দারুচিনি খেলে কি উপকার হয় ও এর ঔষধি গুণ সম্পর্কে জানুন
আমরা সাধারণত মসলা হিসেবে এই দারুচিনি ব্যবহার করে থাকি কিন্তু দারুচিনি খেলে কি উপকার হয়? সম্পর্কে হয়তো অনেকে জানেন না। এই জন্য এর উপকারিতা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, দারুচিনি আমাদের শরীরে কি উপকার করে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ভারতীয় উপমহাদেশে সাধারণত মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার গুলো খেতে পছন্দ করা হয়। তবে এর উপকারিতা অনেক রয়েছে। তাই দারুচিনি খেলে কি উপকার হয়? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃদারুচিনি খেলে যে উপকার হয় ও এর ঔষধি গুণ সম্পর্কে জানুন
দারুচিনি খেলে কি উপকার হয়
প্রাকৃতিক উপায়ে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি যদি দূর করতে চান, তাহলে দারুচিনি খেতে পারেন। তাই দারুচিনি খেলে কি উপকার হয়? চলুন, এ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
দারুচিনি শুধু আমরা মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি কিন্তু এটার প্রাকৃতিকগত অনেক গুণাগুণ রয়েছে এবং বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে মুক্তি দেয়, সে সম্পর্কে হয়তো জানি না। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
এর মধ্যে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট, এন্টি ইনফ্লামেটরি, ক্যালোরি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, লাইকোপেন ইত্যাদি। যা আমাদের শরীরে অনেক উপকার করে থাকে। চলুন সে সম্পর্কে জানা যাক।
হৃদরোগ প্রতিরোধ করেঃ এটা ট্রাইগ্লিসারিড ও কোলেস্টেরলের নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। তাই আপনি এটা ১ মাসের মত খেতে পারেন দেখবেন আপনার হৃদরোগের সমস্যা দূর হয়ে গেছে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি থাকার কারণে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। কারণ ক্যান্সারের যে কোষগুলো বৃদ্ধি পায় সেগুলো বাধা দিতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়ঃ এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে। যেকোনো ধরনের প্রদাহ ও ব্যাকটেরিয়া দমন করতে সাহায্য করে থাকে তাই নিয়মিত ভাবে এটা খেতে পারেন।
বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়ঃ এর মধ্যে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরের ভিতর যদি কোন বিষাক্ত কিছু থাকে সেগুলো বের করে দিতে সাহায্য করবে এবং শরীরকে শক্তিশালী ও এন্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে থাকে।
হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ যাদের হজম এর সমস্যা রয়েছে তারা এই দারুচিনি খেতে পারেন। কেননা এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে যা আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং বমি বমি ভাব কমাতে সাহায্য করে থাকে। এজন্য আপনি এক কাপ পানির মধ্যে কিছু দারুচিনি নিবেন ও পানি দশ মিনিটের মতো ফুটাতে হবে, এরপরে একটি কাপের মধ্যে ঢেলে নিয়ে মধু ও লেবু দিয়ে মিশিয়ে খেতে পারেন।
অথবা একটি বোতল সংরক্ষণ করে রেখে একটু পর পর খেতে পারবেন। তবে সতর্কতা হল দারুচিনির পানি খাওয়ার কারণে অনেকের ওজন বেড়ে যেতে পারে, সেদিকে আপনার খেয়াল রাখতে হবে। তাই প্রথমবারে অল্প পরিমাণ খাবেন, যদি আপনার অসুবিধা হয় তাহলে এই পানি খাওয়া বন্ধ করে দিবেন। তবে একবার খেলে তেমন একটা ক্ষতি হবে না, সপ্তাহে দুই একবার খেলে তেমন ক্ষতি হবে না।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করেঃ আপনার শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা যদি বৃদ্ধি পেয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আপনি দারুচিনি খেতে পারেন। এতে আপনার যে পুষ্টি উপাদান আছে তা আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিবে এবং নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করবে। এই ক্ষেত্রে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কম থাকবে।
ওজন কমাতে পারেঃ আপনার যদি ওজন বেশি হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে ওজন কমানোর জন্য দারুচিনি খুবই ভালো কাজ করে থাকে। এজন্য আপনার এই দারুচিনির পানি খাওয়া যেতে পারে। এতে আপনার চর্বির কোষগুলো ভেঙে দিতে পারবে।
