কোন মাছ চাষ করলে লাভ বেশি ও চাষ করার সহজ পদ্ধতি জানুন

অনেকে জানতে চায় যে কোন মাছ চাষ করলে লাভ বেশি? আসলে এটা নির্ভর করবে আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার উপরে এবং সঠিক মাছ নির্বাচন করতে হবে। চলুন, কি ধরনের মাছ চাষ করলে আপনি বেশি লাভ পাবেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে আপনাকে উপযুক্ত জমি নির্বাচন করতে হবে এবং কোন মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় সেই প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করতে হবে। তাহলেই আপনি লাভবান হবেন। তাই কোন মাছ চাষ করলে লাভ বেশি? এ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃকোন মাছ চাষ করলে লাভ বেশি ও চাষ করার সহজ পদ্ধতি জানুন

কোন মাছ চাষ করলে লাভ বেশি

মাছ চাষিরা জানতে চায় যে কোন মাছ চাষ করলে লাভ বেশি? আসলে আপনি যখন মাছ চাষ করতে যাবেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই জানতে হবে কোন মাছ লাভ বেশি হবে। চলুন, যে সকল মাছ চাষ করলে আপনি বেশি লাভ করতে পারবেন। সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। এটা নির্ভর করে পুকুরের মাটির উপরে। তাছাড়া বিভিন্ন পুকুরে বহু প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে যে মাছ গুলো চাষাবাদ করলে বাজারে চাহিদা বেশি এবং খরচ কম সে ধরনের মাছ গুলো নির্ধারণ করতে হবে। তাহলে তাহলে সেই মাছ গুলো চাষ করলে আপনি লাভ করতে পারবেন। তবে মাছ চাষ করে লাভ করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কোন মাছ গুলো চাষাবাদ করলে আপনার লাভবান হতে পারবেন। চলুন সেই মাছ গুলো সম্পর্কে জানা যাক। 

পাঙ্গাস মাছঃ এই মাছটি সাধারণত বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় অল্প পরিসরেই সুন্দর মতে বেড়ে উঠতে পারে এবং বাজারে এর দাম কম কিন্তু চাহিদা বেশি। কারণ এই মাছটিতে কাটা কম থাকে যার কারণে শিশুরা খেতে পছন্দ করে। এজন্যই মাছটি অনেক চাহিদা রয়েছে, তাই আপনি এই পাঙ্গাস মাছ চাষা করতে পারেন। তাছাড়া এই মাছের মাঝে অনেক প্রোটিন আছে যা শিশুদের জন্য অনেক পুষ্টি যোগান দিবে। বিশেষ করে এর মাঝে অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি থাকে যা আমাদের শরীরের এই উপাদান গুলোর চাহিদা পূরণ করে থাকে।

এই মাছ আপনি চাষাবাদ করে কিভাবে লাভ করতে পারেন তা হল; এই মাছ সাধারণত অনেক উৎপাদন করা যায়, খরচ খুবই কম হয়। যে কোন খাদ্য খেতে পারে যার কারণে আপনার খরচ কম হবে। এটা যেকোনো পানিতেই হতে পারে। এর জন্য খুবই বৃহত্তর যে জমি লাগবে তা কিন্তু নয়। এছাড়াও এই মাছ যে কোন পরিবেশই গড়ে উঠতে পারে, রোগ ব্যাধি কম হয়ে থাকে। অন্যান্য মাছের তুলনায় মাছ দ্রুত বড় হতে থাকে। যার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে এই মাছ বিক্রি করার উপযুক্ত হয়ে যায়। তাই আপনি প্রাথমিক পর্যায়ে পাঙ্গাস মাছ চাষ করতে পারেন।

তেলাপিয়া মাছঃ এই মাছটি অত্যন্ত সুস্বাদু একটি মাছ এবং অনেকেই এই মাছটি খেয়ে থাকে। কেননা এর দাম খুবই কম হয়ে থাকে। এই মাছ যেকোনো পানিতেই হয়ে থাকে। এছাড়াও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই মাছ গুলো প্রজনন ক্ষমতা বেশি, প্রচুর পরিমাণে বাচ্চা দিতে পারে। চাষ করার ক্ষেত্রে খুবই কম খরচ হয় কিন্তু দ্রুত বাড়তে থাকে। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই এই মাছ বিক্রি করা যায়। এছাড়াও পারিবারিক বিভিন্ন খাবার গুলো তাদেরকে দেওয়া যায়, সব ধরনের খাবারই এই মাছ খেয়ে থাকে। এছাড়া এই মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো তাই আপনি প্রথম অবস্থায় এই মাছ চাষাবাদ করতে পারেন। 

