হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্বের কারন এবং সিফফিনের যুদ্ধ সম্পর্কে জানুন
সিফফিনের যুদ্ধ বা হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্বের কারন সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। কেননা এই যুদ্ধের কারণে ইসলামিক গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যায়। চলুন, হযরত আলী রাঃ ও মুয়াবিয়ার মধ্যে যে সমস্যা গুলো হয়েছিল সেগুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী রাঃ খেলাফত অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দল বিরোধিতা শুরু করেছিল, এর পিছনে বিভিন্ন কারণ ছিল। তাই হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্বের কারন সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃহযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে বা সিফফিনের যুদ্ধের কারন ও ফলাফল সম্পর্কে জানুন
হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্বের কারন
ইসলামের ইতিহাসে হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্বের কারন যেন একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। এই যুদ্ধকে সিফফিনের যুদ্ধ বলা হয়ে থাকে। চলুন, হযরত আলী ও মুয়াবিয়া এর মধ্যে যে সকল কারণে যুদ্ধ হয়েছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা যাক।
হযরত আলী রাঃ খেলাফতে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য কুফা, বসরা, সিরিয়া, মিশর এই সকল অঞ্চল গুলোতে উমাইয়া শাসনকর্তাদের পদচ্যুত করেছিল এবং সেই স্থানে নতুন করে শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। এতে মুয়াবিয়া রাঃ এই নীতির বিরোধিতা করেছিল। তাছাড়া হযরত ওসমান রাঃ এর সময় মুয়াবিয়া ও উমাইয়ারা সরকারি সম্পত্তি লাভ করেছিল। যা খলিফা আলী রাঃ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। এতে তাদের স্বার্থে আঘাত লেগেছিল এবং তারা খলিফার বিরোধিতা শুরু করে। এভাবে মুয়াবিয়া রাঃ আলী রাঃ এর বিরোধিতা করে।
হযরত ওসমান রাঃ হত্যার তাৎক্ষণিক সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছিলেন তালহা, জুবায়ের কিন্তু খলিফা তাৎক্ষণিক বিচার দিতে অপারগতা হওয়ার কারণে তারা বিরোধিতা করে। এমনকি তারা কুফা, বসরা এর শাসনকর্তার পদ দাবি করেছিল। খলিফা আলী রাঃ দাবিগুলো না মঞ্জুর করে, যার কারণে তারা খলিফার বিরোধিতা করে। হযরত ওসমান রাঃ হত্যাকাণ্ডের কারণে হাশেমী ও উমাইয়া দ্বন্দ্ব লেগে যায়। এতে উমাইয়ারা হযরত মুয়াবিয়া পক্ষে অবলম্বন করে এবং আলী রাঃ বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। কেননা এই দুটি গোত্র পূর্বে থেকেই তারা শক্তিশালী হওয়ায় একে অপরের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকত।
মুয়াবিয়া রাঃ এবং যাদেরকে আলী রাঃ পদচ্যুত করেছিলেন সেই সকল উমাইয়া শাসকগণ সবাই ওসমান রাঃ এর হত্যার বিচার দাবি করে, এতে আলী রাঃ বিচার এর ক্ষেত্রে বিলম্বিত করেন। এই হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে খলিফা বলেন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বিচার করা কঠিন বিষয় তবে এর পিছনে কুফা, বসরা, মিশরের অনেক লোক এর সাথে জড়িত আছে। যার কারণেই এক্ষেত্রে তিনি বলেন এই মুহূর্তে ওসমান রাঃ বিচার করতে গেলে খিলাফতের ভাঙ্গন শুরু হবে এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিলে বিদ্রোহীরা বিদ্রোহ শুরু করবে। তাই এই বিচারকার্য করতে সময় লাগবে, এতে মুয়াবিয়া ও উমায়রা বিদ্রোহ শুরু করে।
