রমজান মাসে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে জেনে বাস্তবে আমল করুন
মহান আল্লাহ তা'আলা রমজান মাসে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা করেছেন। যার ফজিলত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, চলুন রমজানের রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
মুসলমানদের প্রতিটি বছরে একবার রোজা রাখতে হয়, যে রোজা আমাদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। এর ফজিলত মহান আল্লাহতালা নিজেই দিবেন। তাই রমজান মাসে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃরমজান মাসে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে জেনে বাস্তবে আমল করুন
রমজান মাসে রোজা রাখার ফজিলত
মুসলমান হিসেবে আমাদের রমজান মাসে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কেননা এই মাসে প্রচুর পরিমাণে ফজিলত রয়েছে। তাই এর সঠিক তথ্য জানতে হবে, চলুন রোজার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
একজন মুসলমানের ইসলামের ফরজ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম রমজান মাসে রোজা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছরে একবার করে আমাদের মুসলমানদের জন্য রমজানের রোজা রাখা ফরজ। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলমানদের জন্য একটা রহমতস্বরূপ। কেননা আল্লাহ তা'আলা এই রমজান মাসের উছিলায় মাফ করে দিতে পারেন। তাছাড়া রমজানের রোজা রাখা আল্লাহকে ভয় করা যা আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত পছন্দ করে থাকেন এবং এর ফজিলত মহান আল্লাহতালা নিজের হাতে দিয়ে থাকেন। কেননা এই রোজা আল্লাহভীতি, গরিব লোকের কষ্ট বোঝার জন্যই আল্লাহ রোজা রাখার জন্য বলেছেন।
আল্লাহতালা কোরআনে বলেন এই রমজান মাসে আমি কোরআন নাযিল করেছি, যেন মানুষ হেদায়েত নিতে পারে। কেননা এই কোরআন শরীফ সত্য মিথ্যার পার্থক্যস্বরূপ হিসেবে নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই মাসটি তোমরা পালন করবে। (সূরা বাকারা ১৮৫ নাম্বার আয়াত)। রমজান মাসে রোজা রাখা আমাদের ফরজ এবাদত যা মহান আল্লাহ তাআলার রহমত পাওয়া যায় এবং গুনাহ মাফের জন্য আবেদন করা যেতে পারে। মহান আল্লাহতালা ক্ষমা করে দিতে পারেন তাছাড়াও মানুষ রমজানের রোজা যদি সঠিকভাবে পালন করতে পারে তাহলে অনেক সওয়াব পাবে।
কেননা হাদিস শরীফে বর্ণনা করেছেন হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত রাসূল সাঃ বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় রমজানের রোজা রাখল তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দিবেন। এছাড়াও যদি ঈমানের সাথে এই রমজান মাসের রাতের তারাবি নামাজ পড়লো তার আগের গুনাহ মহান আল্লাহতালা ক্ষমা করে দিবেন। তাছাড়াও যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে লাইলাতুল কদরের ইবাদত করল তারও পরবর্তী গুনা মাফ করে দিবেন। (সহি বুখারি ও মুসলিম শরীফ)। তাই স্পষ্টভাবে হাদিস দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে অন্যান্য মাসের চাইতে এই মাস গুরুত্বপূর্ণ বেশি।
আপনি যদি এই রমজান মাসে এবাদত করতে পারেন সে ক্ষেত্রে অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক গুণ সওয়াব পাবেন। এ মাসের ফরজ ইবাদতের ক্ষেত্রে ৭০ টি ফরজের এবাদতের সমান পাবেন। এজন্য রাসূল করীম সাঃ বলেছেন পবিত্র রমজান মাসে এক রাত বরকতময় ফজিলতের দিক থেকে হাজার মাসের থেকে উত্তম। এই মাসের রোজাকে আল্লাহতালা ফরজ করছে এবং রাতগুলোকে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর জন্য নফল ইবাদত রূপে সৃষ্টি করেছেন। যে ব্যক্তি রমজানের ফরজ এবাদত করার পাশাপাশি যদি সুন্নত বা নফল এবাদত করে তাহলে অন্যান্য সময়ের ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব পাওয়া যাবে।
