১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব ও ফলাফল সম্পর্কে জানুন
অনেকে জানতে চায় লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব ও ফলাফল সম্পর্কে। কেননা লাহোর প্রস্তাবটি মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই এটা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব এবং ফলাফল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ইংরেজরা ভারতীয় উপমহাদেশকে দুটি রাষ্ট্রে বিভক্ত করেছিল, এই লাহোর প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে। এই প্রস্তাবটি মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তাই ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব ও ফলাফল সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃলাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব ও ফলাফল সম্পর্কে জানুন
লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব ও ফলাফল
স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করার জন্য লাহোর প্রস্তাবের প্রয়োজন ছিল। তাই ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব ও ফলাফল সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।
লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্বঃ লাহোর প্রস্তাব ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কেননা এর মাধ্যমে নতুন একটি জাতি সৃষ্টি হয় এবং নতুন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তাই এর গুরুত্ব ও ফলাফল আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
দ্বিজাতি তত্ত্বঃ ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা বেশি ছিল এবং মুসলমানরা ছিল খুবই কম। এজন্য মুসলমানরা চরমভাবে বৈষম্যের স্বীকার হয়। এই বৈষম্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যে প্রস্তাবনা করেছিল, তাই মূলত লাহোর প্রস্তাব। তাদের দাবি ছিল যে আলাদাভাবে একটি জাতি হবে একটি দেশ হবে। এ দাবির মূল কথা হলো হিন্দুদের জন্য একটি রাষ্ট্র এবং মুসলমানদের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা লাগবে। এই নীতির পরিপ্রেক্ষিতেই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এই দ্বিজাতি তত্ত্বের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের রূপরেখাঃ লাহোর প্রস্তাবের মূল বিষয় গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ,কে ফজলুল হক বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। লাহোর প্রস্তাব পাস হওয়ার ফলে বাংলাদেশের মানুষ নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। যেন তারা ইংরেজদের শৃঙ্খলা থেকে মুক্তি পায় সেরকম আশা আকাঙ্ক্ষা করেছিল। যার কারণে পূর্ব বাংলার লোকজনও এই দ্বিজাতি তত্ত্বের পক্ষে ছিল এবং শেরে বাংলায এ, কে, ফজলুল হক তিনি পূর্ব বাংলার মানুষকে স্বাধীন করার জন্য এই প্রস্তাব উত্থাপনা করেছিলেন। তাই এই প্রস্তাবনার মধ্যে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হওয়ার স্বপ্ন নিহিত ছিল।
মুসলমানদের স্বতন্ত্র স্বীকৃতিঃ ইংরেজ আমল থেকে শুরু করে ভারতীয় মুসলমানদের আধিপত্য হ্রাস পেয়েছিল। মুসলমানরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়, এভাবেই তারা বসবাস করতে থাকে। তাদের মধ্যে এই উপলব্ধি হয় যে, ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলে মুসলমানরা হিন্দুদের তুলনায় পিছিয়ে পড়বে। এজন্য লাহোর প্রস্তাব উত্থাপিত হলে মুসলমানদের মধ্যে স্বতন্ত্র জাতি সত্তা তৈরি হবে। যার কারণে স্বাধীন পাকিস্তান সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তাই এই লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে মুসলমানরা একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এ রকম একটি মনোবাসনা ছিল।
ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টিঃ লাহোর প্রস্তাবে ভারতীয় উপমহাদেশকে দুটি ভাগে ভাগ করে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু ও মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল। মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে ১৪ ই আগস্ট পাকিস্তান এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ তা নিয়ে ১৫ ই আগস্ট ভারত রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছিল। তাই এই লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব ছিল, কেননা এর কারণে দুটি জাতি আলাদা ভাবে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করতে পেরেছিল। এই প্রস্তাবের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন দেখে।
