নীল বিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব এবং ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

অনেকে জানে না নীল বিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব সম্পর্কে কিন্তু বাংলার ইতিহাসে এই নীল বিদ্রোহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই বিদ্রোহের কারণে কৃষকেরা স্বাধীনতা পেয়েছিল। চলুন, এর কারণ ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
বাংলার ইতিহাসে নীল বিদ্রোহের গুরুত্ব রয়েছে, তাছাড়া এই নীল বিদ্রোহের কারণে বাংলার কৃষকদের উপরে যে অত্যাচার হতো সেটা থেকে তারা মুক্তি পেয়েছে। তাই নীল বিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃনীল বিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব এবং ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

নীল বিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব

বাংলার ইতিহাসে নীল বিদ্রোহে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। তাই নীল বিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, নীল বিদ্রোহ কি কারনে হয়েছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।

নীল বিদ্রোহ বিভিন্ন কারনে হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হল দাদন প্রথা। এই প্রথার কারণে সাধারনত চাষীদের অসুবিধা হয়। কেননা যারা এই নীল চাষ করতেন তাদেরকে সাধারণত অগ্রিম টাকা দেওয়া লাগতো। এই ব্যবস্থা পরবর্তীতে প্রজন্ম পর্যন্ত চলতে থাকে। এভাবেই কৃষকরা নীল চাষ বাধ্যকতা ভাবে চাষাবাদ করতেন, এতে চাষাবাদ না করলে তাদের উপর অত্যাচার করা হতো। এই নীল চাষ করে কৃষকদের কোন লাভ হতো না, তাছাড়া নীলকররা চাষীদেরকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার করত। বিশেষ করে কম ওজন দেখাতো এছাড়াও দামে কম দিতো যার কারণে চাষিরা কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হত।

নীলকররা বিভিন্নভাবে নীল চাষীদেরকে অত্যাচার করেছে, বিশেষ করে নীল চাষীরা তারা বিভিন্ন শর্তের কারণে চাষাবাদ করার পরে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে চাষাবাদ করতে চায় না কিন্তু নীলকররা তাদের উপর শারীরিকভাবে অত্যাচার করত। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিত, গবাদি পশু নিয়ে যেত, এমনকি মহিলাদের সম্মানহানি করতো। এছাড়াও এভাবে তারা অত্যাচার বাড়িয়ে দিত। যার কারণে চাষিরা বিদ্রোহ শুরু করেছিল। এরপরে নীল চাষীদের এমন নির্যাতন করতো যে তাদের গৃহস্থের গরু বাছুর নিয়ে যেত, যার কারণে তারা চাষাবাদ করতে রাজি হয়।

তাছাড়া লর্ড বেন্টিং একটি আইন পাস করেন যে আইনের নাম হল পঞ্চম আইন। এই আইনের অর্থ হল যারা দাদন নিয়েছে, তাদেরকে নীল চাষ করতে হবে। তা যদি না করে তাহলে ফৌজদারি মামলা দেওয়া হবে এবং পরবর্তীতে তাদেরকে দীর্ঘদিন যাবত জেল খাটতে হবে। তাছাড়া নীল চাষীদের উপর আরো বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার করেছে এবং সেই অত্যাচারের কথাগুলো বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এভাবেও নীলকররা নীল চাষীদের ওপর বছরের পর বছর অত্যাচার করতে থাকে। যা নীল দর্পণ নাটকে এই অত্যাচারের ভয়ঙ্কর দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।

