গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর খাবার কি কি জেনে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করুন
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন, তাই গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর খাবার কি কি? সম্পর্কে জানা থাকলে তারা তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারবে। চলুন, গর্ভবতী মায়েরা প্রতিদিন কতটুকু খাবার খাবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে কতটুকু পুষ্টিকর খাবার হলে গর্ভস্থ শিশুর দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, সেটা আমাদের জানা প্রয়োজন। কেননা পুষ্টিকর খাবার বাচ্চাকে সুস্থ রাখবে। তাই গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর খাবার কি কি? এ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃগর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর খাবার কি কি জেনে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করুন
গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর খাবার কি কি
অনেকে গর্ভবতী মায়েরা জানতে চায় যে, গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর খাবার কি কি? সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাহলে একজন গর্ভবতী সুস্থ থাকবে। চলুন, গর্ভবতী মায়ের যে খাবারগুলো উপকার হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
একজন গর্ভবতী মাকে গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত খাবার দেওয়া প্রয়োজন। ওই সময় তাকে স্বাভাবিক খাবারের সাথে প্রতি বেলায় অতিরিক্ত নূন্যতম এক মুঠো চালের ভাত, এক বড় চামচ পরিমাণ ডাল অথবা মাছ, মাংস, ডিম, দুধ খেতে দিতে হবে। সাথে বিভিন্ন ফল এবং রক্তবর্ধনকারী ও ভিটামিন এর সমৃদ্ধ শাকসবজি যেমন লাল শাক, কপি শাক, ধনেপাতা খাওয়া উচিত। গর্ভবতী অবস্থায় প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি খেতে হবে। খাওয়া খুবই প্রয়োজন যেমন লেবু, কমলা, লেবু, ডিম ইত্যাদি
একজন গর্ভবতীর প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া খুবই জরুরী কেননা তার গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রোটিনযুক্ত খাওয়া দরকার। প্রোটিন যুক্ত খাবারের মধ্যে যেমন মাছ, মাংস, ডাল, ছোলা, সিমের বিচি ইত্যাদি। গর্ভস্থ শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। এছাড়াও একজন মা সুস্থ থাকতে হলে তার ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। তাই ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়া খুবই জরুরী যেমন দুধ, দই, ছানা, মাখন, ঘি ইত্যাদি। একজন মায়ের রক্ত দিয়েই শিশু গঠিত হয় এবং শিশুর মেধাবিকাশ ও বৃদ্ধির জন্য রক্তের প্রয়োজন। তাই রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন যেমন লাল মাংস, কলিজা, ডিম, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি।
একজন গর্ভস্থ শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন। এছাড়াও মেধা বিকাশের জন্য ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন। ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে হচ্ছে সূর্যমুখী তেল, ডিম, মাছ ,সামুদ্রিক মাছ। এছাড়াও সবচেয়ে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় সূর্য আলো থেকে। সূর্যের আলো সবচাইতে বেশি ভিটামিন ডি রয়েছে। তাই একজন গর্ভবতী মা প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হলেও রৌদ্রে থাকতে হবে। উপরোক্ত খাবারগুলো অবশ্যই খাবেন কিন্তু যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে তার মধ্যে হল ক্যাফিনযুক্ত খাবার যেমন চা-কফি ইত্যাদি ।এছাড়াও লাল মাংস, চিনি, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে এবং নিয়মিত ঘুম দিতে হবে তাহলে সুস্থ বাচ্চা হবে। মা সুস্থ তো বাচ্চা সুস্থ।
গর্ভবতী মায়ের সুষম খাদ্য তালিকা
গর্ভবতী মায়ের সাধারণত সুষম খাদ্য খেতে হয় তাই গর্ভবতী মায়ের সুষম খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাহলে শরীরের পুষ্টিকর খাবার খাবারের চাহিদা পূরণ হবে। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
