কম খরচে ট্যাংকে শিং মাছের চাষ পদ্ধতি জেনে অধিক লাভ করুন

বর্তমানে অনেকে ট্যাংকে মাছ চাষ করতে চায়, তাই ট্যাংকে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানা থাকলে আপনি এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে লাভবান হতে পারবেন। চলুন, ট্যাংকে কিভাবে শিং মাছ চাষ করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
অনেকের জমি জায়গা খুবই কম রয়েছে কিন্তু মাছ চাষ করার খুবই আগ্রহ আছে। তাই তারা ট্যাংকে শিং মাছ চাষ করতে পারেন। এতে অনেক লাভ করতে পারবেন, তাই ট্যাংকে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃট্যাংকে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি এর মাধ্যমে আয় করুন

ট্যাংকে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি

বর্তমানে ট্যাংকে মাছ চাষ করতে পারেন। তাই ট্যাংকে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কের জানা থাকলে আপনি ভালো ব্যবসা করতে পারবেন। চলুন, কিভাবে মাছ চাষ করলে লাভবান হওয়া যায় সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

শিং মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি থাকে, তাই এ মাছের চাহিদা অনেক রয়েছে। আগে খাল বিল, নদী নালাতে প্রচুর পরিমাণে শিং মাছ পাওয়া যেত কিন্তু বর্তমানে খাল বিল না থাকার কারণে এখন এই মাছ আর পাওয়া যায় না। যার কারণে মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার জন্য বর্তমানে ট্যাংকে শিং মাছ চাষ করতে পারেন। এতে ভালো লাভ করতে পারবেন। শিং মাছ চাষের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা রয়েছে। যাদের জমি জমা নেই তারাও এই মাছ চাষাবাদ করতে পারেন। তাছাড়া এই মাছ বাজারে অনেক চাহিদা রয়েছে এবং ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন।

এই মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে জায়গা খুবই কম লাগে, খরচ কম হয়। যারা শহর অঞ্চলে বসবাস করে তারাও বাসার ছাদে ট্যাংকে শিং মাছ চাষ করতে পারেন। এতে অনেক লাভ হবে এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে। তাছাড়া যাদের জমি জমা নেই মাছ চাষ করতে চাচ্ছেন তারাও অল্প টাকার মধ্যে এই পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করতে পারেন। এতে অনেক টাকা সাশ্রয় হবে এবং অল্প পুজিতে আপনি অনেক টাকা লাভ করতে পারবেন। এছাড়াও এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে মাছের রোগব্যাধি কম হয়, তাছাড়া দৈনন্দিন পরিচর্যা ঠিকঠাক মত করলে অতি দ্রুত মাছ বৃদ্ধি পেতে পারে।

ট্যাংক প্রস্তুতকরণঃ আপনি যখন ট্যাংক নির্মাণ করবেন সে ক্ষেত্রে বড় ধরনের আয়তাকার অথবা বৃত্তাকার দুই ভাবেই তৈরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে সিমেন্ট দিয়ে এই ট্যাংক তৈরি করতে পারেন। এমন ভাবে তৈরি করবেন যেন ১৫ থেকে ২০ টন পানি ধরতে পারে। এরপরে উপরে নেট দিতে পারেন কেননা বিভিন্ন ধরনের পাতা ময়লা আবর্জনা যেন ভিতরে না পড়ে। এছাড়াও এই ট্যাংকের সাথে অবশ্যই ছোট মোটর লাগাবেন পানি উঠানোর জন্য অবশ্যই খেয়াল রাখবেন সব সময় যেন ট্যাংকের ভিতরে পানি ৭৫% পর্যন্ত থাকে। এছাড়াও পানি ক্লোরিন দিয়ে মুক্ত করতে হবে।

