গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে নামাজ পড়া যাবে কি সঠিক মাসআলা জানুন
অনেক মুসলিম নারী জানতে চায় যে, গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে নামাজ পড়া যাবে
কি? এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই প্রত্যেকটা মুসলিম নারীর জানা
প্রয়োজন। চলুন, গর্ভাবস্থায় এই ধরনের সমস্যার সমাধান সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
গর্ভবতী নারীদের সাধারণত এই সময়ে শরীরের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হয়। তার মধ্যে
অনেক গর্ভবতী মায়ের এই সময়ে সাদা স্রাব হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব
হলে নামাজ পড়া যাবে কি? সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
পোস্টসূচিপত্রঃগর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে নামাজ পড়া যাবে কি সঠিক মাসআলা জানুন
গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে নামাজ পড়া যাবে কি
অনেকে জানতে চায় যে গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে নামাজ পড়া যাবে কি? এ বিষয়টি
অত্যন্ত জরুরী বিষয়। কেননা প্রত্যেকটা মুসলিম নারীদের জানার প্রয়োজন। চলুন, এই
বিষয়ে মাসআলা কি হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের সাধারণত এই ধরনের তরল পদার্থ বের হতে পারে। তবে একটা বিষয়
খেয়াল রাখতে হবে যে কতটুকু পরিমাণ বের হচ্ছে। যদি অতিরিক্ত পরিমাণ বের হয়
সেক্ষেত্রে অবশ্যই ওযু করতে হবে। তাছাড়া আপনি পবিত্রতা হতে পারবেন না। কেননা এই
ধরনের তরল পদার্থ বের হলে নামাজ হবে না। এক্ষেত্রে নতুন করে অজু করতে হবে এবং
কাপড়টা পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু যদি এই ধরনের সমস্যা অনবরত হয়, যেটা একপ্রকার
রোগ বলা চলে, সেক্ষেত্রে নামাজ পড়ার পূর্বে কাপড়টা পরিবর্তন করে পুনরায় ওজু
করে আপনি নামাজ পড়বেন।
আপনার যখন এই ধরনের সমস্যা হবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতিটা নামাজের ক্ষেত্রে অজু
করে এবং কাপড় পরিবর্তন করে নামাজ পড়তে হবে। কেননা এই অবস্থায় এক ওযু দিয়ে
দ্বিতীয়বার নামাজ পড়তে পারবেন না। কেননা আপনার এটা একটা সমস্যা যা অপবিত্রতা
হয়ে যাবে, আর অপবিত্রতা অবস্থায় কখনো নামাজ হবে না। যদি গর্ভাবস্থায় এই ধরনের
সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই অজু করে নিতে হবে। অনেকের
আবার নামাজের সময় নাও হতে পারে, সেক্ষেত্রে আপনি ওযু করে নামাজ পড়ে নিতে পারেন।
যদি দেখেন অল্প পরিমাণ হয়েছে, তাহলে ওযু করে নামাজ পড়তে হবে।
মূলত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে পায়খানা ও প্রসাবের রাস্তা দিয়ে যদি কোন
কিছু বের হয়, সেক্ষেত্রে ওজু করতে হবে। তাছাড়া পবিত্রতা অর্জন করতে পারবেন না
এবং তার নামাজও হবে না। কেননা আল্লাহতালাকে ভয় করতে হবে, এজন্য অবশ্যই আপনার
পবিত্রতা অর্জনের প্রয়োজন রয়েছে। অপবিত্র অবস্থায় কখনোই নামাজ পড়া হবেনা এবং
আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। যদি সে হাজার বার নামাজ পড়েন, তবুও নামাজ হবে না। এটা
এক ধরনের কুফরি হয়ে যাবে, যা আল্লাহতালা পছন্দ করেন না। গর্ভাবস্থায় যদি এই
ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই সতর্কতার সাথে নামাজ পড়বেন।
সাদা স্রাব হলে কি কুরআন পড়া যাবে
নারীদের অনেক সময় সাদা স্রাব হয়ে থাকে, তাই সাদা স্রাব হলে কি কুরআন পড়া যাবে?
