্বাসকষ্ট ও বুকের ব্যথা বেড়ে যায়।
  • কাশির সাথে হলুদ রঙের কফ বের হয়।
  • নিঃশ্বাস নিতে গেলে ভিতরের শব্দ করে।
  • এই ঠান্ডা কাশি যদি দুই সপ্তাহের বেশি হয়ে যায়।
  • এবং গর্ভবতী নারী যদি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যায়।
উপরোক্ত সমস্যাগুলো দেখা দিলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

গর্ভাবস্থায় কাশির ওষুধ

গর্ভবতী মায়েরা সাধারণত কাশি হলে, কাশির সিরাপ খেতে চায়। যার কারণে চিকিৎসকরা কিছু নিরাপদ কাশির সিরাপ দিয়ে থাকে। চলুন, সেই সিরাপ গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
সিউডোফেড্রিনঃ এই সিরাপটি গর্ভবতীদের জন্য নিরাপদ রয়েছে। এই সিরাপ গলা ব্যথা, নাকের সমস্যা, সর্দি কাশি দূর করতে সাহায্য করবে। তবে একটু সতর্ক থাকতে হবে যে সকল নারীদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রথম তিন মাসে এই ধরনের ওষুধ খাওয়া যাবে না।

ক্লোরফেনিরামিনঃ সাধারণত কাশির সিরাপ যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে। এটা এলার্জি, সর্দি ও কাশির জন্য দারুন কাজ করে থাকে।
ডেক্সট্রোমেথরফ্যানঃ এই কাশির সিরাপ গর্ভবতীদের জন্য খাওয়া যেতে পারে। গবেষণা করে দেখা গেছে বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে যে এই ওষুধটি খাওয়ার কারণে গর্ভস্থ শিশুর কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নাই।

ডিফেনহাইড্রামিনঃ এই সিরাপ এন্টিহিস্টামিন হিসাবে কাজ করে থাকে, গর্ভবতীর ক্ষেত্রে নিরাপদ আছে। কফ কমিয়ে দেয় এছাড়াও অ্যান্টি হিস্টামিনের কাজ করে থাকে এবং এটা শরীরের এলার্জির বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।

গর্ভাবস্থায় সর্দি কাশি হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয়

অনেকে মনে করে যে গর্ভাবস্থায় সর্দি কাশি হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয়? আসলে গর্ভাবস্থায় যদি ঠান্ডা লাগে, সেক্ষেত্রে বাচ্চার ঠান্ডা লাগতে পারে। এই ধরনের অনেকেই ধারণা করতে পারে। চলুন, জেনে নেওয়া যাকে।

এই সময় যদি মায়ের ঠান্ডা কাশি হয় সে ক্ষেত্রে বাচ্চার তেমন কোন সমস্যা হবে না। তবে এ বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

যদি গর্ভবতী মায়ের এই সময়ে ঠান্ডা কাশি হয় ও সাথে যদি প্রচুর পরিমাণ জ্বর থাকে এবং সে জ্বর যদি দীর্ঘদিন যাবৎ থাকে, সেক্ষেত্রে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া বাচ্চার বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

গর্ভবতী মায়ের যদি এই ঠান্ডা কাশি দীর্ঘদিন ধরেই চলতে থাকে সে ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়ের পুষ্টির অভাব দেখা দিবে, যা আপনার শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের ঠান্ডা কাশি লাগলে সে ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এই ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের কারণে হয়তো ঠান্ডা লাগে। তাই সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে, তা না হলে শিশুর ক্ষতি হবে।

গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খাওয়া নিষেধ থাকে, তাই ঠান্ডা কাশির ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। তা না হলে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।

সাধারণত গর্ভবতী মায়ের সর্দি কাশি হলে সে ক্ষেত্রে গর্ভস্থ শিশুর তেমন একটা সমস্যা হবে না। তবে সতর্ক থাকা ভালো, এক্ষেত্রে যদি বড় ধরনের কোন উপসর্গ দেখা দেয় সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

গর্ভাবস্থায় কাশি হলে মোনাস মোনাস ১০ খাওয়া যাবে

অনেক সময় অত্যন্ত কাশি হলে অনেকে মোনাস ১০ খেয়ে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় কাশি হলে মোনাস মনাস ১০ খাওয়া যাবে কি? এ সম্পর্কে চলুন, বিস্তারিতভাবে জানা যাক।

সাধারণত এই মোনাস ১০ হাঁপানি, কাশি, এজমার সমস্যা জন্য ডাক্তারগণ প্রেসক্রিপশন করে থাকে কিন্তু এর নিয়ম রয়েছে সে অনুযায়ী খেতে হবে তাহলে অত্যধিক কাশি দূর হবে।

অনেকের এলার্জির সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে এই ওষুধটি খাওয়া যেতে পারে। তবে এটা দীর্ঘদিন যাবত খাওয়া যাবে না, এতে সমস্যার দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।

অনেকের সিজনাল এলার্জি হয়ে থাকে, সেই ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে চুলকায় যার কারণে এই ঔষধটা খেয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

অনেকের পূর্ব থেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে এবং অত্যাধিক ঠান্ডা কাশি লেগেই থাকে, সে ক্ষেত্রে অধিক কাশির জন্য এই ওষুধটি খাওয়া যেতে পারে। তবে গর্ভবতী মায়েরা এ ধরনের সমস্যার জন্য এই ওষুধটি খেলে আরো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

তবে গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে এই ওষুধটি খাওয়ার সতর্কতা রয়েছে। কেননা এই মোনাস ১০ খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা স্তন্যদানকারী মায়েদের অনেক সময় ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া গর্ভবতী যদি নিয়ম অনুযায়ী না খায়, তাহলে শিশুর বিকাশের উপর প্রভাব পড়তে পারে।

