বিতর নামাজ পড়ার সঠিক সময় ও নিয়ম সম্পর্কে জানুন

বেতর নামাজের সময় সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে, তাই বিতর নামাজ পড়ার সঠিক সময় যদি জানতে চান। তাহলে অভিজ্ঞ একজন লোকের থেকে জেনে নিবেন। চলুন, বেতর নামাজ কিভাবে পড়বেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
বিতর নামাজ সাধারণত এশার নামাজের পরে পড়তে হয়, এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এজন্য অবশ্যই নিজেদের মাঝে হাসি এবং কথা বলার কারণে দেরি হয়ে যায়। তাই বিতর নামাজ পড়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃবিতর নামাজ পড়ার সঠিক সময় ও নিয়ম সম্পর্কে জানুন

বিতর নামাজ পড়ার সঠিক সময়

সাধারণ এশার নামাজের পরে বেতের নামাজ পড়ে থাকি কিন্তু বিতর নামাজ পড়ার সঠিক সময় সম্পর্কে অনেকে ভালোভাবে জানে না। চলুন, বেতের নামাজ পড়ার স্ময় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

বিতরের নামাজ পড়ার সময় সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে, তবে সবাই একমত যে এশার নামাজ পড়ে বেতের নামাজ পড়া যাবে। এজন্য যদি শেষ রাতের দিকে আয়োজন করার জন্য জাগ্রত হতে পারেন, এক্ষেত্রে অবশ্যই নিশ্চিত থাকতে হবে, আপনি তাহাজ্জত নামাজ পড়ে ভেতরে নামাজ পড়তে পারবেন। তবে অবশ্যই আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যদি আপনি জাগ্রত না হতে পারেন আর বিতরে নামাজ না পড়েন, তাহলে গুনাহগার হবেন। আর যদি তাহাজ্জুদ নামাজের সাথে বিতরের নামাজ না পড়েন তাহলে এশার নামাজের পর ২ রাকাত নফল নামাজ পড়েই বেতরের নামাজ পড়তে পারেন।

হাদিসে বর্ণনা আছে যে শুধুমাত্র বিতরে নামাজ তিন রাকাত পড়েন তাহলে মাগরিবের নামাজের তিন রাকাত এর মত হয়ে গেল, তাই অবশ্যই এরপরে কয়েক রাকাত নফল নামাজ পড়বেন তারপরে বেতরের নামাজ পড়তে পারেন। আয়েশা রাঃ হতে বর্ণনা করা হয়েছে যে রাসূল সাধারণত রাত্রিতে নামাজ পড়তেন তখন আমি তার বিছনা আড়াহারি করে ঘুমিয়ে যেতাম এরপরে তিনি যখন বিতর পড়ার পোষণ করেন তখন আমাকে জাগিয়ে দিত এবং আমিও ভেতরে নামাজ পড়ে নিতাম। বুখারী শরীফ হাদিস নাম্বার ৯৯৭
সাঈদ ইবনু ইয়াসার রাঃ বলেছেন আমি এবং আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ একসাথে রাস্তা দিয়ে যখন যাচ্ছি ক্ষেত্রে রাস্তার মাঝেও করে নামাজ ঠিক করে নিতাম। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ জিজ্ঞেস করল তুমি কোথায় ছিলে আমি বললাম আমি নেমে বেতরের নামাজ পড়েছি, তখন বললেন এর মধ্যে তোমার আদর্শ নিয়ম মনে করো তোমাদের মধ্যে যদি রাসুল সাঃ এর আদর্শ থেমে থাকে। তাহলে অবশ্যই করার চেষ্টা করবেন এবং সালাত কায়েম করে উটের পিঠে থাকা অবস্থায় অনেক সময় নামাজের সময় হয়ে গেলে ভেতরে নামাজ পড়েছে। বুখারী শরীফ

এই হাদিসের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম যে বিতরের নামাজের অনেক গুরুত্ব আছে। তাই শেষ রাতে যদি জাগ্রত হওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারেন তাহলে আপনি তাহাজ্বতের নামাজ পড়ে বিতরের নামাজ পড়তে পারবেন। আর যদি আপনিও নিরাপত্তা দিতে পারেন সে ক্ষেত্রে এটা দেওয়া যেতে পারে। ইসলামের পাঁচটি খুঁটি আছে যা আসলে এরমধ্যে নামাজটি অন্যতম এটা আমাদের জন্য ফরজ একটি এবাদত কোরআন শরীফের ৮২বারের মত নামাজের কথা বলা হয়েছে। কেননা রাসূল সাঃ বলেছেন নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ। সূরা নিসা, আয়াত নাম্বার ১০৩

