বর্তমানে দেশি মুরগি পালন করলে লাভ না ক্ষতি হবে বিস্তারিত জানুন

অনেকে জানতে চায় দেশি মুরগি পালনে লাভ ক্ষতি সম্পর্কে। দেশি মুরগি যদি সঠিকভাবে পালন করতে পারেন সেই ক্ষেত্রে লাভবান হবেন কিন্তু যদি কৌশলী না হন সেই ক্ষেত্রে ক্ষতি হবে। চলুন, দেশি মুরগি পালনে লাভ ও ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
বর্তমানে দেশী মুরগির চাহিদা অনেক থাকার কারণে অনেকেই দেশী মুরগীর খামার করছে কিন্তু অনেক খামারির ভালো পরিকল্পনা না থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই দেশি মুরগি পালনে লাভ ক্ষতি সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃবর্তমানে দেশি মুরগি পালনে লাভ ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

দেশি মুরগি পালনে লাভ ক্ষতি

অনেক নতুন উদ্যোক্তা জানতে চায় যে দেশি মুরগি পালনে লাভ ক্ষতি কেমন হতে পারে। তাই দেশি মুরগি পালনে কিছু কৌশল গত পদ্ধতিতে পালন করলে অনেক লাভ হবে। তবে কৌশল গুলো যদি প্রয়োগ করতে না পারেন। তাহলে মুরগি পালন ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। চলুন, এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

সাধারণত গ্রামের মহিলারা দেশি মুরগি ছেড়ে পালন করে, এই ক্ষেত্রে তাদের তেমন একটা খরচ হয় না। এজন্য লাভ হয় কিন্তু যদি আপনি পরিকল্পনাহীন বাণিজ্যিকভাবে লালন-পালন করেন সে ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। গ্রামের নারীরা সাধারণত পরিবারের ডিমের চাহিদা পূরণ করার জন্য দেশি মুরগি পালন করে থাকে। অথবা শখের বসে অনেকে পালন করে থাকে কিন্তু আপনি যদি ব্যবসা হিসেবে পালন করতে চান সেই ক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তাহলে আপনি দেশি মুরগি লালন পালন করে লাভ করতে পারবেন। চলুন, কিভাবে পালন করলে লাভ হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

যদি আপনি দেশি মুরগি খাঁচায় অথবা আবদ্ধভাবে পালন করতে চান, সে ক্ষেত্রে দেশি মুরগি মারা যাবে কম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে, এছাড়াও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখা যাবে, খাদ্য, পানি সুন্দর মত দেওয়া যাবে, অতিরিক্ত গরম ও ঠান্ডা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে এবং নিজের তৈরি কিছু খাবার তৈরি করে দিলে সেগুলোতে মুরগি ওজন বৃদ্ধি পাবে। তবে আপনাকে অবশ্যই হিসাব করে দেশি মুরগি পালন করতে হবে, তা না হলে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই আপনি যদি আবদ্ধভাবে পালন করতে চান সেই ক্ষেত্রে বেশি মুরগী পালন করবেন, এতে এই ব্যবসায় করতে পারবেন।

আবদ্ধভাবে অন্যান্য মুরগী পালন করলে যেমন রোগ ব্যাধি হয়ে থাকে, সেই অনুযায়ী দেশী মুরগীর রোগ ব্যাধি কম হয়ে থাকে। কেননা দেশি মুরগির যদি রোগ শুরু হয়, সেক্ষেত্রে মারা যেতে সময় নেয়। একেবারে সবগুলোই একসাথে মারা যায় না কিন্তু ব্রয়লার, সোনালী বা অন্য জাতের যেকোন হাইব্রিড মুরগি রোগ ধরে যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা না দেওয়া হয়, তাহলে কয়েক দিনের মধ্যে খামার শেষ হয়ে যাবে। তবে দেশি মুরগির রোগ নির্ণয় করতে পারলে চিকিৎসা করলেই সুস্থ হয়ে যায়। এজন্য দেশি মুরগি পালনে লাভ বেশি।