মুসলিম জাতীয়তাবাদ এর উন্মেষঃ লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের জাতীয়তাবাদ তীব্র আকার ধারণ করতে শুরু করে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে অতিক্রম করে শক্তিশালী হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মুসলিম জাতীয়তাবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কেননা এই মুসলমানরা ইংরেজদের দ্বারা শোষিত, অত্যাচারিত, নিপীড়ন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে থাকে। এতে মুসলমানরা ঐক্যজোট জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তাই এই লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব রয়েছে।
ধর্মীয় ঐক্য সৃষ্টিঃ ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ তেমন ভালো ফলাফল করতে পারে নাই। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ চিন্তায় পড়ে যান, ১৯৪০ সালের লাহোর অধিবেশন ডেকেছিলেন। এই অধিবেশনে মুসলমানদের অধিকারের দাবিতে এ, কে, ফজলুল হক প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যা লাহোর প্রস্তাব নামে পরিচিত লাভ করে। এই প্রস্তাব পাস হওয়ার পরই ভারতের সকল মুসলমান এটাকে স্বাগত জানিয়েছিল এবং মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। যার কারণে এই লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব রয়েছে। এর মাধ্যমেই ধর্মীয়ভাবে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল।
লাহোর প্রস্তাবের ফলাফলঃ লাহোর প্রস্তাবের ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর মাধ্যমেই আমরা বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন করার স্বপ্ন দেখেছিলাম। প্রথমে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে কিভাবে পৃথক করা পৃথক হল ভারত পাকিস্তান, তারই ধারাবাহিকতায় পূর্ব বাংলার লোকজনও স্বপ্ন দেখতে থাকলো যে পূর্ব বাংলা নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা যাবে। তাই এর ফলাফল চলুন জেনে নেওয়া যাক।
একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠন করার জন্যই এই প্রস্তাবটা দাবি করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারতকে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র বিভক্ত করে দেয়, যা ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। ভারত প্রধানত হিন্দু রাষ্ট্র পরিণত হয় অন্যদিকে পাকিস্তান মুসলমান জাতি হিসেবে সৃষ্টি হয়েছিল। এই বিভাজনের ফলে উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যা সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। তাই এই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান থেকে পূর্ব বাংলার লোকজন স্বাধীন এবং মুক্তভাবে বসবাস করার জন্য রাষ্ট্র গঠন করার চিন্তা ভাবনা করেন।
এই প্রস্তাবের ফলে সাম্প্রদায়িকতা সহিংসতা এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। লাহোর প্রস্তাব সরাসরি পাকিস্তানকে একটি পৃথক জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে, পাকিস্তান দুটি ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক পৃথ পৃথক অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তান। কিন্তু লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে পাকিস্তান স্বাধীন হলেও এর দুটি অঞ্চলের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সকল কিছুই ভিন্ন ছিল। যার কারণে তারাও স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার স্বপ্ন দেখে, এর ভিত্তিতেই পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে পরিণত হয়।
যদিও লাহোর প্রস্তাবটা ছিল পৃথক মুসলিম রাষ্ট্রের দাবি এবং পরবর্তীতে বিভাজনের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন অংশে হিন্দু মুসলমান এবং অন্যান্যদের মাঝে ব্যাপক সাম্প্রদায়িকতার সহিংসতা দেখা যায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচূত হয়েছিল এবং অনেকে মারা যায়। লাহোর প্রস্তাব দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে পরিচিত হয়। এটি ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের অবসান এবং পরবর্তীতে দুটি সাধারণ রাষ্ট্রের উত্থানের দিকে পরিচালিত হয়েছিল। এটি ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের উপর একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে যা বছরের পর বছর ধরে দ্বন্দ্ব লেগে আসছে।
