কি খেলে হাঁপানি বা এজমা ভালো হয়- হাঁপানি বা এজমা থেকে মুক্তির উপায়

কি খেলে হাঁপানি ভালো হয় এটা হাঁপানি রোগীদের জানা খুবই প্রয়োজন। হাঁপানি হলো একটি অসংক্রমন রোগ। এটা সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি হয়। যখন ফুসফুসের ছোট ছোট বায়ুপথে প্রদাহ হয়।তখন বায়ুপথ গুলো সংকীর্ণ হয়,যাকে এজমা বা হাপানি বলে। চলুন হাঁপানি কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পোস্টসূচিপত্রঃকি খেলে হাঁপানি বা এজমা ভালো হয়- হাঁপানি বা এজমা থেকে মুক্তির উপায় জানুন


শ্বাসকষ্ট রোগীদের সাধারণত শ্বাসনালী গুলো ফুলে ওঠে,শ্বাসকষ্ট হয়,বুকে শক্ত হয়ে যাওয়া এবং কাশি হওয়া।যাদের এই লক্ষণ গুলো হালকা থেকে গুরুতর অবস্থা হয়,তখন তাকে বলা হয় এজমা এটাক।

ভূমিকা

হাঁপানি হল এমন একটা শারীরিক অসুস্থতা যার দ্বারা সব বয়সের লোকই আক্রান্ত হতে পারে।যাদের হাঁপানি আছে তাদের ফুসফুসের শ্বাসনালী সাধারণ লোকজনের তুলনায় অনেক বেশি স্পর্শকাতর। অর্থাৎ সামান্য কারণেই শ্বাসনালী সংকুচিত হয়,তাই শ্বাসকষ্ট এমন একটি রোগ যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।কেননা শ্বাসকষ্ট অনেক কষ্টদায়ক একটি রোগ।বিশেষ করে শীতকালে এই রোগ বেশি হয়। শীতকালে অনেক নিয়ম তান্ত্রিকভাবে জীবন যাপন করতে হবে।

হাঁপানি কি

হাঁপানি কি তা হল শ্বাসনালী সংকুচিত হলে শ্বাসনালীর পথ সংকীর্ণ হয়ে যায় ফলে শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট অনুভূত হয় এর ফলে বুকের ভিতর সাঁ সাঁ শব্দ হয়।শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সময় ঘন ঘন কাশি দেয়,দম বন্ধ হয়ে যাওয়া,বাতাস ফুরিয়ে যাওয়ার মত অনুভূতি হয় এবং বুকে আঠা-সাট ধরনের চাপ অনুভব করে।এসব লক্ষণ গুলি 
বেশি আকারে দেখা দিতে পারে।সংকুচিত হওয়ার কারণে শ্বাসনালী বারবার এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে আমরা তাকে হাঁপানি বলি।এ শ্বাসকষ্ট প্রাথমিক অবস্থায় আপনা আপনি চলে যায়,আবার ঔষুধের মাধ্যমে চলে যায়,শ্বাসকষ্ট অবস্থায় এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক রোগ এবং সঠিক চিকিৎসা না হলে এই রোগ দীর্ঘমেয়াদী ও জটিল আকার ধারণ করে।

হাঁপানির কারণ

হাঁপানির কারণ হল, হাঁপানি এমন এক অসুখ যার অন্তর্নিহিত আসল কারণ কি আমরা জানিনা,আমরা যেগুলিকে কারণ বলে থাকি এগুলো আসলে হাঁপানির জন্য উত্তেজক উপাদান।যেমন একজন লোকের ধুলা লাগার পর শ্বাসকষ্ট শুরু হল,এই ধুলা কিন্তু হাঁপানির কারণ নয়।যদি কারনই হবে মানুষের ধুলাতে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে না কেন? এর থেকে বোঝা যায় ধূলা হাঁপানি রোগের শ্বাসনালীর ভিতর লুকিয়ে থাকা রোগকে প্রকাশ করে মাত্র। রোগের উপর নির্ভর করে হাঁপানি বা এজমা সাধারণত নিম্ন ধরনের
  • এলার্জির কারণে এজমা
  • ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এজমা
  • শারীরিক পরিশ্রমের কারণে এজমা
  • পেশাগত কারণে এজমা
  • আবহাওয়ার কারণে এজমা
  • মানসিক চাপের কারণে এজমা
  • ঔষধের কারণে এজমা
  • হাঁপানির লক্ষণ সমূহ
  • শ্বাসকষ্ট
  • ধুলাবালি বা ঠান্ডা থেকে
  • সর্দি লাগার পর
  • ব্যথা ও প্রদাহর অধিক ঔষধ সেবনে
  • কাশি,বিশেষ করে ধুলা বা ঠান্ডা থেকে শুষ্ক কাশি হয়
  • শ্বাস নেওয়ার সময় বাঁশির মত শব্দ করে এবং অনেক কষ্ট হয়।
  • হঠাৎ করে বুকের উপর চাপ বা দম বন্ধ ভাব অনুভব করা