তাছাড়া নীল চাষীরা নীল চাষ করলে এতে তাদের লাভ হতো না। তারা খাদ্যশস্য আবাদ করার চিন্তা ভাবনা করেন অর্থাৎ ধান চাষের চিন্তাভাবনা করেন কিন্তু এই নীলকররা এই জন্য তাদের বিরুদ্ধে আরো বেশি অত্যাচার করতে থাকে। যার কারণে নীল চাষিরা এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রথমে নদীয়ার চৌগাছা গ্রাম বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস বিদ্রোহ শুরু করেন, এরপর তার নেতৃত্বে গ্রামের আরও বিভিন্ন লোকজনে এগিয়ে আসেন। এর মধ্যে কাদের মোল্লা, রফিক মন্ডল, রাম রতন মল্লিক বিদ্রোহ শুরু করে। পরবর্তীতে এই বিদ্রোহ পাবনা, ফরিদপুর, মুর্শিদাবাদ, রাজশাহী বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

নীলকরদের অত্যাচারে নীল চাষিরা অত্যন্ত কষ্ট পেয়ে থাকে। যার কারণে তারা অত্যাচারিত হয়ে বিদ্রোহ শুরু করে। তাই এই নীল চাষীদের বিদ্রোহের গুরুত্ব রয়েছে। চলুন, নীল চাষীদের বিদ্রোহের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানা যাক। প্রথমত এই বিদ্রোহের কারণে ব্রিটিশ বিরোধী এই আন্দোলনের ক্ষেত্রে কৃষক জমিদার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত হিন্দু-মুসলিম সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়। যার কারণে এই বিদ্রোহর অনেক গুরত্ব রয়েছে। এছাড়াও এই বিদ্রোহে নীল কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পঞ্চম আইন বাতিল করা হয়। এই নীল চাষ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে কৃষকেরা ধর্মঘট শুরু করে।

বাঙালিরা যখন স্বাধীনতার মুক্তির জন্য আন্দোলন বা বিদ্রোহ শুরু করেছিল। এই নীল বিদ্রোহের কারণেই তারা প্রথমে এই আন্দোলন শুরু করেন। যার কারণে এই নীল বিদ্রোহের গুরুত্ব রয়েছে। এছাড়াও সর্ব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য হয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। যার কারণে পরবর্তীতে এই বিদ্রোহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং সবাই একসঙ্গে মিলিত হয় এবং অর্থ নৈতিকভাবে সবাই অগ্রসর হতে থাকে। যদিও বাংলার কৃষকদের রাজনৈতিক জ্ঞান তেমন একটা ছিল না এবং অর্থনৈতিকভাবে তারা উন্নত নয়। তারপরও তারা সংঘটিতভাবে বিদ্রোহ করেছিল।

নীল বিদ্রোহ কি

নীল বিদ্রোহ ইতিহাসের একটি স্মরণীয় ঘটনা, তাই নীল বিদ্রোহ কি? এ সম্পর্কে হয়তো বাংলার জনগণের অনেকেরই জানা নেই কিন্তু এই সময়ে নীল চাষিরা বিশাল একটি আন্দোলন করেছিলেন। তাই এই নীল বিদ্রোহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চলুন জেনে নেওয়া যাক।

নীল বিদ্রোহ সাধারণত নীলকররা নীল চাষীদের উপরে প্রচন্ডভাবে অত্যাচার করেছিল। যার কারণে নীল চাষীরা সংগঠিত হয়ে নীলকর দের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ শুরু করেছিল। একেবারে চাষী থেকে শুরু করে জমিদার, শিক্ষিত লোকজন সকলেই এই বিদ্রোহের অংশগ্রহণ করে করে ১৮৫৯ সালে যে বাংলায় বিদ্রোহ শুরু করেছিল এবং এই বিদ্রোহ প্রায় এক বছর ধরে চলতে থাকে যাকে নীল বিদ্রোহ বলা হয়। এই সময়ে প্রচণ্ড পরিমাণ গ্রীষ্মের গরম ছিল বাংলার হাজার হাজার মানুষজন নীলকরদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলন বহু জেলায় ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রত্যেকে বিদ্রোহ শুরু করে।

নীল বিদ্রোহের পটভূমি

নীল বিদ্রোহের পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে, তাই নীল বিদ্রোহের পটভূমি সম্পর্কে জানা থাকলে কেন এই নীল বিদ্রোহ হয়েছিল সে সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। চলুন, নীল বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

