ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি ও নামাজ পড়ার বিধান সম্পর্কে জানুন
অনেক মুসলিম নারী পুরুষ জানতে চায় যে, ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি? এই বিষয়ে ইসলামে বিধান এবং নিয়ম কানুন রয়েছে। চলুন, কিভাবে আপনি চুলের কালার করতে পারবেন বা নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
প্রত্যেকটা মুসলমান নর-নারীর একটা সময় বয়স হয়ে যায় বা বার্ধক্য চলে আসে, সে ক্ষেত্রে কালো চুল সাদা হয়ে যায়। এজন্য অনেকে চুলকে কালো করতে চায়। তাই ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি? চুল কালার করা সম্পর্কে জানার জন্য আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
পোস্টসূচিপত্রঃইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি ও নামাজ পড়ার বিধান সম্পর্কে জানুন
ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি
চুল সাদা হওয়ার কারণে অনেকেই চুলে কালার করে থাকে। তাই ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি? এ সম্পর্কে ইসলামী শরীয়তের বিধান জানা প্রয়োজন। চলুন, ইসলাম চুলে কালার সম্পর্কে কি বলেছে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ইসলাম বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান দিয়েছেন, যদি আপনার মাথার চুল সাদা হয়ে যায় সেটা বয়সের কারণেই হোক বা রোগ ব্যাধি অথবা হরমোনাল কোন কারণে বা বংশগত কারণে অনেকের চুল সাদা হয়ে যেতে পারে। সেই কারণে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের কালার ব্যবহার করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে আপনার সতর্ক থাকতে হবে যে, সাদা চুলকে কালো করার জন্য কালো কলপ ব্যবহার করা যাবে না। এক্ষেত্রে আপনি মেহেদী ব্যবহার করতে পারেন। এতে কোন সমস্যা নেই, কেননা অনেকে সাদা চুলে অথবা দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করে থাকে। তবে এ সম্পর্কে ইসলামের নিয়ম আপনাকে জানতে হবে।
তাই নবী করীম সাঃ মেহেদী ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বলেছেন যে, তোমরা সাদা চুল বা দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করতে পারো, এতে কোন সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে হযরত জাবের রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন যে নবী করীম সাঃ মক্কা বিজয়ের পরে হযরত আবু বকর রাঃ পিতা আবু কুহাফা রাঃ তার চুল দাড়িগুলো পেকে গিয়েছিল। এজন্য রাসূল সাঃ বলছিলেন এগুলো কোন কিছু দ্বারা পরিবর্তন করতে পারো। তবে কালো কালার দিয়ে পরিবর্তন করা যাবে না। (মুসলিম শরীফঃ ৫৪৬৬) এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে রাসূল সাঃ মেহেদির রং ব্যবহার করতে বলেছেন, কালো কালার ব্যবহার করা নিষেধ করেছেন।
