হযরত ওসমান রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা ও তাঁকে হত্যার কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে জানুন
হযরত ওসমান রাঃ এর কৃতিত্ব রয়েছে, তবে হযরত ওসমান রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে হয়তো অনেকে জানেন না। চলুন, তাঁর শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।
ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান রাঃ ইসলামের জন্য তাঁর জীবন ধন-সম্পদ সকল কিছুই ত্যাগ করেছিলেন। তিনি সুপরিকল্পিতভাবে শাসন কার্য পরিচালনা করেছেন। তাই হযরত ওসমান রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃ হযরত ওসমান রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা ও তাঁকে হত্যার কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে জানুন
হযরত ওসমান রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা
হযরত ওসমান রাঃ ইসলামের তৃতীয় খলিফা ছিলেন। তাই হযরত ওসমান রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, তার শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
হযরত ওসমান রাঃ খেলাফতে অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে তিনি অনেক জনকল্যাণ মূলক কাজ করেছিলেন। হযরত ওসমান রাঃ মুসলমানদের দুঃখ দুর্দশা দূর করার জন্য তার নিজের অর্থ দিয়ে ইসলামের কাজ কর্ম করেছেন। ইসলামের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন, মদিনায় পানির অভাব ছিল আর এই অভাবকে দূর করার জন্য তিনি কূপ খনন করেছিলেন। এই কূপ খনন করতে ২০ হাজার দিরহাম খরচ হয়। এছাড়াও তিনি মসজিদ সংস্কার বা সম্প্রসারণ করেছেন, মসজিদ সংলগ্ন জায়গা কিনে মসজিদকে বিস্তৃত করেছিল। তাই হযরত ওসমান রাঃ নিজের অর্থ মানুষের কল্যাণের জন্য ব্যয় করেছেন।
হযরত ওসমান রাঃ বিভিন্ন যুদ্ধ ক্ষেত্রে অর্থের জন্য তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে তিনি মোটা অংকের অর্থ দান করেছিলেন। মুসলিম বাহিনীকে শক্তিশালী করা জন্য তিনি তাদেরকে উৎসাহিত করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ইসলামের পক্ষে কাজ করেছেন, তিনি হুদাইবিয়ার সন্ধি বা বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অনেক অবদান রেখেছেন। তাছাড়া তিনি প্রত্যেকটাই ইসলামের কাজে অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁর বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার কারণে তিনি কুরাইশ মুসলমানদের মধ্যে চুক্তি করেছিলেন যেটা তার একটি সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ ছিল।
হযরত ওসমান রাঃ আবু বকর রাঃ এবং ওমর রাঃ এর ইন্তেকালের পর খেলাফতে অধিষ্ঠিত হন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে অংশগ্রহণ করেন। হযরত ওমর রাঃ এর ইন্তেকালের পূর্বে ওসমান রাঃ কে ইসলামের তৃতীয় খলিফা হিসেবে মনোনীত করে গেছিলেন। তিনি খলিফা নিযুক্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন শাসন কার্য পরিচালনা করেছেন। তাঁর শাসনকালকে বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি সামরিক নৌবাহিনী সকল বাহিনীকে শক্তিশালী করে তুলেছিলেন এবং তার এই সেনাবাহিনী দিয়ে বাইজেন্টাইনদের শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয় লাভ করেছিলেন।
হযরত ওসমান রাঃ শাসন কার্য পরিচালন করার সময় জনগণের জন্য কাজ করেছেন। জনসাধারণের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন ধরনের বাঁধ নির্মাণ করা, পয়ঃ নিষ্কাশন তৈরি করা, রাস্তাঘাট, মসজিদ নির্মাণ, খাল খনন ইত্যাদি কাজগুলো তিনি করেছেন। মদিনার বুকে মসজিদ সংস্কার করা, কাঠের ছাপ তৈরি করা, প্রস্তর স্তম্ভ, সৌন্দর্য তৈরি করার ক্ষেত্রে তিনি কাজ করেছেন। মদিনার মধ্যে সবচাইতে বড় বাঁধ মাহজুর নামের বাঁধ নির্মাণ করে মদিনা শহরকে প্লাবন থেকে রক্ষা করেছিলেন। এছাড়াও মদিনায় বনাত লা ইলাহ নামক একটি খাল খনন করে সেখান থেকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন।
