রক্ত দেওয়ার পর কি কি সমস্যা হতে পারে ও করণীয় সম্পর্কে জানুন

রক্ত দেওয়া একটি কাজ মহৎ কাজ তবে তাই রক্ত দেওয়ার পর কি কি সমস্যা হতে পারে? আসলে রক্ত দিলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। চলুন, রক্ত দিলে আমাদের কি সমস্যা হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
আপনি যখন কাউকে রক্ত দিতে যাবেন সেক্ষেত্রে আপনার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে হবে, এতে রক্ত দেওয়ার পরে সমস্যা হবে না। তাই রক্ত দেওয়ার পর কি কি সমস্যা হতে পারে? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃরক্ত দেওয়ার পর কি কি সমস্যা হতে পারে ও করণীয় সম্পর্কে জানুন

রক্ত দেওয়ার পর কি কি সমস্যা হতে পারে

অনেকের রক্ত দেওয়ার পরে সমস্যা দেখা দেয়। তাই রক্ত দেওয়ার পর কি কি সমস্যা হতে পারে? এ সম্পর্কে যদি আপনার জানা থাকে তাহলে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

সাধারণত রক্ত দেওয়ার পরে শরীর হালকা দুর্বলতা লাগতে পারে, অনেকের মাথা ব্যথা বা মাথা ঘুরাতে পারে, বমি বমি লাগতে পারে, রক্ত দেওয়ার জন্য দেখা যাচ্ছে শরীর থেকে অনেক পানি বা তরল জাতীয় পদার্থগুলো বের হয়ে যায়। এজন্য অনেকের ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে পারে, ক্লান্তি লাগতে পারে, রক্ত দেওয়ার পরে যারা বিশ্রাম নেয় না। তাদের সাধারণত শরীর অস্থিরতা লাগতে পারে এবং শরীর দুর্বল হয়ে যাবে। এরপরে যদি আপনি ভারী কাজকর্ম করেন সেক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়েও যেতে পারেন। অনেকের লো প্রেসার হতে পারে এজন্য রক্ত দেওয়ার পর একটু বিশ্রাম না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি নিজ আত্মীয় লোকজন হয় সে ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হতে পারে যেমন রক্তগ্রহীতার শরীরের সাথে জিনগত মিল থাকার কারণে দেখা যায় রক্ত দেয়ার পরে চামড়ার নিচে, খাদ্যনালীতে বা লিভারে পানি আসতে পারে। এতে কাজকর্ম অসুবিধা হতে পারে আবার অনেকে রক্ত দেওয়ার ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বা এক মাসের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কারো রক্ত দেওয়া ঠিক হবে না। বিশেষ করে সন্তান তার মা-বাবাকে রক্ত দেওয়া অথবা ভাই বোনকে রক্ত দিলে উপরক্ত এই সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে।

রক্ত দেওয়ার কিছুক্ষণ পর দেখা যায় শরীরে এলার্জির হতে পারে অথবা বিভিন্ন ধরনের র‍্যাশ উঠতে পারে। এতে সাধারণত যাদের পূর্বে থেকে এলার্জির সমস্যা থাকে তাদের এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও অনেকের ডায়রিয়া হতে পারে আবার অনেকের জন্ডিস বা লিভারের সমস্যা হতে পারে। আবার রক্তের উপাদান সমূহ কমে যেতে পারে। এরপরে ঘনঘন যদি রক্ত দেওয়া হয় অর্থাৎ ৪ মাসের পূর্বে যদি রক্ত দেওয়া যায় সে ক্ষেত্রে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। রক্ত দেওয়ার সময় যদি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রক্ত দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে দেখা যায় ইনফেকশন হতে পারে, এতে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

আবার রক্ত দেওয়ার পর যে স্থানে ইনজেকশন দেওয়া হয়, সেই ইনজেকশন দেওয়ার চারদিকে দেখা যায় ব্যথা, ফুলে, কালো দাগ হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও অনেক স্বাস্থ্যকর্মীর অসচেতনতার কারণে রক্ত দেওয়ার পূর্বে যে টিউব বা ফিতা দিয়ে বাধা হয়। তা অত্যাধিক ভাবে টাইট করে বাধার কারণে দেখা যায় সেখানে স্কিনে লাল ফুসকুড়ি উঠতে পারে অথবা দাগ হয়ে যায়। আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন সেই ক্ষেত্রে কখনোই রক্ত দিতে যাবেন না। অসুস্থ ব্যক্তিরা ও ৪৫ কেজি কম ওজনের মানুষ কখনো রক্ত দিতে যাবেন না। আবার ১৮ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের উপরে ব্যক্তি রক্ত দেওয়া যাবে না।