যাহোক লাহোর প্রস্তাবের ফলে প্রথমত ব্রিটিশদের থেকে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। একটি ভারত অপরটি পাকিস্তান। আর এই পাকিস্তানের মধ্যে দুটি অঞ্চল ছিল পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান পরবর্তীতে তারা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ হিসাবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। তাই লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব অপরিসীম কেননা এই প্রস্তাবের ফলাফল স্বরূপ বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হয়েছিল।
লাহোর প্রস্তাবকে পাকিস্তান প্রস্তাব বলা হয় কেন
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে যে লাহোর প্রস্তাবকে পাকিস্তান প্রস্তাব বলা হয় কেন? এ বিষয়ে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, লাহোর প্রস্তাব মূলত পাকিস্তানের রাষ্ট্র গঠন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ বিষয়ে আলোচনা করা যাক।
লাহোর প্রস্তাব মূলত গঠন করার উদ্দেশ্যই হল মুসলিম জাতির জন্য আলাদাভাবে একটি রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। যেখানে তারা স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারবে। যেহেতু ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে দুটি জাতি বসবাস করত তাহল; হিন্দু এবং মুসলিম। তাই দুটি দেশকে ধর্মীয়ভাবে আলাদা করে দিলে তারা তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি ও সংস্কৃতি পালন করতে পারবে। যার কারণেই ইংরেজরা এই দিক বিবেচনা করে রাষ্ট্র গঠন করে দেন। একটি হলো ভারত অপরটি পাকিস্তান। যেহেতু লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়, তাই লাহোর প্রস্তাবকে পাকিস্তান প্রস্তাব বলা যেতে পারে।
লাহোর প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন কত সালে
অনেকে জানতে চায় যে লাহোর প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন কত সালে? কেননা এই লাহোর প্রস্তাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ তৈরীর ক্ষেত্রে। তাই এই প্রস্তাবটি যিনি করেছিলেন তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই আয়োজনটা করেছিলেন মুসলিম লীগ ও এই অধিবেশনটি মুসলিম লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। তিনি ১৯৪০ সালের ২৩ শে মার্চ এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিলেন। অবিভক্ত ভারতের অবস্থানরত মুসলিম জনগোষ্ঠীর পক্ষে তিনি এই প্রস্তাবটা করেছিলেন। তিনি ভারত উপমহাদেশের মুসলিমদের নিয়ে একটি আলাদা রাষ্ট্র তৈরি করার জন্যই প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে এই প্রস্তাবনাটি গৃহীত হয়। তাই এই লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব অপরিসীম।
লাহোর প্রস্তাব বলতে কী বোঝায়
অনেকে প্রশ্ন করে থাকে যে, লাহোর প্রস্তাব বলতে কী বোঝায়? আসলে লাহোর প্রস্তাবটি আমাদের জানার খুবই প্রয়োজন। কেননা এই প্রস্তাবনার মাধ্যমেই দুটি দেশের জন্ম হয়েছিল একটি ভারত অন্যটি পাকিস্তান। চলুন, এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
দীর্ঘদিন যাবত হিন্দু ও মুসলমানরা দুটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে, তারই ফলাফল মূলত লাহোর প্রস্তাব। ১৯৪০ সালের ২৩ শে মার্চ লাহোরে একটি অনুষ্ঠানে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক যে প্রস্তাবনাটি রেখেছিলেন, মূলত সেই প্রস্তাবনাকে লাহোর প্রস্তাব বলা হয়। আসলে তার প্রস্তাবনা ছিল এ রকম যে, হিন্দুদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং মুসলিমদের জন্য একটা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা হোক। এজন্য বলা যেতে পারে যে, এই লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। তাই এই লাহোর প্রস্তাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল
লাহোর প্রস্তাবের উত্থাপনের ক্ষেত্রে মূল বিষয়ে জানা প্রয়োজন। তাই লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল? সম্পর্কে জানতে নিম্নে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হলো। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
মুসলিমদের স্বায়ত্তশাসনঃ এই প্রস্তাবটিতে বলা হয় যেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সে অঞ্চল গুলোকে স্বায়ত্তশাসন রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করতে হবে। এ অঞ্চলে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন থাকবে এবং তারা নিজেদের আইন এবং শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করবে। এই অঞ্চলের লোকজন তারা স্বাধীনভাবে বসবাস করার অধিকার পাবে এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, সামরিক সকল ক্ষেত্রে তাদের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন থাকবে। তারা তাদের অধ্যুষিত অঞ্চল গুলোতে স্বাধীনভাবে বসবাস করবেন।