হযরত ওসমান রাঃ খেলাফতে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর শাসন কার্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন। তিনি কোরআনের সংকলন করা, তিনি এর জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছেন এবং কৃতিত্ব রেখেছিলেন। তিনি নির্ভুলভাবে কোরআনের সংকলন এবং সংরক্ষণ করার কারণে ইসলামের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। কোরআন পাঠের ক্ষেত্রে গরমিল হয়ে যায়, এই জন্য তিনি একটি উপযুক্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। সেই কমিটি এই কোরআনের সংস্করণ করেছিলেন। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বিকৃত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তাই তিনি কোরআন সংকলন ও সংরক্ষণ করেছিলেন।
হযরত ওসমান রাঃ খিলাফতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে তিনি ওমর রাঃ রাজস্ব নীতি অনুসরণ করেছিলেন কিন্তু ৮ বছর পরে কুফার গভর্নর থেকে একটি পত্র পেলেন এবং সেখানে পত্রটা পরে তিনি বিচলিত হয়ে গেলেন। তিনি দেখলেন যে নাগরিক সভ্যতার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গ্রামীণ লোকেরা শহরের চলে যাচ্ছে শহরের শালীনতা বিনষ্ট করতেছে। তিনি শহরের লোকদেরকে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা করে এবং গ্রামীণ লোকরা যেন শহরে বসবাস করতে উৎসাহিত না হয়ে যায়, সে চেষ্টা তিনি চেষ্টা করেছিলেন। এই অনুযায়ী তিনি জমি হস্তান্তরের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দিয়েছিল।
হযরত উসমান রাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
হযরত ওসমান রাঃ এর জীবনী সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। তাই হযরত উসমান রাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। তার জীবনে থেকে আমাদের অনেক শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। চলুন, জানা যাক।
ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান রাঃ ৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আফফান এবং মায়ের নাম আরওয়াহ। তার ডাকনাম ছিল আবু আমর ও আব্দুল্লাহ। তিনি ৩৪ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং ইসলামের সেবায় তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর সকল সম্পত্তি ইসলামের সেবার জন্য দান করেছিলেন। তিনি নবী করীম সাঃ এর দুজন কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন। একজন রুকাইয়া রাঃ তিনি ইন্তেকাল করার পরে বিবি উম্মে কুলসুমকে বিবাহ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি নবী করীম সাঃ এর নির্দেশে আবেসেনিয়া গমন করেছিলেন।
হযরত উসমান রাঃ এর খেলাফত
হযরত ওসমান রাঃ ইসলামের খেদমত করেছিলেন। তবে হযরত উসমান রাঃ এর খেলাফত সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, ওসমান রাঃ কিভাবে খেলাফত অধিষ্ঠিত হয়ে রাষ্ট্র চালিয়েছিলেন তাঁর সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
হযরত ওসমান রাঃ খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পিছনে হযরত ওমর রাঃ ও আলী রাঃ এর অবদান রয়েছে। ওমর রাঃ ইন্তেকালের পূর্ব মুহূর্তে তিনি একটি কমিটি গঠন করে ওসমান রাঃ কে মনোনিত করে যান। যদিও তাঁর উত্তরাধিকার নির্বাচন নিয়ে অনেক মতামত রয়েছে কিন্তু সকলের সর্বসম্মতিক্রমে তিনি তৃতীয় খলিফা হয়েছিলেন। তিনি ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে খলিফা নির্বাচিত হন। তিনি জ্ঞানের দিক থেকেও তৃতীয় খলিফা হওয়ার যোগ্য ছিলেন কিন্তু হযরত ওসমান রাঃ এর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কলহ বিপদের সৃষ্টি