এজমা কত প্রকার

হাঁপানি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে তবে উপসর্গের দিক দিয়ে এজমা কত প্রকার হয় নিম্ন আলোচনা করা হলোঃ

হাঁপানি মূলত চার প্রকার। হঠাৎ করে এ ধরনের হাঁপানি এলার্জি অর্থাৎ ঠান্ডা ধুলা বা পশু পাখির সংস্পর্শে আসলে উপসর্গ শুরু হয়। এই উপসর্গ কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হয়,ঔষধ ব্যবহারের রোগী অসুস্থ হয়ে যায়। 
  • এলার্জির কারণে
  • আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে
  • পেশাগত কারণে
  • ব্যায়ামের কারণে
  • সাধারণত এ ধরনের অ্যাজমাতে আক্রান্ত হয়,এই রোগী আবার তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়।
  • স্থায়ী পুরাতন এজমা পাওয়া
  • নিয়মিতভাবে অনিয়মিতভাবে বা অপরিকল্পিতভাবে অপর্যাপ্ত ওষুধ খেলে
অনেক দিন এজমাতে ভুগলেই স্থায়ী হয়। এই ধরনের রোগীদের সবসময় কিছু না কিছু শ্বাসকষ্ট থাকে এবং সামান্য পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।তাদের সব সময় বাঁশির মতো এই শব্দের সাথে তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
মারাত্মক জটিল আজমা যেকোনো ধরনের এজমা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে,যে কোন সময় মারাত্মক জটিল আকার ধারণ করে।এই ধরনের হাঁপানিতে এলার্জি অর্থাৎ ঠান্ডা ধুলা বা পশু পাখির সংস্পর্শে 
আসলে উপসর্গ শুরু হয়। এই রোগীকে চিকিৎসা করা খুব কঠিন,তাই সব রোগীকে সচেতন থাকতে হবে।যেন মারাত্মক জটিল আজমা আক্রান্ত না হয়।
শারীরিক পরিশ্রমের কারণে এজমা কোন কোন রোগের শুধুমাত্র শারীরিক পরিশ্রম করলেই হাঁপানি উপসর্গ দেখা যায়।তাই এটাকে আমরা আলাদাভাবে বলি সব হাঁপানি রোগী কম বেশি ওষুধ ছাড়া শারীরিক পরিশ্রম করে হাঁপানিতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

হাঁপানি রোগের প্রতিরোধ

  • মুক্ত বাতাসে থাকার চেষ্টা করতে হবে
  • আপনি যে সকল জিনিস ব্যবহার করলে হাঁপানি বৃদ্ধি পেতে থাকে সেগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে
  • ধূমপান বর্জন করতে হবে
  • হাঁপানি বা অ্যাজমা থেকে মুক্তির উপায়
  • হাঁপানি আক্রমণের জন্য দায়ী উত্তেজক বস্তু সমূহ থেকে দূরে থাকতে হবে তাহলেই হাঁপানি বা এজমা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।সেই সকল উত্তেজক বস্তু সমালোচনা করা হলো দায়ী।সেগুলো প্রতিরোধ করতে হবে।
  • ধুলাবালি যেন নাক বা মুখের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য মাক্স ব্যবহার করতে হবে।
  • বসন্তকালে ঘাসে ঢাকা মাঠ থেকে বিরত থাকতে হবে
  • ফুল থেকেও এলার্জি জাগলে সেই ফুল থেকেও সাবধান থাকতে হবে
  • বাঁলিশের তুলা,পাখির পালক,কাঁথার আঁশ
  • পশুর লোম
  • কার্পেট
  • কাঁচা রঙের গন্ধ
  • পোকামাকড় এর কামুরে
  • বাদাম খাওয়ার ফলে।
  • ঠান্ডা দুধ বা পানি
  • ঔষধ
  • কলা জাতীয়
  • কোমল পানীয়,কোকাকোলা
  • ঠাণ্ডা শুষ্ক বাতাস
  • উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তা
  • যাদের ঠান্ডা-সর্দি লেগেছে তাদের সংস্পর্শে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো এলার্জি হওয়ার জন্য উত্তেজক হিসেবে কাজ করে থাকে।তাই এই উত্তেজক বস্তুগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে,তাহলে হাঁপানির আক্রমণ থেকে অনেকটাই রক্ষা পাবেন।

কি খেলে হাঁপানি ভালো হয়

কি খেলে হাঁপানি ভালো হয় নিম্নে সেই সকল খাবার গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