এ সম্পর্কে জানা খুবই প্রয়োজন। কেননা ইসলাম এ সকল বিষয়ে সমস্যা সমাধান
দিয়েছেন। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
আপনার যদি সাদা স্রাব হয় সেক্ষেত্রে দেখতে হবে কতটুকু হয়েছে, যদি অল্প পরিমাণ
হয় এবং দুর্গন্ধ না হয়, তাহলে কোরআন শরীফ পড়া যাবে। কেননা এ বিষয়ে বিভিন্ন
হাদিস রয়েছে বা বিভিন্ন তাফসীর কারক বলেছেন, এ অবস্থায় কোরআন শরীফ পড়া যাবে।
তবে অবশ্যই অজু করতে হবে, যদি অজু না করেন তাহলে অপবিত্রতা থেকে যাবে এবং এতে
কোরআন শরীফ পড়া জায়েজ হবে না। তবে এ বিষয়ে অনেক ওলামায়ে কেরামের মতামত
রয়েছে, কিন্তু যদি অনবরত হতে থাকে তাহলে সে রোগী হিসাবে তার জন্য মাসালা হবে।
এতে কোরআন শরীফ পড়া বা স্পর্শ করা যাবে।
সাদা স্রাব হলে কি ওযু ভাঙ্গে
অনেকে জানতে চায় যে, সাদা স্রাব হলে কি ওযু ভাঙ্গে এ বিষয়ে সকল ওলামায়ে একমত।
অবশ্যই আপনার ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে, পুনরায় ওযু করে নিতে হবে। চলুন, এ বিষয়ে জেনে
নেওয়া যাক।
যেহেতু এটি একটি নাপাক যার কারণে আপনার ওযু ভেঙ্গে যাবে। তবে বিষয়টা যদি
অতিরিক্ত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা থাকতে হবে। অপবিত্র হওয়ার জন্য
যতটুকু প্রয়োজন তার চেয়ে যদি খুবই কম হয়ে থাকে, তাহলে ফরজ নামাজ আদায় করা
যাবে। তবুও শরীয়তের পরিভাষা এটাকে অসুস্থ মানুষের বিধান অনুযায়ী বলা হয়ে থাকে।
কেননা সে একজন রোগী আর রোগীর জন্য হাদিস জায়েজ রয়েছে। তবে প্রত্যেক নামাজে সে
অজু করবে এবং পরিষ্কার করে নিতে হবে। তাছাড়া আপনি অন্যান্য কাজগুলো করতে পারবেন,
এতে কোন সমস্যা নেই। তবে নামাজের সময় নতুন করে ওযু করতে হবে।
সাদা স্রাব হলে কি গোসল ফরজ হয়
অধিকাংশ নারী জানতে চায় যে, সাদা স্রাব হলে কি গোসল ফরজ হয়? আসলে ইসলাম কারোর
উপরে কখনোই জুলুম করেন না। তাই এই বিষয়ে অবশ্যই একটি সমাধান রয়েছে। চলুন, এ
সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
যেহেতু প্রায় নারীর এই ধরনের তরল পদার্থ বের হয়ে থাকে, অনেকের পিরিয়ডের সময়
হয়ে থাকে আবার অনেক গর্ভবতী মহিলাদের প্রচুর পরিমাণে এই ধরনের তরল পদার্থ বের
হতে থাকে। সেই ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিকোণে যেহেতু সবারই নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক।
তাই পবিত্রতা অর্জন করতে হবে, যেহেতু এটা একটি নারীদের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া,
যেটা এক ধরনের যতটা দেখতে স্বচ্ছ হয়ে থাকে সাদা রঙের হয়। অনেকের আবার রক্ত বা
লাল রঙের হয়ে থাকে, এক্ষেত্রে অপবিত্র হয়ে যাবে। তবে যদি গর্ভাবস্থায় হয় সে
ক্ষেত্রে ওযু করে নামাজ পড়া যাবে।
যদি এই ধরনের সমস্যা হয় তবে নামাজ পড়ার পূর্বে অবশ্যই অজু করে নিতে হবে। তবে
কোথাও গোসলের কথা বলা হয় নাই, যে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের ক্ষেত্রে গোসল করে নেবে
এই ধরনের কোন কথা কোথাও লেখা নাই। হাদীস শরীফে বলা আছে যদি কোন নারীর সাদা স্রাব
হয় সে ক্ষেত্রে সে নামাজ রোজা কোরআন তেলাওয়াত সবকিছুই করতে পারবে। তবে শর্ত হলো
তাকে অজু করে নিতে হবে। তাহলে সে সকল কিছু পবিত্রতা অর্জন করতে পারবে। সাদা
স্রাবের কারণে গোসল ফরজ হবে না, এতে অজু করে নিলে হয়ে যাবে।
সাদা স্রাব হলে কি রোজা হবে
মুসলিম হিসেবে আমাদের রোজা রাখতে হয়। তাই সাদা স্রাব হলে কি রোজা হবে? এ
সম্পর্কে মুসলিম নারীদের জানা একান্ত প্রয়োজন। কেননা নারীরা অনেক রোজা রেখে
থাকে। চলুন, এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
আপনার যদি এই ধরনের তরল পদার্থ শরীর থেকে বের হয়, সে ক্ষেত্রে রোজা রাখা যাবে।
এতে কোন সমস্যা হবে না। সাধারণত অনেক নারীর নির্দিষ্ট সময়ে এই ধরনের সমস্যা হয়ে
থাকে। তবে আপনি যদি ফরজ রোজা রাখতে চান, তাহলে এই ধরনের সমস্যা হলে রোজা রাখতে
পারবেন। তবে নামাজ পড়ার পূর্বে অবশ্যই অজু করে নিতে হবে। যদি আপনার এই ধরনের
সমস্যা রোগে পরিণত হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রত্যেকবার নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে অজু