ব্রিটিশরা এদেশের সাধারণ কৃষকদের উপরে নীল চাষ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। তাছাড়া এই সময়ে কৃষকেরা বাধ্যকতা ভাবে তারা নীল চাষ করে কিন্তু যে চুক্তি তাদের সাথে হয়েছিল সেটা সঠিকভাবে পালন করেন। প্রায় ৫০ বছরের মতো বাংলায় নীল চাষ করা হয় কিন্তু পরবর্তীতে ১৮৫৯ সালে সাধারণ কৃষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। যা পরবর্তীতে নীল বিদ্রোহ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এই বিদ্রোহের কারণে তারা নীল চাষ করা থেকে বিরত থাকে। সারা দেশে এই আন্দোলন চলতে থাকে। কেননা এই নীল চাষ করে কৃষকরা লাভ করতে পারত না। লাভের অধিকাংশ অংশই ব্রিটিশরা নিয়ে যেত।

যার কারণে সাধারণ কৃষকরা এই নীল চাষ করতে আগ্রহী হয় না কিন্তু তাদের উপর বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করার কারণেই তারা বিদ্রোহ শুরু করেন। এছাড়াও নীল চাষীদের উপরে ইংরেজরা কর ধার্য করে, যার কারণে এই ধরনের কর কৃষকেরা পরিশোধ করতে না পারার কারণে তাদের স্ত্রী সন্তানদেরকে ধরে নিয়ে যেত এবং তাদের গবাদি পশুকে নিয়ে যেত, অত্যাচারের মাত্রা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেতে থাকে। পরে নীল চাষীরা এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অবশেষে নীলকরদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে এবং প্রথমে তারা যশোর থেকে বিদ্রোহ শুরু হলে পরবর্তীতে নদীয়া পাবনা প্রত্যেকটি জেলায় এই নীল চাষে বিদ্রোহ শুরু করেন।

নীল বিদ্রোহের ফলাফল

নীল বিদ্রোহের কারণে ব্রিটিশরা চাষীদের কাছে পরাজিত হয়। তাই নীল বিদ্রোহের ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই বিদ্রোহের ফলেই কৃষকেরা অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছিল। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।

নীল বিদ্রোহের ফলে সরকার বাধ্যকতা ভাবে ১৮৬০ সালে নীল কমিশন গঠন করেছিল। এই কমিশনের মাধ্যমে নীল চাষকে নীল চাষীদের ইচ্ছা বক্তাদের স্বাধীনতা দিয়েছিল। যার কারণে নীল কররা তাদের নীল চাষ থেকে সরিয়ে নিয়েছিল। এতে করে এই বিদ্রোহের ফলে নীল চাষীরা স্বাধীনতা পায় এবং নীলকরদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পায়। তারা তাদের নিজের স্বাধীনতা ভাবে জমিতে চাষাবাদ করতো। এই বিদ্রোহের ফলে কৃষকেরা নীল চাষ থেকে মুক্তি পেয়েছিল। তারা নীলকরদের বিরুদ্ধে এটি একটি সাফল্য বাংলাদেশ নিয়ে এসেছিলেন। এসে বাংলার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহ যা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার বিদ্রোহ ছিল।

নীল বিদ্রোহের ফলে হিন্দু মুসলিম এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোক গুলো সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। যার কারণে এই বিদ্রোহ সফলতার জন্য হয়, এছাড়াও বাংলার কৃষক জমিদার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত যারাই রয়েছেন না, সকল মানুষ আন্দোলন করে যার কারণে এই বিদ্রোহর ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিদ্রোহের কারণে নীলকরদের পতন হয়েছিল এবং যারা নীল করদের মহাজন ছিল তারাও অধঃপতন শুরু হয়। যার কারণে নীল কর দের মধ্য দিয়ে সুদখোর যে মহাজনরা ছিল তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়। যার ফলে এই নীল বিদ্রোহ বাংলার কৃষকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় ছিল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url