গর্ভাবস্থায় বোয়াল মাছ খেলে কি হয় ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের মাছ ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। তাই গর্ভাবস্থায় বোয়াল মাছ খেলে কি হয়? এর মাঝে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন থাকে। তাই এই মাছটি খেতে পারেন। চলুন, বোয়াল মাছ খাওয়ার উপকার সম্পর্কে জানা যাক।
ছবি
সাধারণত গর্ভবতী মায়েদের এ সময় প্রোটিন জাতীয় খাবার গুলো প্রয়োজন। তার মধ্যে মাছ খেতে পারেন, বিশেষ করে বোয়াল মাছ। তাই গর্ভাবস্থায় বোয়াল মাছ খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃগর্ভাবস্থায় বোয়াল মাছ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

গর্ভাবস্থায় বোয়াল মাছ খেলে কি হয়

গর্ভবতী নারীরা সাধারণত বোয়াল মাছ খেতে পছন্দ করে কিন্তু গর্ভাবস্থায় বোয়াল মাছ খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানে না। চলুন, বোয়াল মাছ খাওয়ার কারণে কি উপকার হতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

পুষ্টিগুণঃ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও প্রোটিন থাকে, যা প্রায় ২০ গ্রামের মতো প্রোটিন থাকে। তাই আপনার দৈনিক যে প্রোটিনের চাহিদা তা এ মাছ পূরণ করবে। তাছাড়াও এই মাছের মধ্যে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা আপনার হৃদ রোগের এবং মস্তিষ্কে কার্যক্ষমতা উন্নতি করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ডি, ই এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্সে আছে যা একজন গর্ভবতীর এই পুষ্টিগুণ গুলো খুবই প্রয়োজন।

তাছাড়া এর মধ্যে খনিজ পদার্থ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, সেলিনিয়াম, আয়োডিন আছে। যা গর্ভবতীর গর্ভস্থ শিশুর হাড় গঠনের জন্য এবং দাঁতকে মজবুত করার জন্য ক্যালসিয়াম এর প্রয়োজন হয়। তাই বোয়াল মাছ খাওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে খুবই কম পরিমাণ কোলেস্টেরল রয়েছে, যা আপনার শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল গুলো দূর করে দেবে এবং হৃদরোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ এই মাছের মধ্যে ওমেগা থ্রি থাকার কারণে আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। কেননা এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে এই মাছটি গর্ভবতীদেরকে সপ্তাহে দুইদিন খাওয়ানো হয় এর পরবর্তীতে দেখা যায় রক্তচাপ অনেক কমে গেছে।

ধমনীর উন্নতি গঠনঃ এ মাছের মধ্যে কিছু উপাদান রয়েছে, যা আপনার ধমনীর প্রদাহ বা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করবে।

মেধা শক্তি বৃদ্ধি করেঃ গর্ভস্থ শিশুর মেধা শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য এবং মানসিক প্রতিবন্ধী যেন না হয় সেজন্য আপনি এই মাছ খেতে পারেন। কেননা এর মধ্যে ফ্যাটি এসিড থাকে যা আপনার গর্ভস্থ শিশুর স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

ডিপ্রেশন প্রতিরোধঃ গর্ভবতীরা সাধারণত এই সময় অনেক টেনশনে পড়ে যায় এবং ডিপ্রেশনে থাকে। তাই এই ধরনের সমস্যার কারণে অনেক সময় বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। এতে শরীর অনেক ক্ষতি বা চাপ পড়ে। তাই যাদের এই ডিপ্রেশনের সমস্যা রয়েছে তারা সপ্তাহে ৩বার এই মাছ খাবেন, তবে বেশি খাবেন না।

চোখের সমস্যা প্রতিরোধঃ যে সকল রোগীদের সাধারণত চোখের কোণায় সার্বক্ষণিক ব্যথা করে এবং পানি ঝরতে থাকে। এ ধরনের সমস্যা দূর করার জন্য এই মাছ খাওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ থাকে, যা আপনার চোখের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
রেটিনার সমস্যাঃ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামি-এ থাকে যা আপনার দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং আপনার রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করবে।

চোখের সমস্যা দূর করেঃ যাদের সাধারণত চোখের সমস্যা রয়েছে, তাদেরকে চিকিৎসকরা ওমেগা থ্রি জাতীয় খাবার গুলো খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই আপনি এই মাছটি খেতে পারেন কেননা এর মধ্যে ওমেগা থ্রি থাকার কারণে আপনার চোখের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।

হাড়কে মজবুত করেঃ গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত এই সময়ে হাড়কে শক্তিশালী করার জন্য এবং গর্ভস্থ শিশুর হাড়কে মজবুত করার জন্য এ ধরনের ভিটামিন খাওয়া যেতে পারে। কেননা এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে যা আপনার ক্যালসিয়াম শোষণ করার জন্য ভালো কাজ করে থাকে।

আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধঃ যাদের দীর্ঘদিন যাবত এই ধরনের সমস্যা হচ্ছে তারা এই মাছ খেতে পারেন। কেননা এর মাঝে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড থাকে যা আপনার আর্থাইটিসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।

কোলাজেন উৎপাদনঃ এর মধ্যে প্রোটিন, কোলাজেন থাকে যা আপনার নমনীয়তা এবং বয়স কমিয়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করবে।

ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখাঃ যাদের শরীরে ত্বক আদ্রতা থাকে, বিশেষ করে গর্ভবতীদের এই সময় ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ এবং ব্রণ দেখা যায়। তাই এ ধরনের সমস্যা দূর করার জন্য আপনি এই মাছটি খেতে পারেন।

