গর্ভাবস্থায় গরুর মাংস খাওয়া যাবে কি জেনে নিন কতটুকু নিরাপদ
অনেক গর্ভবতী নারী জানতে চায় গর্ভাবস্থায় গরুর মাংস খাওয়া যাবে কি? তাই আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে গরুর মাংস অতিরিক্ত খাবেন না। চলুন, গর্ভাবস্থায় কতটুকু গরুর মাংস খেলে উপকার হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
অনেক গর্ভবতীর কাছে গরুর মাংস সবচেয়ে প্রিয় এবং প্রতিদিন তারা অতিরিক্ত গরুর মাংস খেয়ে থাকে। কিন্তু পরিমাণ মতো খেলে উপকার হবে। তাই গর্ভাবস্থায় গরুর মাংস খাওয়া যাবে কি? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃগর্ভাবস্থায় গরুর মাংস খাওয়া যাবে কি জেনে নিন কতটুকু নিরাপদ
গর্ভাবস্থায় গরুর মাংস খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় গরুর মাংস খাওয়া কতটুকু উপকার হবে তা জানা প্রয়োজন। তাই গর্ভাবস্থায় গরুর মাংস খাওয়া যাবে কি? সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো। চলুন এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
গরুর মাংসের মধ্যে প্রচুর প্রোটিন থাকে, তাই গর্ভাবস্থায় গরুর মাংস খাওয়া সম্পর্কে আমাদের প্রয়োজন। তাছাড়া একজন গর্ভবতী কতটুকু খেতে পারবে সেটা জানা প্রয়োজন। গরুর মাংস মূলত আমাদের শরীরের শক্তি যোগাতে সাহায্য করবে কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে আবার শরীরে ক্ষতি হবে। গরুর মাংসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন থাকে যা একজন গর্ভবতী মায়ের প্রোটিনের প্রয়োজন আছে। তাই সে গরুর মাংস খেতে পারবে, তবে পরিমাণে খুবই কম খাওয়া লাগবে। কারণ একজন গর্ভবতীর সুস্থ অবস্থায় ১০০ গ্রাম গরুর মাংসের বেশি খাওয়া যাবে না।
কেননা একজন গর্ভবতী নারীর দৈনিক ১০০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। এর বেশি যদি খেয়ে ফেলে তাহলে বিপদ হতে পারে। তাছাড়া একজন গর্ভবতী ১০০ গ্রামের গরুর মাংস খাবে সেটাও নির্ভর করবে তার ওজনের উপরে। সে ক্ষেত্রে যদি কম হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে আরো কম খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় কে তিন ভাগে ভাগ করা হয় প্রথম তিন মাস মাঝের তিন মাস এবং শেষের তিন মাস হিসেবে ভাগ করা হয়ে থাকে। অতএব এই তিনটা স্টেজের মাঝে যে স্টেজে তিনি রয়েছেন সেই অনুযায়ী তাকে গরুর মাংস পরিমান মত খাওয়া যেতে পারে।
প্রথম তিন মাস গর্ভবতীর জন্য খুবই দুঃখজনক হয়ে থাকে, কারণ তার বয়স যদি খুবই কম হয় যেমন ১৮ বছর নিচে আবার কারো বয়স যদি ৩৫ বছরে উপরে হয় সেই সকল মহিলাদের প্রথম তিন মাস ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। এছাড়াও ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এই ধরনের সমস্যা যদি কারো থাকে তাহলে আরো ঝুঁকিপূর্ণ বেশি হয়ে থাকে। প্রথম তিন মাসে গর্ভবতী মায়েরা সাধারণত বেশি খেতে পারে না, এজন্য বমি করতে থাকে যা খায় তাই মুহূর্তের মধ্যে বের করে দেয় অথবা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই এই সময়ে একজন গর্ভবতী মা যা খেতে পছন্দ করে সেটাই তাকে খেতে দেওয়া উচিত। তবে গরুর মাংস টা হয়তো অনেকের কাছে পছন্দ লাগতে পারে কিন্তু গর্ভবতী অবস্থায় বেশি খাওয়া যাবে না। একজন গর্ভবতী মহিলা যদি এই অবস্থায় গরুর মাংস বেশি খায় তাহলে সে ক্ষেত্রে তার কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিবে। আবার অনেকের ব্লিডিং হতে পারে অনেকের পাইলসের সমস্যা হতে পারে সুতরাং গরুর মাংস ইচ্ছামত খাওয়া যাবে না। যতটুক প্রয়োজন ততটুকুই খেতে পারবেন।
গরুর মাংসের মধ্যে শর্করা, আমিষ, প্রোটিন থাকে সেক্ষেত্রে একজন গর্ভবতী মায়ের কতটুকু প্রয়োজন সেটা ভাগ করে নিতে হবে। তার যতটুকু প্রয়োজন সেই পরিমাণ মতোই খেতে হবে। এর বেশি খাওয়া যাবেনা এতে শরীরে ক্ষতি হবে তাই পরিমান মত খাওয়া উচিত। মাঝের তিন মাসে সাধারণত প্রেশার ডায়াবেটিস অনেক গর্ভবতীর বেড়ে যায়। অনেক সময় বাচ্চার বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়। এই সময় একজন গর্ভবতী মাকে অবশ্যই ডায়েট করা লাগবে। তবে এই ক্ষেত্রে বাচ্চার বৃদ্ধির উপর নির্ভর করবে।
