গর্ভাবস্থায় কালোজিরা খেলে কি হয় ও এর পুষ্টি গুণ সম্পর্কে জানুন
গর্ভবতী মায়েদের এই সময় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়। তাই গর্ভাবস্থায় কালোজিরা খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে জানলে আপনার পুষ্টি পূরণ হবে। চলুন, কিভাবে কালোজিরা খেলে আপনার শরীরে উপকারিতা হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
তবে অতিরিক্ত যদি আপনি কালোজিরা খেয়ে ফেলেন সেই ক্ষেত্রে বড় ধরনের রোগ ব্যাধি হতে পারে। এমনকি স্ট্রোকের সম্ভাবনাও থাকে, তাই গর্ভাবস্থায় কালোজিরা খেলে কি হয়? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃগর্ভাবস্থায় কালোজিরা খেলে কি হয় ও উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
গর্ভাবস্থায় কালোজিরা খেলে কি হয়
কালোজিরা অত্যন্ত প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকেন। তাই গর্ভাবস্থায় কালোজিরা খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন তা না হলে ক্ষতি হতে পারে। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা, ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ, বি, সি ইত্যাদি রয়েছে। তাছাড়া এর মধ্যে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট এবং এন্টি অক্সিডেন্ট সহ ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান রয়েছে। চলুন, এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
মেধা শক্তি বৃদ্ধি করেঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত গর্ভস্থ শিশুর মেধা শক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে। কেননা এর মধ্যে যে অ্যান্টিসেপটিক ও এন্টিবায়োটিক উপাদান থাকে, তা মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে থাকে এবং মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বাড়াতেও ভালো কাজ করে থাকে। তাই পরিমাণ মত এই কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে।
হজমের সমস্যা সমাধানঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত গর্ভবতীদের কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের সমস্যা হয়ে থাকে। তাছাড়া অনেকের পেট ফাঁপা দেওয়া, পেট খারাপ হওয়া ইত্যাদি ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ও বদহজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের সমস্যা দূর করার জন্য কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে।
মাথা ব্যাথা দূর করেঃ গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত বেশি সময়ে মাথা ব্যাথা করে থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা করে থাকে। এ ধরনের ব্যথা দূর করার জন্য আপনি কালোজিরা খেতে পারেন এবং কালোজিরার তেল ব্যথায় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
গর্ভবতী মায়েদের উপকারঃ গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত শিশু জন্মের পরে পর্যাপ্ত পরিমান বুকের দুধ পায়, সেজন্য ঘরোয়া উপায়ে কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে। এতে সন্তান পরবর্তীতে প্রচুর পরিমাণে বুকের দুধ পাবে এবং শিশুটি পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে, যার কারণে তার দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটবে। তাই নিয়মিত ভাবে গর্ভাবস্থায় কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে।
লিভারের সমস্যা দূর করেঃ যাদের লিভার এবং জন্ডিসের সমস্যা রয়েছে, তারা বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেছেন কিন্তু একবার কালোজিরা খেয়ে দেখতে পারেন। এতে আপনার অনেক উপকার হবে। বিশেষ করে জন্ডিস থেকে মুক্তি পাবেন, এছাড়া লিভারকে ভালো রাখার জন্য কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়ঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত গর্ভবতীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম থাকে। যার কারণে তাদের বড় ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং ভাইরাস, ভিক্টোরিয়া আক্রমণ করতে পারে। এজন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে। কেননা এর মাঝে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আপনার বিভিন্ন ধরনের রোগের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারবে।
রক্ত সঞ্চালনঃ গর্ভবতী মায়েদের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করার জন্য এবং দ্রুত করার জন্য নিয়মিতভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। তার মধ্যে আপনি কালোজিরা খেতে পারেন। কেননা এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করবে এবং আপনার স্মৃতিশক্তি ও বাড়িয়ে দিতে পারে।