হযরত মুয়াবিয়া রাঃ তিনি খলিফা হওয়ার জন্য আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে ওসমান হত্যার বিচার চাপিয়ে দিয়েছিল এবং জনগণকে ক্ষেপিয়ে দিয়েছিলেন। এজন্য তিনি ওসমান রাঃ রক্ত রঞ্জিত পোশাক ও তার স্ত্রীর নায়লার খন্ডিত আঙ্গুল জনসম্মুখে প্রদর্শন করে জনগণকে ক্ষিপ্ত করে তুলেছিল। তাছাড়া হযরত আলী রাঃ খেলাফতে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরে রাজধানী মদিনা হতে কুফায় স্থানান্তর করে, এতে ধর্মপ্রাণ মুসলমান এটা মেনে নিতে পারেনি। এতে মদিনার গুরুত্ব কমে যায় এবং সাধারণ লোকজনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা সমর্থন লাভ করতে অসুবিধা হয়। এমনকি কুফা বসরা লোকেরাও এতে সমর্থ দেয় নাই।
সিফফিনের যুদ্ধের ঘটনা
হযরত আলী রাঃ ও মুয়াবিয়ার মধ্যে সিফফিনের যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছিল যা ইসলামের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই যুদ্ধের ঘটনা সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
বিভিন্ন কারণে হযরত আলী রাঃ ও মুয়াবিয়ার মধ্যে এই যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছিল। পরবর্তীতে ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে ইউফেট্রিস নদীর তীরে সিফফিন নামক স্থানে উভয় বাহিনীর মধ্যে পরস্পর সম্মুখীন হতে থাকে। হযরত মুয়াবিয়ার রাঃ যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার দিকে ধাবিত হতে থাকে, ঠিক তখনই এক হঠকারিতার আশ্রয় নিয়ে বর্ষার মাথায় কোরআন শরীফ উত্তোলন করে মীমাংসার কামনা করেছিল। তিনি মীমাংসার জন্য দুম্মাতুল জন্দের মীমাংসা মুয়াবিয়ার পক্ষের আমর ইবনে আস, আলী রাঃ সালিশের জন্য আবু মুসা আল আশয়ারী পক্ষ নেয়ার কারণে পরাজয় বরণ করেছিল।
যার কারণে আলী রাঃ মুয়াবিয়া কে সাম্রাজ্যের একটি অংশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। আমর আমর ইবনে আস এর কুটকৌশলে আলী রাঃ পরাজিত হয়েছিল। এতে জনগণ রাগান্বিত হয়ে পড়েন এবং আলী রাঃ এর পক্ষে থেকে ১২ হাজার সৈন্যদল চলে যায়। যারা ইতিহাসের খারেজি নামে পরিচিত। এভাবে মুয়াবিয়া খেলাফতের বিভক্ত করে হযরত আলী রাঃ একটি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছিল। এই সিফফিনের যুদ্ধের কারণেই বিভিন্ন দল গঠিত হয় এবং পরবর্তীতে হযরত আলী রাঃ কে এদের হাতে শাহাদাত বরণ করতে হয়। মূলত এই যুদ্ধের কারণ হযরত ওসমান রাঃ হত্যার বিচার নিয়ে শুরু হয়েছিল।
সিফফিনের যুদ্ধের ফলাফল
হযরত আলী রাঃ ও মুয়াবিয়া রাঃ এর মধ্যে সংঘটিত সিফফিনের যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, এই যুদ্ধের ফলাফল কি হয়েছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
হযরত আলী রাঃ ও মুয়াবী রাঃ এর গৃহযুদ্ধের কারণে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত নষ্ট হয়ে যায়। এতে মুসলমানগণ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হতে থাকে। যার কারণে হাশেমী ও উমাইয়া এই গোত্রের মধ্যে যে সম্প্রীতি গড়ে উঠেছিল, তা হযরত আলী রাঃ ও মুয়াবী রাঃ এর গৃহযুদ্ধের কারণে তাদের মাঝে দ্বন্দ্ব আবার শুরু হয়ে যায়। তাছাড়া আলী রাঃ এর ইন্তেকালের পরে মুয়াবিয়া ক্ষমতা দখল করে নিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বায়তুল মাল উমায়াদের ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করেছিল। এছাড়াও উমায়ারা সকল ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে পরিচিত লাভ করে।