শেষের তিন মাস বাচ্চা বৃদ্ধির দিকে খেয়াল করতে হবে। কেননা এই সময় বাচ্চা বৃদ্ধি পায় বেশি। যদি আপনার বাচ্চা ঠিকমতো বৃদ্ধি না পায় সে ক্ষেত্রে আপনাকে সচেতন হওয়া লাগবে। অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চা অনেক ওজন কম হয়ে থাকে আবার অনেকের বাচ্চার বেশি ওজন হতে পারে। এদিকে অবশ্যই একজন মাকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি একটা বাচ্চার ওজন বেশি হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে একজন গর্ভবতী মাকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা অতিরিক্ত ওজনের বাচ্চা গুলো সাধারণত ডায়াবেটিসের সমস্যার কারণে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে অথবা মায়ের কোন বড় ধরনের রোগ থাকতে পারে সেজন্য বাচ্চার ওজন অতিরিক্ত হয়ে থাকে।
বাচ্চার ওজন বেশি হওয়ার কারণে অনেকে হয়তো খাবার-দাবার কমিয়ে দেয় কিন্তু এটা ঠিক নয়। কারণ যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খেতে হবে তা না হলে একজন গর্ভবতী মা অসুস্থ হয়ে পড়বে। এতে বাচ্চার ও ক্ষতি হবে। তাই এই সময় ক্যালরিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে পুষ্টিকর খাবার বেশি খেতে হবে। বিশেষ করে সবুজ শাকসবজি খাওয়া যেতে পারে। এতে এই সময়ে বাচ্চা যখন ওজন বৃদ্ধি পায় তখন তাকে প্রোটিন এবং আমিষ জাতীয় খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
গর্ভাবস্থায় গরুর ভুরি খাওয়া যাবে কিনা
অনেক গর্ভবতী মায়েরা সাধারণত গরুর ভুরি খেতে পছন্দ করে তাই গর্ভাবস্থায় গরুর ভুরি খাওয়া যাবে কিনা? এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন নিম্ন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
গরুর ভুরি হজম করতে সময় লাগতে পারে, তাই অনেক ডাক্তার এই গর্ভাবস্থায় খেতে নিষেধ করে থাকে, এতে বাচ্চার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এটা যদি আপনি ভালোভাবে সিদ্ধ করে অত্যন্ত নরম করতে পারেন তাহলে হজম করতে সহজ হবে। সেই ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। গরুর মাংসের চাইতে গরুর ভুরি অনেক ক্ষতি করতে পারে কারণ এর মধ্যে কিছু ক্ষতি করার লক্ষণ আছে। গরুর ভুরি মাংসের চেয়ে বেশি ক্ষতি করে, তবে এর উপকার কিছু আছে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
এর মধ্যে আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিংক, সেলেনিয়াম থাকে যা শরীরের জন্য উপকার করবে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে বিপদজনক হতে পারে। চলুন বিশেষ করে গর্ভবতীদের জন্য ক্ষতি হতে পারে। তাই এই সময় গরুর ভুরি খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। যে সকল গর্ভবতীদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের গরুর ভুরি খাওয়া যাবে না। কেননা এতে শরীরে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাবে। হার্টের সমস্যা আরো বেশি হবে এক্ষেত্রে না খাওয়াই ভালো।
গরুর ভুরি এর মধ্যে দুই ধরনের ফ্যাট রয়েছে একটি হলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট অন্যটি ট্রান্স ফ্যাট থাকে। স্যাচুরেটেড ১.৩ গ্রাম এবং ট্রান্স ফ্যাট এর মধ্যে ০.২ গ্রাম ফ্যাট থাকে এর কারণে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এতে গর্ভবতীর অনেক সমস্যা হতে পারে তাই এই ক্ষেত্রে না খাওয়াই ভালো। খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং রান্নার সময় ভাল করে সিদ্ধ করতে হবে। তাছাড়া গর্ভবতীর ক্ষতি হতে পারে কেননা এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া জমা রয়েছে যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হবে।
গর্ভাবস্থায় ছাগলের মাংস খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় অনেকে ছাগলের মাংস খেতে চায় তবে গর্ভাবস্থায় ছাগলের মাংস খাওয়া যাবে কি? এই গরুর মাংস এই ছাগলের মাংস খাওয়ার কারণে কি সমস্যা হতে পারে। সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
