পরীক্ষা ভালো রেজাল্ট করার ১০টি আমল ও দোয়া করার নিয়ম সম্পর্কে জানুন
পরীক্ষার্থীরা সাধারণত পরীক্ষা ভালো করতে চায় কিন্তু পরীক্ষা ভালো রেজাল্ট করার আমল সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানেনা। যদি সঠিকভাবে আমল করতে পারে তাহলে ভালো পরীক্ষা হবে। চলুন, পরীক্ষার ভালো করার আমল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
প্রত্যেকটা পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার পূর্বে অনেক মানসিক চিন্তায় থাকে, যার কারণে অনেকের ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা ভালো হয় না। এইজন্য ভালো করার জন্য আমল করতে হবে। তাই পরীক্ষা ভালো রেজাল্ট করার আমল সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃপরীক্ষা ভালো রেজাল্ট করার ১০টি আমল ও দোয়া করার নিয়ম সম্পর্কে জানুন
পরীক্ষা ভালো রেজাল্ট করার আমল
অনেকে জানেনা পরীক্ষা ভালো রেজাল্ট করার আমল সম্পর্কে। তাই কিভাবে আপনি আমল করলে আল্লাহ তা'আলা আপনার পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো করে দিবে সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, পরীক্ষার ভালো করার আমল করার টেকনিক সম্পর্কে জানা জেনে নেওয়া যাক।
ছাত্র জীবনের সবারই পরীক্ষা দিতে হবে তাই পরীক্ষা সবার কাছেই কঠিন মনে হয়। এতে অনেকেই পরীক্ষার টেনশন করে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয় আবার অনেকের ঘুম ঠিক মত হয় না। অনেক দুশ্চিন্তা করে থাকে, তাড়াহুড়া করে পড়াশোনা করতে থাকে এক্ষেত্রে তাদের ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয় না। এই সময় অভিভাবক চিন্তিত থাকে, পরীক্ষা আসলে পরীক্ষার্থীদের অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ইসলাম সুন্দর দিক নির্দেশনা দিয়েছে। চলুন, সেই দিক নির্দেশনাগুলো সম্পর্কে এবং আমলগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এই আমল পালন করলে আশা করি সফলতা অর্জন করবেন।
প্রথমত আপনাকে ভালো রেজাল্ট করতে হলে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে, অলসতা করা যাবে না। এজন্য ভালোভাবে পড়াশোনা এবং পরিশ্রম করতে হবে। কেননা কোরআন শরীফে বলা হয়েছে সবার জন্যই মর্যাদা রয়েছে তাদের কর্ম অনুযায়ী আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে কর্মের পূর্ণ প্রতিফলন দিবে এবং তাদের প্রতি কোন জুলুম করা হবে না। (সূরা আল আহকাফ আয়াত নাম্বার ১৯)। এছাড়াও হাদিস শরীফে বলা হয়েছে যে, রাসূল সাঃ বলেছেন যে ব্যক্তি তার আমল পিছিয়ে রাখবে তার বংশ পরিচয় তাকে মনে রাখবে না এবং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে না। সহীহ মুসলিম শরীফ হাদিস নাম্বার ৭০২৮।
দ্বিতীয়ত যেহেতু আমরা মুসলমান সেক্ষেত্রে অবশ্যই আল্লাহর উপর ভরসা করব। কেননা আল্লাহতালা সকল কিছু ক্ষমতার অধিকারী, তাই তাঁর ওপর ভরসা করে সুন্দরভাবে প্রস্তুতি নেব, তাহলে এই পরীক্ষাতে ভালো করতে পারবো। কেননা কোরআন শরীফে বলা হয়েছে যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। (সূরা তালাক আয়াত নাম্বার ৩)। আল্লাহর উপর ভরসা করা হলো যে আপনি ভরসা করেই পড়ে থাকবেন তা কিন্তু না আপনাকে অবশ্যই পড়ালেখা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আপনাকে এই পরিশ্রমের বিনিময়ে আপনার সফলতা দান করবেন।
তাছাড়া ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, কিছু লোকজন হজ করতে যখন যেত তাদের সাথে কিছু নিয়ে আসতো না, বিশেষ করে ইয়ামিনের কিছু লোকজন হজে যেত কিন্তু কোন কিছু অর্থ নিয়ে আসতো না। এক্ষেত্রে তারা আল্লাহর উপর ভরসা করে রাখত অথচ তাদের ভিক্ষা করা লাগতো। এজন্য আল্লাহতালা আয়াত নাজিল করলেন, তোমরা হজ্জের সফরে অবশ্যই সাথে কিছু পাথেয় নিয়ে যাবে। কেননা তাকওয়া হলো উত্তম পাথেয়। (আবু দাউদ হাদিস নাম্বার হাদিস নাম্বার ১৭৩০)। তাই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে এবং সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