রমজান কী
রমজান সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। তাই রমজান কী? এ সম্পর্কে জানা থাকলে আমরা রমজানের আমল সম্পর্কে বুঝতে পারব এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করলে ইহকালীন শান্তি পরকালের মুক্তি পাবো। চলুন, বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
রোজার মাস শুধুমাত্র না খেয়ে থাকার মাস নয়, মূলত এই মাসটি একজন মানুষের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাস। যেখানে আমরা গরিবের দুঃখ-কষ্ট, আল্লাহ ভীতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারবো। তাছাড়াও নিজের আত্মার শান্তি করতে পারব সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা যায়। এছাড়াও আত্মনিয়ন্ত্রণ করার প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাস সারাদিন উপাস থাকার পরে আমরা আল্লাহর এবাদত করে থাকি। এছাড়াও উপাস থাকলে বোঝা যায় ক্ষুধা এবং তৃষ্ণা কি জিনিস গরিব মানুষগুলোর দুঃখ বোঝা যাবে। এছাড়াও খারাপ কাজ মিথ্যা কথা প্রতারণা অশ্লীলতা ইত্যাদি থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে।
রমজান মাস আমাদের ধৈর্য শিক্ষা দেয়, কেননা আল্লাহর ভয়ে আমরা সারাদিন না খেয়ে থাকি এটা এক ধরনের ধৈর্য। এ রোজার মাসে আমাদের সবার ভাতৃত্ব বন্ধন সৃষ্টি হয়। কেননা একসাথে আমরা তারাবির নামাজ পড়ে থাকি, অনেকে একসাথে ইফতার করে থাকি। এ রমজান মাস আমাদের শিক্ষা দিয়ে থাকে কিভাবে মানুষকে সহযোগিতা করবে, সাহায্য করা, দান খয়রাত করা ইত্যাদি। এ রমজান মাস আমাদের শিক্ষা দিয়ে থাকে পারিবারিক আমরা সবাই মিলে মিশে একসাথে ইফতার করে থাকি, এতে বন্ধন ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।
রমজান মাসে কেন রোজা রাখা হয়
অনেকে প্রশ্ন করে থাকে যে রমজান মাসে কেন রোজা রাখা হয়? আসলে আল্লাহ তাআলার বিধান যুগে যুগে চলে আসছে। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
রমজান মাস এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এই মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা জিব্রাইলের মাধ্যমে রাসূল সাঃ এর উপর ওহী নাযিল করেছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাসূল সাঃ এর উপর বিভিন্ন আয়াত অবতীর্ণ হতো। এ সকল আয়াত আত্মস্থ করার জন্য রাসূল সাঃ খাওয়া-দাওয়া ভুলে যেতেন। এমনকি পানি খাওয়া ভুলে যেতেন, সূর্য উদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এভাবে তিনি ওহীগুলো আত্মস্থ করতেন। এভাবে তিনি একটানা ২৯ দিন এভাবে ওহী নাযিল হয়। সেখান থেকেই মহান আল্লাহ তাআলা এ রমজানের উৎপত্তি শুরু করেছিলেন। তাছাড়াও এই রমজান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রমজানের প্রস্তুতি
আমাদের প্রতিবছরের রোজা রাখতে হয় সেজন্য রমজানের প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে কোন অবহেলা করা যাবে না। তাই কিভাবে প্রস্তুতি নেব সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