খাসির মাংসের মধ্যে সাধারণত প্রোটিন আয়রন রয়েছে যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালোভাবে সিদ্ধ করে খাওয়ানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আয়রন ও প্রোটিনের অভাব পূরণ করবে, তবে গরুর খাসি ও ছাগলের মাংস প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না তাহলে ওজন বৃদ্ধি পাবে গর্ভস্থ শিশুর সমস্যা হতে পারে। এছাড়া গর্ভবতী মায়ের ওজন বেড়ে যাবে, তাছাড়া হার্ট সমস্যা হতে পারে খাসির মাংস অনেক বেশি না খাওয়াই ভালো। এই সময় যদিও খেতে চান তাহলে চর্বি ছাড়া মাংস খাওয়া যেতে পারে।
প্রোটিনের চাহিদার জন্য খাসির মাংস খাওয়া যেতে পারে তবে এর পরিবর্তে মাছ ডিম ডাল মুরগির মাংস খাওয়া যেতে পারে। কেননা খাসির মাংস অতিরিক্ত চর্বি থাকে যেটা আমাদের গর্ভবতী মায়েদের ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। এজন্য খাসির মাংস একটানা খাওয়া যাবে না। গরুর মুরগি কিংবা খাসির মাংস রান্না করার ক্ষেত্রে ভালো করে সিদ্ধ করে নিতে হবে। কারণ এর মাঝে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকে। আর এটাকে দূর করার জন্য ভালো করে সিদ্ধ করতে হবে। কারণ এই ক্ষতিকারক ব্যাকটেরাগুলো শরীরের প্রবেশ করে গর্ভপাত বা অকাল প্রসবের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই উচ্চ মাত্রায় মাংস না খাওয়ায় ভালো তাই গরুর মাংস বা খাসির মাংস নিয়মিত বেশি করে খাওয়া যাবে না।
গর্ভাবস্থায় হাঁসের মাংস খাওয়া যাবে কি
অনেকে জিজ্ঞেস করে থাকে যে গর্ভাবস্থায় হাঁসের মাংস খাওয়া যাবে কি? তবে হাঁসের মাংস গর্ভবতী খেতে পারবে কিনা সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
হাঁসের মাংসের মধ্যে প্রোটিন থাকে যা আমাদের পেশি শক্তি ত্বক এবং রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও হাঁসের মাংসের মধ্যে আয়রন রয়েছে যা আমাদের প্রয়োজনীয় লৌহ ৫০ শতাংশ পূরণ করে থাকে। তাই একজন গর্ভবতী মহিলার এই সময়ে প্রচুর পরিমানে আগুনের প্রয়োজন। সেই হিসেবে হাঁসের মাংস খাওয়া যেতে পারে, তবে পরিমাণে বেশি খাওয়া যাবে না এবং ভালো করে সিদ্ধ করে খেতে হবে। তবে শীতে হাঁসের মাংস খাওয়া অনেক মজা লাগে। নানাভাবে রান্না করে হাসির মাংস খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া আমাদের দেহে শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে, আমাদের শরীরে রক্ত প্রবাহকে ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে।
শুধু খাওয়ার ক্ষেত্রেই মজাদার মাংস খুবই উপকার বিশেষ করে যারা ওজন বাড়াতে চান তাদের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে। তবে একজন গর্ভবতী মহিলার ১০০ গ্রাম হাঁসের মাংসের উপরে খাওয়া যাবে না। এর মধ্যে ক্যালোরি আমিষ শর্করা চর্বি ক্যালসিয়াম প্রোটিন ইত্যাদি থাকে এছাড়াও ফসফরাস, আয়রন জিংক ভিটামিন ইত্যাদি থাকে। যা একজন গর্ভবতী মহিলার প্রয়োজন, তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। চামড়া সহ হাঁসের মাংস খেলে প্রচুর পরিমাণ ফ্যাট হয় এবং কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাবে। যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের বিপদ হতে পারে। গরুর মাংসের চাইতে হাঁসের মাংসের চর্বি বেশি এই চর্বির মধ্যে কোলেস্টেরল বেশি থাকে।
তাই ওজন বাড়াতে পারে এজন্য গর্ভবতীর এই হাঁসের মাংস বেশি খাওয়া যাবেনা। এই হাঁসের মাংসের মধ্যে ক্যালসিয়াম আয়রন ফসফরাস সোডিয়াম জিংক কপার ম্যাগনেসিয়াম সেলেনিয়াম ইত্যাদি থাকে। যা একজন গর্ভবতীর প্রয়োজন আছে তবে ১০০ গ্রামের উপরে খাওয়া যাবে না। হাঁসের মাংসের মধ্যে প্রচুর থাকে তাছাড়া শরীরের তাপমাত্রা উষ্ণতা রাখতেও এই ফ্যাটি এসিড সাহায্য করে থাকে। যা আমাদের হাঁসের মাংসের মধ্যেই ফাটি এসিড পাওয়া যায়। এছাড়াও এর মাঝে প্রচুর পরিমাণ খনিজ পদার্থ থাকে। যা গলা ব্যাথার ক্ষেত্রে অনেক উপকার পাওয়া যেতে পারে। তবে উচ্চ রক্তচাপ যাদের সমস্যা রয়েছে তারা হাঁসের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। আর খেলেও অল্প পরিমাণ খাওয়া লাগবে।

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url