মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ কি বিস্তারিত জেনে চিকিৎসা নিন

অধিকাংশ নারীর তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে কিন্তু মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ কি? এ সম্পর্কে হয়তো অনেকে জানে না। তাই জানলে আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। চলুন, তলপেটে ব্যথার কারণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছবি
নারীদের সাধারণত তলপেটে ব্যথা বিভিন্ন কারণ থাকে, তার মধ্যে পিরিয়ডের সময়। এছাড়াও ভারী কোন কাজ করলে এই ধরনের সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে। তাই মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ কি? এ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃমেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ কি বিস্তারিত জেনে চিকিৎসা নিন

মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ কি

সাধারণত মেয়েদের বিভিন্ন কারণে তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে, তাই মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ কি? সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাহলে আপনি সঠিকভাবে চিকিৎসা নিতে পারবেন। চলুন, তলপেটে ব্যথা হলে যে সকল সমস্যা হয় সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

সাধারণত মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল থেকে শুরু করে বড় পর্যন্ত অনেকের পেট ব্যথা হয়ে থাকে, তবে সবারই হয় না। যাদের সমস্যা রয়েছে তাদেরই হয়ে থাকে, এই ব্যথা সাধারণত অনেক সময় একাই সেরে যায়। আবার অনেক সময় গুরুতর অবস্থা দেখা দিতে পারে। তাই কোন সময় গুরুতর অবস্থা হবে এবং কি করতে হবে সে সম্পর্ক জেনে নেওয়া যাক। মেয়েদের সাধারণত প্রতি মাসে পিরিয়ড এর সময় এ ধরনের ব্যথা প্রায় অনেকের হয়ে থাকে অর্থাৎ প্রায় ১০ শতাংশ নারীদের এই সমস্যা হয়ে থাকে। তাছাড়া অনেকের প্রসাবের সমস্যা থাকে, জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে, অনেকের জ্বরও সব সময় লেগে থাকে।

অনেক নারীর জরায়ুর ভিতরে বাচ্চা বড় না হয়ে দেখা যায় ডিম্বাণুর ভিতরে স্থাপিত হয়। এজন্য অনেক সময় ডিম্বাণু ফেটে যেতে পারে। এতে প্রচন্ড ব্যথা হয় এবং তলপেটে ব্যথা শুরু হওয়ার কারণে অনেক সময় রক্তক্ষরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেক নারীদের হয়ে থাকে, যার কারণে তলপেটে চাপ লাগতে পারে এবং সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায় তাহলে তলপেটে প্রচন্ড ব্যাথা হয়। এই পেটে ব্যথা মূত্রনালীতে চাপ পড়ে ইত্যাদি ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন কারণে তলপেটে পেটে ব্যথা হতে পারে, অনেকের গ্যাস্টিকের কারণেও হতে পারে।

আপনার যদি পেটের ডান পাশে তলপেটের দিকে প্রচন্ড পরিমাণ ব্যথা করে, সে ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিসাইডের সমস্যা হতে পারে। এটা মূলত আঙ্গুলের মত আকৃতি হয়ে ডানপাশে ব্যথা শুরু হয় এবং বৃহদান্তের সাথে যুক্ত হয়। আর এই ধরনের ব্যথাকে অ্যাপেন্ডিক্স বলা হয়। এটা সাধারণত নাভির চারপাশে প্রচন্ড পরিমাণ ব্যথা করে এবং সরে গিয়ে পেটের ডান পাশে তলপেটে ব্যথা করতে থাকে। এই ধরনের ব্যথা হলে শুয়ে বা বসে থাকা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। এই ব্যথা গুলো সেরে তোলার জন্য অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং অপারেশনের মাধ্যমে এই অ্যাপেন্ডিক্স কেটে ফেলতে হবে।

আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণ ব্যায়াম করেন এতে আপনার তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা করতে পারে। এজন্য অতিরিক্ত বেশি দৌড়াদৌড়ি করা যাবে না। এতে আপনার পেটের ব্যথা বাড়তে পারে। এছাড়াও অনেক সময় পানি শূন্যতা, অবসাদগ্রস্থতা ইত্যাদির কারণেও সাধারণত পেটের ব্যথা করতে পারে। এই ধরনের সমস্যা যদি প্রত্যেকবার হয়, তাহলে আপনার ব্যায়ামের নির্দিষ্টতা এবং পরিমাণমতো করতে হবে। যেখানে আপনি ব্যায়াম করবেন সেই প্রতিষ্ঠানে যদি ভারি ওজন এর যন্ত্র থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার হার্নিয়ার সমস্যা দেখা দিবে। তাই ভারী ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আমরা জানি তলপেটের দুই দিকে থাকে বৃক্ক। এখানে যদি পাথর হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডান পাশে ব্যথা করবে। তাছাড়া এই ব্যথা আস্তে আস্তে পিঠের নিচের দিকে চলে যাবে, কুচকিতেও ব্যথা করতে পারে। এই পাথর আস্তে আস্তে মুত্রনালীর দিকে যাবে এবং প্রসাবের সাথে রক্ত দেখা দিতে পারে এবং বমি বমি ভাব লাগতে পারে। এ ধরনের পাথর ছোট থেকে বড় হতে থাকে, যদি ছোট অবস্থায় চিকিৎসা নেওয়া যায়, তাহলে প্রসাবের সাথে বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাছাড়া আপনাকে অপারেশন করতে হবে। এছাড়াও কিডনির সমস্যা দেখা দিলে সাধারণত তলপেটে প্রচন্ড পরিমাণ ব্যথা হতে পারে।

