মোবাইলে লুডু খেলা কি হারাম জেনে নিন হাদিসের দলিল
অনেকে জানতে চায় যে, মোবাইলে লুডু খেলা কি হারাম? ইসলামের দৃষ্টিকোণে যেসব খেলার মধ্যে হার জিত রয়েছে, সেই খেলা নিষেধ করা হয়েছে। চলুন, লুডু খেলা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক।
আমরা অবসর সময়ে বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলে থাকি কিন্তু এই ধরনের খেলা ইসলাম সম্মত কিনা সেটা হয়তো অনেকে জানিনা। কেননা খেলাধুলা ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। তাই মোবাইলে লুডু খেলা কি হারাম? এ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃমোবাইলে লুডু খেলা কি হারাম জেনে নিন হাদিসের দলিল
মোবাইলে লুডু খেলা কি হারাম
বর্তমানে অনেকে মোবাইলে লুডু খেলে থাকে, তাই মোবাইলে লুডু খেলা কি হারাম? এ সম্পর্কে ইসলাম কি বলেছে সেটা আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা। চলুন, লুডু খেলা সম্পর্কে কোরআন হাদিসে কি আলোচনা করা হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
রাসূল সাঃ এর যুগে হয়তো লুডু খেলা ছিল না কিন্তু লুডু খেলার মতই বিভিন্ন ধরনের খেলা ছিল যেমন পাশা খেলা এটাও এক ধরনের লুডু খেলার মতই। যেহেতু পাশা খেলা হারাম তাহলে লুডু খেলাও হারাম এ বিষয়ে স্পষ্ট ভাবে কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। বর্তমানে আমরা অনেকেই সময় পার করার জন্য অবসর সময় মোবাইলে লুডু খেলে থাকি এরকম মনস্থির নিয়েও লুডু খেলা জায়েজ নেই। কেননা রাসূল সাঃ এই ধরনের খেলাকে নিষেধ করেছেন পাশা অথবা লুডু খেলা এক ধরনের আল্লাহর রাসূলের নাফরমানি অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। কেননা হাদিস শরীফে বর্ণনা রয়েছে যে ব্যক্তি পাশা খেলল বা লুডু খেললো সে আল্লাহ তায়ালা ও রাসুলের সাথে নাফরমানি করল। আবু দাউদ
এই পাশা অথবা লুডু খেলা সম্পর্কে আরো বিভিন্ন হাদীস শরীফে বর্ণনা এসেছে, যেমন নবী করীম সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি পাশা বা লুডু খেলে সে যেন তার হাত শুকরের মাংস রক্ত ডুবালো। মুসলিম শরীফ ২২৬০ নম্বর হাদিস। পাশা অথবা লুডু এক জাতীয় খেলা হওয়ার কারণে এই ধরনের খেলা ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে বা কোনমতেই সমর্থন করবে না। তাই অবশ্যই পাশা বা লুডু খেলা থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে সময় কাটানোর জন্য এই ধরনের খেলা থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে। তা না হলে এই খেলার জন্য আপনাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
বিভিন্ন ধরনের খেলা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তার মধ্যে মহান আল্লাহতালা কোরআনে বলেছেন হে মুমিনগণ তোমরা মত জুয়া প্রতিমা ভাগ্য নির্ধারণ খেলাধুলা এই ধরনের অপবিত্র কাজ থেকে বিরত থাকো। এগুলো সাধারণত শয়তানের কাজ এগুলো থেকে তোমরা দূরে থাকো। এটা তোমাদের কল্যাণ হবে কেননা শয়তান চাইবে তোমরা মত জুয়ার মাধ্যমে পরস্পর শত্রুতা তৈরি করার জন্য চেষ্টা করবে। তাই আল্লাহকে স্মরণ করো এবং শয়তান আল্লাহর থেকে এবং নামাজ থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখার চেষ্টা করবে। অতএব তোমরা সাবধান হয়ে যাও। সূরা মায়েদা ৯০ থেকে ৯১ আয়াত
স্ত্রীর সঙ্গে লুডু খেলা নিয়ে হাদিস
অনেকেই স্বামী স্ত্রী লুডু খেলতে পছন্দ করে কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে লুডু খেলা নিয়ে হাদিস শরীফে কি বলা হয়েছে এ সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, স্বামী স্ত্রী লুডু খেলা জায়েজ আছে কিনা সে সম্পর্কে কি বলা কি বলা হয়েছে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