নিম্ন রক্তচাপ বৃদ্ধিঃ অধিকাংশ গর্ভবতীদের সাধারণ লো প্রেসার দেখা যায়। যার কারণে তাদের শরীর দুর্বল লাগে আর এই ধরনের লো প্রেসার থেকে বাঁচার জন্য আপনি কালোজিরা খেতে পারেন। কেননা শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। তাছাড়া নিম্ন রক্তচাপ থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে এবং স্বাভাবিক রক্ত চাপে নিয়ে আসবে। তাই কালোজিরার সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ অনেক গর্ভবতীর সাধারণত ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা যায়। এ ধরনের সমস্যা যদি দেখা যায়, সে ক্ষেত্রে আপনি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরিমাণমত কালোজিরা, এক গ্লাস পানির মধ্যে মিশিয়ে নিবেন এবং সকাল-বিকাল খেতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করবে। যার কারণে আপনার শরীরে ডায়াবেটিসের সমস্যা হবে না।
শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ নিরাময়ঃ গর্ভাবস্থায় যদি শ্বাসকষ্ট হয় সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খাওয়া অনেকের সমস্যা হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় যদি এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে কালোজিরা খেতে পারেন এবং সামান্য পরিমাণ বেটে এটা একটি কাপড়ের মধ্যে পুটলি বানিয়ে না খেয়ে শুকলে হাচি কাশিটা অনেকটা কমে যায়।
বুকের দুধ বৃদ্ধিতেঃ যে সকল মায়েদের সাধারণত বুকের দুধ কম হয়ে থাকে, সে ধরনের মায়েদের কালোজিরা খেতে বলা হয়ে থাকে। তাই তারা প্রতি রাতে ১ চামচ কালোজিরা দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারবেন। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে আপনার বুকের ব্যথা কমে যাবে।
ত্বকের তারণ্য ধরে রাখবেঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত ত্বকে বিভিন্ন ধরনের দাগ ও মেছতা এবং ব্রণ উঠে থাকে। যার কারণে অনেকে চিন্তিত হয়ে পড়ে কিন্তু দেখা যায় শরীরে যত্ন নিতে গিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে, কেননা এর মধ্যে ফাটি এসিড থাকে যা আপনার ত্বককে রক্ষা করতে পারবে।
চুল পড়া বন্ধ করেঃ অনেক গর্ভবতীর সাধারণত এ সময় প্রচুর পরিমাণ চুল পড়ে থাকে। আর এই চুল পড়া থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনি লেবু দিয়ে মাথার গোড়ালি ভালো করে ম্যাসাজ করতে পারেন। এরপরে শ্যাম্পু দিয়ে ধূয়ে ফেলতে হবে, তারপরে শুকানো হয়ে গেলে মাথার মাঝখান বরাবর কালোজিরার তেল মালিশ করা লাগবে। এভাবে ১ থেকে ২ সপ্তাহে আপনার চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
সর্দি কাশি দূর করাঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে ঠান্ডা কাশি হয়ে থাকে। এ নিয়ে টেনশন করার কিছু নেই সাধারণত যে ওষুধগুলো থাকে এগুলো খাওয়ালে সুস্থ হয়ে যাবে, তাছাড়া আপনি সকাল বিকাল কালোজিরা এর সাথে হালকা পরিমাণ মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। অথবা চায়ের কাপের সাথে মিশানোর পরে এই উপাদানটি খাওয়া যেতে পারে। এজন্য আপনি কালোজিরার সাথে তুলসী পাতা মিশ করে খেতে পারেন।
দাঁত ব্যথা নিরাময়ঃ গর্ভাবস্থায় যদি আপনার দাঁতের ব্যথা হয় সে ক্ষেত্রে হয়তো কোন এন্টিবায়োটিক বা ওষুধ খাওয়া নিষেধ থাকতে পারে। এজন্য আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে হালকা কুসুম গরম পানির মধ্যে অল্প একটু লবণ দিবেন এবং কালোজিরা দিয়ে কুলি করতে পারেন। এতে আপনার দাঁতের মাঝখানে ব্যথা দূর করা যাবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণঃ গর্ভাবস্থায় যদি পরিমাপের অতিরিক্ত ওজন হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি হওয়া কঠিন হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অবশ্য পরিশ্রম করতে হবে এবং নিয়মিত ভাবে কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে। এতে আপনার ভালো ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন করবে এবং পেটের ভিতরে খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলো বের করে দিয়ে সুস্থ করে দিবে।
কিডনির সমস্যা দূর করেঃ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তাকে যার কারণে আপনার শরীরের কিডনি কে ভালো রাখবে। তাই কালোজিরা নিয়মিত ভাবে খেতে পারেন এতে আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
মানসিক চাপ কমাতেঃ গর্ভাবস্থায় যদি মানসিক টেনশনে বেশি থাকা হয় তাহলে গর্ভস্থ শিশুর বিশাল বড় ক্ষতি হতে পারে এবং বাচ্চা অনেক সময় প্রতিবন্ধী দেখা দিতে পারে ।এজন্য কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে কেননা এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। যা আপনার শরীরের মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণ করবে।
ব্রণ সরাতে পারবেঃ যাদের ত্বকে প্রচুর পরিমাণে ব্যথা হয়ে থাকে এবং বোন ওঠে তাকে ব্রণ উঠে থাকে সে ক্ষেত্রে না বাসায় ভালো কেননা ব্রণের স্থানে কালোজিরা তেল অনেক ভালো কাজ করে। এজন্য আপনি কালোজিরা তেল ব্যবহার করতে পারেন এবং বিভিন্ন ধরনের লোশন অক্সাইড লোশন পাওয়া যায়। সেটা আপনি ব্যবহার করতে পারেন এছাড়াও ব্রণ কমাতে আপনার কালোজিরার লোশনের প্রতিক্রিয়া কম থাকে।
মেদ কমানোর জন্যঃ অনেক গর্ভবতীর সাধারণত চর্বি বা মেদ দেখা যায়, এতে করে বিশাল বড় ক্ষতি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় সাধারণত মেদ বা ভুড়ি বেশি করা যাবে না, এতে যদি সিজার করানো লাগতে পারে সে ক্ষেত্রে সেলাই করতে অসুবিধা হবে।
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url