অসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব এবং ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বিভিন্ন কারণে তিনি অসহযোগ আন্দোলন হয়, তবে অসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। কেননা এই আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। চলুন, এই আন্দোলনের গুরুত্ব এবং কারণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
ভারতীয় উপমহাদেশের লোকজনের উপর ব্রিটিশরা যেভাবে অত্যাচার শুরু করেছিল। এতে এদেশের লোকজন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে বাধ্য হয়, যা অসহযোগ আন্দোলন। তাই অসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃঅসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব এবং ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

অসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব

অনেকে জানতে চায় যে, অসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব এবং ফলাফল সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। তাহলে অসহযোগ আন্দোলন কেন হয়েছিল সে সম্পর্কে জানতে পারবো। চলুন, যে সকল কারণে অসহযোগ আন্দোলন হয়েছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

ব্রিটিশ সরকার মুসলমানদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাদের উপর কোন আঘাত আনবে না। তারা সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি যার কারণে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। মুসলমানরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, তবে ভারতের গান্ধীজি তিনি ও মুসলমানদের এই আন্দোলন এর পক্ষে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। তাছাড়াও ভারত শাসন আইন যে সংস্কার করেছিল তা ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করতে পারে নাই এবং ভারতীয়দের অর্থ ব্যয় হয়। ব্রিটিশদের এই আইন ভারতীয়দের হতাশা অবস্থায় ফেলেছিল। এছাড়া মুসলিমদের স্বতন্ত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছিল।

ব্রিটিশ সরকার রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপ দমন করার জন্য রাওলাট আইন পাস করেছিল। এই আইনে রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপ সাথে যারা যুক্ত থাকবে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। এছাড়া এই আইনের মাধ্যমে পুলিশরা সরকারের অনুমতি ব্যতীত যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে। তাছাড়াও রাওলাট আইনে বিরোধী করার জন্য জালিয়ানওয়ালাবাগ বিশাল জনতা জড়ো করা হয় এবং সেখানে জেনারেলের নির্দেশে প্রায় ২০০০ জন হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের কারণে ভারতবাসী ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এতে অসহযোগ আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে।

তাছাড়া ব্রিটিশরা ভারতীয়দের উপর নানাভাবে অত্যাচার করে, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন অসহযোগ আন্দোলনে শামিল করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ১ মিলিয়ন ভারতের সেনা নিয়োগ দিয়েছিল। যাদের নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও মিশনে পাঠানো হয়েছিল। যুদ্ধ শেষে সেনাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছিল। তাছাড়া দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকরা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। এর ফলে শিল্পপতি বণিক শ্রেণীও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তারা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক ভাবে অসুবিধা হয়ে পড়ে এবং এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সৃষ্টি হয়।

তাছাড়াও উপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠীগণ ভারতীয় উপমহাদেশের উপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার করা হয়। এ সফল অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন তৈরি করা হয়। তাছাড়া কৃষকরা অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়লে তারা অসহযোগ আন্দোলন করা শুরু করে। এছাড়াও ভারতীয়রা অসহযোগিতার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইন আদালত সরকারি চাকরির সকল কিছু বয়কট করে। তাছাড়াও ব্রিটিশ সরকার যে সকল সম্মাননা দিয়েছিল বা উপাধি দিয়েছিল সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাদের কর্তৃত্ব অবহেলা করে এবং প্রত্যাখ্যান করে, তাছাড়া গণ অংশগ্রহণ আয়োজন করে।

অসহযোগ আন্দোলনের ফলাফল

ব্রিটিশদের অত্যাচারে এই আন্দোলন শুরু হয়। তাই অসহযোগ আন্দোলনের ফলাফল কি হয়েছিল সেটা হয়তো আমাদের অনেকের জানা নেই। চলুন, অসহযোগ আন্দোলনের ফলে আমাদের কি উপকার হয়েছিল, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