হয়েছিল। যা মুসলিম জগতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি খেলাফতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে মুসলিম রাজ্যকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃতিও করেছিলেন। পারস্য বিদ্রোহ দমন করেছিলেন এছাড়াও তিনি বিভিন্ন অঞ্চলগুলোকে জয় করেছিলেন। এরপরে তিনি পারস্য গজনী সিজিস্থান সহ বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র দখল করেন। হযরত ওসমান রাঃ সিরিয়ার শাসনকর্তা মোয়াবিয়া বিশাল বাহিনী নিয়ে বাইজান্টাইনের আক্রমণ প্রতিহত করেছিলেন। এছাড়া মুসলিম বাহিনী এশিয়া মাইনর আর্মেনিয়া দখল করে কৃষ্ণ সাগর পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিল। আলেকজান্দ্রিয়া সহ তিনি পরবর্তীকালে বিভিন্ন দেশ দখল করেছিলেন এবং সিসিলি পর্যন্ত আক্রমণ করেছিলেন।
হযরত ওসমান রাঃ কে যুন্নুরাইন বলা হয় কেন
হযরত ওসমান রাঃ ছিলেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা তাঁকে যুন্নুরাইন বলা হতো। তাই হযরত ওসমান রাঃ কে যুন্নুরাইন বলা হয় কেন? এ সম্পর্কে অনেকের জানা নেই। চলুন এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
হযরত ওসমান রাঃ প্রথমে রুকাইয়া রাঃ কে বিবাহ করেছিলেন এবং তাবুক যুদ্ধের পর রুকাইয়া রাঃ মদিনা ইন্তেকাল করেছিল। এরপরে উম্মে কুলসুম রাঃ কে বিবাহ করেছিলেন। তাঁর এই দুইজন স্ত্রী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর কন্যা ছিলেন। এই জন্যই ইসলামের দৃষ্টিকনে তাকে যুন্নুরাইন বা দুই জ্যোতির অধিকারী হিসেবে উপাধি দেওয়া হয়েছিল। ওসমান রাঃ আরো কিছু উপাধি ছিল তাকে ওসমান গনি বলা হতো, গনী শব্দের অর্থ হলো ধনী ব্যক্তি। কেননা তাঁর প্রচুর পরিমাণে ধন সম্পত্তি ছিল। যার কারণে তাঁকে গনি উপাধি দেওয়া হয়। এত ধন সম্পদ থাকা শর্ত তিনি সহজ জীবন যাপন করেছেন।
হযরত উসমান রাঃ এর স্ত্রী
হযরত ওসমান রাঃ ইসলামের স্বার্থে তিনি একাধিক বিবাহ করেছিলেন। তাই হযরত উসমান রাঃ এর স্ত্রী সম্পর্কে জানা আমাদের প্রয়োজন এবং কেন তিনি বিবাহ করেছিলেন এ সম্পর্কেও জানা প্রয়োজন। চলুন, তাঁর স্ত্রীদের সম্পর্কে জানা যাক।
হযরত ওসমান রাঃ তিনি ইসলামের স্বার্থে কয়েকটি বিবাহ করেছিলেন। এ সময়ে একাধিক বিবাহ করা জায়েজ ছিল। তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পরে যে স্ত্রী গুলো ছিল তাদের নাম হল রুকাইয়া বিনতে রাসুল। যিনি রাসুল সাঃ এর কন্যা ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মারা যাওয়ার পরে উম্মে কুলসুম রাঃ কে বিবাহ করেছিলেন। এরপরে ফাখতা বিনতে গাজোয়ান রাঃ, তারপরে উম্মে আমর বিনতে জুনদুব, এরপরে ফাতেমা বিনতে ওয়ালিদ, এরপরে উম্মুল বানিন বিনতে উয়াইনা, রামলা বিনতে সাইবা, নায়লা বিনতে ফুরাফিসা, যিনি বিবাহের সময় খ্রিস্টান ছিলেন পরবর্তীতে তিনি মুসলমান হয়ে বাকি জীবন অতিবাহিত করেছেন।
হযরত উসমান রাঃ এর হত্যার কারণ ও ফলাফল
হযরত ওসমান রাঃ হত্যাকান্ড একটি স্মরণীয় ঘটনা, তাই হযরত উসমান রাঃ এর হত্যার কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, তাঁর এই হত্যাকাণ্ড পিছনে কি ঘটনা রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
হযরত ওসমান রাঃ এর হত্যাকাণ্ডের পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। তাঁকে কিছু মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছিল যার কারণে পরবর্তীতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। এর পিছনে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ রয়েছে। তিনি খলিফা অধিষ্ঠিত হওয়ার পরে বসরা, কুফা থেকে প্রায় ৭০০ বিদ্রোহী ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে মদিনার দিকে অগ্রসর হয়েছিল। তারা তাদের শাসনকর্তার দুর্নীতি ও স্বার্থপরতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিল। যখন তারা প্রবেশ করেছিল এবং বিদ্রোহীরা বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাবনা দিয়ে ছিল কিন্তু খলিফা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এই কুচক্র বাহিনীর লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল খলিফার বিরুদ্ধে মানুষকে ক্ষিপ্ত করে তোলা।