পালং শাকঃ পালং শাকে অনেক ধরনের ভিটামিন থাকে যার কারণে হাঁপানি অনেকটা কমিয়ে নিয়ে আসে তাই আপনি বেশি বেশি পালন শাক খাবেন।
আপেল এ রয়েছে ফাইবার, এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা ওজন কমাতে এবং পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।হৃদরোগ, ক্যান্সারের ঝুঁকি,হাঁপানির মতো রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
বেদানা এতে রয়েছে ভিটামিন কে,ফাইবার এবং এন্টিএক্সিডেন্ট যা শ্বাসকষ্ট এবং হাঁপানি রোগীদের শ্বাসকষ্ট থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।তাই যারা হাঁপানি রোগী রয়েছেন তারা বেদানা খেতে পারেন।
আঙ্গুর এটা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী এবং এটা শরীরের অক্সিজেন বৃদ্ধি করে যা হাঁপানি রোগ কমিয়ে নিয়ে আসে।
ব্রোকলিঃ ব্রুকলিতে যে ধরনের ভিটামিন থাকে সেটা শ্বাসকষ্ট রোগের জন্য অনেক উপকারী তাই আপনি ব্রুকলি খেতে পারেন।
ওমেগা -৩ সামুদ্রিক মাছে রয়েছে ওমেগা-৩,যা হাঁপানি রোগীদের জন্য অনেক উপকার।
চা খেলে শ্বাসকষ্টের অনেক উপকার হয়।
কুসুম গরম পানিতে এক চামচ মধু মিশিয়ে দিলে ২-৩ বার খাইলে হাঁপানি রোগীর জন্য অনেক উপকার পাওয়া যাবে
শ্বাসকষ্ট রোগীরা উপযুক্ত খাবারগুলো মেনে চললে শ্বাসকষ্ট থেকে অনেকটাই উপকৃত হবেন।এছাড়াও শ্বাসকষ্ট রোগীরা কিছু খাবার মেনে চলবে ঠান্ডা দুধ,ডিম, চিনা বাদাম এছাড়া ফ্রোজেন আলোর চিপস ইত্যাদি।বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এই সকল খাবারগুলো খেলে শরীরের হাঁপানি আরো বাড়িয়ে দেয়। আশা করি উপরোক্ত খাবারগুলো সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন যে কি খেলে হাঁপানি ভালো হয়। অতএব উপুক্ত খাবার গুলো খাবেন ভালো হয়ে যাবে।

হাঁপানি রোগের আধুনিক চিকিৎসা

হাঁপানি রোগের অনেক ধরনের ওষুধ রয়েছে।সাধারণত দুই ধরনের ওষুধ ব্যবহৃত হয়।শ্বাসনালীর সংকোচন প্রসারিত করার জন্য যে সকল ওষুধ ব্যবহৃত করা হয়।যেমন সালবিটামল, থিউফইলিন,ব্যামবুটারুন ইত্যাদি।এই ওষুধগুলো ট্যাবলেট,সিরাপ ও ইনহেলান হিসেবে বাজারে পাওয়া যায়।

প্রদাহ নিরাময়ের ওষুধ কর্টিকোস্টরেড, মন্টিলুকাস্ট,জাফরিলুকাস্ট এ সকল ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এলার্জির ভ্যাকসিন অথবা থেরাপি দেওয়া হয় এবং এলার্জি জাতীয় খাবার গুলো এড়িয়ে চললে এলার্জি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে, ওষুধ খাবার থেকে অনেকটাই কমে যায় অর্থাৎ কর্টিকোস্টরেড ওষুধটা অনেকটা কমে যায়।যার কারণে কর্টিকোস্টরেড এই ওষুধটার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়।বর্তমানে অধিকাংশ দেশে অর্থাৎ উন্নত দেশগুলোতে এই পদ্ধতি বেশি ব্যবহার করা হয়।

এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এলার্জির এই ভ্যাকসিনেশন দেওয়াকে অ্যাজমা রোগের অন্যতম চিকিৎসা হিসেবে ঘোষণা করেছে।এটাই একমাত্র চিকিৎসার অন্যতম একটি মাধ্যম আগে ধারণা ছিল এজমা হলে একবারে সারে না কিন্তু এই হিরো এখন জটিল রূপ ধারণ করতে পারে যদি আপনি প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা ঠিকঠাক মত না নেন।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায় যে এজমা বা হাঁপানি রোগ প্রাথমিক অবস্থায় যদি চিকিৎসা না করা হয় তাহলে পরবর্তীতে জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই যাদের হাঁপানি রয়েছে তারা অবশ্যই প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিবেন। এই রোগ সাধারণত শীতকালে বেশি হয়ে থাকে এবং ঠান্ডা, এলার্জি জাতীয় খাবার গুলো এড়িয়ে চললে সুস্থ থাকা সম্ভব। আমার এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হন, তাহলে পোস্ট টা বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। ধৈর্য ধারণ করে পোস্টটা পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


 

 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