আপনার যখন বয়স হয়ে যাবে সেক্ষেত্রে চুল দাড়ি সাদা হয়ে যাবে এটা প্রাকৃতিক গতভাবেই হবে কিন্তু সেটাকে কালো করার জন্য আপনি কালো কলপ ব্যবহার করবেন কিন্তু আল্লাহ তাআলা আপনাকে বৃদ্ধ বানিয়েছে যার কারণে চুল সাদা হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি চুল কালার করে যুবক হতে চাচ্ছেন যা ইসলামে জায়েজ নাই। এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বর্ণনা করেছেন, রাসূল সাঃ বলেছেন যে, শেষ জামানায় এমন কিছু সম্প্রদায় তৈরি হবে যেখানে মানুষ চুল দাড়িতে কালো রংয়ের খেজাব বা কলপ ব্যবহার করবে, যার কারনে তারা জান্নাতের সুগন্ধ থেকে বিরত থাকবে। (আবু দাউদঃ ৪২১২)
এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে যদি আপনি চুল দাড়িতে কালো রং ব্যবহার করেন, সে ক্ষেত্রে জান্নাতের সুগন্ধি থেকে বঞ্চিত হবেন। কেননা রাসূল সাঃ এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। এছাড়াও হযরত আবু দারদা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাঃ বলেছেন যারা দাড়ি বা চুলে কলপ দিয়ে কালো করবে, তাদেরকে কিয়ামতের দিন আল্লাহতালা কালো করে দেবেন। তবে মেহেদী রং ব্যবহার করা যাবে কিন্তু মেহেদির রং যদি কালো হয় অথবা কোন কেমিক্যাল থাকে সেটা ব্যবহার করা যাবে না। তবে যদি মিশ্র রং হয়ে থাকে সেটা ব্যবহার করা যেতে পারে, এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামদের মতামত রয়েছে।
আল কুরআনে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন হবে না অর্থাৎ আল্লাহতালা যে প্রাকৃতিক গতভাবে সৃষ্টি করেছেন সেগুলো আপনি চাইলে পরিবর্তন করতে পারবেন না। যেমন সাদা চুল দাড়ি এগুলো প্রাকৃতিক গতভাবে আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু এই সাদা চুল যখন কালো রঙ দ্বারা কালো করবেন, সেক্ষেত্রে যুবক মনে হবে। এতে গুনাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ থেকে বর্ণিত নবী করীম সাঃ বলেছেন, তোমাদের মাথায় যে চুল পেকে গেছে তা কখনো তোলার চেষ্টা করবে না। কেননা প্রত্যেকটা পাকা চুলের জন্য সওয়াব পাবে এবং তোমাদের গুণাহ কমে যাবে। (মুসনাদে আহমদঃ ৬৯৬২)
তাই সাদা চুল কখনোই কালো করার চেষ্টা করবেন না, এটা ইসলামে হারাম করা হয়েছে। এতে আপনার খারাপ চিন্তা ভাবনা আসতে পারে। কেননা আপনাকে তখন যুবক মনে হবে এছাড়াও ব্যক্তিগত ভাবে আচরণের পরিবর্তন হতে পারে। এতে মানুষকে প্রতারণা করার সম্ভাবনা থাকে, এজন্য আল্লাহতালা যে বিধান দিয়েছে সেটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। তবে যদি অসুস্থ হওয়ার কারণে বা কোন চিকিৎসার নেওয়ার কারণে চুল সাদা হয়ে গেছে বা কোন ওষুধ খাওয়ার কারণে চুল সাদা হয়ে গেছে, অল্প বয়সে চুল বা দাড়ি সাদা হয়ে গেছে, সে ক্ষেত্রে আপনি মেহেদির রং ব্যবহার করতে পারেন।
মেহেদির রং এর সাথে অন্য কোন কালার দিয়ে মিশ্র প্রক্রিয়া ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আলেম-ওলামাদের মতানৈক্য রয়েছে। তবে আপনি নিশ্চিন্তে মেহেদী ব্যবহার করতে পারবেন কেননা এ ব্যাপারে আলেম-ওলামারা বলেছেন, সাহাবারা সাধারণত অল্প বয়সে যদি সাদা চুল দাড়ি সাদা হয়ে যেত সে ক্ষেত্রে বার্ধক্যের মতো মনে হয়। যার কারণে তারা হালকা কালো লাল মেহেদী রং ব্যবহার করেছেন, সে ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে এটা ব্যবহার করা যাবে। তবে লাল কালারের মেহেদী ব্যবহার করাই উত্তম। যদি বয়সের কারণে চুল দাড়ি সাদা হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে কালো কালার কখনোই ব্যবহার করা যাবে না।