অনেক গর্ভবতী মায়ের পূর্ব থেকে এলার্জি থাকে, এই অবস্থায় আরো বেশি হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে অনেকেই দেখা যায় মোনাস ১০ কিনে খায়। এক্ষেত্রে এলার্জির সমস্যা যদিও একটু কমে যায় কিন্তু এটা বাচ্চার ক্ষতি হবে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ পেতে হবে।

অনেকের কিডনি বা লিভারের সমস্যা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে কখনোই মোনাস ১০ খাওয়া যাবেনা। এ ক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ক্রমে খেতে হবে। আবার অনেকে যদি বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে অন্যান্য ওষুধের সাথে এই ওষুধটি খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে খাওয়া উচিত।

সাধারণত এই মোনাস ১০ খাওয়ার কারণে যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো দেখা যায় তা হল;

মাথা ব্যাথা করতে পারে, পেটের অস্বস্তিকর সমস্যা দেখা দিতে পারে, ক্লান্তি লাগতে পারে, গলা শুকিয়ে যেতে পারে। অনেকের মানসিক পরিবর্তন হতে পারে, ত্বকে ফুসকুড়ি, এলার্জি সমস্যা হতে পারে, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে। এছাড়া যদি গুরুতর উপসর্গ দেখা যায় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে।

গর্ভাবস্থায় সর্দির ঔষধ খাওয়া যাবে কি

গর্ভবতী মায়েদের যদি অত্যাধিক সর্দি কাশি হয় সে ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় সর্দির ঔষধ খাওয়া যাবে কি? আসলে ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
একজন গর্ভবতী মায়ের ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা এই সময় তাদের বিভিন্ন হরমোনাল পরিবর্তনের বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণেই দেখা যায়। গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বা বিকাশের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে চিকিৎসকরা কিছু ওষুধ নিরাপদ হিসেবে দিয়ে থাকে সেগুলো হলো প্যারাসিটামল ঔষধ অথবা সর্দি কাশির জন্য এন্টিহিস্টামিন দিয়ে থাকে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক যে ওষুধগুলো নিরাপদ রয়েছে।

যদি আপনার সর্দি বা জ্বর হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে প্যারাসিটামল ওষুধটা খাওয়া যেতে পারে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ খেলে ভালো হবে।
অনেকের নাক বন্ধ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে দেখা যায় ন্যাসাল ড্রপ দেওয়া যেতে পারে, এক্ষেত্রে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, এতে নাক পরিষ্কার হয়ে যাবে।

সবচেয়ে ভালো হয় যদি নাক বন্ধ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে গরম পানির ভাপ নিতে পারেন এতে ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়।

যেকোনো ধরনের ব্যথার ওষুধ গর্ভাবস্থায় খাওয়া নিষেধ, কেননা এতে শিশুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এছাড়াও প্রথম তিন মাসের দিকে একদমই যে কোন ওষুধই খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাছাড়া গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হবে।

ঠান্ডা বা কাশি হওয়ার কারণে অনেকে এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধগুলো নিরাপদ মনে করে খেয়ে থাকে, তবে এক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসক পরামর্শ দিলে সে অনুযায়ী খেতে হবে।

গর্ভাবস্থায় কাশি সম্পর্কে FAQ প্রশ্ন ও উত্তর জানুন

গর্ভাবস্থায় কাশি হলে কোন ফল খাওয়া উচিত?

সাধারণত সাইট্রাস জাতীয় ফলগুলো খাওয়া প্রয়োজন, এতে আপনার সর্দি কাশি দূর করতে সাহায্য করবে। যেমন কমলা, লেবু ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় রাতে কাশি বন্ধ করার উপায়?

রাত্রিতে যদি একজন গর্ভবতীর প্রচন্ড পরিমাণ কাশি হয় সে ক্ষেত্রে ওষুধ না খেয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। যেমন মধু দিয়ে গরম চা খেতে পারেন অথবা হলুদ দিয়ে গরম পানি খেতে পারেন এতে কাশি অনেকটাই কমবে।

গর্ভাবস্থায় মোনাস 10 কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় যদি অত্যাধিক কাশি হয় সে ক্ষেত্রে অনেকেই মোনাস 10 খেয়ে থাকে, এক্ষেত্রে গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী নারীদের এই ওষুধটি খাওয়ার সতর্কতা রয়েছে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভাবস্থায় মন্টিলুকাস্ট খাওয়া যাবে কি?

গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত মন্টিলুকাস্ট খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা আছে, তবে অনেক চিকিৎসক সাধারণত কাশি হলে এই ওষুধটি দিয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থায় শুকনো কাশি হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয়?

আসলে গর্ভবতী মায়ের যদি ঠান্ডা কাশি হয়, এক্ষেত্রে বাচ্চার তেমন একটা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই। তবে অতিরিক্ত হলে অবশ্যই শিশুর ক্ষতি হবে।

উপসংহারঃ গর্ভাবস্থায় কাশি হলে কি করনীয় ও যেসব ঔষধ খাওয়া নিরাপদ

পরিশেষে বলা যায় যে গর্ভবতী মায়েদের এই সময়ে যে কোন ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা রয়েছে। কেননা গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে। যদি গর্ভবতী মায়ের ঠান্ডা কাশি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না। অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাই গর্ভাবস্থায় কাশি হলে কি করনীয়? সম্পর্কে আর্টিকেল আলোচনা করা হয়েছে, আশা করি আপনার উপকারে আসবে। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