আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আব্বাসীয় খলিফাদের বিভিন্ন কারণে পতন হয়। তাই আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। চলুন, আব্বাসীয় খলিফাদের কিভাবে পতন হয়েছিল এবং ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার পর যে কয়েকজন শাসক শাসন কার্য পরিচালনা করেছিল। তার মধ্যে অধিকাংশই অযোগ্য এবং নৈতিকতা হীন শাসক ছিল। তাই আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃআব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ ও ফলাফল

আব্বাসীয় কিছু খলিফার কারণে পতন হয়। তাই আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে জানলে আব্বাসীয়দের পতন সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন। চলুন, কিভাবে এই বংশের পতন হয়েছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

আব্বাসীয় বংশের পতনের সম্পর্কে ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন বলেন, ইতিহাসে প্রত্যেকটা রাজতন্ত্র রাষ্ট্র সাধারণত ১০০ বছর টিকে থাকে। এজন্য তার ধারাবাহিকতায় আব্বাসীয় খিলাফত একশো বছরের মতো প্রতিষ্ঠিত ছিল। পরবর্তীতে তাদের পতন শুরু হয়। আব্বাসীয় খেলাফতের খলিফাগণ উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে পারেনি। যার কারণে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ষড়যন্ত্র, হত্যাকান্ড ইত্যাদিতে তারা লিপ্ত ছিল। এজন্য এই বংশ পতন হতে বাধ্য হয়েছে এবং এদের সম্রাজ্য গুলো বেশি দিন স্থায়িত্ব হয়নি। মূলত খলিফাদের অযোগ্যতার কারণেই পতন হয়েছিল।

আব্বাসীয় বংশের সবচাইতে বড় ধরনের ভুল ছিল শাসন কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে শাসকদের যোগ্যতা ক্ষেত্রে অযোগ্য ব্যক্তিদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এই আব্বাসীয় খেলাফতের ৩৭ জন খলিফার মধ্যে আল মনসুর, হারুনার রশিদ, খলিফা মামুন ব্যতীত সকল শাসক ছিল অযোগ্য দুর্বল, শাসন কার্য প্রতিষ্ঠা করতে অবহেলা করেছে, এছাড়াও বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার কারণে এত বড় সম্রাজ্য সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে নাই। এছাড়াও এ সকল খলিফাগণ অনেক দুর্বল ছিল যার কারণে তাদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেক নেতা এবং দল গঠন হয়েছিল। যার কারণে তাদের পতন হতে শুরু হয়।

আব্বাসীয় বংশে সামরিক বিভাগের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয় নাই এবং তাদেরকে অবজ্ঞা করা হয়। যার কারণে সামরিক দক্ষতা হারিয়ে ফেলে এবং দেশকে রক্ষা করতে তারা প্রতিহত করতে পারে না এবং ব্যর্থ হয়। তাছাড়া আব্বাসীয় বংশের খলিফাদের নৈতিকতার অভাব ছিল, তারা মদ, নারী ভোগ বিলাসী ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকতো। অধিকাংশ শাসকেরই সাধারণত উপপত্নী ছিল এছাড়াও নৈতিকতার জ্ঞানের অভাব ছিল এবং রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য তেমন চিন্তাভাবনা করেনি। তাছাড়া বিভিন্ন প্রদেশের যে প্রাদেশিক শাসকরা ছিল তারা স্বার্থপর ছিল এবং নিজেদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছে।
আব্বাসীয় বংশের কিছু শাসক তারা সামন্ত প্রথা চালু করেছিল। যার কারণে তারা অনেক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে পড়ে, এতে দেখা যায় রাষ্ট্রের মধ্যে বিশৃঙ্খলা বা বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও তারা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। আব্বাসীয় খেলাফতের সময় অন আরব মুসলমান যারা রয়েছে তারা দলগত শত্রুতা এবং চরম বৈষম্যের শিকার হয়। তারা একটি দল গঠন করে। এছাড়াও শিয়া সুন্নি, মুতাজিলা, খারিজি বিভিন্ন ধরনের ধর্মের মতভেদ থাকার কারণে সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটার কারণে সমস্যা দেখা দেয় এবং আব্বাসী বংশের পতন হয়। এছাড়াও গ্রীকরা বিশৃঙ্খলা শুরু করে।

এছাড়াও উমাইয়া বংশ যখন পতন হয়ে গেল সে ক্ষেত্রে ফাতেমীয় বংশধররা আব্বাসীয়দের পক্ষে কাজ করতে থাকে। এছাড়াও আব্বাসীয়গণ ক্ষমতা আসলে তারা ফাতেমীয়দের মূল্যায়ন করে না। এছাড়াও বিভিন্নভাবে তাদেরকে দমন করেছিল, যার কারণে আব্বাসীদের পতনের ক্ষেত্রে এই ফাতেমীয়রা বিদ্রোহ শুরু করেছিল। তাছাড়া আরো বিভিন্ন দল তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছিল। যেমন মুদারীয় হিমারিও সম্প্রদায় ও তুর্কি বুয়াইয়া তারা এদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে এবং তুর্কি বাহিনীরা খলিফা কে অপসারণ ও নির্বাচন করার যোগ্যতা রেখেছিল। এছাড়া অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।