কোন মানুষের মধ্যে যদি রক্ত দেওয়ার পরে উপরোক্ত এই লক্ষণ গুলো দেখা যায় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, তা না হলে মৃত্যু হতে পারে। তাই রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য সচেতনতা থাকতে হবে। কোন কিছু গোপন করা যাবে না, অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে সঠিক কথা বলেই এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই আপনাকে রক্ত দিতে হবে। তা না হলে আপনারও বিপদ হতে পারে। রক্ত দেওয়ার পরে অনেকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে, অবশ্যই এর পূর্বে যদি শরীরে পুষ্টি না থাকে সেক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই রক্ত দিতে গিয়ে যেন নিজে ক্ষতিগ্রস্ত না হন।

রক্ত দিলে শরীরের কি কি উপকার হয়

রক্ত দিলে শরীরে আমাদের অনেক উপকার করে তাই রক্ত দিলে শরীরের কি কি উপকার হয়? এ সম্পর্কে হয়তো অনেকে জানেন না। যার কারণে রক্ত দিতে চান না, চলুন উপকার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

আপনি যখন কাউকে রক্ত দিতে যাবেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার শারীরিক পরীক্ষা করা হবে এবং স্ক্রীনিং করা হবে। এতে আপনার শরীরের রক্তচাপ, তাপমাত্রা হিমোগ্লোবিন এছাড়া বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। এতে একজন চিকিৎসক আপনার সকল কিছু জেনে স্বাস্থ্য মূল্যায়ন করে তারপরে রক্ত দেওয়ার জন্য অনুমতি দিয়ে থাকে। আপনি যাকে রক্ত দিচ্ছেন তার যেন শরীরের ক্ষতি না হয় এবং অন্য কোন রোগ আক্রমণ করতে না পারে। আপনি যখন একজন মানুষকে বিনা মূল্যে রক্ত দিবেন সে ক্ষেত্রে লোকটি অনেক খুশি হবে।

রক্ত দিলে এ ক্ষেত্রে আপনার বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করা হয়ে থাকে যেমন এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি এ ধরনের রোগ যেন আক্রমণ করতে না পারে অথবা সিফিলিস এই সকল রোগগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। যাতে করে যাকে রক্ত দেবেন তার ভিতরে এই ধরনের রোগ প্রবেশ করতে না পারে। তাহলে আপনার বিনামূল্যে রক্তকে বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করা হয়ে গেল এবং আপনার শরীরের এক ধরনের বিনামূল্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়ে গেল। এই পরীক্ষাগুলো আপনি যদি করতে যেতেন তাহলে আপনার অনেক টাকা খরচ হতো।

আপনি যদি নিয়মিত কাউকে রক্ত দেন সেক্ষেত্রে আপনার হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে অনেকটাই কম হবে। আপনার কার্ডিও ভাসকুলার সিস্টেমের ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে যিনি রক্ত দিয়ে থাকেন তাদের হৃদরোগের বিরুদ্ধে অনেকটাই সংগ্রাম করে থাকে। তাছাড়া ক্যান্সার ইন্সটিটিউট থেকে গবেষণায় দেখা গেছে যে রক্তে দেওয়ার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি সম্ভাবনা কম হয়। গবেষকরা বলেছেন যে আয়রন রিডাকশন থেরাপি যার কারণে তাদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। রক্তদানকারী শরীরে আয়রন সঞ্চয় কমিয়ে দিতে পারে এতে ক্যান্সার ঝুকি কম হবে।

আপনি যদি নিয়ম অনুযায়ী রক্ত দেন সে ক্ষেত্রে আপনার শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি হবে এবং এতে আপনার রক্তস্বল্পতা দূর হবে। রক্তের কোলেস্টেরল যদি ঠিক রাকতে চান সেক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং হৃদরোগ হার্টের সমস্যা ও ঝুঁকি কমানোর জন্য রক্ত দান করা প্রয়োজন। আপনি নিয়মিত রক্ত দেওয়ার কারণে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে। রক্ত দিলে আপনার শরীরে ক্যালোরি খরচ হবে সেটা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করবে। এছাড়া আপনার শরীর সুস্থ এবং ভারসাম্য ঠিক রাখবে।