সিলভার কার্প মাছঃ এই মাছটি গ্রামাঞ্চলের লোকজন খেতে বেশি পছন্দ করে থাকে। কারণ হলো এই মাছের দাম খুবই কম এবং খেতেও সুস্বাদু লাগে। তাই এই মাছটি যদি আপনি চাষাবাদ করতে পারেন তাহলে অনেক লাভবান হবেন। কেননা এই মাছ বাজারে ভালো দামে বিক্রি করা যাবে, সে অনুযায়ী আপনার চাষাবাদ করতে খুবই কম খরচ হবে। এই মাছ সাধারণত অল্প পানির মাঝেও লালন-পালন করা যায়। এছাড়াও প্রজনন ক্ষমতা ভালো তাই বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় চাষা করা যাবে। এর মাঝে অনেক প্রোটিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যা শরীরের জন্য অনেক উপকার।

রুই মাছঃ রুই মাছ সাধারণত মিঠা পানিতে হয়ে থাকে, এটা অনেক সুস্বাদু একটি মাছ। এই মাছ চাষাবাদ করলে বাজারে অনেক চাহিদা রয়েছে। যার কারণে দ্রুত বিক্রি হয়ে যায় এবং আপনি লাভবান হতে পারবেন। এই মাছ সাধারণত দ্রুত বৃদ্ধি পায়, ছয় মাসের মধ্যেই বিক্রি করা যায়। বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং এই মাছ চাষাবাদ করতে পরিশ্রম কম হয়। বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে এই মাছ চাষাবাদ করা যাবে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ফাইবার ইত্যাদি রয়েছে। তাই আপনি এই মাছ চাষ করতে পারেন।

কৈ মাছঃ এই মাছ সাধারণত পূর্বে খাল বিল নদী নালাতে পাওয়া যেত বিশেষ করে বর্ষার সময় এ মাছ গুলো বেশি দেখা যেত কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানের যুগে এই মাছ বর্তমানে পুকুরে চাষাবাদ করা যায়। হাইব্রিড জাতের অত্যন্ত বড় জাতের কৈ মাছ চাষ করতে পারেন। কেননা এই মাছটি মিঠা পানিতে ব্যাপক হারে উৎপাদন করা যাবে। এই মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বাজারে তুলনামূলক ভাবে দাম অনেক বেশি। এছাড়া এই মাছ খেলে হৃদরোগের রোগীদের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করবে। এই মাছ চাষ করতে খাদ্যের খরচ কম হবে এবং দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাবে।

টেংরা মাছঃ আগের যুগে টেংরা মাছ খাল বিলে সাধারণত বেশি পাওয়া যেত। দেশি টেংরা মাছ হিসেবে পরিচিত কিন্তু বর্তমানে এই দেশি প্রজাতিরই টেংরা চাষাবাদ করতে পারবেন। অত্যন্ত সুস্বাদু হবে এবং এই মাছটির দাম ও চাহিদা রয়েছে। আপনি পুকুরের চাষাবাদ করতে পারবেন, এই মাছ সাধারণত খাদ্য কম খায়, দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে এটা অত্যন্ত শক্তিশালী একটি মাছ। যার প্রজনন ক্ষমতা ভালো, তাই আপনি এই মাছ বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করতে পারেন। এতে অনেক লাভ হবে।
শোল মাছঃ বর্তমানে শোল মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কেননা এই মাছটি অত্যন্ত সুস্বাদু এবং সাগরের অগভীর জলে সাধারণত হয়ে থাকত কিন্তু এখন পুকুরের চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। এই মাছ দল বেধে বসবাস করতে পছন্দ করে। সামুদ্রিক বা মিঠা পানিতে বা লোনা পানিতে এরা সাধারণত বেড়ে উঠে। তাছাড়া এরা সাধারণত বিভিন্ন পানির ভিতরে যে খাদ্যগুলো থাকে সেগুলো খেয়ে বেঁচে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার খাদ্য খরচ কম হবে। এই মাছ ধরা খুবই সহজ এবং দেখতে খুবই সুন্দর। বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এজন্য বেশি দামে বিক্রি করেতে পারবেন।