এই যুদ্ধের ফলে দুম্মাতুল জন্দের বিচার মীমাংসা করার কথা ছিল সেখানে পরবর্তীতে আলী রাঃ এর পক্ষ থেকে একদল চলে যায়। এতে করে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে যায়, এই যুদ্ধের কারণেই আলী রাঃ মুয়াবিয়া এর মধ্যে সাম্রাজ্যের একটি পরাজয় সৃষ্টি হয়ে যায়। পরবর্তীতে আলী রাঃ নিহত হলে খেলাফতের পরিসমাপ্তি ঘটে যায় এবং উমাইয়া খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা শুরু হয়। যারা গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে রাজতন্ত্র শুরু হয়েছিল। এই গৃহযুদ্ধের কারণেই যে মীমাংসার কথা ছিল তা মীমাংসা না করার কারণে একদল লোক তারা ইসলামী থেকে খারিজ হয়ে চলে যায়। যারা খারিজি নামে আত্মপ্রকাশ করেছিল।
এই গৃহযুদ্ধের কারণেই কারবালার নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটনা ঘটেছিল। যা উমাইয়া রাজতন্ত্রের জন্য বীজ বপন করা হয়। তাছাড়াও হযরত আলী এবং মুয়াবিয়ার দ্বন্দ্বের কারণে খেলাফতের অবসান হয়েছিল। মজলিসের সূরার বিলুপ্তি ঘটে। ইসলামী আইনের উৎস সঠিকভাবে পালন করা হয় না। তাছাড়া আলী রাঃ এই যুদ্ধে পরাজয়ের কারণে মুয়াবিয়া তার শক্তিশালী বাহিনীর গঠন করে তোলেন এবং পরবর্তীতে উমাইয়া খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। খিলাফতের অবসান ঘটে পরবর্তীতে মুয়াবিয়া উমাইয়া খেলাফত প্রতিষ্ঠা করেছিল যা রাজতন্ত্র হিসাবে পরিচিত লাভ করে।
হযরত আলী ও আয়েশার যুদ্ধ
ইসলামের ইতিহাসে হযরত আলী ও আয়েশার যুদ্ধ আসলে এটা একটি যুদ্ধ নয় ভুল বোঝাবুঝির কারণে একটি সমস্যা দেখা দেয়। পরবর্তীতে আলী রাঃ এর সমস্যার সমাধান করেন। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
মূলত তালহা, জুবায়ের হযরত আলী রাঃ এর বিরোধিতা করেছিল। একটি বিষয় নিয়ে সেটা হল ওসমান রাঃ হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেছিল। কিন্তু হযরত আলী রাঃ দ্রুত বিচার করার মতো পরিবেশ না থাকার কারণে করতে পারেন না। এতে তালহা, জুবায়ের খলিফার বিরোধিতা করেছিল এবং অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিল। তবে তালহা, জুবায়ের, আয়েশা রাঃ কে এমন ভাবে বুঝিয়েছিলেন যার কারণে তিনিও খলিফার বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে তিনিও ওসমান রাঃ হত্যার বিচারের জন্য দাবি করেন। এই সুযোগে মুয়াবিয়ার রাঃ হত্যার বিচার দাবি করেন।
পরবর্তীতে ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে আয়েশা রাঃ তালহা, জুবায়ের বসরা দখল করেছিল এবং সেখানে আয়েশা রাঃ ভাষণ দিয়েছিলেন, যা জনগণ মুগ্ধ ভাবে শুনছিলেন। আলী রাঃ এই ঘটনার অবসানের জন্য কুফার শাসনকর্তাকে সাথে নিয়ে বসরার দিকে যাত্রা করেতে চেয়েছিলেন। তবে কুফার শাসনকর্তা খলিফাকে সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানায়, এরপরে খলিফা তাকে পদচ্যুত করে দেয়। যার কারণে আলী রাঃ ২০ হাজার সৈন্য ও আরো ৯ হাজার সৈন্য যোগ দিয়েছিল, এরপরে তিনি শান্তিপূর্ণ আলোচনার জন্য প্রস্তাব করেন। এতে তালহা জুবায়ের এবং আয়েশা রাঃ সম্মতি দিয়েছিলেন।