তাছাড়া হযরত ওসমান রাঃ এর বিরুদ্ধে কিছু কুচক্রকারি ষড়যন্ত্র করেছিল তারা বলেছিল যে হযরত ওসমান রাঃ আত্মীয়-স্বজনদের অর্থ দান করা, এছাড়াও তিনি আত্মীয়-স্বজনদেরকে শাসনকার্যে নিযুক্ত করেছিলেন। তার আপন দুধ ভাই কে শাসনকার্য নিযুক্ত করেন। এছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনে আমিরকে বসরার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন। তাছাড়া কোরআন শরীফের পাঠ আবৃত্ত এবং উচ্চারণে বিভ্রান্ত দেখা দিচ্ছিল। তিনি যায়েদ বিন সাবিতের নেতৃত্বে কোরআন সংকলন করেছিল এবং বিবি হাফসার কাছে যে কোরআনের লিপিটি ছিল সেটা নির্ভুল বলে ঘোষণা দিয়েছিল।
হযরত ওসমান রাঃ কোরআনের মূল পাঠ্যপুস্তকটি রেখে অন্যান্য কপিগুলো তিনি পুড়িয়ে ফেলছিলেন। কোরআন শরীফ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ তারা দিয়েছিল। তাছাড়া কাবা শরীফের সম্প্রসারণের জন্য জমির দখলকৃত অভিযোগ দিয়েছিল যেটা একদমই মিথ্যা একটি অভিযোগ। এছাড়াও আনসার ও মুহাজিদের মধ্যে তিনি বৈষম্য করেছিলেন। বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী ও ধর্মের লোকেরা হযরত ওসমান রাঃ সরলতার সুযোগ নিয়ে কোরাইশদের কাছে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিল। এছাড়াও মারওয়ানের আপন চাচাতো ভাই ও জামাতা সে দুর্নীতি করলে এটাও একটি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিল।
ওসমান রাঃ এর হত্যার ফলাফল ইতিহাস একটি কলঙ্কিত ঘটনা। এই হত্যাকান্ডের কারণে খেলাফতের পতনের সূত্রপাত ঘটেছিল। হযরত ওসমান রাঃ হত্যার ফলাফল ঐতিহাসিকরা বলে থাকেন এটা নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এতে করে খলিফার ব্যক্তিগত পবিত্রতা নষ্ট হয়েছিল। তাছাড়াও ওসমান রাঃ হত্যার মূলত কারণ ছিল গৃহযুদ্ধ এবং ওসমান রাঃ হত্যা হওয়ার পরে মুসলমান কর্তৃক মুসলমানের পরবর্তীতে যুদ্ধের কারণে খোলাফতের অবসান হয়। ওসমান রাঃ হত্যাকাণ্ডের পর গণতন্ত্রের সমাধি হয়েছিল এবং রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। এছাড়াও মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট হয়ে যায়।
হযরত ওসমান রাঃ এর হত্যাকারীর নাম কি
হযরত ওসমান রাঃ এর হত্যাকান্ড একটি জঘন্যতম ঘটনা। তাই হযরত ওসমান রাঃ এর হত্যাকারীর নাম কি? এ সম্পর্কে আমাদের হয়তো অনেকের জানা নেই। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
হযরত ওসমান রাঃ কে যারা হত্যা করেছিল তাদের নির্দিষ্টভাবে নাম জানা যায়নি। তবে পরবর্তীতে এই বিষয়টি নিয়ে হযরত আলী রাঃ ও মুয়াবিয়ার রাঃ এর মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। খুব সম্ভবত মিশর বসরা থেকে কিছু বিক্ষোভকারী দল তারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছিল। আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা বর্তমানে যাকে আমরা মুনাফিক বলে উল্লেখ করে থাকি। হযরত ওসমান রাঃ হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হয় কিন্তু সে আসলে কতটা দায়ী এর বিতর্ক রয়েছে। তিনি প্রাথমিক জীবনে ইহুদি ছিলেন পরবর্তীতে মুসলমান হয় আলী রাঃ কে খলিফা হওয়ার পরে তিনি তাঁকে খোদা ঘোষণা করেছিল। যার কারণে আলী রাঃ তাকে শাস্তিও দিয়েছিল।
হযরত ওসমান রাঃ এর খেলাফত কাল কত বছর