শ্বেত রক্তকণিকা উৎপাদনঃ একজন গর্ভবতীর এই সময়ে রক্ত প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই রক্ত বৃদ্ধি করার জন্য এই মাছটি খাওয়া যেতে পারে। কেননা এর মধ্যে শ্বেত রক্তকণিকা উপস্থিত রয়েছে, তাছাড়া জিংক বা ফ্যাটি এসিড আছে। তাছাড়া এই মাছ সেলিনিয়াম, রক্তকণিকা উৎপাদন বৃদ্ধি করে থাকে।

বোয়াল মাছের বৈশিষ্ট্য

এই মাছের বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকে, তাই বোয়াল মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের মিঠা পানির যে মাছগুলো রয়েছে তার মধ্যে এই মাছটি অন্যতম। এই মাছটি সাধারণত ১.৮ মিটার বড় হয়ে থাকে। অনেক মাছ ২০ থেকে ২৫ কেজির মতো ওজন হয়ে থাকে অথবা অনেক সময় এর চেয়ে আরো বড় আকারের হয়ে থাকে।

এই মাছগুলো সাধারণত নদীতে, খাল বিল, হাওয়ার বাওর ইত্যাদি জায়গায় বসবাস করে থাকে। এছাড়াও এরা গভীর পানিতে থাকতে পছন্দ করে থাকে, এতে করে তারা এই পানিতে অন্যান্য কিছু শিকার করে। এই মাছটি মাংসাশী মাছ, বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ, কাঁকড়া, পোকামাকড় ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে।

এই মাছটি সাধারণত বর্ষাকালে তারা বিভিন্ন জায়গায় চলাফেরা করে এবং উপরের দিকে চলে আসে। তাছাড়া এই মাছটি বিভিন্ন পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। এজন্য এই মাছগুলো সাধারণত ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

বোয়াল মাছের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

এই মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ইতিহাস ঐতিহ্য রয়েছে, তাই বোয়াল মাছের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ঐতিহ্য হিসাবে এই মাছ সাধারণত ঝোল হিসাবে রান্না করে থাকে, এটি একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন উৎসব, বিয়ের অনুষ্ঠানে সাধারণত এই মাছ রান্না দিয়ে খাবার পরিবেশন করা হয় এবং মানুষ এই মাছটি খেতে বেশি পছন্দ করে থাকে।

গ্রাম অঞ্চলে সাধারণত এই মাছের গুরুত্ব রয়েছে এবং কোন জামাই তার শ্বশুরবাড়িতে যেতে এই ধরনের বড় মাছ নিয়ে যেতে পছন্দ করে থাকে। যার কারণে এই মাছের ঐতিহ্য রয়েছে। এছাড়াও এই মাছের কথা বাউল ও ভাটিয়ালি গানে উল্লেখ করা হয়েছে, যার কারণে এর ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বোয়াল মাছ খেলে কি ক্ষতি হয়

একজন গর্ভবতী নারীর সাধারণত এই সময় বোয়াল মাছ খেলে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবে কিন্তু যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয় তাহলে শরীরে ক্ষতি করতে পারে। চলুন, কতটুকু ক্ষতি করতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
এলার্জির সমস্যাঃ যে সকল গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত পূর্বে থেকেই এলার্জির সমস্যা রয়েছে, তারা এই মাছ খাবেন না। কেননা এতে আপনার এলার্জি সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে, চুলকানী ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যাদের এ ধরনের সমস্যা হয় তাহলে তারা এই মাছ খাবেন না।
পেটের সমস্যাঃ যাদের অনবরত ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদির সমস্যা দেখা দেয়, তারা এই ধরনের মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কেননা এই মাছ প্রচুর পরিমাণে তৈলাক্ত থাকে যার কারণে ডায়রিয়া আরো বেশি হতে পারে।

এই মাছ সম্পর্কে FAQ প্রশ্ন জানুন

বোয়াল মাছ কি শুধু মিঠা পানিতে পাওয়া যায়?

এ মাছটি শুধু মিঠা পানিতে যে উৎপাদন হয়ে থাকে তা কিন্তু নয়, বিভিন্ন অঞ্চলের পানিতেও চাষাবাদ করা যায়।

বোয়াল মাছ কি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিরাপদ?

গর্ভবতী মহিলারা বিভিন্ন ধরনের মাছের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এই মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে কোন নিষেধ নেই। এটা অত্যন্ত নিরাপদ আর শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে সাহায্য করে।

বোয়াল মাছ কি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযোগী?

এই মাছটি উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন থাকে এবং কার্বোহাইড্রেট কম থাকে, যার কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারবে এতে কোন সমস্যা নেই।

বোয়াল মাছের কোন অংশ সবচেয়ে পুষ্টিকর?

এ মাছটি অত্যন্ত পুষ্টিকর বিশেষ করে মাথা ও লেজের দিকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি রয়েছে।

বোয়াল মাছের সর্বোচ্চ ওজন কত হতে পারে?

এই মাছটি সাধারণত ২০ থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে, তবে অনেক ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৪৫ কেজি ওজনের হয়ে থাকে।

লেখকের শেষ কথাঃ

পরিশেষে বলা যায় যে গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টির প্রয়োজন রয়েছে, তাই প্রোটিন জাতীয় খাবার গুলো বেশি খেতে হবে। তার মধ্যে মাছ খেতে পারেন, এজন্য খাল বিল এর মাছের মধ্যে বেশি প্রোটিন থাকে এক্ষেত্রে বোয়াল মাছ খাওয়া যেতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় বোয়াল মাছ খেলে কি হয়? সম্পর্কে আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে, আশা করি উপকার হবে। পোস্টটি ভাল লাগলে আপনার বন্ধু বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