আপনার যদি রক্তে আয়রন বেশি জমা থাকার সম্ভাবনা থাকে সে ক্ষেত্রে রক্ত দিয়ে কমিয়ে নিতে পারেন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এতে শরীর ভালো থাকবে। আপনার শরীরের রক্তের গ্রুপ কি সেটা যদি না জানেন, সে ক্ষেত্রে রক্ত দিতে গেলে আপনার অবশ্যই এটা গ্রুপিং জানতে পারবেন। আপনি যদি কোন সংস্থার মাধ্যমে রক্ত দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনাকে একটি ডনার কার্ড দেবে যার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন জায়গায় নিজের বা পরিবারের জন্য হলেও সেই সংস্থা থেকে সারা জীবন রক্ত নিতে পারবেন। ধর্মীয় ক্ষেত্রে যদি কাউকে রক্ত দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে একটি পুণ্যের কাজ করা হলো।

রক্ত দেওয়ার পর করণীয়

আপনি যখন কাউকে রক্ত দিবেন সেই ক্ষেত্রে কিছু কাজ রয়েছে। এজন্য রক্ত দেয়ার পরে যে কাজগুলো করলে এতে আপনি সুস্থ থাকবেন এবং ভালো থাকবেন। চলুন, সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

রক্ত দেয়ার পরে অবশ্যই কিছুক্ষণ আপনাকে বিশ্রাম নিতে হবে, সাথে সাথেই আপনি বেরিয়ে চলে যাবেন না এবং গাড়ি চালানো ঠিক হবে না। এতে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন এবং দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রক্ত দেওয়ার কারণে শরীর থেকে আপনার অনেক পানি কমে যায়। এজন্য ৫০ ভাগ পানি রক্ত রস থাকার কারণে পানি প্রয়োজন হবে। এজন্য রক্ত দেওয়ার পর অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে অর্থাৎ যত টুকু রক্ত দিয়েছেন তার কম করে হলেও অর্ধেক পানি খেতে হবে। এজন্য আপনি অবশ্যই রক্ত দেওয়ার পরে কমপক্ষে আধা লিটার পানি খাওয়া লাগবে।

এই সময়ে আপনাকে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, শর্করা জাতীয় খাবার গুলো খেতে হবে এবং তরল জাতীয় খাবার গুলো খেতে পারেন, বিশেষ করে গ্লুকোজ, শরবত জাতীয় খাবার গুলো বেশি করে খাবেন। রক্ত দেওয়ার পর অবশ্যই আপনি ভারী পরিশ্রম করবেন না এবং শারীরিক ব্যায়াম করা যাবে না। কিছুটা শরীর দুর্বল রাখতে পারে এবং মাথা ব্যাথা করতে পারে। এইজন্য ভারী কাজ করা এবং ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তা না হলে আপনি মাথা ঘুরাবে দুর্বলতা এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। তাই ২৪ ঘন্টার মধ্যে শারীরিক শক্তির কাজগুলো না করাই ভালো।

রক্ত দেওয়ার পর সাধারণত শরীরের তরল এবং অক্সিজেনের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। যার কারণে ধূমপান এবং নেশা জাতীয় কোন খাবার খাওয়া যাবে না। এতে রক্তচাপ সমস্যা এবং শরীর দুর্বল লাগতে পারে।এজন্য রক্ত দেওয়ার আগে এবং এরপরে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ধূমপান করা যাবে না। রক্ত দেওয়ার পর কখনোই খালি পেটে থাকা ঠিক হবে না পর্যাপ্ত পরিমাণ জাতীয় খাবারের পানি খেতে হবে। এজন্য খালি পেটে থাকলে আপনার শরীর আরও দুর্বল রাখতে পারে। তাই পানি যুক্ত খাবার গুলো খাবেন তাহলে আপনার ডিহাইড্রেশন, মাথা ঘোরা এবং ক্লান্তি লাগবেনা। তাই পুষ্টিকর খাবার খেতে পারেন।

রক্ত দেওয়ার পরে অনেকে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, আর শরীর দুর্বল হওয়ার কারণে অথবা প্রেসার কমে যাওয়ার কারণে এই ধরনের সমস্যা। অবশ্যই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে এবং বিছানায় শুয়ে থাকা লাগতে পারে, খেয়াল করুন মাথার নিচে যেন কোন বালিশ না থাকে। এছাড়া মাথাটাকে একটু হার্টের লেভেল বরাবর রাখার চেষ্টা করবেন। যাতে আপনার ব্রেইনে রক্ত চলাচল করতে পারে। অনেকেই এই রক্ত দিতে ভয় পেয়ে থাকে আবার অনেকে মনে করে শরীর দুর্বল রাখতে পারে বিভিন্ন রোগব্যাধি হতে পারে আবার অনেকে মনে করে যে রক্তচাপ কমে যাবে, যার কারণে রক্ত দিতে চায় না।