এই আন্দোলনের ফলে অনেক মানুষ নেতাদের সমর্থন করেছিল এবং তাদের সহযোগিতা করেছিল। এছাড়াও ব্যবসায়ীরা আন্দোলনের সমর্থন করেছিল এবং সকল ধরনের স্বদেশী পণ্যগুলো তারা ব্যবহার করেন। তারা বিদেশি পণ্য প্রত্যাহার করেছিল, এছাড়াও কৃষকরা এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণি যারা রয়েছে তারাও ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। নারীরা প্রত্যক্ষভাবে বিরোধিতা শুরু করে এবং অসহযোগ আন্দোলনের যোগ দিয়েছিল। তাছাড়াও গান্ধীজীর অনুসরণ করেছিল এবং গান্ধীজি কর্মীদেরকে উৎসাহিত করেছিল। এছাড়াও ব্রিটিশদের যে মুকুট দিয়েছিল বা উপাধি দিয়েছিল সেগুলো ফেরত দিয়েছিল।

অসহযোগ আন্দোলন বলতে কি বুঝায়

অনেকে জানতে চায় যে অসহযোগ আন্দোলন বলতে কি বুঝায়? আসলে এই আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের আন্দোলন হয়েছিল। তাই এই আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন, এ বিষয় জেনে নেওয়া যাক।

ব্রিটিশ সরকার অন্যায় ভাবে ভারতীয়দের উপর অত্যাচার করেছিল। যার কারণে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ১৯২০ সাল থেকে ১৯২২ সালে পর্যন্ত যে আন্দোলন হয়েছিল ভারতবর্ষে সেটা অসহযোগ আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। তারপরও ব্রিটিশ সরকার এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধ রাখে এবং বিদেশী পণ্যগুলো বয়কট করে। ব্রিটিশ সরকার যে সকল নির্দেশ করে এবং সরকারি কাজ করতে বলে সেগুলো ক্ষেত্রে ভারতীয়দেরকে সহযোগিতা করে না। যার কারণে ব্রিটিশরা তাদের উপর অত্যাচার শুরু করে মূলত এই ধরনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছিল যাকে অসহযোগ আন্দোলন।

অসহযোগ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

অসহযোগ আন্দোলনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ছিল। তাই অসহযোগ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য আমাদের জানা প্রয়োজন। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো অসহযোগ আন্দোলনের কি। চলুন, এই বিষয় জেনে নেওয়া যাক।

এই আন্দোলন ছিল মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে জনগণকে অংশগ্রহণ করা এবং গণ বিক্ষোভ শুরু হয়। যেখানে ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশের সকল যোগাযোগের উপর অত্যাচার করেছিল। যা ভারতীয়রা তাদের অত্যাচার প্রতিহত করে আন্দোলন শুরু করে। ব্রিটিশদের সকল প্রকার আইনের অমান্য করে গান্ধী সাহেব প্রথমে জনগণকে সংগঠিত করে, আন্দোলন শুরু করে। এ ছাড়া ভারতীয়রা ব্রিটিশদের সকল প্রকার প্রতিষ্ঠান প্রত্যাহার করেছিল এবং সকল প্রকার শাসনব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলন অহিংস আন্দোলন ছিল যেখানে সকল প্রকার লোকজন অংশগ্রহণ করে।

অসহযোগ আন্দোলন কবে এবং কেন প্রত্যাহার করা হয়

অসহযোগ আন্দোলন বিভিন্ন কারণে প্রত্যাহার করা হয়, তবে অসহযোগ আন্দোলন কবে এবং কেন প্রত্যাহার করা হয়? আসলে আন্দোলন কেন প্রত্যাহার করা হয় সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন এ বিষয়ে নেওয়া যাক।

অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গান্ধীজি। তিনি বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অসহযোগ আন্দোলন বন্ধের প্রস্তাব করেন। বিশেষ করে ২৫ শে ফেব্রুয়ারি তিনি নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটি থেকে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। আসলে তিনি এ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শুধুমাত্র জনগণের সুবিধার জন্য কেননা এই সময়ে যদি তিনি এই আন্দোলনের প্রত্যাহার না করতেন, তাহলে হয়তো বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো। যার কারণে তিনি জনগণের পক্ষে তাদের সুবিধার জন্যই এই আন্দোলন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