গুলসা মাছঃ বর্তমানে এই মাছটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যদিও এই মাছ সাধারণত নদীতে পাওয়া যেত কিন্তু এখন পুকুরে চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। তবে এই মাছ চাষাবাদ এর ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাছাড়া এই মাছ চাষাবাদ করতে পারবেন না। এই মাছ বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকে, তবে খুবই কম খায়। সেক্ষেত্রে আপনার খাদ্য খরচ একটু কম হবে। এ মাছ গুলো সাধারণত এলাকাভিত্তিক যে বাজারগুলো রয়েছে, অনেক চাহিদা রয়েছে এবং দাম অনেক বেশি। তবে এই মাছ আপনি বাণিজ্যিক হিসেবে বিক্রি করতে পারবেন।

কাতলা মাছঃ এই মাছ সাধারণত বিভিন্ন অঞ্চলে হয়ে থাকে, অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টি রয়েছে। এই মাছ গুলো নদী-নালা জলাশয়ে সাধারণত দেখা যায়। তাছাড়া আপনি পুকুরেও চাষাবাদ করতে পারবেন, অত্যন্ত লাভজনক মাছ এবং বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ মাছের মাঝে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ আছে। দেখতেও খুবই পছন্দনীয় একটা মাছ। বিশেষ করে এই মাছ গ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাওয়ার সময় বড় জাতের কাতল মাছ নিয়ে যায়। তাই আপনি এই মাছটি চাষাবাদ করতে পারেন, এক্ষেত্রে দাম বেশি পাবেন এবং লাভবান করতে পারবেন।

শিং মাছঃ আগের যুগে সাধারণত বন্যার সময় খাল বিলে বা বিভিন্ন ছোট ছোট খাল গুলোতে ডালপালা দিয়ে রেখে দিত এর ভিতর দিয়ে এই মাছ গুলো বেশি থাকতো। পরবর্তীতে বন্যা শুকিয়ে গেলে দেখা যেত এই মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে এই মাছ চাষাবাদ করা হচ্ছে। বাজারে অনেক দাম রয়েছে, এই মাছ গুলো সাধারণত শীতকালে চাষ করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে পানি পরিবর্তন করে দেওয়া লাগতে পারে। এছাড়াও ১ মাস পর পর বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন ব্যবহার করা লাগতে পারে। এই মাছ সাধারণত কম অক্সিজেন নিয়েই বেঁচে থাকতে পারে। 

পাবদা মাছঃ বর্তমানে এই মাছটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি থাকে। তাই আপনি এই মাছ চাষ করতে পারেন, এতে ব্যাপক লাভ হবে। এই মাছটি সাধারণত মিঠা পানিতে চাষ করা হয়ে থাকে। আপনি পুকুরেই এই মাছ চাষ করতে পারবেন, এই মাছের সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে ও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও এই মাছটি খাদ্যের চাহিদাও কম হয়ে থাকে, তারা নিজেরাই বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে। তাই আপনার খাদ্য খরচ কম হবে, যার কারণে আপনি এই মাছ চাষাবাদ করে বিক্রি করলে অনেক লাভ করতে পারবেন।

চিংড়ি মাছঃ অত্যন্ত একটি সুস্বাদু মাছ এবং এই মাছ অনেক দাম ও চাহিদা রয়েছে। সাধারণত বড় বড় যে চিংড়ি চাষাবাদ করা হয় সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বাগেরহাট, খুলনা অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে এই মাছ চাষাবাদ করা হয় এবং তারা এই ব্যবসা করেই আজ কোটিপতি হয়েছে। এই মাছ বহির্বিশ্বে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে। এছাড়াও এই মাছ সাধারণত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়। তবে গলদা চিংড়ি, হোয়াইট চিংড়ি এই মাছগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া এই মাছের উচ্চমানের প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি রয়েছে। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার করে থাকে।