তাছাড়া পানিতে যেন অক্সিজেন ঠিক মতো থাকে সেদিকে আপনার খেয়াল করতে হবে। কেননা পানিতে যদি অক্সিজেন না থাকে, তাহলে গ্যাস হয়ে মাছ মারা যাবে। তাছাড়া মাঝে মাঝে পানি পরিষ্কার রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে ১ হাজার গ্রাম পানির মধ্যে ১০০ গ্রাম চুন দিতে পারেন। এতে পানির পিএইচ ভালো থাকবে, এছাড়া যখন পুরো ট্যাংকি প্রস্তুত করা হয়ে যাবে সেক্ষেত্রে সাথে সাথে মাছ ছাড়বেন না। দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন এতে পানি ভালো থাকবে।

যেহেতু এই পানি ঘনত্ব বেশি হয়ে থাকে যার কারণে পানি বিষাক্ত হতে পারে। এছাড়াও অ্যানিমিয়া জাতীয় রোগ গুলো সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য এই ধরনের জীবাণু আক্রমণ থেকে মুক্ত করার জন্য প্রোবায়োটিক ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার পানির গুণাগুণ ঠিক থাকবে। এছাড়াও কোন ধরনের রোগ জীবাণু সংক্রমণ করতে পারবে না। তাই আপনি যদি শিং মাছ অল্প জায়গার মধ্যে চাষ করতে চান, সেই ক্ষেত্রে ট্যাংকিতে চাষ করলে সবচাইতে ভালো হবে। জায়গা কম লাগবে উৎপাদন বেশি করা যাবে।

তাছাড়া ট্যাংকের তলায় যদি কোন খাদ্য বা ময়লা জমে থাকে সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বিদ্যুৎ যদি না থাকে পানিতে অবশ্যই হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে দিতে হবে। তাহলে মাছ অক্সিজেন পাবে, এছাড়াও মাঝে মাঝে পানি পরীক্ষা করতে হবে। যে তার অক্সিজেন মাত্রা ঠিক আছে কিনা, পানির পিএইচ মান ঠিক আছে কিনা। এদিকে খেয়াল রাখতে হবে, সপ্তাহে একদিন হলেও আপনার এই ট্যাংক পরিষ্কার করতে হবে এবং কমপক্ষে অর্ধেক পানি হলেও পরিবর্তন করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
পোনা নির্বাচনঃ ট্যাংকে মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পোনা নির্বাচন করা। কেননা খারাপ বা দুর্বল পোনা যদি ট্যাংকে চাষাবাদ করেন, সেই ক্ষেত্রে মাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই দুই থেকে তিন ইঞ্চি লম্বা যেন হয় এই ধরনের ভালো মানের পোনা নির্বাচন করবেন। এছাড়া ১০০ লিটার পানির জন্য ৪০ থেকে ৫০টি পোনা দেওয়া যেতে পারে। সকালে অথবা বিকেল বেলা পোনা ছাড়াতে পারেন। এতে মাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। এছাড়াও যখন পোনা ছাড়বেন সেক্ষেত্রে ঘন ঘন দেখাশোনার ব্যবস্থা করবেন। কেননা প্রথম কয়েক দিনে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।

খাদ্য প্রয়োগঃ মাছের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খাদ্যের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। কেননা খাদ্য যদি আপনি ঠিকঠাক মতে দিতে পারেন, তাহলে মাছ অতি দ্রুত বড় হবে। তাই দিনে তিনবার করে খাদ্য দেওয়ার চেষ্টা করবেন, যে সময় ঠান্ডা থাকে বিশেষ করে সকাল অথবা বিকেলে খাদ্য দিতে পারেন। অবশ্যই ভাসমান ভাবে খাদ্য দিবেন, এক্ষেত্রে প্রোটিন যুক্ত খাবার গুলো দেওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে ৭ থেকে ৮ দিন পর পর মাছ কেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই দিকে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও খাদ্য খাওয়ার ১৫ মিনিটের মতো অপেক্ষা করবেন।

খাদ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় লক্ষ্য রাখবেন, যদি আপনি রাত্রিতে শিং মাছকে খেতে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে কিন্তু মাছ ভালো বৃদ্ধি পাবে, তবে সন্ধ্যার পরে যে খাবারটি দিবেন সেটা একটু আগে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। সকালবেলা ৯ টার দিকে খাদ্য দিতে হবে, তাছাড়া ট্যাংকে চাষ পদ্ধতির ক্ষেত্রে যদি খাদ্য নিচে পড়ে যায় সে ক্ষেত্রে খাদ্যগুলো উঠিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে। তা না হলে খাদ্য থেকে অ্যানিমিয়া রোগ সৃষ্টি হতে পারে এবং মাছের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ট্যাংকের পানি গ্যাস হয়ে মাছ মারা যেতে পারেন।