অসহযোগ আন্দোলন কোথায় হয়েছিল

অনেকে জানতে চায় যে অসহযোগ আন্দোলন কোথায় হয়েছিল? আসলে অসহযোগ আন্দোলনটি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তার নেতৃত্বে ভারতে এই অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। প্রথমে তারা ভারত বর্ষ থেকে শুরু করে। এছাড়াও ১৯২০ সাল থেকে প্রায় দুই বছর পর্যন্ত সেই আন্দোলন চলতে থাকে, যা গান্ধীজীর এই আন্দোলনের ক্ষেত্রে অনেক অবদান রয়েছে এবং তার নেতৃত্বেই এই আন্দোলন পরবর্তীতে সফলতা অর্জন করে। যার কারণেই ইতিহাসে তার নাম উল্লেখ করেছে এবং তাকে এখন পর্যন্ত ভারত প্রতিষ্ঠার জনক বলা হয়ে থাকে। তাই অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব মূলত ভারতীয় ভারত থেকে শুরু হয়েছিল।

অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ

বিভিন্ন কারণে অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থতা হয়। তাই অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কেননা এই ব্যর্থতা কি কারনে হয়েছিল সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চলুন, ব্যর্থতার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

এ আন্দোলনের ব্যর্থতার পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে তার মধ্যে যেমন এই আন্দোলন প্রধান নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গান্ধীজি। তিনি যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিল সব ঠিক হবে তা কিন্তু নয়। তাই সকলের মতামত নিয়ে এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। তাছাড়াও এই অসহযোগ আন্দোলনের সাথে খেলাফত আন্দোলনের সংযুক্ত করার কারণে ও ব্যর্থ হয়ে যায়। এছাড়াও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পূর্ণ সমর্থন পাওয়া যায় না। যার কারণে এ আন্দোলন সফলতা অর্জন করতে পারে না। এছাড়াও যে সকল স্কুল কলেজ বয়কট করেছিল সেখানে অভিভাবকদের চাপের কারণে ছাত্ররা স্কুল কলেজে চলে যায়। আইনজীবীরা আদালতে কাজকর্ম করে।

তাছাড়া ১৯২২ সালে ব্রিটিশ সরকার গান্ধীজিকে গ্রেফতার করে, এতে এ আন্দোলন অনেকটাই ব্যর্থতায় পরিণত হবে। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার অধিকাংশ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে। এতে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়ে, সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং আন্দোলন দুর্বল হয়ে যায়। এছাড়া অনেক শ্রেণীর মানুষগণ বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলন করেছিল। বিশেষ করে কৃষকরা যেমন জমিদার মহাজন এদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে নাই। এ আন্দোলন দীর্ঘ দিন হওয়ার কারণে জনগণের আস্থা হারিয়ে যায় এবং মানুষ আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে না।

উপসংহারঃ

পরিশেষে বলা যায় যে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন ছিল এই অসহযোগ আন্দোলন। যার মাধ্যমে ভারত বর্ষ তাদের স্বাধীনতা ফিরে পায়। এছাড়াও এই অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল মহাত্মা গান্ধী। যার নেতৃত্বেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল এবং সকল শ্রেণীর মানুষ এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। তাই অসহযোগ আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব সম্পর্কে আর্টিকেলে সঠিক তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, আশা করি আপনার উপকার হবে। পোস্টটি ভাল লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Md. Mahmudul Islam
Md. Mahmudul Islam
আমি ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট ও সরকারি চাকরি করি। আমি অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করে ইনকাম করি, এছাড়াও ব্লগিং, SEO ও টেকনোলজি বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করি। এই কাজের উপর আমার ৩ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।