দেশি মুরগির যদি আপনি খামার করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার আশেপাশের বাজার চাহিদাটা দেখতে হবে এবং যে বাজারে দেশি মুরগির চাহিদা বেশি সেই বাজারে মুরগি নিয়ে যাবেন। তবে বাজারে যখন দেশি মুরগি বিক্রি করতে যাবেন, সেক্ষেত্রে ৫ থেকে ৭টা মুরগী বাজারে নিবেন। এর বেশি মুরগি নিলে মনে করবে খামারে পালন করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে দাম কম পাবেন। কেননা দেশি মুরগি অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে এর কারণে দেশি মুরগির চাহিদা অনেক বেশি এবং দামও তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। তাই এই কৌশলটি অবলম্বন করলে আপনি দেশি মুরগির ব্যবসা লাভ করতে পারবেন।

অন্যান্য মুরগি যদি আপনি খামারে পালন করেন সেক্ষেত্রে দেখা যায় এই মুরগি গুলো প্রচুর পরিমাণে খাদ্য খেয়ে থাকে। তাছাড়া এই মুরগি গুলোকে সাধারণত বাণিজ্যিক খাদ্য খাওয়ানো হয়, সেক্ষেত্রে খরচ বেশি হয়। কিন্তু দেশি মুরগি সকল ধরনের খাবার খেয়ে থাকে এবং তারা হজম করতে পারে যার কারণে খরচ কম হয়ে থাকে। এছাড়াও দেশি মুরগিকে ঘাস, লতা পাতা ইত্যাদি দিতে পারেন এক্ষেত্রে আপনার খাবারের খরচ অনেকটাই কমে যাবে। তাছাড়া দেশি মুরগি অন্যান্য মুরগির তুলনায় খুবই কম খেয়ে থাকে, সেই ক্ষেত্রে আপনার খাবারের খরচ কম হবে, যার কারণে লাভ বেশি হবে।
দেশি মুরগির মাংস অন্যান্য মুরগির মাংসের চাইতে দাম বেশি। যেমন বয়লার মুরগির দাম সাধারণত কম বেশি হয়ে থাকে, এতে আয় ব্যয় হিসাব করলে অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু দেশী মুরগীর সাধারণত দাম কখনোই কমেনা বরং অনেক সময় বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ কোনো উৎসবে সাধারণত দেশি মুরগির চাহিদা বেশি থাকে এবং দামও বেশি হয়। তাই দাম নিয়ে আপনার কোন টেনশন করতে হবে না এবং বিক্রির ক্ষেত্রে অসুবিধা হয় না। দেশি মুরগি যদি আপনি উপযুক্ত ভাবে পালন করতে পারেন তাহলে লাভবান হতে পারবেন।

দেশি মুরগির মাংস খুবই সুস্বাদু হয়ে থাকে এছাড়া ডিমও অনেক সুস্বাদু পুষ্টি গুণে ভরপুর, যার কারণে দেশি মুরগির চাহিদা ও দাম বেশি। কেননা এই মুরগি গুলো সাধারণত প্রাকৃতিক খাদ্য বেশি খেয়ে থাকে। তাই আপনি আবদ্ধভাবে পালন করলেও প্রাকৃতিক খাবার দেওয়ার চেষ্টা করবেন। অথবা নিজেই তৈরি করা খাবার দেবেন, তাহলে আপনার খাদ্যের খরচ অনেকটা কমে যাবে। দেশি মুরগির ওজন বেশি হয় না কিন্তু অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে। দেশি মুরগি আকারে ছোট হয়ে থাকে ও ডিম খুবই কম দিয়ে থাকে। তারপরও এই মুরগির মাংস ও ডিম বাজারে অনেক চাহিদা রয়েছে।

আপনি যদি পার্টটাইম হিসেবে এই দেশি মুরগি ছেড়ে অর্ধ আবদ্ধ হিসেবে পালন করতে পারেন সে ক্ষেত্রে বেশি লাভজনক হবে। আপনার বাড়ির সামনে যদি অল্প একটু জায়গা থাকে তাহলে চতুর্দিকে নেট দিয়ে বেড়া দিবেন, এরপর এর ভিতরে দেশি মুরগি ছেড়ে পালন করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে দেশি মুরগি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকবে। কেননা এই অল্প জায়গার মধ্যে হলেও দৌড়াদৌড়ি করতে থাকবে, এতে রোগ ব্যাধি কম হবে। এছাড়াও এভাবে যদি ছেড়ে পালন করতে পারেন তাহলে খাদ্য কম খাবে। যার কারণে আপনার লাভ বেশি হবে।