প্রত্যেক শাসক তাদের ভোগ বিলাসের জন্য রাজকোষ থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ খরচ করেছিল। এজন্য রাষ্ট্র চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলো। অনেকেই কৃষিকার্য ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় নিযুক্ত হয়। এছাড়াও তাদের অত্যাচারে শিল্প ব্যবসা বাণিজ্য সকল কিছু অচল হয়ে গিয়েছিল এবং মানুষ ক্ষুধার তাড়নায় অনেকে মারা যায়। তাছাড়া আব্বাসীয় বংশের পতনের জন্য বহিরাগত কারণ ছিল, তার মধ্যে অন্যতম হলো খ্রিস্টানদের আক্রমণ। তারা কিছু খলিফার দুর্বলতা সুযোগ নিয়ে রাজ্যের গোলযোগ সৃষ্টি করে। এছাড়াও তারা আক্রমণ করেই যাচ্ছিল, যার কারণে আব্বাসীয় খেলাফতের শক্তি কমে যায়।

তাছাড়াও বাইজান্টাইনরা আক্রমণ করেছিল, তারা আব্বাসীয় খলিফাদেরকে পছন্দ করতেন না। তারা এই খিলাফতের ধ্বংস চাচ্ছিল। তাছাড়া খলিফা হারুনের উদারতা এবং ভদ্রতার কারণে তাদেরকে দমন করেনি। যার কারণে তারা এই সুযোগটা নিয়েছিল। অবশেষে হালাকু খান বাগদাদে আক্রমণ করে এবং সর্বশেষ আবাসীয় বংশ মুস্তাসিম বিল্লাহ হালাকু খানের নিকট প্রাণভিক্ষা চেয়েছিল কিন্তু তার পরেও হালাকু খান প্রাণ ভিক্ষা দেননি বরং তিনি ৪০ দিন অবরোধ করার পরে অবশেষে হালাকু খান ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে খলিফা এবং তার পরিবার সকলকে হত্যা করেছিল। এই হালাকু খান প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছিল।

আব্বাসীয় বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক কে ছিলেন

আব্বাসীয় বংশের গৌরব উজ্জ্বল করেছিলেন যে শাসক তাই আব্বাসীয় বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক কে ছিলেন? এ সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। চলুন, আব্বাসীয় বংশের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল যে শাসক সে সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

আবাসীয় বংশের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আস-সাফফা হলেও তিনি সময়ের তারতম্যের কারণে এই বংশের খেলাফতকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি কিন্তু পরবর্তীতে খলিফা মনসুর তিনি তার মেধা পরিশ্রম অধম সাহস দূরদর্শিতা কূটনীতি ইত্যাদির বলে আব্বাসীয় বংশকে প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই জন্যই আব্বাসীয় বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক খলিফা মনসুরকে বলা হয়। তাছাড়া তিনি আব্বাসীয় বংশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন। যার কারণে ঐতিহাসিকগণ তাঁকে শ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে মনে করে থাকেন। তাই আব্বাসীয় খেলাফত শ্রেষ্ঠ করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি।

তিনি বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন তার মধ্যে বিভিন্ন নগরী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিশেষ করে বাগদাদ নগরী তিনি প্রতিষ্ঠা করে কৃতিত্বের সাথে কাজ করেছিলেন এবং রাজধানী করার জন্য উপযুক্ত করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে এই নগরী প্রতিষ্ঠা করার জন্য তার চার বছর সময় লেগেছিল এবং প্রায় ১ লক্ষ শ্রমিক কাজ করেছিল। তাছাড়াও তার এই খেলাফত দীর্ঘদিন স্থায়িত্ব লাভ করেছিল এবং তিনি তার রাজপ্রাসাদের বিভিন্ন ধরনের জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিদেরকে নিয়ে কাজ করতেন এবং সমাদর করতেন। জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর আকর্ষণ বেশি ছিল।

তিনি জ্ঞান অর্জনের জন্য বিভিন্ন তাফসীর হাদিস সংকলন করা এবং বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ধরনের বই সংগ্রহ করতেন, তা আরবি ভাষায় অনুবাদ করে সেগুলো পড়াশোনা করতেন। তাই আবুল আল মনসুরকে শ্রেষ্ঠ শাসক বলা হয়। তিনি ধর্মনিষ্ঠ মানুষ ছিলেন এছাড়াও শাসক হিসেবে তিনি ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন, তাছাড়া তিনি দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসেন এবং বিভিন্ন স্থাপত্য শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন সবকিছু মিলেই তাকে আব্বাসীয় বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক বলা হয়ে থাকে।