রক্ত দেওয়ার পর কি খাওয়া উচিত

রক্ত দেওয়ার পর অনেক কিছুই খেতে হবে। তাই রক্ত দেওয়ার পর কি খাওয়া উচিত? সম্পর্কে জানা থাকলে আপনার খাবার গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। চলুন, যে সকল খাবারের মাধ্যমে আপনার রক্ত পূরণ হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

রক্ত দেওয়ার পর সাধারণত একজন সুস্থ মানুষ নিরাপদ থাকার জন্য অবশ্যই পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে। সাধারণত রক্ত দিলে রক্ত কণিকা এবং প্লাজমা, প্লাটিলেট দেওয়া হয়। যার কারণে শরীর থেকে আয়রন প্রোটিন, ফলেট কমে যায়। তাই রক্ত দেওয়ার পরে অবশ্যই ব্যক্তিকে কিছু পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। তাছাড়া সে অপুষ্টিতে ভূগতে থাকবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। এজন্য অবশ্যই আয়রন সমৃদ্ধ খাবারগুলো খেতে হবে। এতে আপনার রক্তকণিকা বৃদ্ধি পাবে যেমন ডাল, কচু শাক, মিষ্টি কুমড়া শাকসবজি এছাড়াও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলো খেতে হবে।

রক্ত দিলে সাধারণত শরীর থেকে পুষ্টি প্রোটিনের ঘাটতি হতে পারে, সেজন্য প্রাণীর উৎস খাবার গুলো খেতে হবে যেমন গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগির মাংস, খেজুর, কিসমিস, ড্রাগন ফল, আপেল ইত্যাদি ধরনের খাবার গুলো খেতে পারেন। রক্ত দেওয়ার পর তরল খাবারগুলো খেতে হবে, বিশেষ করে পানি, ডাবের পানি, শরবত, লেবুর শরবত ইত্যাদি খেতে পারেন। ভিটামিন সি ও জিংক জাতীয় খাবারগুলো খাওয়া যেতে পারে যেমন আমলকি, পেয়ারা, টমেটো, মাল্টা এই ধরনের খাবার গুলো খেতে পারেন এবং রক্ত দেওয়ার পর কখনো খালি পেটে থাকবেন না। অবশ্যই ধূমপান করা যাবে না।

রক্ত দেওয়ার আগে করণীয়

রক্ত দেওয়ার আগেও কিছু কাজ করতে হবে তাই রক্ত দেওয়ার আগে করণীয় সম্পর্কে জানা থাকলে আপনার অনেক উপকার হবে। চলুন, রক্ত দেওয়ার পূর্বে আপনি কি কাজগুলো করবেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

রক্ত দেওয়ার পূর্বে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় যেমন যদি আপনার বয়স ১৮ এর নিচে এবং ৬৫ এর উপরে হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে কখনোই রক্ত দেওয়া যাবে না। এতে অসুবিধা হতে পারে যদি আপনার ওজন ৪৫ কেজি নিচে হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে রক্ত দেওয়া ঠিক হবে না। এতে আপনার দুর্বলতা লাগতে পারে এবং রক্তস্বল্পতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার যদি এই সময় প্রচুর পরিমাণে জ্বর, সর্দি কাশি ঠান্ডা পেটের সমস্যা বা যেকোনো রোগের সংক্রমণ রয়েছে। এই ধরনের মানুষের কখনো রক্ত দেওয়া যাবে না। আপনার যদি যক্ষা, হাঁচি কাশি এলার্জি কিডনির সমস্যা থাকে তাহলে রক্ত দিতে যাবেন না।

যাদের সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা কখনোই রক্ত দিতে যাবেন না। আপনার যদি লো প্রেসার থাকে তাহলে আরও প্রেসার নেমে যাবে এবং আপনি অসুস্থ হয়ে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে। আবার গর্ভবতী নারী কখনোই রক্ত দিতে যাবেন না। এক্ষেত্রে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হবে এবং রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া প্রসূতি মায়েরা রক্ত দিতে যাবেন না। এ ক্ষেত্রে রক্ত সল্পতা হতে পারে এবং রক্ত দেওয়ার কমপক্ষে ৪ মাস অপেক্ষা করতে হবে। এরপরে শরীরে যদি ট্যাটু থাকে সে ক্ষেত্রে রক্ত দিতে যাবে না। গর্ভপাত হলে রক্ত দেওয়া যাবে না।