চুলে কলপ দিলে কি নামাজ হয়
অনেকে প্রশ্ন করে থাকে যে, চুলে কলপ দিলে কি নামাজ হয়? এ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে সেটা আপনাকে জানতে হবে। কেননা ইসলামের শরীয়ত অনুযায়ী আমাদেরকে জীবন যাপন করতে হবে। চলুন, চুলে কালার করে নামাজ পড়া যাবে কিনা সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে আপনার চুল যদি সাদা হয়ে যায় সেক্ষেত্রে চুলে কালো রং ছাড়া যদি মেহেদির লাল রং ব্যবহার করেন সে ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হবে না এবং এতে জায়েজ আছে, নামাজ পড়া জায়েজ হবে। এক্ষেত্রে নামাজের কোন সমস্যা হবে না, কেননা প্রাকৃতিক মেহেদী আপনি ব্যবহার করতে পারবে কিন্তু কেমিক্যাল যুক্ত মেহেদী ব্যবহার করা যাবে না। এর ভিতর নাপাক বস্তু থাকতে পারে তাই এই বিষয়ে অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে, তাই আপনার সাদা চুলে কখনোই কালো রং ব্যবহার করবেন না। এক্ষেত্রে মেহেদির সাথে অন্য একটি রং মিশ্র করেও ব্যবহার করা যাবে।
তবে কালো রঙের ক্ষেত্রে অবশ্যই সমস্যা রয়েছে এক্ষেত্রে রাসূল সাঃ স্পষ্টভাবে বলেছেন যে তোমরা কালো কালারের কোন রং দাড়ি বা চুলে ব্যবহার করবে না অর্থাৎ কলপ ব্যবহার করতে মানা করেছেন। এটা মূলত একটি আস্তর যা দাড়িতে ব্যবহার করলে, পানি ঢুকবে না। যার কারণে আপনার ওযু হবেনা আর ওযু না হলে আপনার নামাজ হবে না। কিন্তু মেহেদী রং ব্যবহার জায়েজ আছে কেননা এটা প্রাকৃতিকগত রং দাড়িতে লাগালে কোন আস্তর পড়বে না, সে ক্ষেত্রে আপনার এটা ব্যবহার করা যেতে পারে এবং অজু শুদ্ধ হবে, নামাজও পড়া যাবে। তবে নারীরা চুলে কালার করবেন এশার নামাজ পরে।
চুলে কালার করলে কি ওযু হবে
অনেকে চুলের কালার করে থাকে তাই চুলে কালার করলে কি ওযু হবে? আসলে ইসলামে চুলের কালার করার ব্যাপারে কি বলেছে সেটা আগে আপনাকে জানতে হবে। চলুন, ইসলামের শরীয়ত মতে চুলে কালার করে ওযু করা যাবে কিনা সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আপনার চুল যদি সাদা হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে চুলে কালার করতে পারেন কিন্তু কালো কালার ব্যতীত এবং এমন কালার ব্যবহার করা যাবে না, যেটাতে আপনার চুল বা দাড়িতে প্রলেপ পড়ে যায় এবং তার ভিতরে পানি ঢুকে না। এই ধরনের কালার গুলো ব্যবহার করা যাবে না। অবশ্যই আপনার দাড়িতে বা চুলে ওযুর পানি ও গোসলের পানি যেন প্রবেশ করতে পারে, এ ধরনের কালার ব্যবহার করতে পারেন। প্রাকৃতিক মেহেদির রং সাধারণত লাল হয়ে থাকে এতে কোন আস্তরণ বা প্রলেপ নাই এটা আপনার দাড়ি বা চুলে পানি প্রবেশ করতে বাধা প্রাপ্ত হবে না। এতে আপনার অজু বা গোসলের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে না।
মেয়েদের চুলে কালার করা কি জায়েজ