তবে খালি পেটে যদি নিয়মিতভাবে খান সেক্ষেত্রে অনেকটা সমস্যাও দেখা দিতে পারে, তাই সতর্কতার সাথে খাবেন। তবে এটা খাওয়ার কারণে আপনার ক্ষুধা কম লাগতে পারে এজন্য অন্যান্য খাবার এর প্রতি আগ্রহ হয় না এজন্য ওজন কমতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে বা হাই প্রেসারে নিয়ে সমস্যা রয়েছেন। তারা এই দারুচিনির পানি খেতে পারেন, এতে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে, রক্তের শর্করাও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকবে। তাই আপনি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দারুচিনি খেতে পারেন। কেননা এটা ইনসুলিন ও হরমোনের মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ করা জন্য দারুন কাজ করে থাকে।
এছাড়াও এটা এন্টি ডায়াবেটিক রয়েছে যা আপনার সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা পালন করে। এটা শুধু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে তা কিন্তু নয় পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করে থাকে। বিশেষ করে ডায়রিয়া এর সমস্যা সমাধান করে থাকে, তাছাড়া দাঁতের যন্ত্রণা, ব্যথা এছাড়াও সর্দি কাশির ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে।
বাতের সমস্যা দূর করেঃ যাদের বাতের সমস্যা রয়েছে তারা এই ধরনের প্রদাহ দূর করার জন্য দারুচিনি ও মধু সংযুক্ত করে সেই পানি খেতে পারেন। এতে আপনার বাতের ব্যথা কমে যাবে, এজন্য একগ্লাস গরম পানির মধ্যে দুই চামচ পরিমাণ মধু ও এক চামচ এর গুড়া মিশিয়ে নিবেন। এরপরে সেই পানি নিয়মিত ভাবে খাবেন, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে এবং রাত্রিতে ঘুমানো যাওয়ার আগে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় এবং বাতের ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করেঃ যাদের মুখের দুর্গন্ধ রয়েছে তারা মানুষের সাথে কথা বলতে গিয়ে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে যান, তারা অনবরত মুখের ভিতরে এক টুকরো দারচিনি রাখতে পারেন। দেখবেন আপনার মুখ থেকে সুন্দর একটি সুগন্ধ বের হবে, এতে আপনার মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও আপনি সকালবেলা হালকা গরম পানির মধ্যে মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার মুখের দুর্গন্ধের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে।
চুল পড়া বন্ধ করেঃ যাদের হরমোনাল সমস্যা রয়েছে এর কারণে অনেকের চুল পড়ে যায়। তারা বিভিন্ন টেনশনে পড়ে যান তাদের জন্য ভালো একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসাবে উপকার করে থাকে। তারাও দারুচিনি নিয়মিতভাবে খেতে পারেন, এজন্য মধু ও দারুচিনি মিশিয়ে খেতে পারেন।
এতে আপনার মাথার ত্বকে ভালো উপকার পাবেন অথবা অনেকেই দারুচিনির গুঁড়ো এবং এর সাথে এক চামচ অলিভ অয়েল মিক্সড করে একটি পেস্ট তৈরি করবেন, সেটা আপনার মাথায় ত্বকে যদি লাগাতে পারেন। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করার পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন, দেখবেন আপনার চুল পড়া অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে।
গলার ক্ষতঃ অনেকের গলার বিভিন্ন ধরনের ঘা হয়ে থাকে এবং অনেকদিন যাবত কাশি হয়ে থাকে, গলায় জ্বালাপোড়া করে এবং গলার স্বর পাল্টে যায় এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে প্রথমে ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন। এরপরে পাশাপাশি আপনি দারুচিনির গুঁড়ো এবং হালকা গরম পানি করে রাত্রিতে ভিজিয়ে রাখতে পারেন, এরপরে সকাল বেলা সেটা পরিষ্কার করে অল্প পরিমাণ সকাল বিকাল করে খেতে পারেন। এতে আপনার গলার ক্ষত দূর হয়ে যাবে এবং গলা ব্যথা অনেকটা কমে যাবে।
মাথা ব্যাথাঃ অনেকেরই বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে এবং জ্বর জ্বর মনে হয় এই ধরনের মাথাব্যথা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আপনি দারুচিনির গুঁড়ো হালকা গরম পানির মধ্যে মিশিয়ে সকাল বিকাল দুইবার খেতে পারেন। এতে করে আপনার মাথাব্যথা অনেকটাই কমে যাবে অথবা অনেকের নাকে পানি পড়া এবং মাথা ব্যথা যন্ত্রণা অনেকটাই কমে যাবে।
মুখের মেছতাঃ যাদের দীর্ঘদিন যাবৎ মুখের মেছতা সমস্যায় ভুগছেন তারা দারুচিনির গুঁড়ো এবং হালকা গরম পানি নিয়ে তার মধ্যে ভিজিয়ে রাখবেন এবং পরের দিন সেটা সকালে বিকালে খেতে পারেন। এভাবে যদি কয়েকদিন খেতে পারেন তাহলে দেখবেন দারুন কাজ করেছে।
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url