মাছের রোগের ক্ষেত্রে আপনাকে সচেতন হতে হবে, যেন মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে সেই ধরনের ব্যবস্থাগুলো নেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পানি পরিবর্তন করা খুবই জরুরী, মাছের ঘনত্ব বেশি হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখবেন, পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার চেষ্টা করবেন। যদিও ট্যাংকের ভিতরে শিং মাছ চাষ করলে সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে। তারপরও আপনাকে এদিকে খেয়াল রাখতে হবে, মাছের শারীরিক অবস্থা কেমন, এছাড়াও মাছের বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে যেমন ফাঙ্গাল ইনফেকশন, ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, পরজীবী দ্বারা আক্রমণ হতে পারে।

এজন্য আপনি মাছের রোগের বিষয়ে খেয়াল রাখবেন যেমন মাছ অস্বাভাবিকভাবে আচরণ করবে, খাদ্য খেতে চাইবে না, শরীরে বিভিন্ন ধরনের দাগ দেখা যায় বা ক্ষত দেখা যেতে পারে। এই ধরনের সমস্যাগুলো দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসা করতে হবে। আপনি মৎস্য অধিদপ্তর থেকে বা মৎস্য ডাক্তারের থেকে ওষুধ নিয়ে প্রয়োগ করতে পারেন। এছাড়াও যখন আপনার ট্যাংকের মাছ গুলো আক্রান্ত হয়ে যাবে, সে মাছ গুলো আলাদা রাখার চেষ্টা করবেন। যদি মাছ আক্রান্ত হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে রোগ সনাক্ত করার চেষ্টা করবেন।

মাছ বিক্রির উপযুক্ত সময়ঃ আপনি যদি ভালো মাছ চাষী হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে একটা বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। কখন আপনি মাছ বিক্রি করলে বেশি লাভ পাওয়া যাবে এবং কোন বাজারে বিক্রি করলে বেশি দাম পাবেন, সেদিকে সতর্ক রাখতে হবে। এই শিং মাছ যদি ট্যাঙ্কে লালন পালন করতে পারেন সেই ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে বাজারে বিক্রি করার উপযুক্ত হবে। তবে এই ক্ষেত্রে সবগুলো মাছ একসাথে উঠাবেন না অল্প কিছু উঠিয়ে নিয়ে বিক্রি করতে পারেন। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন কি পরিমাণ লাভ হচ্ছে।

ছোট ছোট জাল দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করবেন, হাত দিয়ে মাছ ধরতে যাবেন না। কেননা হাত দিয়ে মাছ ধরলে দেখা যায় আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং দ্রুত মারা যেতে পারে। ভালো পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে তাছাড়া মাছের দাম ভালো হবে না। মাছ বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করতে হবে, এছাড়াও যে সকল বাজার গুলোতে বেশি দাম পাওয়া যায় সেই স্থানীয় বাজারগুলোতে আপনি মাছগুলো বিক্রি করতে পারেন অথবা আশেপাশে যে রেস্তোরা বা রেস্টুরেন্ট রয়েছে এর মালিকদের সাথে কথা বলে মাছ বিক্রি করতে পারেন।

আপনি নিজে একটি ফেসবুক পেজ খুলে অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে মাছ বিক্রি করতে পারেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি ভালোভাবে মূল্য নির্ধারণ করবেন যেন আপনার ব্যয় অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট দাম রেখে দিবেন। যাতে করে লোকজন কিনতে আগ্রহী হয়, সে ক্ষেত্রে দেখা যায় এই শিং মাছ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মতো কেজিতে বিক্রি করা হয়ে থাকে। তাই আপনি যদি শিং মাছ ট্যাংকে চাষ করার পদ্ধতি ভালোভাবে প্রয়োগ করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে লাভবান হতে পারবেন। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অনেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে এই চাষাবাদ করে থাকে।