অনেক মেয়েরা চুলে বিভিন্ন ধরনের কালার ব্যবহার করে। তাই মেয়েদের চুলে কালার করা কি জায়েজ? এ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে সেটা জানা প্রয়োজন। চলুন, ইসলামের দৃষ্টিতে চুলে কালার করা ঠিক হবে কিনা সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আল্লাহ তাআলা মেয়েদেরকে পর্দায় থাকার জন্য বলেছেন সে ক্ষেত্রে আপনি পর্দার ভিতরে থেকে বিভিন্ন ধরনের সাজ সজ্জা করতে পারেন। তবে সেটা যেন নিষিদ্ধ সাজ না হয় এবং শুধুমাত্র স্বামীকে খুশি করার জন্য অন্য পুরুষকে দেখানোর জন্য করা যাবে না। তবে আপনি মেহেদির রং ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু কালো রং ব্যবহার করা যাবে না। এটা স্পষ্ট রাসূল সাঃ নিষেধ করেছেন তাই আপনি চুলের কালার করতে পারবেন, উদ্দেশ্য থাকবে শুধু স্বামীকে খুশি করার জন্য এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আপনি চুল সোনালী, লালচে, বাদামী বিভিন্ন ধরনের কালার করতে পারবেন।
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল সাঃ বলেছেন, ইহুদি ও নাসারারা তারা দাড়ি ও চুল সাধারণত রং করে না, তাই তোমরা তাদের বিপরীতে লাল রং ব্যবহার করতে পারো। (সহীহ বুখারি হাদিসঃ৩৪৬২) তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে কালো কালার ব্যবহার করা যাবে না এবং কিছু কালার রয়েছে যা শরীরে ক্ষতি হতে পারে, কেমিক্যাল যুক্ত রং ব্যবহার করা যাবে না এবং এমন কালার ব্যবহার করতে হবে যেন চুলের গোড়াতে পানি যেতে পারে। এই কালারের যেন আস্তরণ না থাকে, এছাড়াও গোসল করতে যেন সমস্যা না হয় এবং পর পুরুষের সাথে দেখা করা যাবে না। নায়ক নায়িকাদের অনুসরণ করা যাবে না।
চুল দাড়িতে কালো রং ব্যবহারের বিধান
আপনি চুল বা দাড়িতে কালো রং ব্যবহার করতে পারবেন কিনা সেটা ইসলামের দৃষ্টি কোণে দেখতে হবে। তাই চুল বা দাড়িতে কালো রং ব্যবহারের বিধান সম্পর্কে ইসলামের আলোকে জানতে হবে। তাহলেই আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আপনার বয়স যদি বেশি হয়ে যায় এবং বার্ধক্য চলে আসে সেক্ষেত্রে চুল দাড়ি সাদা হয়ে গেলে কালো রং ব্যবহার করতে পারবেন না। হাদীস শরীফে রাসূল সাঃ এ বিষয়ে বারে বারে নিষেধ করেছেন কেননা এটা এক ধরনের আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করা। তবে আপনি চুল বা দাড়িতে কালো রঙের পরিবর্তে মেহেদীর লাল রং ব্যবহার করতে পারেন। যদি বয়স অল্প হয়ে থাকে তাহলে বিভিন্ন কারণে চুল বা দাড়ি সাদা হতে পারে সে ক্ষেত্রে মেহেদির সাথে কালো কালার ব্যতীত অন্য কোন কালার মিশ্র করে ব্যবহার করতে পারেন। যদি ভুলক্রমে কালো কালার ব্যবহার করে থাকেন সে ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে তাহাজ্জদ নামাজ পড়ে তওবা করে নেবেন।
চুলে মেহেদী ব্যবহারে ইসলামের বিধান
মেহেদী ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলাম কি বলেছে সেটা জানতে হবে। তাই চুলে মেহেদী ব্যবহারে ইসলামের বিধান সম্পর্কে জানা মুসলমান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। চলুন, ইসলামে মেহেদী ব্যবহারের ক্ষেত্রে কি বলেছে সে সম্পর্কে জানা যাক।