রাসুল সাঃ ওয়াক্ত মতেনামাজ পড়ার জন্য দিয়েছেন এবং নিজেও উপস্থিত হতে হবে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা বলেছেন যে আমি রাসূল সা কে বলতে শুনেছি কোরআনকে আল্লাহর নিকট সবচাইতে বেশি প্রিয় ফরিদপুরে তিনি চুপ করে বসে ছিলেন এবং তাছাড়া দিনশেষে আমাদের নামাজ পড়তে হয় এশার নামাজ যা আদায় করার জন্য ছোট বাচ্চাদের নেওয়া হচ্ছে। 

১ রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

অনেকে জানতে চায় ১ রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে। আসলে বিতর নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ম কানুন রয়েছে। চলুন, ১ রাকাত বেতের নামাজ কিভাবে পড়বেন? সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

বিতর নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে মূল নিয়ম হলো বিজোড়ভাবে পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি ১ রাকাত, ৩ রাকাত, ৫, ৭, ৯, ১১ রাকাত পড়তে পারবেন। কেননা রাসূল সঃ এভাবে তিনি বিতরে নামাজ পড়েছেন। তবে বিজোড়ভাবে ১১ রাকাত পর্যন্ত পড়তে পারবেন। এজন্য ১ রাকাত বিতর নামাজ পড়তে পারবেন। তবে রাসূল সাঃ বিতর নামাজ পড়ার পূর্বে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়েছেন। তারপরেই তিনি ১ রাকাত নামাজ পড়ে নিয়েছেন। তাছাড়া তাহাজ্জুতের নামাজ, এশারের সুন্নত নামাজ পরে ১ রাকাত বিতর নামাজ পড়েছেন। এই ১ রাকাত বিতর নামাজ সুরা ফাতেহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।

৩ রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ত

বিতরের নামাজ পড়া আমাদের উপর ওয়াজিব। তাই ৩ রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ত সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে আপনি শুদ্ধভাবে নামাজ পড়তে পারবেন। চলুন, বিতরের নামাজের নিয়ত কিভাবে করবেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
যেকোনো নামাজের ক্ষেত্রে প্রথমে নিয়ত করতে হবে অর্থাৎ আপনি যে নামাজের নিয়ত করবেন সেটা যদি বাংলাতে পড়তে পারেন, তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে আরবীতে পড়াই ভালো হবে। তবে আরবীতে পড়তে হলে অবশ্যই সহিহ ভাবে পড়তে হবে। ভুল করে পড়লে গুনাগার হতে হবে। এই ক্ষেত্রে যদি আপনি সহিহ ভাবে না পড়তে পারেন, সে ক্ষেত্রে বাংলা পড়লেই হবে। তবে আরবীতে অবশ্যই শিখতে হবে। এই বিতরের নামাজ সাধারণত ফরজ নামাজের মত পড়তে হয়। এছাড়াও এটা জামাতের সাথে পড়তে পারবেন, একা পড়তে পারবেন, যদি আপনি নিজে ইমাম হন সে ক্ষেত্রে পড়া যাবে।

বিতর নামাজ কত রাকাত ও সহিহ নিয়ম কোনটি

অনেকে জানতে চায় যে বিতর নামাজ কত রাকাত ও সহিহ নিয়ম কোনটি? এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন কেননা মুসলিম হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্ব। চলুন, এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
বিতরের নামাজ বিজোড় ভাবে পড়তে হয় এক্ষেত্রে আপনি ১ রাকাত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১১ রাকাত পর্যন্ত পড়তে পারেন। ১ রাকাত পড়া জায়েজ আছে, কেননা রাসূল সাঃ হাদিস শরীফে বলেছেন, কেউ যদি ১ রাকাত নামাজ পড়তে চায়, সে পড়তে পারবে। (আবু দাউদ)। আবার যদি ৩ রাকাত পড়তে চায় সেটাও করা যাবে। কেননা রাসূল সাঃ বলেছেন যে ব্যক্তি বিতরের নামাজ ৩ রাকাত পড়তে চায় সে তিন রাকাত পড়তে পারবে। (আবু দাউদ)। নবী করীম সাঃ আবারো বলেছেন, যদি কেউ ৫ রাকাত বিতর নামাজ পড়তে চায়, পড়তে পারবে। (আবু দাউদ)। এছাড়াও এভাবে ৭,৯,১১ রাকাত পর্যন্ত আদায় করতে পারবেন।

মহিলাদের বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

অনেক নারীরা জানতে চায়, মহিলাদের বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে। কেননা অনেক নারীরা হয়তো জানে না, তাই এ বিষয়ে সঠিক নিয়ম জানতে হবে। চলুন, মহিলারা কিভাবে বিতরের নামাজ পড়বে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