অনেকেই হয়তো জানে না যে হযরত ওসমান রাঃ এর খেলাফত কাল কত বছর? তিনি ইসলামের তৃতীয় খলিফা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। হযরত ওসমান রাঃ ইসলামের খেদমতে জীবন কুৎসর্গ করেছিলেন। তিনি চারিত্রিক দিক দিয়ে উত্তম অধিকারী, এছাড়াও তিনি লজ্জাশীলতা ছিলেন কেননা রাসূল সাঃ তাকে লজ্জাশীলতা বলেই বিশেষ মর্যাদা দিত। তিনি এতটাই লজ্জাশীলতা ছিল যে ঘরের দেয়ালেকেও কখনো তার শরীরকে দেখায় নাই। তার চেহারা এবং দাঁত ছিল খুবই সুন্দর। তিনি সোনা দিয়ে দাঁত লাগিয়েছিল। এছাড়াও ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তার খেলাফত দায়িত্ব ছিলে প্রায় ১২ বছরের মত।
হযরত ওসমান রাঃ এর মৃত্যুর ঘটনা
হযরত ওসমান রাঃ এর হত্যাকান্ড ইতিহাসে বিরল তাই হযরত ওসমান রাঃ এর মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে প্রত্যেক মুসলমানের জানা প্রয়োজন। কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটলো এটাও জানা প্রয়োজন। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
প্রায় ৭০০ বিদ্রোহী বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রদেশ থেকে কুফা বস্ত্রা কমিশনের প্রায় ৭০০ বিদ্রোহী মদিনায় আসছিলেন এবং প্রাদেশিক গভর্নরদের বিরুদ্ধে খলিফা নিকট অভিযোগ দেন। খলিফা তাদের নিকট দ্রুত এই প্রতিকারের ওয়াদা দিয়েছিল কিন্তু পথের মধ্যে হাফসা দূতের হাতে খলিফার সীলমোহরসহ একটি পত্র বিদ্রোহীদের হাতে দিয়েছিল। এতে পত্রটি লেখা ছিল যে নিজ নিজ প্রদেশের রাজধানী বিদ্রোহীদেরকে হত্যা করা হয়। মূলত এই চিঠিতে লেখা ছিল মারওয়ানের হস্তে লেখা এবং খলিফার সিলমোহর সে অন্য এভাবে ব্যবহার করেছিল। এতে বিদ্রোহীরা রেগে যান এবং মদিনায় আবার ফিরে গিয়ে এই চিঠির কৈফত দাবি করে।
খলিফা আল্লাহর শপথ নিয়ে তিনি বলেছিল যে কোনভাবেই এই পত্র আমি লিখিনি। আমি এতে বিদ্রোহীরা মারোয়ানের উজ্জ্বল সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এবং মারোয়ানকে তাদের হাতে হস্তান্তরের জন্য দাবি জানাই কিন্তু খলিফা তাদের এই দাবি গ্রহণ করতে পারে নাই। খলিফাকে অযোগ্য হিসাবে ঘোষণা দেয় এবং তার বাসগৃহ ঘেরাও দেয় খলিফা নিরাপত্তার প্রতি উদ্বিগ্ন হয়ে হযরত আলী তালহা জুবায়ের ও তাদের সমন্বয়ে ১৮ জন একটি দেহরক্ষী বাহিনীর খলিফার পাহারা ব্যবস্থা করেছিল। এ সময় হজের মৌসুমের শেষ দিকে শুরু তাই মদিনার লোকজন ফিরে আসার আগেই বিদ্রোহরা খলিফা কে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল।
তারা সম্যক দরজা দিয়ে পাহারাদার মধ্যে দিয়ে খলিফার গৃহে প্রবেশ করেছিল এবং এই ৮২ বছর বয়সের এই বৃদ্ধ মানুষ পবিত্র কোরআন পড়া অবস্থায় ছিলেন। এরপরে তাকে বিদ্রোহীরা খলিফা কে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। খলিফার স্ত্রী লায়লা তাদের বাধা দিয়েছিল বলে তার হাতের তিনটি আঙ্গুলও কেটে দিয়েছিল। এভাবেই ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে হযরত ওসমান রাঃ কে হত্যা করেছিল। তাই ইসলামের ইতিহাসে তারাই হত্যাকান্ডে নৃশংস হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে পূজা ঐতিহাসিকরা একমত বলেছিলেন।
উপসংহারঃ হযরত ওসমান রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা ও তাঁকে হত্যার কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে জানুন
পরিশেষে বলা যায় যে ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান রাঃ ছিলেন। একজন সৎ ন্যায়পরায়ন এবং দানশীল ব্যক্তি যিনি ইসলামের জন্য তার ধন-সম্পত্তির দান করে দিয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের শাসন কার্য পরিচালনা করার সুবিধার্থে অনেক জন হতে বলার কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। কিছু উগ্রপন্থী ব্যক্তিরা তাকে হত্যা করেছিল যা ইসলামের ইতিহাসে একটি কলঙ্ক অধ্যায় বলা হয়ে থাকে। তাই হযরত ওসমান রাঃ এর শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে মানুষকে উপকার করেছে। আশা করি আপনার একটু হলেও উপকার হবে। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url