রমজান মাস মুসলমানদের সাধারণত সওয়াব অর্জনের মাস এবং আল্লাহ তা'আলা এ সময়ে ইবাদত কে পছন্দ করে থাকে। যার কারণে তার পরবর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়। আপনি অবশ্যই আল্লাহর কাছে পূর্ববর্তী যদি গুনা করে থাকেন তার জন্য একনিষ্ঠভাবে তওবা করবেন। আল্লাহ তা'আলা আপনার তওবা পছন্দ হলে পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। রমজান মাস এমন একটি মাস যে মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করে থাকে। যার কারণে আপনার পরিবারের যদি কোন অশান্তি বা ঋণগ্রস্ত বা দারিদ্রতা দূর করার জন্য আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন।
আল্লাহ তাআলা আপনার দোয়া পূরণ করবেন এই মাসে যেহেতু আল্লাহতালা বেশি খুশি হয়ে থাকেন। সেজন্য এই মাসের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং এই মাসটা পাওয়া মানে আমাদের মহা আনন্দের বিষয়। তাই যেন কোন রোজা কাজা না হয়। কেননা এটা আপনার শেষ রোজা হতে পারে। জীবনে আর নাও আসতে পারে তাই সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
রমজানের রোজা কত হিজরীতে ফরজ হয়
অনেকে হয়তো জানে না যে, রমজানের রোজা কত হিজরীতে ফরজ হয়। আসলে সঠিক তথ্য যদি না জানতে পারেন তাহলে অবশ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। চলুন, কত হিজরীতে রমজানে রোজা ফরজ হয়েছে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
দ্বিতীয় হিজরী সনে মদিনায় ১০ই সাবান মুসলমানদের উপরে রোজা ফরজ হয়েছিল। রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে কুরাইশরা এই মাসে তারা সাধারণত রোজা রাখত। তাছাড়াও রমজান মাসের ১২,১৩, ১৪ তারিখে রোজা রাখত। এছাড়াও আমাদের নবী আবির্ভাবের পূর্বেও নবীদের উপর এবং তার উম্মতের জন্য রোজা ফরজ ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আল্লাহ দ্বিতীয় হিজরী সনে রমজান মাসে রোজা ফরজ করেছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে মুসলমানগন তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল পূর্ববর্তী নবীর উম্মতের মধ্যে। সূরা বাকারা ১৮৩ নাম্বার আয়াত।
রোজা কত বছর বয়সে ফরজ হয়
অনেকে জানতে চায় যে, রোজা কত বছর বয়সে ফরজ হয়? আসলে রোজা রাখার জন্য নির্দিষ্ট একটি বয়স হয়েছে সেটা আমাদের জানতে হবে। চলুন, এ বিষয় বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
মুসলমানদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রোজা রাখতে হয়। বিশেষ করে প্রত্যেকটা শিশু যখন বালেগ হবে। তখন তার উপর রোজা ফরজ হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে ৯ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ১১-১২ বছর বয়সের রোজা ফরজ করা হয়েছে। এই বয়সে যদি কোন বাচ্চা রোজা না রাখে তাহলে তাকে গুনাগার হতে হবে। এছাড়াও নির্দিষ্ট বয়স হলে অবশ্যই তার ওপর রোজা ফরজ হবে এবং তাকে রোজা রাখতে হবে। তাই ইসলামের এই বিধি বিধান আমাদের মানতে হবে। মুসলমান হিসেবে এই নির্দিষ্ট বয়সে প্রত্যেকটা শিশুর রোজা রাখতে পারে। এই ব্যবস্থা প্রত্যেক পিতা-মাতার করতে হবে এবং দায়িত্ব পালন করতে হবে।
লেখকের শেষ মন্তব্যঃ
পরিশেষে বলা যায় যে, যদি আপনি ইসলামের বিধি বিধান মানতে পারেন তাহলে আল্লাহতালা খুশি হবেন। সেজন্য অবশ্যই প্রতিবছরে মুসলমানদের রোজা রাখতে হয়। কেননা মহান আল্লাহতালা রমজান মাসে রোজা আমাদের উপর ফরজ করেছেন। কেননা মহান আল্লাহতালা রমজানের রোজাদারদের নিজের হাতে পুরস্কার প্রদান করবেন। তাই এই রোজার অনেক ফজিলত রয়েছে। তাই রমজান মাসে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে, আশা করি আপনার উপকার হবে। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ



এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url