আব্বাসীয় বংশের শেষ খলিফা কে ছিলেন

অনেকে জানতে চায় যে, আব্বাসীয় বংশের শেষ খলিফা কে ছিলেন? আব্বাসিয়া বংশের অনেক খলিফা শাসনকার্য পরিচালনা করে তার মধ্যে শেষ খলিফা গুরত্ব রয়েছে। চলুন, আব্বাসীয় খলিফাদের মধ্যে শেষ খলিফার নাম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
আব্বাসীয় বংশের খেলাফত শুরু হলে ৩৭ জন খলিফা এই শাসন কার্য পরিচালনা করে। তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ শাসক ছিল খলিফা আল মুনসুর। এছাড়াও সর্বশেষ খলিফা ছিল আল মুস্তাসিম বিল্লাহ যিনি বাগদাদের শাসন পরিচাল করেন। তিনি প্রায় ১৬ বছর শাসন কার্য পরিচালনা করেন, পরবর্তীতে হালাকু খান এর নেতৃত্বে আব্বাসীয় খেলাফতে আক্রমণ করে পরবর্তীতে মুস্তাসিম বিল্লাহ কে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল এবং হালাকু খান গণহত্যা করেছিল। এছাড়াও প্রায় ১৬ লাখ মানুষ হত্যা করেছিল এবং এর মধ্যে মুস্তাসিম বিল্লাহ এবং তার পরিবারকে হত্যা করেছিল, এভাবেই বাগদাদের খেলাফত অবসান হয়ে যায়।

খলিফা আবুল আব্বাস কে ছিলেন

আব্বাসীয় খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আব্বাস। তাই খলিফা আবুল আব্বাস কে ছিলেন? এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন, আব্বাসীয় বংশের খেলাফত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
আব্বাসীয় খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আবুল আব্বাস। তিনি হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর চাচা আল আব্বাসের বংশধর ছিল। তিনি আব্বাসীয় বংশ প্রতিষ্ঠান করার জন্য বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেন। পরবর্তীতে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া বংশের শেষ খলিফা দ্বিতীয় মারওয়ানকে পরাজিত করে এবং হত্যা করে, তার মাথা ছিন্ন করে ফেলে যার কারণে তাকে আস-সাফফাহ বা রক্তপিপাস উপাধি দেওয়া হয়েছিল। তিনি নিষ্ঠুর চরিত্রের অধিকারী ছিল, পরবর্তীতে তিনি মৃত্যুর পূর্বে তার ভাই আবু জাফরকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। ৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

আব্বাসীয় বংশের মোট কতজন শাসক ছিলেন

অনেকে জানতে চায় যে আব্বাসীয় বংশের মোট কতজন শাসক ছিল? আসলে আবাসীয় বংশে অনেক শাসক শাসনকার্য পরিচালনা করেছে কিন্তু কিছু শাসকের অযোগ্যতার কারণে আব্বাসীয় খেলাফত এর পতন হয়েছিল। চলুন, কতজন শাসক এই শাসন কার্য পরিচালনা করেছে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

আব্বাসীয় খেলাফত প্রতিষ্ঠাতা করেছিল আবুল আব্বাস, পরবর্তীতে আব্বাসীয় খেলাফত শাসন কার্য পরিচালনা করেছেন। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আব্বাসীয় খেলাফত খিলাফত পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন খলিফা সিংহাসনে নিযুক্ত হন। কিছু শাসক ব্যতীত প্রায় সকল খলিফা ছিল অযোগ্য এবং রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। তাই দীর্ঘ সময়ের এই শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে ৩৭ জন খলিফা নিযুক্ত হয়। এই আব্বাসীয় খলিফাদের মধ্যে শেষ খলিফা ছিলেন মুস্তাসিম বিল্লাহ। এছাড়াও তারা দীর্ঘ ৫০৮ বছর এই আব্বাসীয় খেলাফত পরিচালনা করে কিন্তু পরবর্তীতে পতন ঘটে।

আব্বাসীয় বংশের পরিচয় দাও

আব্বাসীয় খেলাফত সম্পর্কে জানা আমাদের প্রয়োজন। তাই আব্বাসীয় বংশের পরিচয় দাও? সম্পর্কে অনেকেই জানতে চায়। চলুন, আব্বাসীয় বংশের বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