করে নিতে হবে এবং কাপড় পরিবর্তন করে নিতে হবে। তবে অনেকের পিরিয়ডের পূর্বে এই
তরল পদার্থের সাথে যদি রক্ত আসে তাহলে নামাজ হবে না।
বাদামী স্রাব হলে কি নামাজ হবে
অনেক মুসলিম নারী জানতে চায় যে, বাদামী স্রাব হলে কি নামাজ হবে? আসলে নারীদের এই
তরল পদার্থ বিভিন্ন রঙের বের হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোন ধরনের তরল পদার্থ হারাম
হবে সেটা আমাদের জানতে হবে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
অনেকের ঋতু স্রাবের পূর্বে সাধারণত বিভিন্ন রঙের তরল পদার্থ বের হতে থাকে। তবে
ঋতু স্রাবের পূর্বে সাধারণত অনেকের রক্ত বের হতে পারে, এর সাথে অনেকের ব্যথাও
থাকতে পারে। আবার অনেকের হালকা সাদা এবং লাল রঙের তরল পদার্থ বের হতে পারে। যাকে
এক কথায় বাদামী রঙের ঋতু স্রাব হলে, সেই ক্ষেত্রে নামাজ পড়া যাবে না। সাধারণত
পিরিয়ড এর মাঝখানে যদি সাদা স্রাব হয় এবং একদম সাদা হয়ে থাকে সেই ক্ষেত্রে
নামাজ পড়া যাবে, তবে অজু করে নিতে হবে। তবে অনেকের সার্বক্ষণিক এই ধরনের সমস্যা
হয়ে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে নামাজ পড়তে কোন সমস্যা নেই।
তবে যদি ঋতুস্রাব থেকে পবিত্রতা হওয়ার পরে দেখেন বাদামি বা মেটে রঙের সাদাস্রাব
দেখা যায়, তাহলে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হবে। কেননা হযরত আয়েশা রাঃ
বলেছেন, তোমরা সাদা স্রাব যদি একদম সাদা না দেখো, সেক্ষেত্রে নামাজ পড়বে না।
সাদা স্রাব দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে নামাজ পড়া যাবে। তবে বাদামি বা হলুদ রঙের যদি
অনুভূতি হয়, সে ক্ষেত্রে নামাজ পড়া যাবে না। তাই সহজ ভাবে বলা যেতে পারে তরল
পদার্থ এবং সাদা রঙের বের হয় সে ক্ষেত্রে আপনার নামাজ পড়া যাবে। তবে অজু করে
নিতে হবে, এছাড়া অন্য কোন রঙের হলেই নামাজ পড়া জায়েজ হবে না।
গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কি নাপাক
অনেক গর্ভবতী মহিলার এই সময়ে সাদাস্রাব হয়, তাই গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কি
নাপাক? এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিকোণে আপনাকে জানতে হবে। চলুন, গর্ভাবস্থায় যদি
সাদা স্রাব হয় সেক্ষেত্রে এটা অপবিত্র হবে কিনা? সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
যেহেতু ইসলামের দৃষ্টিকোণে সাদা স্রাব একটি অপবিত্রতার লক্ষণ। যদি আপনার
গর্ভাবস্থায় এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে গোসল ফরজ হবে না কিন্তু ওযু
করতে হবে। যে স্থানে আপনার অল্প পরিমাণে অপবিত্রতা লাগে সেক্ষেত্রে ধুয়ে ফেলে
পবিত্রতা অর্জন করা যাবে। আর যদি কাপড়ের লেগে যায় এবং স্পষ্ট বোঝা যায় তাহলে
কাপড় পরিবর্তন করে অজু দিয়ে নামাজ পড়তে হবে। তবে যদি এভাবে প্রতিনিয়ত হতে থাকে
এবং ওযু করার পর ফরজ নামাজ পড়ার সময় যদি হতেই থাকে, তাহলে ফরজ নামাজ আদায় করে
নিবেন।
আজকের আর্টিকেলের লেখকঃ
মাওলানা মোঃ ফরহাদ আলী
সহকারী মৌলভী, গোলকপুর সিদ্দিকিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা।
উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ।
লেখকের শেষ কথাঃ
পরিশেষে বলা যায় যে গর্ভবতী মহিলারা সাধারণত হরমোন পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের
তরল পদার্থ বের হতে থাকে। তবে ইসলামের দৃষ্টিকোণে অবশেষে পবিত্রতা অর্জন করে
নামাজ পড়বেন। পবিত্রতা অর্জন করার জন্য আপনাকে অজু করতে হবে এবং যদি এই তরল
পদার্থ কাপড়ের সাথে স্পষ্ট বোঝা যায়, তাহলে সেটা পরিবর্তন করে নামাজ পড়তে হবে।
তাই গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে নামাজ পড়া যাবে কি? এ সম্পর্কে আর্টিকেলে সঠিক
মাসালা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, আশা করি এই বিষয়ে সমাধান পেয়েছেন। পোস্টটি ভালো
লাগলে আপনার বন্ধু বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ



এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url