মৃগেল মাছ খেলে কি মৃগী রোগ হয় ও গর্ভাবস্থায় নিরাপদ কিনা

অনেকে জানতে চায় যে, মৃগেল মাছ খেলে কি মৃগী রোগ হয়? আসলে মৃগেল মাছ খেলে কখনোই মৃগী রোগ হবে না। এটা একটি অবৈজ্ঞানিক কথা। চলুন, মৃগেল মাছ খেলে মৃগী রোগ হবেনা এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
গ্রামের কিছু বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলারা গর্ভবতী মায়েদের বলে থাকে যে, মৃগেল মাছ খেলে গর্ভস্থ শিশুর মৃগী রোগ হবে। এটা একটি কুসংস্কার মূলক কথা। তাই মৃগেল মাছ খেলে কি মৃগী রোগ হয়? এ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃমৃগেল মাছ খেলে কি মৃগী রোগ হয় ও গর্ভাবস্থায় নিরাপদ কিনা

মৃগেল মাছ খেলে কি মৃগী রোগ হয়

অনেকে প্রশ্ন করে থাকে যে, মৃগেল মাছ খেলে কি মৃগী রোগ হয়? মৃগেল মাছ কখনো মৃগী রোগ তৈরি করতে পারেনা। চলুন, মৃগেল মাছ আসলে মৃগী রোগ তৈরি করে কিনা? এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা যাক।

মৃগেল মাছ খেলে মৃগী রোগ হবে, এটা একটি অবৈজ্ঞানিক কথা। তাই আপনারা কখনোই এই ধরনের ভ্রান্ত কুসংস্কার মূলক কথাগুলো বিশ্বাস করবেন না। এই মাছ খাওয়ার পরে আপনার কোন রোগ ছড়াবে না। এছাড়াও এ মাছের মাঝে এমন কোন রাসায়নিক উপাদান নাই যে, যার মাধ্যমে আপনার মৃগী রোগ হতে পারে। এছাড়াও চিকিৎসকরা কখনোই প্রমাণ করতে পারে নাই যে, এই মাছ খাওয়ার কারণে মৃগী রোগ হয়েছে।

এই মাছ অনেক সুস্বাদু যার কারণে বহু লোক খাচ্ছে কিন্তু যদি এই মাছ খাওয়ার কোন মৃগী রোগ হতো তাহলে লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃগী রোগে আক্রান্ত হত। তবে গ্রাম অঞ্চলে একটা প্রচলিত কথা আছে বা কিছু মানুষজন গল্প বানিয়েছে যে মৃগেল মাছ খেলে মৃগী রোগ হবে।

কিছু গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলারা গর্ভবতীদেরকে মৃগেল মাছ খেতে নিষেধ করে থাকে। তারা বলে যে, এই মাছ খেলে গর্ভস্থ শিশুর মৃগী রোগ হবে। এটা একদমই অবৈজ্ঞানিক কথা। এই ধরনের কথা কখনোই যুক্তিসঙ্গত নয়। কেননা এই মাছ কখনোই মৃগী রোগ ছড়াতে পারবে না। এই ধরনের উপাদান এর মাঝে নেই।

তবে গ্রামের লোকজন সাধারণত এটা ধারণা করেছে যে, মৃগেল শব্দটির সাথে মৃগী রোগের শব্দটা মিল রয়েছে। যার কারণে তারা মনে করে মৃগেল মাছ খেলে মৃগী রোগ হবে। এটা এক ধরনের হাস্যকর কথা। এই ধরনের অজ্ঞতার যুগ এখন বর্তমানে নেই, এখন বিজ্ঞানের যুগ। তাছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ ধরনের কোন কথা উল্লেখ নাই।

গ্রামে আরো একটি কথা বা গল্প রয়েছে যে, একজন মৃগী রোগী মাছ খেয়েছিল একটু পরে তার খিচুনি হয়েছিল। যার কারণে মনে করে যে, মৃগেল মাছ খাওয়ার কারণে তার মৃগী রোগ হয়েছে কিন্তু চিকিৎসার পরে দেখা গেছে তার পূর্বে থেকেই মৃগী রোগ ছিল অথচ এটা মাছের দোষ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মাছ কখনোই এই ধরনের রোগ তৈরি করতে পারে না।