মেহেদী রং ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিকোণে অসুবিধা নেই বা জায়েজ রয়েছে। এটা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে, তাই ইসলামে নারীদেরকে সাজসজ্জা করার জন্য মেহেদী ব্যবহারের ক্ষেত্রে উৎসাহিত করা হয়েছে। স্বামীকে আকর্ষণ করার জন্য মেহেদী নারীরা পায়েও ব্যবহার করতে পারবে। অনেকেই হয়তো বলে থাকে যে পায়ে ব্যবহার করা যাবে না, এটা ভুল ধারণা। বর্তমানে মেহেদী বিভিন্ন কেমিক্যাল যুক্ত দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে এগুলো ব্যবহার করলে আপনার শরীরের ক্ষতি হবে ও এর মধ্যে নাপাক বস্তু থাকতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন প্রাকৃতিক মেহেদী ব্যবহার করার।
মেহেদি যদি হারাম বস্তু দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি এটা ব্যবহার করলে অসুবিধা হবে এবং নামাজ ও ওযু করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিবে। তাছাড়া নারী-পুরুষ সবাই এই মেহেদির রং ব্যবহার করতে পারবে, এতে কোন সমস্যা নাই। নারীরা হাতে পায়ে চুলে বিভিন্ন জায়গায় তারা স্বামীকে আকর্ষণ করার জন্য ব্যবহার করতে পারে। পাশাপাশি পুরুষেরাও দাড়ি এবং চুলে ব্যবহার করতে পারে। ইসলামের শরীয়ত মতে এটা জায়েজ রয়েছে। তবে নারীরা সৌন্দর্য প্রকাশের জন্য মেহেদি ব্যবহার করবেন কিন্তু যাদের সাথে দেখা করা যাবে না তাদের সম্মুখে যাওয়া যাবে না, এটা হারাম।
পুরুষ মানুষ মেহেদী সাধারণত দাড়ি বা চুলে ব্যবহার করে থাকে, তবে তাদের হাতে পায়ে ব্যবহার করার কোন প্রয়োজন নাই কিন্তু ইচ্ছা করলে তারা ব্যবহার করতে পারবে। তবে সাধারণত মাথার চুল সাদা হয়ে গেলে এবং দাড়ি সাদা হয়ে গেলে ব্যবহার করাই ভালো। অনেকে দেখা যায় চুল সাদা হওয়ার কারণে কালো রংয়ের কালার বা কলপ ব্যবহার করে থাকে এটা ইসলামে একদমই হারাম, সে ক্ষেত্রে মেহেদি রংয়ের সাথে জাফরান রং ব্যবহার করতে পারেন অথবা অন্য কোন কালার মিশ্র করে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ধরনের মিশ্র কালার অনেক সাহাবীরাই ব্যবহার করতেন।
কেননা এই বিষয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল করীম সাঃ এর কাছে একজন ব্যক্তি আসছেন, সে মেহেদীর রং লাল অথবা হলুদ রঙ ব্যবহার করে আসছেন সেই ক্ষেত্রে রাসূল সাঃ পছন্দ করেছেন। এক্ষেত্রে আসলে রাসুল সাঃ লাল রঙের খেজাব পছন্দ করতেন বা পরামর্শ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ইসলামে জায়েজ রয়েছে, তবে নারীরা কালো রঙের খেজাব ব্যবহার করতে পারবে কিনা সে সম্পর্কে ইসলামে মতামত রয়েছে। এক্ষেত্রে অনেকে বলেছে নারীরা স্বামীদেরকে খুশি করার জন্য কালো রংয়ের খেজাব ব্যবহার করতে পারবে। তবে এ বিষয়ে মতানৈক্য আছে।
চুলে কলপ করলে কি ফরজ গোসল ও নামাজ হবে
অনেকে জানতে চায় যে চুলে কলপ করলে কি ফরজ গোসল ও নামাজ হবে? আসলে ইসলামের দৃষ্টিকোণে রাসূল সাঃ স্পষ্টভাবে কালো রঙের কলপ ব্যবহার করা নিষেধ করেছেন। তবে যদি এর পরিবর্তে লাল রং ব্যবহার বা মেহেদীর লাল রং ব্যবহার করা যায়। সেক্ষেত্রে কোন সমস্যা থাকবে না বা অন্য কোন কালার মিশিয়ে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে নামাজ বা গোসল কোন সমস্যা হবে না। এক্ষেত্রে পানি ঢুকতে পারে না, যার কারণে ফরজ গোসল ও নামাজ হবেনা। এমতাবস্থায় যদি না জেনে আপনি নামাজ পড়ে ফেলেন, সেক্ষেত্রে বিষয়টি জানার পরে নামাজ কাজা করতে হবে।