পুকুরে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি

আপনি যদি বড় আকারে শিং মাছ চাষ করতে চান, সেই ক্ষেত্রে পুকুরে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানা থাকলে ভালো হবে। কেননা পুকুরে শিং মাছ চাষ করলে বেশি লাভবান হতে পারবেন। চলুন, সে সম্পর্কে উপস্থাপন করা যাক।
ছবি
পুকুরে মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে পুকুর আগে নির্বাচন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কোন ধরনের পুকুর হলে আপনার ভালো হবে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এমন একটি জায়গায় পুকুর রাখতে হবে যেখানে বন্যা আসলে পানি যেন না উঠতে পারে। পুকুরের পাড় ভালোভাবে মজবুত করা লাগবে। কোথাও জানি ছিদ্র না থাকে, শিং মাছ কিন্তু হালকা ছিদ্র দিয়েই বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বর্ষাকালের দিকে খেয়াল রাখতে হবে উপরে পানি যদি বেশি হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে শিং মাছ কিন্তু বের হয়ে চলে আসবে। এছাড়াও পুকুর আয়তাকার হিসেবে চাষ করলে ভালো হবে।

নতুন পুকুরে অথবা পুরাতন পুকুরে আপনি এই শিং মাছ চাষ করতে পারেন, এতে কোন সমস্যা হবে না। তবে আপনাকে প্রথমে ভালো মানের চুন দেয়া লাগবে। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা লাগবে, কেননা উর্বর ছাড়া কখনো শিং মাছ হওয়ার সম্ভাবনা নাই। এর পরে আপনি যখন মাছ চাষ করবেন সে ক্ষেত্রে অবশ্যই পানি শেষ করবেন। পুকুরের ভেতরের মাটি কেমন রয়েছে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি কাদা হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে কিন্তু অসুবিধা হতে পারে। তারপরে চারিদিকে জাল দিয়ে ভালো করে বেড়া দিতে পারেন।

এরপরে যখন আপনার পুকুর ভালোভাবে প্রস্তুত হয়ে যাবে সেই ক্ষেত্রে পানি দেওয়ার কমপক্ষে দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপরে আপনি মাছ ছাড়তে পারেন, পুকুর প্রস্তুত হয়ে গেলে ভালো মানের হ্যাচারি থেকে আপনি পোনা সংগ্রহ করবেন। দেখবেন বিভিন্ন ধরনের হ্যাচারি রয়েছে যেখানে প্রযুক্তিগতভাবে শিং মাছের পোনা পাওয়া যায়। প্রযুক্তিগতভাবে উৎপাদন করেছে সেই ধরনের শিং মাছের পোনাগুলো সংগ্রহ করে নিবেন। এক্ষেত্রে আপনার পোনা মারা যাবে কম এছাড়াও এই মাছগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

হ্যাচারি থেকে পোনা যখন নিয়ে আসবেন সেক্ষেত্রে অ্যান্টি ফাঙ্গাস মেডিসিন ব্যবহার করবেন। কেননা এতে আপনার মাছ এন্টি ফাঙ্গাস রোগে আক্রান্ত হবে না। তবে পুকুরে ছাড়ার পরে একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে মাছের কোথাও যদি ক্ষত রোগ দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন মৎস্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শিং মাছ চাষের ক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আরো একটি বিষয় হলো পানির ঘনত্ব। এছাড়াও প্রতি শতাংশে ৫০ থেকে ৬০ এর মত শিং মাছ চাষাবাদ করতে পারবেন। এই বিষয়গুলো আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।

হাউজে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি

অনেকে হাউজে মাছ চাষ করতে চায় সেক্ষেত্রে হাউজে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানা থাকলে আপনি ভালোভাবে লাভবান হতে পারবেন। চলুন, হাউজের মধ্যে কিভাবে শিং মাছ চাষ করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা যাক।