চিকিৎসকরা সাধারণত এই রোগকে নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার বলে অবহিত করে থাকে। মূলত মস্তিষ্কের কোষে যখন হঠাৎ করে বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ছড়িয়ে যায় অর্থাৎ আলোকিত হয় সেই মুহূর্তে এই রোগটি দেখা দেয়। যার কারণে খিচুনি হতে পারে বা অজ্ঞান হয়ে যায়, হাত পা টানটান হয়ে যায়, মুখ দিয়ে ফেনা বের হয় ইত্যাদি উপসর্গ গুলো দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসকরা বলেন মৃগেল মাছ খাওয়ার কারণে কখনই মৃগী রোগ হবে না। এটা একটি ভুল ধারণা, এই রোগ আসলে সংক্রামক রোগ নয়। তাই মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি খাবার মাধ্যমে কখনোই এই রোগ হয় না। এই মাছটি অত্যন্ত পুষ্টিকর যা মানুষের শরীরে প্রোটিনের চাহিদা মিটায়।

তাছাড়া বিজ্ঞানীরা বলেছেন মৃগী রোগী এই মাছ খাওয়ার পরে কখনই খিচুনি হবে না। মূলত মৃগী রোগীর খিচুনি যে কারণে হয়ে থাকে তা হল; সে যদি নিয়মিত ওষুধ না খায়, স্ট্রেস কমাতে না পারে, ঘুম কম হয়, জ্বর আসে, এছাড়াও আলোর ঝলকানি দেখলেই এই ধরনের রোগীগুলোর খিচুনি হতে পারে।

এই ধরনের রোগীকে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খাওয়াতে হবে। মানসিক টেনশন এ রাখা যাবে না, ঘুম যেন কম না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং অত্যাধিক আলোর ঝলকানি বিকট শব্দ থেকে দূরে রাখতে হবে।

এই রোগটি সাধারণত যে কারণে হতে পারে সেটা হলো; জন্মগত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে হতে পারে যেমন অনেক বাচ্চা জন্মগ্রহণ করতে গিয়ে মাথায় আঘাত পায়, এছাড়াও মস্তিষ্কে যদি টিউমার থাকে, ইনফেকশন হয়। এছাড়াও স্ট্রোক করলে, বংশগত কারণেও এই ধরনের রোগ হতে পারে।

তবে মনে রাখবেন এই ধরনের রোগীকে দেখে কখনো ভয় পাবেন না। কেননা এটা কোন সংক্রামক রোগ নয় তাই একজনের থেকে আরেকজনের ছড়ায় না। তাই এ ধরনের রোগীগুলো যখন খিচুনি হবে বা অজ্ঞান হয়ে যাবে, তাকে সহযোগিতা করবেন। এ ধরনের রোগীকে এই সময় অবশ্যই আলো থেকে দূরে রাখবেন। একটু অন্ধকারের ভিতর রাখার চেষ্টা করবেন, কারণ আলোর ঝলকানিতে আরো বেশি খিচুনি হয়ে থাকে।

মৃগেল মাছ আমাদের বাংলাদেশে খুবই পরিচিত। যা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ সহ বিভিন্ন দেশের নদ নদী বা পুকুরে এই মাছটি চাষ করা হয়ে থাকে। এই মাছগুলো সাধারণত মাঝারি থেকে অনেক বড় হয়। এর শরীরটা অত্যন্ত নরম খুব সুস্বাদু, প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। এছাড়াও কাঁটা কম থাকে, এ মাছটি সচরাচর বাজারগুলোতে দেখা যায় এবং দামও খুবই কম।

তাছাড়া রুই, কাতলা, কালবাউশ এই ধরনের মাছের মতোই এই মৃগেল মাছ। তাই এই মাছগুলো খাওয়ার পাশাপাশি মৃগেল খাবেন। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, প্রোটিন, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, আয়রন, জিংক, ভিটামিন এ, ডি, ফসফরাস ইত্যাদি থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য উপকার করে থাকে। তাই মৃগেল মাছ খেলে কখনোই মৃগী রোগ হতে পারে না। এটা একটি ভ্রান্ত ধারনা মাত্র। তাই মৃগেল মাছ খেতে পারেন।

মৃগেল মাছের পুষ্টিগুণ

এই মাছ আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে। তাই মৃগেল মাছের পুষ্টিগুণ আপনার শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য দারুন কাজ করে থাকে। তাই এই মাছটি খাওয়া যেতে পারে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক।

এই মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। বিশেষ করে এর মধ্যে কম ক্যালোরি থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য উপকার। এছাড়াও প্রোটিন, ভালো ফ্যাট থাকে যা চর্বি কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও খারাপ কোলেস্টেরলকে দূর করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২, আয়রন, জিংক, সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ওমেগা-৩, ফ্যাটি এসিড থাকে যা আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