সাংবিধানিক নিরাপত্তাঃ লাহোর প্রস্তাবে বলা হয়েছিল মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ অঞ্চলের সাংবিধানিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা লাগবে। তাদের সাংবিধানিক অধিকার এবং স্বাধীনতা রক্ষা করা প্রয়োজন। যা মুসলমানদের স্বতন্ত্র পরিচয় থাকবে এবং তাদের সংস্কৃতি সংরক্ষণ করা অপরিহার্য দায়িত্ব। তাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। তাই তাদের সাংবিধানিক নিরাপত্তা খুবই প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তার অধিকার দিতে হবে। তাহলে তারা সাংবিধান অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয় পরিবর্তন ও সংশোধন করতে পারবে।
সংখ্যালঘুদের অধিকারঃ লাহোর প্রস্তাবে বলা হয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। এটা প্রতিশ্রুতি দেওয়া লাগবে, এখানে আরো বলা হয়েছিল মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোর সংখ্যালঘুদের জন্য পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া লাগবে এবং তাদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। একইভাবে হিন্দু সংখ্যা গরিষ্ঠ অঞ্চল গুলোর মুসলিম সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, তাদের জান মালের নিরাপত্তা দিতে হবে, তারা যেন পূর্ণ স্বাধীনতা পায়।
কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থানঃ এই প্রস্তাবে আরো বলা হয় কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা ভারতীয়রা বিরোধিতা করেছিল। মুসলিম লীগ দাবি করেছিল যে একটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে মুসলমানদের স্বার্থ এবং অধিকার রক্ষা করা যায় না। সুতরাং পৃথক রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে তাদের সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা লাগবে। মুসলমানদের জন্য একটি কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা থাকবে সেখান থেকে তাদের সকল কিছু দায়িত্ব পালন করবে। আবার হিন্দুদের জন্যও কেন্দ্রীয় শাসন থাকবে সেখান থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের তাৎপর্য
১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব এর গুরুত্ব রয়েছে, তবে এর তাৎপর্য অনেক গুরুত্ব আছে। তাই ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের যে গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
মুসলিম লীগ ভারতীয় উপমহাদেশে একটি স্বতন্ত্র মুসলিম দেশের দাবি জানিয়েছিলেন। যা ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব হিসাবে অনুমোদন করা হয়। বর্তমান পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের সম্মেলনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের উত্থাপন করেছিলেন। মূলত শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক তিনি মুসলিমদের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য জোরালোভাবে প্রস্তাবনা করেছিলেন। যা পরবর্তীতে পাকিস্তান প্রস্তাব হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। তাই এই লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে।
১৯৩৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ সমূহে মুসলিম লীগ কেন পরাজয় করে তার জন্য মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪০ সালের লাহোরে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সাধারণ অধিবেশন আহ্বান করেছিলেন। মুসলিম লীগের কর্মীদের একটি ক্ষুদ্র দল নিয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৪০ সালের ১৯শে মার্চ লাহোরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। অধিবেশনে যোগদানের জন্য বাংলার মুসলিম লীগ দলের নেতৃত্ব দেন এ কে ফজলুল হক এবং তারা ২২শে মার্চ লাহোরে পৌঁছেছিলেন। বাংলার এই প্রতিনিধি দলকে তারা জয়ধ্বনি দিয়ে বরণ করে নিয়েছিলেন।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র ভাবে দেশ গঠন করার জন্য যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন। তিনি অনেকক্ষণ যাবৎ বিভিন্ন প্রমাণ পত্র নিয়ে কথা বলেন। তার এই যুক্তিসমূহ মুসলমানরা পছন্দ করেছিল। অন্যান্য যে সকল দলগুলো এই দ্বিজাতি তত্ত্বের বিরোধিতা করেছিল, তাদের সম্মুখে দ্বিজাতি তত্ত্ব নিয়ে যুক্তি উপস্থাপন করে এবং তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে মুসলিমদের জন্য আলাদাভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা খুবই প্রয়োজন। যার কারণেই এই লাহোর প্রস্তাবের প্রয়োজন ছিল এবং এর তাৎপর্য গুরুত্বপূর্ণ।