চুলে কালো কলপ করার শাস্তি কি
ইসলামে চুল বা দাড়িতে কালো কলপ করা হারাম। তাই চুলে কালো কলপ করার শাস্তি কি? এ সম্পর্কে মুসলমান হিসেবে আমাদের জানতে হবে। চলুন, চুলের কলপ দিলে আমাদের কি শাস্তি হতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ইসলামের শরীয়ত মতে সাদা চুল কালো করার জন্য কালো কলপ ব্যবহার করা যাবে না। এ সম্পর্কে রাসূল সাঃ স্পষ্ট হাদিস উল্লেখ করেছেন, যে তোমরা সাদা চুলকে কখনোই কালো কলপ দ্বারা কালো করবেনা বা কালো রং ব্যবহার করবে না। এক্ষেত্রে রাসূল সাঃ মেহেদীর রঙের কথা উল্লেখ করেছেন এবং সাহাবীদেরকে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছেন। তাই চেষ্টা করবেন আপনার চুল এবং দাড়ি প্রাকৃতিক যে মেহেদী রয়েছে সেটা ব্যবহার করা। তবে বাজারে অনেক মেহেদী পাওয়া যায় কিন্তু সেগুলো বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল বা অপবিত্র বস্তু দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে সেগুলো ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
বাজারের এই সকল কেমিকাল যুক্ত এবং অপবিত্র বস্তু দ্বারা তৈরিকৃত মেহেদী ব্যবহার করলে আমাদের শরীর অপবিত্র হয়ে যাবে। যা নামাজ ও ওযু করা জায়েজ হবে না। আর নামাজ না হলে গুনাহ হতে থাকবে যার কারণে জাহান্নামে যেতে হবে। জাহান্নামে অনেক ভয়াবহ কঠিন শাস্তি হবে। এছাড়া আল্লাহতালা হাশরের ময়দানে যারা এই পৃথিবীতে কালো কলপ ব্যবহার করেছে তাদের চেহারাও কালো করে দিবেন। এছাড়াও রাসূল সাঃ এ বিষয়ে বলেছেন যে, শেষ জামানায় যদি একদল লোক আসবে, যারা চুলে কলপ ব্যবহার করবে, যা এর কারণে তারা জান্নাতের সুগন্ধি পাবে না। আবু দাউদ
তাছাড়া আপনি যদি এই কালো কলপ দাড়ি বা চুলে যদি ব্যবহার করেন দেখবেন এগুলো অনেক আস্তরণ ফেলে দেবে যার কারণে ওযু ও গোসল করতে গেলে পানি প্রবেশ করতে পারবে না। এই ক্ষেত্রে অপবিত্রতা থেকে যাবে, যার কারণে গুনাগার হতে হবে। সে ক্ষেত্রে সাদা চুল ও দাড়িতে মেহেদির লাল রং ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার সম্মান বাড়বে এবং প্রত্যেকটা পাকা চুলের জন্য আল্লাহতালা বরকত দেবেন। রাসুল সাঃ বলেছেন তোমরা এই পাকা চুল তুলে ফেলবে না, অনেক সওয়াব পাবে। কেননা এই পাকা চুল মুসলমানদের জন্য কিয়ামতের দিন নুর হয়ে উঠবে। তিরমিজি শরীফ
শেষ কথাঃ ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি ও নামাজ পড়ার বিধান সম্পর্কে জানুন
ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী যদি আমরা জীবন যাপন করতে পারি তাহলে সঠিক পথে জীবন যাপন করতে পারবো। তাই আমরা মুসলমান হিসেবে অবশ্যই ইসলামের প্রত্যেকটা জিনিস পালন করার চেষ্টা করব। তার মধ্যে চুলের কালার করার বিষয়টাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই চুলের কালার করার কারণে কি হতে পারে এবং ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চুলে কালার করা যাবে কি? এ সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। যদি আপনার উপকারে আসে, তাহলে আমার এই পোস্টটি আপনার বন্ধু-বান্ধবের কাছে পৌঁছায় দিবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url