এছাড়াও আপনার শরীরের পেশী গঠন করতে সাহায্য করবে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, হৃদরোগের প্রতিরোধের সাহায্য করবে, রক্তস্বল্পতা দূর করবে। এছাড়া ক্যালসিয়াম, ফসফরাসের থাকার কারণে হাড় গঠন ও দাঁতের মজবুত করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে।

মৃগেল মাছের উপকারিতা

মৃগেল মাছ বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। তাই মৃগেল মাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানা আমাদের প্রয়োজন। চলুন, এই মাছ আমাদের শরীরে কি উপকার করে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
হার্টকে ভালো রাখেঃ মৃগেল মাছের মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, যা আমাদের হার্টের সমস্যা দূর করে এবং হার্টকে ভালো রাখে। তাই নিয়মিতভাবে অল্প পরিমাণে মৃগেল মাছ খেতে পারেন। এতে আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, খারাপ কোলেস্টোরল দূর করে। এছাড়াও রক্তনালিকে রক্ত জমাট প্রতিরোধ করতে পারে। হৃদ স্পন্দন ভালো রাখতে সাহায্য করে।

দৃষ্টিশক্তি ভালো করেঃ অনেকের চোখের রেটিনার সমস্যা থাকে, চোখে দেখতে পারেনা। পরবর্তীতে অন্ধত্ব হয়ে যায়, এছাড়াও চোখের শুষ্কতা দেখা দেয়, রাতকানা রোগের সমস্যা হতে পারে। তাই দৃষ্টি শক্তিকে ভালো রাখার জন্য এই মিরকা মাছ খাওয়া যেতে পারে। কেননা এর মাঝে ভিটামিন-এ, রয়েছে যা আপনার এই ধরনের সমস্যাগুলো দূর করবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন জাতীয় বা পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও পাশাপাশি প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন খেতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে মিরকা মাছ খাওয়া যেতে পারে।

কেননা এর মাঝে প্রাণিজ প্রোটিন থাকে বিশেষ করে ভিটামিন ডি, জিংক যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে। পাশাপাশি শ্বেত রক্ত কণিকার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। শরীরকে এন্টি বডি করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। তাই নিয়মিতভাবে শিশু থেকে একদম বয়স্ক পর্যন্ত এই মাছ খাওয়া যেতে পারে।
হাড় ও দাঁতের সুস্থতাঃ ছোট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত অনেকেরই ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষগুলোর ক্যালসিয়ামের অভাবে হাঁটু ব্যথা শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা হতে পারে এবং দাঁতের সমস্যা দেখা দেয়। এই ধরনের সমস্যা দূর করার জন্য আপনি মিরকা মাছ খেতে পারেন।

কেননা এর মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন ডি ইত্যাদি থাকে। যা আপনার শরীরের হাড় ও দাঁতের গঠন এবং মজবুত করতে সাহায্য করবে। শরীরের যে সকল সন্ধিতে ব্যথা করে সেগুলো দূর করবে, এছাড়া দাঁতের এনামেলকে শক্তিশালী করবে, তাছাড়া মহিলাদের সাধারণত শরীরে হাড়ের সমস্যা দূর করার জন্য এই মিরকা মাছ খাওয়া যেতে পারে।

ত্বক ভালো রাখেঃ অনেকের অল্প বয়সে ত্বকে বার্ধক্য দেখা দেয়। তাছাড়া ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়, শুষ্কতা দেখা দেয়, বিভিন্ন ধরনের দাগ বা মেস্তা দেখা দেয়। এই ধরনের সমস্যা দূর করার জন্য আপনি মৃগেল মাছ খেতে পারেন।

কেননা এর মধ্যে ভিটামিন ই ও সেলেনিয়াম থাকে যা আপনার ত্বককে সুস্থ রাখবে, এছাড়াও ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখবে, প্রদাহ সমস্যাগুলো দূর করবে। অনেকের ত্বকের একজিমার মত সমস্যা থাকে এটা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও সূর্যের ক্ষতিকর রশি থেকে রক্ষা করবে। তাছাড়া এই মিরকা মাছের মধ্যে কোলাজেন থাকে যা আপনার ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ঠিক রাখবে। পাশাপাশি বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ যাদের ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে ওজন বেড়ে যাচ্ছে অথবা শরীরের চর্বির বৃদ্ধির কারণে ওজন বাড়তে পারে। এতে করে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি সৃষ্টি হয়। তাই এই ধরনের সমস্যা দূর করার জন্য মৃগেল মাছ খাওয়া যেতে পারে। কেননা এর মধ্যে প্রোটিন থাকে, ক্যালোরি কম থাকে। যার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।