তাছাড়াও এই মাছ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো, বিভিন্ন পরিবেশেই এই মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। তবে এটা সঠিকভাবে যদি আপনি লালন পালন করতে পারেন, তাহলে ভালো ফলন দেবে এবং প্রচুর টাকা ইনকাম করতে পারবেন। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই চিংড়ি মাছ এর অবদান খুবই রয়েছে। তাছাড়া বিশ্বে রপ্তানির ক্ষেত্রে চিংড়ি মাছ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। তাই এটা আমাদের একটা শিল্প এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মসংস্থান করে জীবিকা উপার্জন করছে এবং দেশের অর্থনীতিকে উন্নত করছে। তাই আপনি এই চিংড়ি মাছ চাষ করে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করতে পারেন।

কম জায়গায় মাছ চাষ

অনেকের মাছ চাষ করার জন্য জায়গা কম থাকে। তাই কম জায়গায় মাছ চাষ কিভাবে করবেন সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাহলেই অল্প জায়গার মধ্যেই আপনি মাছ চাষাবাদ করে লাভ করতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চাষ ও আবাদের জন্য জমি কমে যাচ্ছে। খালবিল নদী-নালা কমে যাচ্ছে যার কারণে মাছ চাষাবাদ করার জন্য জমি খুবই কম। এ দিকে আমাদের পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করতে হবে। তাই কিভাবে অল্প জমির মাধ্যমে মাছ চাষ করা যায় সেজন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে অল্প জায়গার মধ্যে কিভাবে আপনি মাছ চাষাবাদ করবেন সেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি জানতে হবে। তাহলে আপনি লাভ করতে পারবেন, অনেকেই ট্যাংক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে থাকে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি মাছগুলো চাষাবাদ করা যাবে।
আপনি এই মাছ চাষাবাদ করতে পারবেন এর পরিবেশ যদি আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন সে ক্ষেত্রে অল্প জায়গার মধ্যেই অনেক মাছ চাষ করতে পারবেন। তবে পানি যেন দূষিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং ট্যাংকের আকার যদি ছোট হয় সেক্ষেত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে মাছ যদি বেশি হয়ে যায় তবুও কিন্তু মাছ বেঁচে থাকবে এবং সুস্থ থাকবে। জায়গার প্রতি বিবেচনা করে আপনাকে মাছ ছাড়তে হবে, এই ট্যাংক পদ্ধতিতে অনেকেই মাছ চাষ করে অনেক টাকায় লাভবান হয়েছেন।

মাছ চাষ করার সহজ ও লাভজনক ব্যবসা

অনেকেই মাছ চাষাবাদ করতে চিন্তা করেন, তাই মাছ চাষ করার সহজ ও লাভজনক ব্যবসা সম্পর্কে জানলে আপনি সহজ পদ্ধতিতে মাছ উৎপাদন করতে পারবেন এবং অনেক লাভবান হবেন। চলুন, কিভাবে চাষাবাদ করবেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

আপনি যদি অল্প পরিশ্রমে লাভবান হতে চান সে ক্ষেত্রে মিশ্র পদ্ধতিতে পুকুরে মাছ চাষ করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে মাছের দাম বেশি পাবেন, এছাড়াও খাদ্যের খরচ কম হবে। তাছাড়া মাছের তেমন একটা ক্ষতি হবে না। বিশেষ করে আপনি মিশ্র পদ্ধতিতে মাছের ক্ষেত্রে যে মাছগুলো রাখতে পারেন। তার মধ্যে কাতলা, রুই, মৃগেল বিভিন্ন ধরনের কার্প মাছ, সিলভার কার্প গ্রাস কার্প ইত্যাদি মাছ গুলো একসাথে মিশ্র পদ্ধতিতে চাষ করতে পারবেন। তবে অবশ্যই পানি কিন্তু ক্ষারীয় হতে হবে। তা না হলে আপনার মাছের ক্ষতি হবে।