কিন্তু গুপ্ত ঘাতক একটি দল আয়েশা রাঃ কে অতর্কিতভাবে আক্রমণ করেন। এতে বহু মুসলিম আহত হয়, খবর পেয়ে খলিফা এবং আয়েশা রাঃ আশ্চর্য হয়ে গেলেন। হযরত আয়েশা রাঃ উষ্ট্রের পিঠের চরেই তিনি যুদ্ধ অবতীর্ণ হয়েছিল যার কারণেই যুদ্ধকে উষ্ট্রের যুদ্ধ বলা হয়। পরবর্তীতে ঘাতক বাহিনী তালহা, জুবায়েরকে নিহত করেছিল। পরবর্তীতে আলী রাঃ যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করেছিল এবং বিবি আয়েশা রাঃ ৪০ জন মহিলা সাহাবী সহ মদিনায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এতে আলী রাঃ যারা নিহত হয়েছিল তাদের দাফনের ব্যবস্থা করলেন এবং যারা আহত হয়েছিলেন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল।
হযরত আলী রাঃ এর মৃত্যু
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী রাঃ এর মৃত্যু সম্পর্কে হয়তো অনেকে জানেন না। তাই হযরত আলী রাঃ এর ইন্তেকাল কিভাবে হয়েছে এ সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, তাঁর শাহাদত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ইসলামের ছায়াতল থেকে একদল বিচ্ছিন্ন বাহিনী চলে যায়, যাদেরকে খারিজি বলা হয়ে থাকে। যারা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছিল। তারা হযরত আলী রাঃ মুয়াবিয়া ও আমর ইবনে আস এদেরকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হত্যা করার চিন্তা ভাবনা করেছিল। যখন তারা মসজিদে নামাজ পড়বে, এই সময় তাদেরকে হত্যা করবে এরকম পরিকল্পনা করেছিল। পরবর্তীতে খলিফা নামাজ পড়তে যায় কিন্তু আমর ওই দিনে নামাজ পড়তে আসে নাই। তাছাড়া মুয়াবিয়া সামান্য আঘাত হলেও সে বেঁচে যায় কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে হযরত আলী রাঃ এক খারিজিরা ছুরির আঘাতে ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে শাহাদাত বরণ করেছিল।
হযরত আলী রাঃ এর কতজন স্ত্রী ছিলেন
অনেকে জানতে চায় যে হযরত আলী রাঃ এর কতজন স্ত্রী ছিলেন? আসলে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা নেই। তবুও ধারণা অনুযায়ী তার কতজন স্ত্রীর সে সম্পর্কে সম্পর্কে চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
হযরত আলী রাঃ সর্বপ্রথম ফাতেমা রাঃ কে বিবাহ করেছেন এবং তিনি কখনো ভাবে নয় যে পরবর্তীতে তিনি আরো বিবাহ করবেন কিন্তু ফাতেমা রাঃ এর ইন্তেকালের পরে আরো বিবাহ করেছিলেন। তার মধ্যে যেমন উমামা বিনতে আবি আল আস, আসমা বিনতে ওমাইস, লায়লা বিনতে মাসউদ, উম্মুল বানীন, উম সাইদ, খাওলা বিনতে জাফর, আল সাহবা বিনতে রাবিয়াহ। মূলত তিনি হযরত ফাতেমা রাঃ ইন্তেকালের পরেই এই বিবাহ করেছিলেন। তবে সবার সম্মতি ক্রমেই তিনি বিবাহ করেছিলেন। কেননা ইসলামে এই সময়ে একাধিক বিবাহ করা জায়েজ ছিল।
হযরত আলী রাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী রাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, তিনি খলিফা থাকাকালীন যে কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন এবং তার জীবন বৃত্তান্ত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