অতিরিক্ত ক্যালরি খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ থাকবে না, খাদ্য অভ্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করবে, মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করবে। এছাড়াও শরীরের চর্বি কমাতে দ্রুত কাজ করে থাকে। তাই আপনি দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এই মিরকা মাছ রাখতে পারেন। এতে করে আপনার ওজন কমতে সাহায্য করবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা সাধারণত রক্তের শর্করার মাত্র নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকেন। তাই এই ধরনের রক্তের শর্করার মাত্রা কমানোর জন্য আপনি মৃগেল মাছ খেতে পারেন। কেননা এর মধ্যে প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে যা আপনার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।

এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে যে যদি আপনি নিয়মিত ভাবে এই মৃগেল মাছ খেতে পারেন, এতে ইনসুলেনের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করবে। এছাড়াও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করবে। যাদের অতিরিক্ত ডায়াবেটিস আছে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, তারা এই মৃগেল মাছ খেতে পারেন। যাদের টাইট-২, ডায়াবেটিস রয়েছে তারা এই মাছ খেলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

গর্ভাবস্থায় মৃগেল মাছ খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় অনেকেই মৃগেল মাছ খেতে চায় না, তাই গর্ভাবস্থায় মৃগেল মাছ খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাহলে কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন। কেননা মৃগেল মাছ একজন গর্ভবতীর অনেক উপকার করে থাকে। চলুন, মৃগেল মাছ গর্ভবতীর কি উপকার করে এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক সুস্থ রাখেঃ আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের ক্ষেত্রে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এর প্রয়োজন হয়। তাই আপনি এই মৃগেল মাছ খেতে পারেন।এর মাঝে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে।

একজন গর্ভবতী যদি এই মাছটি নিয়মিতভাবে খেতে পারে, তাহলে শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের পাশাপাশি তার পুষ্টির চাহিদা মিটাবে। এছাড়াও শিশুর বৃদ্ধির বিকাশে সাহায্য করবে। তাই একজন গর্ভবতী মা এই মাছটি খেতে পারেন, এতে শিশুর মেধাবিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ এই সময়ে গর্ভবতী মায়েদের রক্তের বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়। এজন্য আয়রন, ভিটামিন বি-১২, ফলিক এসিডের প্রয়োজন। কেননা এগুলো গর্ভবতী মহিলার রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করবে। এজন্য আপনি এই মৃগেল মাছ খেতে পারেন।

কেননা এই মাছের মাঝে এই উপাদানগুলো পাওয়া যায়। যার কারণে একজন গর্ভবতী মায়ের হিমোগ্লোবিনের চাহিদা পূরণ করবে। তাই গর্ভবতী মহিলা নিয়মিতভাবে অল্প পরিমাণ করে এই মাছটি খেতে পারেন। এতে আপনার রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করবে।

জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত ফলিক এসিড ও আয়রন, ভিটামিন বি৯ এর অভাবে সাধারণত বাচ্চাদের জন্মগত ত্রুটির সমস্যা দেখা দেয় ও প্রতিবন্ধী হতে পারে। তাই এই ধরনের উপাদান গুলো পূরণ করার জন্য খাওয়া মৃগেল মাছ খাওয়া যেতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়ঃ গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন জাতীয় খাবার গুলো খেতে হয়। তার মধ্যে এই মৃগেল মাছ খেতে পারেন। কেননা এর মধ্যে জিংক, ভিটামিন ডি ইত্যাদি রয়েছে যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে, সংক্রমণ ও গর্ভকালীন জটিলতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। তাছাড়া গর্ভবতী মহিলারা পরিমাণ মতো এই মাছ খেতে পারেন।

বুকের দুধ বৃদ্ধি করেঃ একজন গর্ভবতী মায়ের সাধারণত এই সময় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং পুষ্টি জাতীয় খাবার গুলো খাওয়া প্রয়োজন। কেননা সন্তান হওয়ার পরে তার বুকের দুধের জন্য পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন হয়। তাই গর্ভবতী মায়েদের এই সময় যদি মৃগেল মাছ খাওয়ানো হয় সে ক্ষেত্রে বুকের দুধ বৃদ্ধি পাবে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ গর্ভবতী মায়েদের মধ্য অনেকের হৃদ রোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে অথবা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য হার্টের সমস্যা বা স্ট্রোক করার সম্ভাবনা থাকে। এই সময়ে ফ্যাটি এসিড কমে যায় তাই একজন গর্ভবতী মহিলা এই মৃগেল মাছ খেতে পারেন। কেননা এর মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। তাছাড়া অনেক গর্ভবতী মহিলাদের প্রি এক্লামশিয়া দূর করার জন্য এই মাছ খাওয়া যেতে পারে।