হাউজে শিং মাছ যদি আপনি চাষ করতে পারেন সে ক্ষেত্রে ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার হাউজকে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এর মধ্যে মূলত জীবাণু মুক্ত মেডিসিন ব্যবহার করবেন। ১ হাজার লিটার পানির মধ্যে ১০ গ্রাম এই জীবাণুনাশক ওষুধটি দিতে পারেন। এছাড়াও লবণ পানি দিয়ে সুন্দর করে হাউজটা পরিষ্কার করে নেবেন। এর ভিতর চুন দিতে পারেন, দুই থেকে তিন দিন অপেক্ষা করার পরে সুন্দর করে পরিষ্কার করে নেবেন। দেখবেন আপনার এই হাউজ পরিষ্কার হয়ে গেছে।
পানির পিএইচ ঠিক আছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, কেননা পানির পিএইচ যদি ঠিক না থাকে তাহলে আপনার মাছের বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে, রোগব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, তাছাড়া সূর্যের আলো ঠিকমতো প্রবেশ করে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যদি অতিরিক্ত সূর্যের আলো লাগে সে ক্ষেত্রে ছায়া দিতে পারেন। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের ভাসমান উদ্ভিদ ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও পানি পরিষ্কার রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন পাওয়া যায়, সেটা আপনি ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিতভাবে পানি পরিষ্কার করতে হবে।

আপনি যদি এই হাউযে শিং মাছ চাষ করতে পারেন সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে। কেননা এতে অল্প জায়গা লাগে, মাছের রোগ ব্যাধি কম হয়ে থাকে। বিশেষ করে শিং মাছ চাষ করলে সবচাইতে ভালো হয়। এছাড়া আপনি চেষ্টা করলে বাড়ির ছাদেও করতে পারেন। তবে একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে পানির পরিবেশ ভালো রাখতে হবে। এছাড়া অন্যান্য পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, পানির ঘনত্ব ঠিক রাখার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে মাছ অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চিকিৎসা করা লাগবে।

শিং মাছ খাওয়ার উপকারিতা

এতক্ষণে আমরা ট্যাংকে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনেছি এখন শিং মাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানবো। যার কারণে অনেকেই এই মাছ চাষ করতে বেশি আগ্রহ হবে। চলুন, এই মাছ খাওয়াতে আমাদের শরীরে কি উপকার করে সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা যাক।

শিং মাছ আমরা অনেকেই পছন্দ করে থাকি, বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা বেশি পছন্দ করে থাকে। কেননা এর ভিতর কাটা কম থাকে যার কারণে তারা খেতে চায়। এছাড়া মাছটা অনেকটাই সুস্বাদু লাগে এবং প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। এর মাঝে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ,ভিটামিন মিনারেল ইত্যাদি রয়েছে। যা আপনার দৈনন্দিন প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবে। এছাড়াও এই মাছের মধ্যে ভিটামিন-এ, ডি থাকে যা আমাদের শরীরের গঠন এবং দৃষ্টি শক্তি ত্বকের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে। এ মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম পটাশিয়াম ইত্যাদি বিদ্যমান থাকে।

তবে এই শিং মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যদিও এই মাসের তেমন একটা ক্ষতিকর ক্ষতি নেই খাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষতি নেই। কেননা আমাদের শরীরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উপকার ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের রক্তস্বল্পতা দূর করতেও ভালো কাজ করে থাকে। কিন্তু এই মাছ কারা খেতে পারবেনা সেই দিকে আপনাকে সতর্ক হবে। কেননা এই মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস পটাশিয়াম থাকে, যা আপনার কিডনি রোগে যারা রয়েছেন তাদের এই মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষতিকর রয়েছে।