হযরত আলী রাঃ কুরাইশ বংশের জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি রাসূল সাঃ এর চাচাতো ভাই। তিনি ৬০০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। রাসূল সঃ তাকে অনেক স্নেহ এবং ভালোবাসতেন। তাকে সন্তানের মত লালন-পালন করেছিলেন এবং তার দায়িত্ব সকল কিছু তিনি গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি অল্প বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাছাড়াও রাসূল সাঃ আলী রাঃ কে পছন্দ করার কারণে তার সাথে ফাতেমা রাঃ কে বিবাহ দিয়েছিল। তাছাড়াও হযরত আলী রাঃ ছিলেন একজন বীরপুরুষ এবং অনেক সাহসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তি। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।
বদর যুদ্ধ থেকে শুরু করে মক্কা বিজয় পর্যন্ত তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাছাড়া তিনি ইসলামের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি তরবারি চালানোর ক্ষেত্রে অনেক পারদর্শী ছিলেন, যার কারণে তাকে আসাদুল্লাহ উপাধি দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাছাড়া ও নিযুক্ত হওয়ার পরে তিনি খেলাফতের নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন কিন্তু পরবর্তীতে মুয়াবিয়ার রাঃ এর সাথে সিফফিনের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে যান। এই যুদ্ধের ফলে পরবর্তীতে মুয়াবিয়ার রাঃ একটি প্রদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন।
মুয়াবিয়া রাঃ এর পরিচয়
হযরত মুয়াবিয়া রাঃ ইসলামের একজন বিশিষ্ট সাহাবী ছিলেন। তাই মুয়াবিয়া রাঃ এর পরিচয় সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত, তা না হলে তার সম্পর্কে আমাদের ধারণা ভুল হতে পারে। চলুন, হযরত মুয়াবিয়ার রাঃ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
হযরত মুয়াবিয়ার রাঃ ইসলামের ইতিহাসে অনেক অবদান রয়েছে। রাসূল সাঃ তাকে অনেক পছন্দ করতেন এবং অনেক ভালবাসতেন। হযরত মুয়াবিয়ার রাঃ ৬০৮ জন্ম হয়। তিনি মক্কা বিজয়ের সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। তাছাড়া তিনি অনেক মেধাবী এবং বুদ্ধিমত্তি ছিল ও বিভিন্ন যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন। রাসুল সাঃ এর কাছে তিনি নির্ভরযোগ্য একজন ব্যক্তি ছিলেন। বিশেষ করে তাকে দিয়ে ওহী লেখানোর দায়িত্ব দিয়েছিল। কেননা সে তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী ছিল যার কারণে তাকে দিয়ে ওহী লেকানো হতো। এছাড়াও রাসূল সাঃ এর থেকে ১৬৩ হাদিস বর্ণনা করেছিলেন।
উপসংহারঃ হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্বের কারন এবং সিফফিনের যুদ্ধ সম্পর্কে জানুন
পরিশেষে বলা যায় যে হযরত আলী রাঃ মুয়াবিয়ার রাঃ এর মধ্যে যে সিফফিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সেটা ইসলামের ইতিহাসে একটি অন্যতম ঘটনা। যেখান থেকে আমাদের অনেক শিক্ষা শিক্ষনীয় বিষয় আছে। কেননা এখান থেকে মুসলমান এর মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। যেখান থেকে মুসলমানের বিরোধিতা শুরু হয়। তাছাড়া এখানে ভুল বোঝাবুঝির কারণে ইসলামিক গণতন্ত্র শেষ হয়ে রাজতন্ত্র শুরু হয়েছিল। তাই হযরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্বের কারন সমূহ ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পোস্টটি ভাল লাগলে আপনার বন্ধু বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url