মৃগেল মাছ খেলে কি ক্ষতি হয়

অনেকে জানতে চায় যে মৃগেল মাছ খেলে কি ক্ষতি হয়? আসলে এটা আমাদের শরীরে উপকারী বেশি করে থাকে। তবে অতিরিক্ত খেলে ক্ষতি হতে পারে। চলুন, কি ক্ষতি হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
গর্ভবতী মহিলারা যদি এই মাছ অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে এতে করে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। কেননা এটা মূলত মিঠা পানির মাছ যার কারণে পারদের মাত্রা একটু কম থাকে। আর যে সকল দূষিত জলাশয় থেকে মাছ হয়ে থাকে সেগুলো পারদের মাত্রা বেশি থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে যারা জলাশয়ের মাছ খেয়ে থাকে এবং সেই জলাশয় যদি দূষিত হয়ে থাকে, তাহলে সেই মাছগুলোতে পারদের মাত্রা অনেক বেশি থাকে। এতে করে যদি বেশি পরিমাণ পারদ খাওয়া হয়। তাহলে গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশকে ক্ষতি করতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত এই ধরনের দূষিত জলাশয়ের মাছ খাওয়া নিরাপদ নয়।
যে সকল রোগী রক্ত পাতলা করার জন্য ওষুধ খেয়ে থাকে, তারা সাধারণত এই মাছ খাবেন না। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত। এ মাছের প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা আপনার রক্ত পাতলা করতে পারে। এতে আপনার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

যদি আপনি এই মিরকা মাছ অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন, সেই ক্ষেত্রে আপনার শরীরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন হজমের সমস্যা, পেট ফাপা দেওয়া, গ্যাস্ট্রিক হওয়া, ডায়রিয়ার সমস্যা, বমি বমি ভাব হতে পারে, দুর্গন্ধ শ্বাস হতে পারে।

তাছাড়া যে সকল দূষিত পানির মাছ রয়েছে সে সকল দূষিত পানির মাছগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কেননা এই সকল মাছে পারদ বেশি থাকে যা আপনার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই ভেজাল পানির মাছগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এছাড়া অতিরিক্ত ফরমালিনযুক্ত মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

মৃগেল মাছ সম্পর্কে FAQ প্রশ্ন ও উত্তর জানুন

মিরকা মাছ কি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিরাপদ?

গর্ভবতী মহিলারা এই মাছ খেতে পারবে, তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না এবং ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে।

মিরকা মাছে কি পারদ থাকে?

যদি এই মাছ মিঠা পানির হয়ে থাকে তাহলে পারদের সংখ্যা খুব কম থাকে। আর যদি দূষিত জলাশয়ের মাছ হয় সে ক্ষেত্রে পারদের সংখ্যা বেশি থাকবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তাই ভালো উৎস থেকে মাছ খাবেন।

মিরকা মাছ কি কোলেস্টেরল কমায়?

এই মাছ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, কেননা এর মাঝে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে যা আপনার রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।

মিরকা মাছ কতদিন ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায়?

এই মাছ যদি ফ্রিজে রাখতে চান সেক্ষেত্রে নরমালে রাখলে ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত রাখা যাবে। আর ডিপ ফ্রিজে যদি রাখেন সেই ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত রাখতে পারবেন।

মিরকা মাছ কি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত?

আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে আপনার প্রোটিন এবং রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই মাছ খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরের রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ করবে, এছাড়া ইনসুলিন সংবেদনশীল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

শেষ কথাঃ মৃগেল মাছ খেলে কি মৃগী রোগ হয় ও গর্ভাবস্থায় নিরাপদ কিনা

পরিশেষে বলা যায় যে আপনি যদি প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে চান, সেই ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের মাছ খেতে হবে। তার মধ্যে মৃগেল মাছ খেতে পারেন, কেননা এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও কম ক্যালরি থাকে। অনেকেই বলে মৃগেল মাছ খেলে কি মৃগী রোগ হয়? এটা সম্পূর্ণ একটি কুসংস্কার মূলক এবং অবৈজ্ঞানিক কথা। তাই এই মাছ খেলে কখনোই মৃগী রোগ হবে না। পোস্টটি ভাল লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