স্বামী স্ত্রী এমন একটি সম্পর্ক যেটা খুবই কাছের তাদের মাঝে ভালোবাসা বা বিনোদনের জন্য অনেক কিছুই জায়েজ রয়েছে কিন্তু লুডু খেলা জায়েজ আছে কিনা সে সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। যদি লুডু খেলার মধ্যে হার জিতের বাজি থাকে সেই ক্ষেত্রে ইসলামের শরীয়ত মতে এই ধরনের খেলাধুলা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এর দ্বারা ফরজ ওয়াজিব বা নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে যদি এই ধরনের কোন সমস্যা অধিকাংশ ফকিহবিদ বলেছে বিনোদন করতে হলে বৈধ খেলাধুলার মাঝেই করা ঠিক হবে। যদিও শরীয়তের বাহিরে কোন খেলাধুলা করা যাবে না এই ধরনের কোন সুযোগ নেই। তবে স্বামী স্ত্রীর ক্ষেত্রে যেহেতু অনেক কিছু বৈধ রয়েছে।
অনলাইনে লুডু খেলা কি হারাম
অনেকেই লুডু খেলতে পছন্দ করে সে ক্ষেত্রে অনলাইনে খেলে থাকে, তাই অনলাইনে লুডু খেলা কি হারাম? অনলাইনে লুডু খেলার ক্ষেত্রেও আরো বেশি সমস্যা দেখা দিতে পারে। চলুন,অনলাইনে লুডু খেলার ক্ষেত্রে কি ধরনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
অনলাইনের মাধ্যমে যেকোনো খেলাধুলা করলে সময় নষ্ট হয়। সে ক্ষেত্রে ইসলামের কাজ গুলো করার ক্ষেত্রে অবহেলা রয়ে যায় যেমন নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে দেখা যায় টাইম বা জামাত ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটা এক ধরনের নেশার মত হয়ে যায় বা মানুষজন আসক্ত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ইসলামের কাজগুলো করতে বাধা সৃষ্টি করে তারপর সামাজিকভাবে পারিবারিক সকল কিছু দৃষ্টিকোণ থেকেই সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক মানুষ এই ধরনের অনলাইনে খেলাধুলার কারণে দেখা যায় জুয়া খেলার মতন হয়ে যায় এবং অর্থনৈতিকভাবে খেলাধুলা করে থাকে সেই ক্ষেত্রে আল্লাহতালাকে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
লুডু খেলা হারাম হাদিস
অনেকে লুডু খেলতে পছন্দ করে থাকে কিন্তু লুডু খেলা হারাম হাদিস সম্পর্কে কি বলা হয়েছে। সে সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। তাহলেই লুডু খেলা হারাম কিনা সে সম্পর্কে জানতে পারবেন। চলুন, লুডু খেলা হারাম কিনা সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
লুডু খেলার সম্পর্কে হাদিস শরীফে বলা হয়েছে নবী করীম সাঃ বলেছেন যে ব্যক্তি পাশা বা লুডু খেললো সে যেন তার হাতকে শুকুরের মাংস রক্তে ডুবালো। সহি মুসলিম শরীফ, হাদিস নাম্বার ২২৬০। যেহেতু পাশা খেলা এক ধরনের হারাম করা হয়েছে সেই ক্ষেত্রে পাশা খেলা এক ধরনের লুডু খেলার মতই। তাই এই ধরনের খেলা থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে। যে রকম অপরাধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে লুডু খেললেই লুডু খেলতে জুয়া খেলার মত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আসক্ত হয়ে গেলে দেখা যাচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে খেলা হলে সেটা জুয়ার মতন হয়ে যাবে এই ধরনের খেলা থেকে আপনাকে বিরত থাকতে হবে।
লুডু খেলার হুকুম কি
লুডু খেলার ক্ষেত্রে জায়েজ আছে কিনা সে সম্পর্কে জানতে হবে। তাই লুডু খেলার হুকুম কি? এ সম্পর্কে মুসলিম হিসেবে আমাদের জানা প্রয়োজন চলুন লুডু খেলার ক্ষেত্রে ইসলামে কি বলা হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