রক্ত দেওয়ার আগে কি খাওয়া উচিত

রক্ত দেওয়ার পূর্বে যে খাবারগুলো খেলে উপকার হবে তাই রক্ত দেওয়ার আগে কি খাওয়া উচিত? চলুন কোন খাবারগুলো খেলে আপনার রক্ত দেওয়া সুবিধা হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

যে খাবার গুলোতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে সেই খাবারগুলো খেতে পারেন। কারণ এই সময় রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। সেজন্য আপনি পালং শাক, কলমি শাক যেকোনো সবুজ শাকসবজি খেতে পারেন। তাহলে রক্তের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। এছাড়াও ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গুলো খেতে পারেন। শোষণের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। সাধারণত কমলা লেবু এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়া যেতে পারে। এতে আপনার রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকবে, দুর্বলতা লাগবে না। আবার ফলের রস খেতে পারেন কিন্তু মিষ্টি জাতীয় খাবার গুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কখনোই খালি পেটে রক্ত দিতে যাবেন না।

১ ব্যাগ রক্ত দিতে কত সময় লাগে

অনেকে জানতে চায় যে, ১ ব্যাগ রক্ত দিতে কত সময় লাগে? তাই জানা প্রয়োজন, রক্ত দেওয়ার উপর নির্ভর করবে। কেননা রক্ত দেওয়ার বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি আছে সাধারণত যে রক্ত দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিটের মত সময় লাগতে পারে। তবে যদি ডেঙ্গু রোগীদের রক্ত দিতে হয় সেক্ষেত্রের রক্তের প্লাজমা বা প্লাটিনেট এ ধরনের রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে ১ থেকে ২ ঘন্টার মত সময় লাগতে পারে। এছাড়া যদি আপনি লাল রক্ত কোষ দিতে চান সে ক্ষেত্রে ৩০ মিনিটের সময় নিতে পারে। তাছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের রক্তে নেওয়ার পদ্ধতি রয়েছে সেক্ষেত্রে কম বেশি হতে পারে।

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণ

রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে গেলে ক্ষতি হতে পারে তাই রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। তাহলে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারবেন। চলুন, রক্তের হিমোগ্লোবিন কেন কমে যায় সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

আপনার শরীরে যদি ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ কম হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিন কমে যাবে। এছাড়াও শরীরে হিমোগ্লোবিন কমার বিভিন্ন ধরনের কারণ থাকতে পারে। গর্ভবতীদের যদি পুষ্টি না থাকে তাহলে হিমোগ্লোবিন কমে যাবে। এছাড়াও যদি রক্তক্ষরণ হয়, অক্সিজেনের সমস্যা দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রেও হিমোগ্লোবিন কমে যায় এবং মানুষ অজ্ঞানও হতে পারে। তাছাড়াও হিমোগ্লোবিন কমে গেলে আয়রনের ঘাটতির কারণেই মানুষের শরীর হলুদের মত দেখা যায়। তাছাড়াও শরীরের প্রোটিন না থাকলে শরীর হিমোগ্লোবিন কমে যায়। এছাড়াও ক্যান্সার, থ্যালাসেমিয়া, সিরোসিস, পেটের আলসার ইত্যাদি।

শেষ কথাঃ রক্ত দেওয়ার পর কি কি সমস্যা হতে পারে ও করণীয় সম্পর্কে জানুন

পরিশেষে বলা যায় যে যদি আপনি রক্ত দেন সে ক্ষেত্রে আপনার রক্ত দেওয়ার কারণে শরীরে অনেক উপকার হবে। তবে রক্ত দেওয়ার পরে যদি আপনি বড় ধরনের কোনো ভারী কাজকর্ম করে থাকেন সেক্ষেত্রে কিন্তু সমস্যা হবে। তাছাড়া রক্ত দেওয়ার পর অবশ্যই আপনার কিছু তরল খাবার ও ফলমূল খেতে হবে। যদি আপনি এই সকল খাবারগুলো না খান তাহলে শরীর সমস্যা হবে। তাই রক্ত দেওয়ার পর কি কি সমস্যা হতে পারে? এ সম্পর্কে আর্টিকেলের উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। যদি আপনার উপকারে আসে তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার বন্ধু বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url