তবে দেশি মুরগি যদি খামারে পালন করেন সে ক্ষেত্রে বাজারে চাহিদা বেশি না হলে, সে ক্ষেত্রে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া খামারে দেশি মুরগি পালন করার ক্ষেত্রে খাবার বেশি খাবে, সে অনুযায়ী ওজন বেশি হবে না। যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এছাড়া দেশী মুরগি যদি ডিম পাড়ার জন্য খামারে পালন করে থাকেন সেক্ষেত্রে বেশি লাভ করতে পারবেন না। কেননা দেশি মুরগি, লেয়ার মুরগির তুলনায় খুবই কম ডিম পারে। দেশি মুরগি সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ১৬ টা ডিম দেয়। তাই দেশি মুরগি আবদ্ধভাবে যে পরিমাণ খাদ্য খাবে সে অনুযায়ী ডিম খুবই কম দেবে, এতে আপনার লাভ কম হবে।

আপনি ১০০ টি মুরগী নিয়ে অর্ধ আবদ্ধ হিসেবে পালন শুরু করলে সে ক্ষেত্রে আপনার যে পরিমাণ খরচ হবে তাহল; বাচ্চার দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা প্রতি পিস, এক্ষেত্রে ১০০ টি মুরগি বাচ্চার দাম ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ টাকার মতো খরচ হবে। এছাড়া খাবার প্রথম অবস্থায় এক মাসের মধ্যে সোনালী স্টাটার ফিট দিতে হবে। এরপর থেকে গম বা ভুট্টা ভাংগানো খাওয়াতে পারেন। এভাবে আপনার দেশি মুরগি পালন করলে ৪ থেকে ৫ মাসের মধ্যে বিক্রি করার উপযুক্ত হবে, এক্ষেত্রে মোট খরচ হবে ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা প্রতি পিস। যদি শতকরা ৮০% বেঁচে থাকে তাহলে মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মত ইনকাম হবে।

আরো একটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন, কিছু মুরগি মাংসের জন্য বিক্রি করতে হবে আর কিছু মুরগি ডিমের জন্য উৎপাদন করতে হবে, তাহলে আপনি লাভ করতে পারবেন। ১০০টা মুরগির মাঝে আপনার ৩০টা মুরগি ডিম দেবে আর বাকি গুলো ডিম পারবে না। তাই ডিমের মুরগির পাশাপাশি কিছু মাংসের মুরগি হিসাবে পালন করবেন। তাহলে আপনি বেশি লাভ করতে পারবেন। আশা করি, দেশি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে একটু হলেও উপকার হবে।

বাণিজ্যিক ভাবে দেশী মুরগি পালন

আপনি যদি বাণিজ্যিকভাবে দেশি মুরগি পালন করতে চান, সে ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ভাবে দেশী মুরগি পালন সম্পর্কে জানতে হবে। চলুন, কিভাবে বাণিজ্যিকভাবে দেশি মুরগি লালন-পালন করতে পারেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

প্রথমত দেশী মুরগী সাধারণত বাণিজ্যিকভাবে পালন করলে বেশি লাভ করতে পারবেন না। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে, তাহলে বাণিজ্যিকভাবে দেশি মুরগি পালনে লাভ করতে পারবেন। যদি আপনি ডিম উৎপাদনের জন্য বাণিজ্যিকভাবে পালন করতে চান, সে ক্ষেত্রে দেশি মুরগি আবদ্ধভাবে পালন করে লাভ হবে না। কারণ দেশি মুরগি অন্যান্য মুরগির তুলনায় খুবই কম ডিম দিয়ে থাকে। এজন্য দেশি মুরগি ছেড়ে পালন করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আপনি অর্ধ আবদ্ধ জায়গায় মুরগি পালন করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার খরচ কম হবে তাহলে তুলনামূলকভাবে লাভ হবে।