যে কোন নামাজের ক্ষেত্রে নারী বা পুরুষের মধ্যে তেমন পার্থক্য নাই। কেননা রাসূল সাঃ বলেছেন, নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে নিয়ম সকলের জন্য সমান। রাসুল সাঃ বলেছেন, তোমরা আমার মত করে সালাত আদায় করবে, আমি যেভাবে সালাত আদায় করি। এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, নারী-পুরুষ সকলের নামাজের নিয়ম কানুন একই, এতে কোন পার্থক্য নাই। তবে পার্থক্য রয়েছে সেটা হল সিজদার ক্ষেত্রে বসার ক্ষেত্রে হাত বাধার ক্ষেত্রে ইত্যাদি কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো নারীদের ক্ষেত্রে একটু ভিন্নতা রয়েছে। তবে নামাজের ভিতরের নিয়ম প্রায় একই।

বিতর নামাজ পড়ার শেষ সময়

অনেকে জানতে চায় যে, বিতর নামাজ পড়ার শেষ সময় কখন যা জানা খুবই জরুরী। কেননা অনেকেই এই সময় সম্পর্কে ভুল করে ফেলে। চলুন, কোন সময় পড়া যাবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
বিতরের নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে সময় নির্ধারণ করা আছে, সেই সময়ের মধ্যে নামাজ না পড়লে হবে না। এই নামাজ পড়ার শেষ সময় হল এশার নামাজের থেকে পর থেকে শুরু করে ফজরের আযানের পূর্ব পর্যন্ত এই নামাজ পড়া যাবে। তবে এশার নামাজের পরপর পড়লেই সবচাইতে ভালো হয়। তাছাড়াও অধিকাংশই ওলামায়ে কেরাম মতামত দিয়েছেন, রাতকে তিন ভাগ করে তার প্রথম ভাগে নামাজ পড়বেন এবং সাথে বিতরের নামাজও পড়ে ফেলা ভালো হবে। তবে ফজরের আযান দেওয়ার পর কখনোই এই নামাজ পড়া যাবে না। শুধুমাত্র ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়তে হবে।

দোয়া কুনুত ছাড়া বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

বিতরের নামাজ পড়তে হলে দোয়া কুনুত লাগে, এটা অনেকে জানে না। তাই দোয়া কুনুত ছাড়া বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাহলে আপনি সঠিকভাবে নামাজ পড়তে পারবেন। চলুন, দোয়া কুনুত ছাড়া কিভাবে নামাজ পড়বেন সেখ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
বিতর নামাজ পড়তে হলে অবশ্যই আপনাকে দোয়া কুনুত দিয়ে নামাজ পড়তে হবে। এক্ষেত্রে দোয়া কুনুত পড়া সুন্নাহ যদি কেউ দোয়া কুনুত পারেন সে ক্ষেত্রে অনেক সওয়াব পাওয়া যাবে। এছাড়াও যদি কেউ বলে যে, আমি এই দোয়া পারিনা, এক রাকাত বিতর নামাজ পড়বো সে ক্ষেত্রে এক রাকাত পড়ে শেষ করে দিতে পারেন। এটা জায়েজ আছে তবে সকল সাহাবীগণ দোয়া কুনুত সহ তিন রাকাত নামাজ পড়ছেন। তবে বিতর নামাজের মধ্যে এই দোয়া কুনুত পড়া সুন্নত হলেও অনেক সাহাবায়ের কেরাম বলেছেন এটা ওয়াজিব। তবে অনেকে এই দোয়া কুনত পড়তে পারে না, সে ক্ষেত্রে নামাজ হবে।

আজকের এই আর্টিকেলের লেখক,
মাওলানা মোঃ ফারহাদ আলী
সহকারী মৌলভী
গোলকপুর সিদ্দিকিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ।

লেখকের শেষ কথাঃ

পরিশেষে বলা যায় যে, বিতর নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে অনেকে নিয়ম-কানুন জানেন না। তাই সঠিক পদ্ধতিতে বিতর নামাজ পড়তে হবে, তাহলেই আপনি সওয়াব পাবেন। তাছাড়া গুনাগার হতে হবে, কেননা বিতর নামাজ পড়া ওয়াজিব যা ফরজের কাছাকাছি সেক্ষেত্রে এই নামাজটি সঠিকভাবে পড়তে হবে, না হলে গুনাহগার হতে হবে। তাই বিতর নামাজ পড়ার সঠিক সময় সম্পর্কে আর্টিকেলে সঠিক তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, আশা করি আপনার উপকার হবে। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Md. Mahmudul Islam
Md. Mahmudul Islam
আমি ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট ও সরকারি চাকরি করি। আমি অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করে ইনকাম করি, এছাড়াও ব্লগিং, SEO ও টেকনোলজি বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করি। এই কাজের উপর আমার ৩ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।