এক্ষেত্রে আপনি প্রথম অবস্থায় ছোট পরিসরে মাছ চাষাবাদ করতে পারেন, এতে আপনার দক্ষতা অর্জন হবে। পরবর্তীতে যখন বড় পুকুরে মাছ চাষাবাদ করবেন সেই ক্ষেত্রে লাভ করতে পারবেন। তবে আপনাকে এই পুকুরের যত্ন নিতে হবে, রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। আপনি কম খরচের মাধ্যমে মাছ চাষাবাদ করতে পারেন, এজন্য আপনাকে মাছ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। এছাড়াও ভালো প্রজাতির মাছ আপনাকে নিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও মাছ যেন ভাল পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে সে ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে আপনি উচ্চমূল্যে বিক্রি করতে পারবেন।

মাছ প্রজননের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে মাছ গুলো দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আর সেই মাছের প্রজাতিগুলো নির্বাচন করতে হবে। বিশেষ করে হাইব্রিড বা ক্রস জাতীয় যে মাছ গুলো রয়েছে সেগুলো চাষাবাদ করার চেষ্টা করবেন। এটি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে অল্প খাদ্যের মাঝে বড় হয়ে যাবে। দ্রুত বৃদ্ধির মাছগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে তেলাপিয়া, ক্যাটফিস বিভিন্ন ধরনের কার্প যা ৬ থেকে ৭  মাসের মধ্যে বড় হয়। মাছের খাদ্যের খরচ কম করার জন্য অবশ্যই আপনাকে নিজে খাদ্য তৈরি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ঘাস, পাতা গাছপালা ইত্যাদি জৈব পদার্থ গুলো মাছকে খাওয়াতে পারেন।

আপনি যদি মানসম্মত খাদ্য না দিতে পারেন তাহলে মাছ বৃদ্ধি পাবে না, এক্ষেত্রে ভালো মানের খাদ্য দিতে হবে এবং নিজে তৈরিকৃত খাদ্যগুলো দিলে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার খরচে অনেক কমে যাবে। কেননা মাছের খাদ্যই সবচাইতে বেশি খরচ হয়ে থাকে, সেই ক্ষেত্রে আপনি বাজার থেকে খাদ্য যদি কিনে নিয়ে লালন পালন করেন। তাহলে বেশি একটা লাভবান হবেন না। অবশ্যই নিজে খাদ্য তৈরি করে যদি আপনি খাওয়াতে পারেন তাহলে পুষ্টি মান বেশি পাবেন। একটি বিষয় আপনাকে খেয়াল রাখবেন, মাছের বাজার এবং লোকেশন অনুযায়ী বিক্রি করতে হবে।

অনেক চাষিরা মাছকে নিয়মিতভাবে খাদ্য দিতে পারে না অথবা চাষাবাদ করতে গিয়ে মাঝখানে আর খাদ্য ক্রয় করতে না। এই কারণে মাছ দ্রুত বাড়তে থাকে না। তাই বাণিজ্যিকভাবে যদি মাছ চাষাবাদ করতে চান সেই ক্ষেত্রে খাদ্যের দিকে নজর দিতে হবে এবং এই খাদ্যের চাহিদা পরিমাণ মতো পূরণ করতে হবে। তাই আপনি প্রাকৃতিক খাদ্যগুলো দেওয়ার চেষ্টা করবেন এতে আপনার খাদ্যের খরচ বেঁচে যাবে। অনেকেই আবার মাছকে দ্রুত বৃদ্ধি করার জন্য সার প্রয়োগ করে থাকে কিন্তু এতে বিপদ হতে পারে। কেননা এই ক্ষেত্রে পানি নষ্ট হয়ে যাবে পুকুরে গ্যাস হতে পারে যার কারণে মাছ মারা যাবে।