তাছাড়া দেশী মুরগিকে ঠিকঠাক মত ঔষধ, টিকা, খাবার, কৃমিনাশক ইত্যাদি প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও সুষম খাবার দিতে হবে, চেষ্টা করবেন নিজের তৈরি খাবার গুলো দেওয়ার জন্য। তবে যখন মুরগি গুলো ডিম দেওয়ার সময় হবে তখন লেয়ার মুরগির জন্য যে খাদ্যটা পাওয়া যায় সেই খাদ্য ডিম পাড়ার এক মাস আগে থেকে খাওয়াবেন। এতে মুরগির প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ইত্যাদি পাবে যার কারণে মুরগি সুস্থ সবল থাকবে ও বেশি ডিম দেবে এবং ঘন ঘন ডিম পাড়বে। এতে আপনার বেশি লাভ হবে।

দেশি মুরগি ডিম পাড়ার কয়েকদিন পরে কুচে বসে থাকে, এজন্য আপনি আলাদা একটি খাঁচার ভিতর এদেরকে রেখে দিবেন। যে স্থানে ডিম পাড়ে সেখানে বসতে দেবেন না। এতে মুরগি গুলো দ্রুত কুচে ভাব ছেড়ে যাবে, এরপর আবার ডিম পারা শুরু করবে। ডিম পাড়া মুরগিকে সব সময় সুষম খাবার দিতে হবে তাহলে আবার ডিম পাড়া শুরু করবে, খাবারের ক্ষেত্রে আপনি ঘাস, লতাপাতা দুপুরবেলায় দিতে পারেন। এতে অতি দ্রুত হজম করতে পারবে এবং পাশাপাশি আপনার খাদ্য খরচটা অনেকটা কমে যাবে। এই সকল পদ্ধতিতে যদি পালন করতে পারেন তাহলে লাভ হবে।

বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন

যারা শহরে বসবাস করেন তারা সাধারণত বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন করতে চায়, এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে কিছু পদ্ধতি জানতে হবে, তা না হলে দেশী মুরগী পালন করলে আপনার ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
বাড়ির ছাদে দেশি মুরগি পালন করা লাভজনক ব্যবসা কেননা অল্প জায়গার মধ্যেই আপনি উন্নতমানের ঘর না দিয়ে চতুর্দিকে নেট দিয়ে বেড়া দিতে পারেন এবং বাঁশ কাঠ দিয়ে বেড়া দিয়ে ঘর বানাতে পারেন। কেননা চতুর্দিকে নেট দিয়ে বেড়া দেওয়া থাকলে মুরগি নিচে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না এবং এখানে মুরগির পালন করার ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। ছাদে মুরগি পালন করলে হিংস্র প্রাণী মুরগিকে ক্ষতি করতে পারবে না। এতে আপনার অনেক লাভ হবে।
বাড়ির ছাদে যখন দেশি মুরগি পালন করবেন সে ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখবেন, যেন ময়লা বা এদের বিষ্ঠাগুলো নিয়মিতভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করতে হবে। তাহলে মুরগি গুলো ভালো থাকবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকবে, এছাড়াও ছাদে খুবই সুন্দর আবহাওয়া পেয়ে থাকে, পরিবেশটা খুবই সুন্দর হয়ে থাকে। তাই আপনি ছাদে কিছু মুরগি পালন করতে পারেন। তবে অবশ্যই বাড়ির ছাদের চতুর দিক বেড়া দিয়ে তার ভেতরে ছেড়ে পালন করবেন তাহলে লাভবান হবেন।

দেশি মুরগির খাবার তালিকা

দেশি মুরগি বিভিন্ন ধরনের খাদ্য খেয়ে থাকে তাই দেশি মুরগির খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে আপনার খাবার খরচ কমে যাবে চলুন, দেশি মুরগির খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

সাধারণত দেশি মুরগি ভাত, চাল, ধানের খুঁদ ইত্যাদি খেতে পছন্দ করে থাকে। এছাড়া গমের খুদ, ভুট্টা ভাঙানো এ সকল খাদ্য গুলো মুরগির অনেক উপকার করে থাকে। বিশেষ করে মুরগির হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, এছাড়াও ডিম পারতে সাহায্য করে। মুরগির মাংস প্রচুর পরিমাণে স্বাদ হয়, এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সবজি খাওয়াতে পারেন, সবজির উচ্ছিষ্ট অংশ গুলো তাদের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করবে। তাছাড়া ডিমের খোসা দিতে পারেন, এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে, খনিজ পদার্থের জন্য বিভিন্ন ধরনের পাথর দিতে পারেন।