মেয়েদের তলপেটে ব্যথা কমানোর উপায়

মেয়েদের তলপেটে ব্যথা কমানোর উপায় হল প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে প্রাকৃতিকগত ভাবে চিকিৎসা নিতে পারেন। এতে আপনার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকবে না এবং উপকারিতা পাবেন। চলুন সেই প্রাকৃতিক চিকিৎসা গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

আদা একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা বহুকাল থেকেই চিকিৎসা করা হয়, বিশেষ করে ব্যথা কমানোর জন্য এবং যারা বমি করেন তাদের ক্ষেত্রে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটা একটি প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এর মধ্যে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি থাকার কারণে আপনার তলপেটে ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। এছাড়াও প্রাকৃতিকগতভাবে এই ব্যথা কমানোর জন্য আদা কুচি করে খেতে পারেন এবং চিবিয়েও খেতে পারেন। এছাড়াও আদা দিয়ে রং চা এবং গরম পানির মধ্যে আদা দিয়ে খেতে পারেন, এতে ব্যথা কমে যাবে। এছাড়াও আপনি আদা এমনি খেতে পারেন।

কলা ও আপেল এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অনেক ফাইবার আছে, যা আপনার পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে এবং পেটের ব্যথা কমাতে পারে। এছাড়াও যাতে তাদের বমির সমস্যা রয়েছে এটাও সমস্যার সমাধান হবে এবং ডায়রিয়ার উপকার হিসেবে কাজ করবে। আপনার তলপেটে যদি প্রচন্ড পরিমাণ ব্যথা শুরু হয় সেক্ষেত্রে টোস্ট বিস্কুট খাওয়া যেতে পারে, এতে আপনার তল পেটের ব্যথা অনেকটা কমে যাবে। তাছাড়া আরও একটি কাজ করতে পারেন, এমন রুটি বানাবেন যেটা হালকা পুড়ে যাবে বা পোজ করে খেতে পারেন।

তলপেটে ব্যথার জন্য ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কেননা এটা সাধারণত ব্যথা ও বমির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে থাকে। যদি কোন নারীদের তলপেটে ব্যথা করে, তাহলে তারা এই পুদিনার পাতা খেতে পারেন। এতে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হবে। মূলত ব্যাথা নাশকের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। তাই যাদের তলপেটের ব্যথা হয়ে থাকে তারা প্রাকৃতিক উপায়ে চায়ের সাথে পুদিনার পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও তলপেটে ব্যথা দূর করার জন্য আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। এটা খাদ্য হজম করতে সাহায্য করবে পেটের ব্যথা দূর করবে।

আপনবার যদি তলপেটে ব্যথা হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার গুলো খাবেন না। তবে নরম জাতীয় খাদ্যগুলো খেতে হবে, এতে পেটে ব্যথা আর থাকবে না। যদি প্রচন্ড পরিমাণে তলপেটে ব্যথা করে থাকে সে ক্ষেত্রে গরম পানির ব্যাগ নিতে পারেন অথবা বোতলের মধ্যে হালকা গরম পানি নিয়ে আপনার তলপেটে সেক দিতে পারেন। এতে শান্তি পাবেন এবং ব্যথাটা অনেকটা কমে যাবে।আপনার তলপেটে ব্যথা দূর করার জন্য আর একটা পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন, এক কাপ পরিমাণে বেদানার রস নেবেন প্রতিদিন দিনে দুইবার করে খেতে পারবেন। এতে আপনার পেট ব্যথা দূর হবে।

যাদের গ্যাস্ট্রিকের জন্য ব্যথা করে তাদের ক্ষেত্রে পেট ব্যথা যদি শুরু হয় সে ক্ষেত্রে কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন এবং খালি পেটে খেয়ে নিবেন। এজন্য অল্প পরিমাণ কিসমিস পানির মধ্যে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং খালি পেটে খেয়ে নিতে হবে। এটি পেট ব্যথা, ঠান্ডা এবং এসিডিটি এর সমস্যা যদি থাকে তাহলে সেটা থেকে দূর করবে। উপরোক্ত এই সমস্যাগুলো যদি দেখা যায় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা যদি বুঝতে পারেন সে ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। এতে যদি কাজ না হয় তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে।

মেয়েদের তলপেটে ব্যথার ঔষধ

অনেকে তলপেটে ব্যথার বিভিন্ন ওষুধ খায়, তবে মেয়েদের তলপেটে ব্যথার ঔষধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে খেতে হবে। কেননা যেকোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। চলুন, তলপেটে ব্যথার ওষুধ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

আপনি যদি এ ধরনের ব্যাথার ক্ষেত্রে ওষুধ খেতে চান সে ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্যথা তীব্র ও স্থায়িত্ব ভাবে বাড়তে থাকে সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা পরামর্শ নিতে হবে। হঠাৎ এ তীব্র ব্যথা হওয়ার কারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তলপেটে ব্যথার ওষুধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই একজন রেজিস্টার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা বিভিন্ন কারণে তলপেটে ব্যাথা হতে পারে, সেজন্য আপনি একটি এলজিন ৫০ গ্রাম ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন এবং সাথে গ্যাসের ট্যাবলেট অবশ্যই খাওয়া লাগবে। তাহলে কিছুটা হলেও কমতে পারে তবে চিকিৎসকের পরামর্শে খেতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url