পূর্ণ বয়স্কদের মাঝে গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মা'দের আমিষ খাবারের দরকার বেশি কারণ, মায়ের খাবারের আমিষ উপাদান নিয়েই শিশুর শরীর বাড়ে। আবার কার কতটা শক্তি দরকার তা নির্ভর করে সে কি কাজ করছে তার ওপর। কেননা একই পরিমাণ খাবারের সবার চাহিদা মেটে না। বয়স, লিঙ্গ, কাজ ও শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে কার কতটা খাবার দরকার। যার বয়স যত কম আমিষ জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন তার তত বেশি। যে কাজ যত কঠিন অর্থাৎ শারীরিক যত বেশি শক্তি খরচ হবে প্রত্যেকের সামর্থের উপর নির্ভর করে সে কি ধরনের সুষম খাবার খেতে পারে। বেশি খরচ করে যেমন সুষমা খাবার খাওয়া যায় তেমনি অল্প খরচে সুষম খাবার খাওয়া যায়।
সুষম খাদ্য হচ্ছে সেই খাদ্য যাতে খাদ্যের সব পুষ্টি উপাদান দেহের প্রয়োজন মত, বয়স ও লিঙ্গ ভেদে সঠিক মাত্রায় থাকে। অর্থাৎ সুষম খাদ্য এমন একটি খাবার যা শক্তিধায়ক শরীর বৃদ্ধি কারক ও রোগ প্রতিরোধক। সুষম খাবার বলতে আমরা এমন খাবারই বুঝবো যাতে শরীরের প্রয়োজনীয় সবকিছু উপাদানই থাকে। অর্থাৎ আমিষ, শর্করা, স্নেহ বা তেল, খাদ্য প্রাণ বা ভিটামিন ও খনিজ লবণ শরীরের চাহিদা অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে থাকে।ব্যক্তিগত চাহিদা ও তার কারণসমূহের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে।
শিশুদের পুষ্টিকর খাবার কি কি
অনেক শিশু সাধারণত দুর্বল থাকে, তাই তাদের পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। এজন্য শিশুদের পুষ্টিকর খাবার কি কি? এ সম্পর্কে হয়তো অনেকের জানা নেই। চলুন, পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
শিশুর জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সর্বোচ্চ এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুর মায়ের শাল দুধ খাওয়াতে হবে এবং ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে এবং দিনে রাতে ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ৮ বার অথবা শিশু যতবার চায় ততবার খাওয়াতে হবে। তাকে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার দিতে হবে। খিচুড়ি, কলা, ডিম, মাছ ,মাংস, ফল ও সবজি নরম করে খাওয়াতে হবে। প্রথমে তরল তারপর গারো তরল এবং আস্তে আস্তে শক্ত খাবার দিতে হবে। মায়ের দুধের সাথে এই সকল খাবার দিনে ৩ থেকে ৪ বার দেওয়া যেতে পারে। আর মায়ের দুধ না পেলে না খেলে এই খাবার দিনে ৫ বার দিতে হবে। খাবারের পরিমাণ ও কতবার খাবে সেটা তার বয়সের উপর নির্ভর করে।
২৫০ মিলি বাটি দিনে ১ বার সেই সাথে দুবার নাস্তা। দেশি ফল বিস্কুট অথবা সামর্থ্য অনুযায়ী ঘরে তৈরি খাবার বা নাস্তা যেমন মুড়ি, পিঠা ইত্যাদি। আধাবাটি ২৫০ মিলি বাটি দিনে তিনবার সেইসাথে দুইবার নাস্তা ফল বিস্কুট ইত্যাদি মায়ের দুধের পাশাপাশি খিচুড়ি, কলা, ডিম, মাছ, মাংস, ফল ও সবজি মোট পাঁচবার দিতে হবে। ২৫০ মিলি বাটি দিনে তিনবার সেইসাথে নাস্তা, ফল, বিস্কুট ইত্যাদি। ২ বছরের ঊর্ধ্বে স্বাভাবিক পারিবারিক খাবারে দিনে তিনবার এবং সেই সাথে ফলমূল বা হালকা অন্য খাবার দিনে দুইবার অর্থাৎ মোট পাঁচবার দিতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে শিশুর পাকস্থলী ছোট তাই সে বেশি খাবার একসাথে খেতে পারবে না তাই শিশুকে তার খাবার বারে বারে দিতে হবে। শিশুর খাবার শক্তি বা ক্যালোরি সমৃদ্ধ করতে শর্করা আর পরিমাণ কমিয়ে তেলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে এবং যেহেতু তার শারীরিক বৃদ্ধি খুব দ্রুত ঘটছে। তাই তার খাবারের আমিষের পরিমাণটা একটু বাড়িয়ে দিতে হবে। এই সময়ে নিয়মিত অর্থাৎ প্রতি মাসে একবার শিশুর ওজন দেখতে হবে সাধারণত জন্মের সময় যে ওজন হবে ৬ মাস পর তার দুই গুন এবং ১ বছর পর জন্মের ৩ গুন ওজন এবং ২ বছর পর জন্মের ৪ গুণ ওজন হবে। সুষম খাদ্য না পেলে জন্মের পর শিশুর বৃদ্ধি দেরিতে হয়।
শিশুদের খাবার খাওয়ানোর জন্য বিশেষ কিছু কৌশল রয়েছে নিম্নে দেওয়া হল। শিশুদের নতুন নতুন খাবারের সাথে পরিচয় করে দিন। কেননা তারা নতুন খাবার খেতে পছন্দ করে এবং তারা সেই খাবারগুলো খুবই ধীরে ধীরে খায়। আপনিও ধৈর্য ধারণ করে তাদেরকে খাওয়াবেন এবং খাওয়াতে উৎসাহিত করবেন। শিশুদের খাওয়ানোর সময় আনন্দ দেওয়া উচিত। কেননা আনন্দের সাথে তারা খেতে খুবই পছন্দ করে এবং অনেক দ্রুত গতিতে খেয়ে থাকে। শিশুদের খাবারের জন্য চাপ দিবেন না। কেননা শিশুদেরকে খাবারের জন্য জড়াজড়ি করলে তারা খেতে চায় না।তাই পরবর্তীতে খাবারটা রেখে দিয়ে যখন তাদের ক্ষুধা লাগে তখন খাবার চায়, তখন খেতে দিবেন।

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url