তবে দেশি মুরগি সাধারণত দানাদার খাদ্য খেতে বেশি পছন্দ করে থাকে, সেক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন কম টাকার মধ্যে কিভাবে দানাদার খাদ্য দেওয়া যায়। যেমন গমের খুদ খুবই কম দামে পাওয়া যায়। এটা আপনি দিতে পারেন, এছাড়া ভুট্টা ভাংগানো ইত্যাদি খাদ্য গুলো দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও পারিবারিকভাবে যে ধান, চাল ইত্যাদির খুদ থাকে সেগুলো দিতে পারেন। তবে গম ও ভুট্টা একসাথে যদি মিশিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারেন, সে ক্ষেত্রে উপকার করবে। এর সাথে যদি আপনি শুটকি মাছের গুড়া দিতে পারেন তাহলে ডিম পাড়া মুরগির অনেক উপকার হবে এবং প্রচুর পরিমাণে ডিম দেবে।

বাড়িতে দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি

ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি দেশি মুরগি পালনে লাভ ক্ষতি সম্পর্কে। এখন জানবো বাড়িতে কিভাবে দেশি মুরগি পালন করা যায়। তাই আপনি যদি বাড়িতে অবসর সময় দেশি মুরগি পালন করতে চান তাহলে বাড়িতে দেশি মুরগি পালন করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে আপনি সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন। চলুন এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

আপনার বাড়ির সামনে যদি অল্প পরিমাণ জায়গা থাকে সেই ক্ষেত্রে আপনি অর্ধ আবদ্ধ পদ্ধতিতে দেশি মুরগি লালন পালন করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি অনেক টাকায় লাভ করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে প্রথমে কম মুরগি দিয়ে শুরু করবেন, তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন যে কিভাবে পালন করলে বেশি লাভ করা যায়। সে ক্ষেত্রে ১০০টা মুরগী নিয়ে শুরু করতে পারেন। বাড়ির ভেতরে যদি আপনার জায়গা বেশি থাকে সে ক্ষেত্রে দেশি মুরগি পালন করতে পারেন। এক্ষেত্রে একটি ঘর তৈরি করবেন যেন রাত্রিতে থাকতে পারে। এছাড়া দিনের বেলায় বাহিরে বের করে দিবেন।

বাড়ির ভিতরে এমন ভাবে বেড়া দিবেন যেন তারা ঘোরাফেরা করতে পারে এবং দিন শেষে তারা আবার ঘরে উঠবে, এভাবে পালন করতে পারেন। এছাড়াও প্রাকৃতিকগত খাবারগুলো দেওয়ার চেষ্টা করবেন তাহলে খরচ কম হবে এবং বাড়ির যে উৎকৃষ্ট খাবার গুলো রয়েছে সেই খাবার দিতে পারেন। এছাড়াও দেশি মুরগি অন্যান্য মুরগীর তুলনায় খাবারও কম খেয়ে থাকে এবং যেকোনো ধরনের খাবার তারা খেয়ে থাকে। যার কারণে পালন করতে সুবিধা হয়, রোগ ব্যাধি কম হবে। এছাড়াও মরে যাওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

দেশি মুরগির চিকিৎসা

দেশি মুরগি সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে, তারপরও দেশি মুরগির চিকিৎসা সম্পর্কে আপনার জানা থাকলে অতি দ্রুত ভাবে মুরগিকে সুস্থ করতে পারবেন। চলুন, দেশি মুরগির ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
দেশি মুরগির রোগ ব্যাধি হলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা করার জন্য চেষ্টা করবেন। বিশেষ করে দেশি মুরগির সাধারণত ঠান্ডা লাগে আর এই ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মুরগিকে সাধারণত হলুদ খাওয়াতে পারেন অথবা আদার, রসুন মিক্স করে পানির ভিতরে অল্প পরিমাণ করে দিতে পারেন। এর কারণে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকবে, এছাড়াও ঠান্ডা থেকে মুক্তি পাবে। তবে মুরগিকে সুস্থ রাখার জন্য অবশ্যই মুরগির বাসস্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রাখতে হবে। এছাড়াও মুরগির বিষ্ঠা ঘন ঘন পরিষ্কার করতে হবে। কেননা এখান থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়াতে পারে।