খেলাধুলার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে যে ক্ষেত্রে রাসূল সাঃ বলেছেন যেহেতু মুসলিম ব্যক্তি আমরা সে ক্ষেত্রে যে কোন খেলাধুলা করা ইসলামে জায়েজ নাই। কেননা যে খেলার মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকে অর্থ লেনদেনের বিষয় থাকে সেই ধরনের খেলা নিষেধ। অনেকেই তীর নিক্ষেপ খেলা খেলে থাকে ঘোড়া প্রশিক্ষণের খেলা খেলে থাকে। তবে স্ত্রীর সাথে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং কৌতুক করা এই ধরনের খেলাধুলা করা জায়েজ আছে। সুনানে তিরমিজি এই হাদিসে দেখা যাচ্ছে কিছু খেলাধুলার কথা বলা হয়েছে যেমন ঘোড়া দৌড় খেলা এই খেলার মধ্যে যদি টাকা-পয়সার বিষয় না থাকে সেক্ষেত্রে এটা নিষেধ।
তবে স্ত্রীর সঙ্গে খেলাধুলা করা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বা কৌতুক করা এই ধরনের খেলা কিন্তু জায়েজ আছে। অনেকে দৌড় প্রতিযোগিতা কুস্তি সাঁতার কাটা এ সকল খেলাধুলা অনেক সময় শরীর চর্চা এবং শারীরিক ব্যায়াম হিসাবে প্রতিযোগিতা করলে তো খেলাধুলা জায়েজ রয়েছে গ্রাম অঞ্চলের সাধারণত আমরা দেখে থাকি গোল্লাছুট খেলা বাদর প্রতিযোগিতা কিন্তু সেই খেলার ভিতর যদি অর্থনৈতিক না থাকে এই ধরনের খেলাধুলা জায়েজ রয়েছে এতে করে শরীরের চর্চা হয় এবং শরীর মজবুত হয় শক্তিশালী হয় শারীরিক ব্যায়াম হয়। এতে আপনার বিভিন্ন ধরনের ইসলামের কাজের ক্ষেত্রেও প্রস্তুতি নেওয়া যায় যেমন জেহাদের ক্ষেত্রে প্রস্তুতি নিতে হয়।
লুডু খেলা হারাম কেন
অনেকে জানতে চায় যে, লুডু খেলা হারাম কেন? ইসলামের দৃষ্টিকোণে খেলাধুলা নিষেধ করা হয়েছে কিন্তু কেন এই খেলাধুলা হারাম করা হয়েছে সে সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, লুডু খেলা হারাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
আমাদের সমাজে অনেকে অবসর সময়ে সাধারণত লুডু কেরাম দাবা এই ধরনের খেলা খেলে থাকে। এই ধরনের খেলা গুলোকে পাশা খেলার সমতুল্য বলা হয়ে থাকে। যার কারণে এই ধরনের খেলা হারাম করা হয়েছে। এই ধরনের খেলাধুলা সাধারণত ভারতীয় উপমহাদেশে উৎপত্তি হয়েছে। এই খেলা সাধারণত জুয়া সমতুল্য যার কারণে এই ধরনের খেলা গুলোকে হারাম বলা হয়ে থাকে। লুডু খেলা সম্পর্কে কোরআন হাদিসে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে ইমাম আবু হানিফা সহ অন্যান্য ইমামগণ বলেছে, যারা পাশা খেলে এই সময়ে তাদেরকে সালাম দিবেন না, কেননা তারা পাপে লিপ্ত হয়।
লুডু খেলা বা দাবা খেলা এ ধরনের খেলা সাধারণত জুয়ার মত হয়ে থাকে। এজন্য ইসলামী শরীয়তে এটা হারাম করা হয়েছে। সাধারণত এই খেলা গুলো গুটি দিয়ে খেলা হয় আর গুটি জাতীয় খেলা গুলো সাধারণত ইসলামী শরীয়তে হারাম। এই লুডু খেলাকে আলেম ওলামাগণ গবেষণা করে বলেছেন যে এই ধরনের খেলা যদিও রাসূল সাঃ এর সময়ে ছিল না। তবে পাশা খেলা ছিল যা গুটি জাতীয় খেলা, লুডুও গুটি জাতীয় খেলা তাই এই দুটি হারাম করা হয়েছে। লুডু খেলা বা এই জাতীয় খেলায় এমন ভাবে মগ্ন হয়ে থাকে যা নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকে, আল্লাহকে ভুলে ও সময় নষ্ট হয়।
লেখক এর শেষ কথাঃ
পরিশেষে বলা যায় যে যদি আপনি মোবাইলে লুডু খেলেন সে ক্ষেত্রে ইসলামের শরীয়তের হারাম হয়ে যাবে। কেননা এটা এক ধরনের জুয়া জাতীয় খেলা যা কোরআন হাদিসে নিষেধ রয়েছে। তাই লুডু খেলা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। কেননা যারা নিয়মিতভাবে লুডু খেলে একপর্যায়ে দেখা যায় অর্থের বিনিময়ে এই ধরনের খেলা খেলে থাকে। যা ইসলামিক কার্যক্রম গুলো বাধা সৃষ্টি হয়ে দাঁড়ায়। এইজন্য এই ধরনের হারাম খেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই মোবাইলে লুডু খেলা কি হারাম? এ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, আশা করি আপনি বুঝতে পারবেন। পোস্টটি ভাল লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধব নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ



এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url