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার যুক্তি উপস্থাপন করেছিল। লাহোর প্রস্তাবের ক্ষেত্রে এই যুক্তি সকল মুসলমান এবং অনেক জ্ঞানী মানুষ জন সমর্থন করেছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক তিনি মুসলিম লীগের সম্মেলনে যে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেছিলেন তাই মূলত লাহোর প্রস্তাব। যার কারণে বলা যেতে পারে যে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর এই যুক্তি মুসলিমদের আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। তাই লাহোর প্রস্তাবের তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লাহোর প্রস্তাব ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা
ঐতিহাসিকগণ বলে থাকেন লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে মূলত পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এজন্য লাহোর প্রস্তাবের অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে। তাই লাহোর প্রস্তাব ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা কিভাবে হয়েছে, সেটা চলুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ভারত ব্যাপী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ব্যাপক প্রসারে ভীত ইংরেজ শাসকরা শাসনতান্ত্রিক নীতি ঘটিয়েছিল। ইতিপূর্বে বঙ্গভঙ্গ কে কেন্দ্র করে বাংলার হিন্দু মুসলমান নেতৃত্বের মধ্যে যে একটি বিবাদ সৃষ্টি হয়। তাই ইংরেজদের প্রচারণায় ক্রমশ প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের রূপ নেয়। এক্ষেত্রে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের উচ্চবিত্ত বাঙালি হিন্দু ও মুসলমান নেতৃবৃন্দের ক্ষমতা কেন্দ্রিক স্বার্থকে দায়ী করা হয়। যার ফলে চলমান জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে ধর্মীয় তথা সাম্প্রদায়িক সমস্যা দেখা দেয়।
কংগ্রেস হিন্দু সম্প্রদায়ের এবং মুসলিম লীগ মুসলমানদের রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিগণিত হয়। যদিও কংগ্রেস মাওলানা আবুল কালাম আজাদের মতো অনেক বড় মাপের মুসলমান নেতা সেখানে ছিল, বিবাদের রাজনীতির ফলে হিন্দু মুসলমান নেতা সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে লাহোর প্রস্তাবের ধারণা কাজ করেছিল। ১৯৪০ সালে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা করে লাহোর প্রস্তাব সংশোধন করে পাকিস্তান প্রস্তাব করা হয়।
যার ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষে ভাগ করে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়। প্রায় ২০০ বছরের ইংরেজ শাসন এর সমাপ্তি ঘটে। ভারত বিভক্তির সাথে সাথে বাংলাও দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়ে যায় আর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম বাংলা ভারতের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। এভাবে বাংলা ভাগ করাকে বাংলার কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের হিন্দু মুসলমান নেতারা একইভাবে মেনে নিতে পারে নাই। শরৎ বসু ও হোসেন শহীদ সোহরার্দী চেষ্টা করছিলেন অখন্ড বাংলা প্রতিষ্ঠা করার জন্য কিন্তু সেই প্রচেষ্টা সফল হয় নাই।
ব্রিটিশ অধীনতা থেকে মুক্তি পেলেও সেই বাঙ্গালীদের দ্বন্দ্ব থেকেই যায়। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পুরো বাংলার জনগণের উপর পরাধীনতা তৈরি করে। প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট এর পর থেকে পূর্ব বাংলার জনগণকে স্বাধীনতার জন্য নতুন করে আন্দোলন করতে হয়। যা পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে আজকের এই পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অধিন থেকে বেরিয়ে এসে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ নামের সারাবিশ্বে পরিচয় লাভ করেছে।
শেষ কথাঃ লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব ও ফলাফল সম্পর্কে জানুন
পরিশেষে বলা যায় যে লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয় কিন্তু এর পিছনে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এর অবদান ছিল। তিনি এই লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। তাই ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব ও ফলাফল সম্পর্কে আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে, আশা করি বুঝতে পারবেন। পোস্টটি ভাল লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url