মুরগির বাচ্চা থেকে শুরু করে চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে, সেজন্য দেশি মুরগির সাধারণত ছোট বাচ্চা যখন থাকে তখন ভালোভাবে তাপমাত্রা দিতে হবে। এছাড়াও প্রথম দিনে লেবু ও অল্প পরিমাণ চিনি দিয়ে ওর স্যালাইনের মত বানিয়ে খাওয়াতে পারেন। এরপর থেকে মুরগিকে সাধারণত এক মাস পর্যন্ত বাহিরের খাবার দাবার দিবেন না। কেননা এতটুকু বাচ্চা হজম করতে পারবে না। এই জন্য বাজারে সোনালী স্টাটার ফিট পাওয়া যায়, সেই ধরনের খাদ্যটা খাওয়াতে পারেন। তাছাড়া মুরগির বাচ্চা এই সময়ে বাহিরে ছাড়া যাবে না।
এরপরে মুরগির বাচ্চাকে ১ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ১ম ভ্যাকসিনেশন করতে হবে। সাধারণত সরকারি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে এই ভ্যাকসিন নিয়ে আসবেন। মুরগির বাচ্চাকে ডান চোখে একফোঁটা করে দিবেন, এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, মুরগির রোগ ব্যাধি হবে না। তাছাড়া পাশাপাশি যদি মুরগির ঠান্ডা ভাব দেখেন সেই ক্ষেত্রে পশু ডাক্তারের পরামর্শক্রমে একটি এন্টিবায়োটিক ডোজ কমপ্লিট করতে পারেন। তাছাড়া মুরগি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কৃমি চিকিৎসা করতে হবে। মুরগির যখন দুই মাস বয়স হয়ে যাবে তখন অবশ্যই কৃমির ডোজ করাতে হবে।

তাছাড়া প্রচন্ড গরমের মধ্যে মুরগিকে সাধারণত লেবুর পানি খাওয়াবেন, এতে করে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, মুরগির ঘন ঘন ঠান্ডা লাগবে না। কেননা গরম থেকেও কিন্তু মুরগির ঠান্ডা লাগতে পারে, সে ক্ষেত্রে আপনার সতর্ক থাকতে হবে। আবার শীতকালে মুরগির সাধারণত ঠান্ডা জনিত এবং রানীক্ষেত হয়ে প্রচুর পরিমাণে মুরগি মারা যায়। এজন্য মুরগিকে দুই মাস পর পর রানীক্ষেতের ভ্যাকসিন দিতে হয়, এই ভ্যাকসিনেশন করলে আপনার মুরগির রানীক্ষেতের সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। এছাড়াও পাশাপাশি মুরগি রোগ দেখা দিলে অবশ্যই মুরগিটা আলাদা রেখে চিকিৎসা করবেন।

উপসংহারঃ দেশি মুরগি পালনে লাভ ক্ষতি কেমন হবে বিস্তারিত জানুন

পরিশেষে বলা যায় যে দেশী মুরগী পালন করা অত্যন্ত লাভজনক, যদি আপনি কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। তাহলে দেশি মুরগি পালন করে লাভবান হতে পারবেন। তবে আপনার অভিজ্ঞতা ছাড়া কখনোই বড় ধরনের খামার করা যাবেন না, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এছাড়া দেশি মুরগিকে কিভাবে কম টাকায় খরচ করে বেশি টাকা বিক্রি করতে পারবেন, সে ক্ষেত্রে আপনার কৌশলী হতে হবে। তাই দেশি মুরগি পালনে লাভ ক্ষতি সম্পর্কে আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে, আশা করি আপনার উপকার হবে। পোস্টটি ভাল লাগলে আপনার বন্ধু বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url