যখন পরীক্ষা দিতে যাবেন সেক্ষেত্রে দুই রাকাত সালাতুল হাজত নামাজ পড়ে নিবেন। এই ধরনের নফল নামাজ পড়লে আল্লাহ তায়ালা খুশি হয়ে থাকেন এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে পরীক্ষা দিবেন। এতে আল্লাহতালা আপনার সফলতা দান করবেন। কেননা রাসূল সাঃ যখন কঠিন কোন সমস্যার সম্মুখীন হন, তখন সালাতুল হাজত এই নামাজটি পড়তেন। (আবু দাউদ ১৩১৯)। এই নামাজ পড়ার নিয়ম অন্যন্য নামাজের মত নির্দিষ্ট কোন সূরা পড়তে হবে না। সাধারণত নফল নামাজ পড়ার মতো দুই রাকাত নামাজ পড়ে নেবেন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবেন।
তৃতীয়ত যেকোনো কাজ তাড়াহুড়া করবেন না, এতে আপনার ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। যারা তাড়াহুড়া করে কাজ করে তাদের আসলে শয়তানি অভ্যাস থাকে। কেননা রাসূল সাঃ বলেছেন কাজের মধ্যে ধীরস্থিরতা নিয়ে আসে আল্লাহতালা পক্ষ হতে আর তাড়াহুড়া কাজ করা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। (সুনানে বায়হাকী ২০৭৬৭)। তাই কখনো তাড়াহুড়া করে কাজ করার চেষ্টা করবেন না। এ ধরনের কাজ মহান আল্লাহতালা পছন্দ করেন না। তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হবে যদি সে তাড়াহুড়া না করে তাহলে আমি তার জন্য দোয়া করব। বুখারী শরীফঃ ৬৩৪০
যে কোন কাজ করার শুরুতে আমরা অবশ্যই বিসমিল্লাহ বলবো। পরীক্ষার্থীরা যখন প্রশ্ন উত্তর করতে যাবেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিসমিল্লাহ বলার চেষ্টা করবেন। তাছাড়া সাথে দুরুদ শরীফ পড়তে পারেন এবং আল্লাহর নাম দশবার পাঠ করবেন, বিসমিল্লার ব্যাপারে মহান আল্লাহ হাদীস শরীফে বর্ণনা করেন যে আল্লাহর নাম নিয়ে যদি কোন কাজ শুরু করা যায় সে ক্ষেত্রে বরকত শুরু হয়, আর যদি বিসমিল্লাহ না বলা হয় সে ক্ষেত্রে সে কাজের কোন বরকত নাই। তাছাড়াও অবশ্যই পরীক্ষা দেওয়ার পূর্বে আল্লাহ তাআলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে এবং রাব্বি জিদনী এলমা এ দোয়া পাঠ করবেন।
অবশ্যই পরীক্ষা দেওয়ার সময় যদি কোন প্রশ্ন মনে না পড়ে সে ক্ষেত্রে কিছু দোয়া পাঠ করতে পারেন। তার মধ্যে হে আল্লাহ তুমি আমার অন্তর প্রশস্ত করে দাও যেন আমার কাজগুলো সহজ করে করতে পারি। আমি স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে পারি। (সূরা তোহা আয়াত)। মৌখিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই দোয়া পাঠ করতে পারেন। তাছাড়া পরীক্ষার সময় কখনই নকল করার চেষ্টা করবেন না। এটা আসলে শয়তানের কাজ, একজন ভালো মানুষকে কখনো এ ধরনের কাজ করতে পারে না। কেননা রাসুল সাঃ বলেছেন যে প্রতারণা করবে সে আমাদের দলে না। মুসলিম শরীফ ১০২
উপরোক্ত এই আমল গুলো করলে আপনি সহজভাবে পরীক্ষা দিতে পারবেন এবং সফলতা অর্জন করবেন। তাছাড়া পরীক্ষায় ভালো করার জন্য অবশ্যই ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে। সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে হবে, এছাড়াও হাতের লেখা সুন্দর হতে হবে। আল্লাহর দরবারে সবসময় প্রার্থনা করতে হবে, মূলত কোন চিন্তা ভাবনা করা যাবে না, দুনিয়াবী টেনশন করার যাবেনা। পরীক্ষার কেন্দ্রে সবসময় শুধুমাত্র পরীক্ষার বিষয় নিয়েই আপনাকে টেনশন করতে হবে, তাহলে আপনি সহজ ভাবে পরীক্ষার প্রশ্নগুলো উত্তর দিতে পারবেন। আর যদি সকল চিন্তা করেন সেই ক্ষেত্রে পরীক্ষা ভালো হবে না।

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url