শীতকালে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি

শীতকালে শিং মাছ চাষ পদ্ধতিতে কিছু ব্যবহার জানতে হবে। তাই শীতকালে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানা থাকলে আপনি মাছের উৎপাদন বেশি করতে পারবেন। চলুন, এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
শীতকালে মাছের সবচাইতে বেশি পরিচর্যা করতে হয় এবং যত্ন নিতে হবে। কেননা এই সময় যেহেতু পানির তাপমাত্রা কম থাকে, এজন্য মাছ বৃদ্ধি পায় কম। মাছ খাওয়া দাওয়া করে কম, যার কারণে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় না বিশেষ করে শিং মাছ শীতকালে খুবই কম হয়। যেহেতু অত্যাধিক শীতের কারণে পানি ঠান্ডা হয়ে যায় এজন্য মাছ বের হতে চায় না। চেষ্টা করবেন পুকুরের চারপাশ দিয়ে সুন্দর করে গাছ লাগানোর। এতে করে তাপমাত্রা ঠিক থাকবে এছাড়াও খাদ্যের ক্ষেত্রে আপনার কিছু সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে মাছ যে পরিমাণ খাবার খায় সেই অনুযায়ী খাবার দিবেন।

শীতকালের শিং মাছ খুবই কম খেয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি খাদ্য দিবেন, অতিরিক্ত খাদ্য দিলে ট্যাংকের নিচে পড়ে যাবে এবং খাদ্যগুলো খাবেনা। যে খাদ্যগুলোতে প্রোটিন বেশি রয়েছে সেই ধরনের খাদ্য দেওয়ার চেষ্টা করবেন। প্রাকৃতিক উপায়ে মাছের প্রোটিনযুক্ত খাদ্য তৈরি করার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও পুকুরের গভীরতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে, অবশ্যই ৪ থেকে ৫ ফুট এর মত গভীরতা থাকতে হবে। এছাড়াও পুকুরের পানির গুণগতমান পরীক্ষা করে নিতে হবে। এই সময় বেশিরভাগ ক্ষত রোগ দেখা যায়, এজন্য শীতের আগেই বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।
এ ছাড়া শিং মাছের পানির গভীরতা ঠিক রাখতে হবে এবং ঘন ঘন পানি পরিবর্তন করে দিতে হবে। তাছাড়াও চুন প্রয়োগ করা লাগতে পারে। যেহেতু এই সময় রোগবালাই বেশি থাকে সেই ক্ষেত্রে ১৫ দিন পরেই পানি পরিবর্তন করার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও এন্টিভাইরাস দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও পুকুরের এই সময়ে পানিতে গ্যাস হতে পারে যার কারণে গ্যাস দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পানিতে হাত টানা দেয়া যেতে পারে। শীতকালে কখনো বেশি খাবার দেবে না এতে খাবারগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

শিং মাছ চাষ সম্পর্কে যে প্রশ্নগুলো করা হয় (FAQ)

কত সময়ে শিং মাছ বাজারজাত করার উপযুক্ত হয়?

যদি আপনি ভালোভাবে চাষাবাদ করতে পারেন সেই ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই এই মাছ বিক্রি করার উপযুক্ত হবে।

কতদিন পর পর পানি পরিবর্তন করা উচিত?

সপ্তাহে একবার অবশ্যই পানি পরিবর্তন করে দিবেন বিশেষ করে ট্যাংকির ৩০% পানি পরিবর্তন করা যেতে পারে।

শিং মাছ চাষের সবচেয়ে বড় সমস্যা কি?

এ মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে অক্সিজেনের সমস্যা এনিমিয়া এছাড়াও পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই পানি পরীক্ষা করা লাগবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে।

ট্যাংকে শিং মাছ চাষে লাভের হার কত?

আপনি যদি নিয়মিত ভাবে পরিচর্যা এবং ভালো ব্যবস্থাপনা করতে পারেন সেই ক্ষেত্রে তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই এই মাছ বিক্রি করা যাবে এবং প্রায় ৪০% এর মত লাভ করতে পারবেন।

শেষ কথাঃ ট্যাংকে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি এর মাধ্যমে আয় করুন

পরিশেষে বলা যায় যে ট্যাংকে শিং মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা রয়েছে। বিশেষ করে আপনার কম জায়গার মধ্যে এই মাছ চাষাবাদ করতে পারবেন। এছাড়াও খুবই কম খরচ হবে এবং ট্যাংকের শিং মাছ খুব সুন্দর মতে বেড়ে উঠতে থাকে। রোগ ব্যাধি কম হয়ে থাকে তাই ট্যাংকে শিং মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আর্টিকেলে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, আশা করি আপনার কাজে লাগবে পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url