৭৫০ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া বংশ ধ্বংস করে আব্বাসীয় বংশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আব্বাসীয় খলিফা ক্ষমতায় এসে ধর্মীয় সামাজিক রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রেই বিপ্লব সাধন করেছিল। তাছাড়া এই রাজবংশের প্রায় ৩৭ জন খলিফা এসেছিলেন। এরা প্রায় ৫০৮ বছর শাসন কার্য পরিচালনা করে। এই আব্বাসীয় বংশের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আব্বাস আস সাফফাহ পরবর্তীতে শাসন কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবর্তন করেছিল কিন্তু আব্বাসীয় বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় আল মনসুরকে। আবাসীয় বংশ মূলত হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর চাচা আল আব্বাস এর বংশধর ছিল। যার কারণেই এই বংশের নাম দেওয়া হয় আব্বাসীয় বংশ।

ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ী আল আব্বাসের এর অনেকগুলো পুত্র ছিল। তারা পরবর্তীতে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছিল। পরবর্তীতে আব্বাসীয় বংশের আদর্শ বা মতবাদ হল তারা হযরত মুহাম্মদ বিন আলী এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল। এছাড়াও তারা হাশেমীয় বংশের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্যই নতুন মতবাদ প্রচার করেছিল এবং যার নাম দিয়েছিল আব্বাসীয় মতবাদ। তাছাড়াও ফাতেমা রাঃ এর ইন্তেকালের পরে হযরত আলী রাঃ হানাফিয়া গোত্রের এক রমনীকে বিবাহ করেন। তার গর্ভে যে পুত্র সন্তান হয়েছিল এবং পরবর্তীতে তারই বংশধর আবুল আব্বাস আস সাফফাহ এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।

আব্বাসীয় শাসনামলে চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান

ইসলামের ইতিহাসে আব্বাসীয় শাসনামলে চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান অনেক ছিল। যার কারণে তাদের এই অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন, মুসলমানরা চিকিৎসা শাস্ত্রে কিভাবে অবদান করেছেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
চিকিৎসা শাস্ত্রে একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন, তাদের মধ্যে ইবনে সিনা অন্যতম। তিনি আধুনিক চিকিৎসার বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি উজবেকিস্তান জন্মগ্রহণ করেছিল, তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রের উপরে 'আল কানুন' গ্রন্থ রচনা করেছেন। যেখানে চিকিৎসা শাস্ত্র সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সকল কিছু সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। এছাড়াও তিনি প্রায় ১৫ টি বইয়ের ভিতরে বিভিন্ন রোগের কারণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এ ছাড়াও তিনি যক্ষ্মা রোগের সংক্রমক সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন।
চিকিৎসার শাস্ত্রে আরো একজন অন্যতম ব্যক্তি তিনি হলেন আল রাজি। তিনি একজন মুসলমান চিকিৎসক ছিলেন। মানুষের কিডনি নিয়ে বা কিডনিতে পাথর হয়ে থাকে এই সম্পর্কে মৌলিক ধারণা দিয়েছেন এবং বই লিখেছেন। তাছাড়া লাশ কাটার বিষয়ে তার পুস্তকে বর্ণনা করেছেন। তার বইয়ের নাম হল 'আল জুদারী ওয়াল হাসবাহ' এই বইটি ইউরোপ আমেরিকা বিভিন্ন ভাষায় অনুপাত হয়েছে। তাছাড়া আরো একজন শ্রেষ্ঠ দার্শনিক এবং পন্ডিত ইবনে রুশদ। তাঁর একটি গ্রন্থ ছিল 'কিতাব আল কুলিয়াত ফি আল তিব্ব' এতে তিনটি মৌলিক বিষয় উল্লেখ করেছেন, রোগের বিশ্লেষণ, নিরাময় এবং প্রতিরোধ।

আজকের এই পোষ্টের লেখক,
মোঃ মাহমুদুল ইসলাম
বি,এ অনার্সঃ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
মাস্টার্সঃ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

উপসংহারঃ আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

পরিশেষে বলা যায় যে উমাইয়া খেলাফতকে ধ্বংস করে তার ওপর ভিত্তি করে আব্বাসীয় খেলাফত প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। দীর্ঘ ৫০৮ বছর এই শাসন কার্য পরিচালনা করেছিল ৩৭ জন খলিফা। তার মাঝে কিছু খলিফা ভালো ছিল। তবে অধিকাংশই খলিফা উত্তরাধিকারী মনোনীত করেছে এবং তারা অযোগ্য শাসক ছিল। এর কারণে পরবর্তীতে এই আব্বাসীয় বংশ টিকে থাকেনি। যার কারণে তাদের পতন ঘটেছিল। তাই আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে আর্টিকেলে সঠিক তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, আশা করি আপনার উপকার হবে। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু বান্ধবের নিকট শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Md. Mahmudul Islam
Md. Mahmudul Islam
আমি ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট ও সরকারি চাকরি করি। আমি অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করে ইনকাম করি, এছাড়াও ব্লগিং, SEO ও টেকনোলজি বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করি। এই কাজের উপর আমার ৩ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।