শীতকালে মাছের পরিচর্যা

শীতকালে মাছের সমস্যা দেখা দিতে পারে সে ক্ষেত্রে শীতকালে মাছের পরিচর্যা সম্পর্কে আপনার জানা প্রয়োজন। কেননা শীতকালে সাধারণত মাছের বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি হয়ে থাকে। চলুন, কিভাবে শীতকালে মাছের যত্ন নিবেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
শীতকালে সাধারণত মাছের বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি হয়ে থাকে তাই এই সময়ে আপনাকে অনেক যত্ন নিতে হবে। কেননা মাছ এই সময় অনেক খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়, খুবই কম খেয়ে থাকে। কেননা এই সময় শীতের কারণে তারা অনেক সময় লুকিয়ে থাকে। যার কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার পরিচর্যা করা খুবই জরুরী এবং সতর্কতা থাকতে হবে। এই সময়ে অবশ্যই আপনাকে একজন মৎস্য চিকিৎসকের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের উপাদান ব্যবহার করা লাগতে পারে। যেমন চুন ব্যবহার করা যেতে পারে, মাছের ঘনত্বকে গুরুত্ব দিতে হবে।
শীতকালে সাধারণত মাছ ঘন ঘন ধরার চেষ্টা করবেন না, অনেকেই বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে ঘন ঘন মাছ দেখে থাকে। এক্ষেত্রে মাছের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ক্ষতি হবে, তাই এই বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। অবশ্যই খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং খাদ্য যেন অপচয় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। যদি অতিরিক্ত খাদ্য দেন সে ক্ষেত্রে পানির নিচে গিয়ে পৌঁছে যাবে এবং গ্যাস হবে। এক্ষেত্রে আপনার মাছ অনেক সময় মারা যেতে পারে। এক্ষেত্রে মাছের পরিমান অনুযায়ী খাদ্য দিতে হবে, যেন নষ্ট না হয় আরেকটি বিষয় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে সেটা হল পানি যেন দূষিত না হয়।

যে প্রশ্ন গুলো সচরাচর করা হয় (FAQ)

কোন মাছ চাষে সবচেয়ে কম সময়ে লাভ করা যায়?

সবচেয়ে কম সময়ে মাছ চাষ করে লাভ করা যায় পাঙ্গাস মাছের। কেননা এই মাছ অতি দ্রুত বড় হয় এবং কম খরচ হয়।

নতুন চাষীদের জন্য কোন মাছ চাষ করা সহজ?

যারা নতুন চাষী রয়েছে তারা প্রথমে তেলাপিয়া মাছ চাষ করবেন। কেননা এই মাছ চাষ করা খুবই সহজ তাছাড়া যেকোনো পরিবেশেই চাষাবাদ করা যায়।

দ্রুত বর্ধনশীল মাছ কোন গুলো?

যে সকল মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় তা হল; পাঙ্গাস, রুই, কাতলা এই মাছ গুলো ছয় মাসের মধ্যেই ১ থেকে দেড় কেজির মতো ওজন হয়ে থাকে। এছাড়াও দাম অনেক বেশি পাওয়া যায়।

কোন মাছ চাষে সর্বোচ্চ লাভ করা যায়?

যে সকল চিংড়ি বহির্বিশ্বে রপ্তানি করা হয় এই ধরনের চিংড়ি গুলো চাষাবাদ করলে বেশি লাভ পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে ঝুঁকিও রয়েছে।

মাছ চাষে লাভ কেমন?

আপনি যদি ১ একর জমি চাষ করতে পারেন, তাহলে বছরে ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকার মত লাভ করতে পারবেন।

কিভাবে মাছ চাষের ঝুঁকি কমানো যায়?

ঝুঁকি কমানোর জন্য অবশ্যই মিশ্র মাছ চাষ করতে পারেন, এছাড়াও আধুনিক প্রযুক্তি গুলো ব্যবহার করতে পারেন।

শেষ কথাঃ কোন মাছ চাষ করলে লাভ বেশি ও উৎপাদন সহজ

পরিশেষে বলা যায় যে আপনি যদি মাছ চাষ করে অধিক লাভ করতে চান, সে ক্ষেত্রে মাছের প্রজাতি সম্পর্কে জানতে হবে এবং কোন মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, খাদ্য খরচ কম হয় ইত্যাদি জানতে হবে। তাছাড়া আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, তাহলে আপনি লাভবান হবেন। অনেকেই মাছ চাষ করে মাসে লক্ষ টাকা ইনকাম করছে। তাই কোন মাছ চাষ করলে লাভ বেশি? এ সম্পর্কে আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে, আশা করি আপনার কাজে লাগবে। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Md. Mahmudul Islam
Md. Mahmudul Islam
আমি ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট ও সরকারি চাকরি করি। আমি অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করে ইনকাম করি, এছাড়াও ব্লগিং, SEO ও টেকনোলজি বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করি। এই কাজের উপর আমার ৩ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।