প্রতিদিন ঘি খেলে কি হয় জেনে নিন কতটুকু খাওয়া উচিত
ঘি খেতে অনেকেই পছন্দ করে কিন্তু প্রতিদিন ঘি খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে হয়তো অনেকে জানে না। তাই আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে ঘি কতটুকু খাওয়া প্রয়োজন। চলুন, কিভাবে ঘি খেলে আপনার শরীরের উপকার হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ঘি একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এর অভাব দূর করবে। এছাড়াও চর্বি জাতীয় খাদ্যগুলোকে ভাঙতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন ঘি খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃপ্রতিদিন ঘি খেলে কি হয় জেনে নিন কতটুকু খাওয়া উচিত
প্রতিদিন ঘি খেলে কি হয়
ঘি অনেক পুষ্টিকর একটি খাদ্য যা আমাদের শরীর অনেক উপকার করে। তাই প্রতিদিন ঘি খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে জানা উচিত, কিভাবে খেলে শরীরের উপকার মিলবে এবং কতটুকু খেতে হবে এ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ঘি আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার করে। এটা আমরা এমনি খেতে পারি অথবা বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিও খাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে গরম ভাতের সাথে ঘি খেতে পছন্দ করে থাকি। এছাড়া বিভিন্ন রান্নার ক্ষেত্রে ঘি ব্যবহার করা হয় আবার অনেকে খালি পেটে সকালবেলা ঘি খেতে পছন্দ করে। এর মধ্যে অনেক ভিটামিন রয়েছে যেমন ভিটামিন ডি, কে, ই, এ আছে। যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটা আমাদের চর্বিযুক্ত খাবারগুলোকে দ্রবণীয় করতে সাহায্য করে এবং শোষণের ক্ষেত্রে ভালো উপকার করে থাকে।
ঘি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। সে ক্ষেত্রে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস সর্দি-কাশি এগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করবে। কেননা এর মধ্যে এন্টিবাইরায়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি রয়েছে। যা আপনার বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারবে, সংক্রমণ প্রতিহত করতে পারবে। এর মধ্যে বিশেষ কিছু উপাদান রয়েছে যা শরীরের যে এসিডিটি উৎপন্ন করবে তা শোষণ করতে করতে সাহায্য করে। এছাড়াও বদ হজম এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা পেট ফাঁপা দেয়া ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করবে।
এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, ই যা আমাদের অভাব হলে সেটা পূরণ করবে। এছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এটা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিহত করতে সাহায্য করবে। এর মধ্যে যে পুষ্টি উপাদান আছে তা রক্ত সঞ্চালন দ্রুত করতে সাহায্য করবে। এজন্য আপনি সকালবেলা খালি পেটে ঘি খেতে পারেন। তাহলে সারাদিনের রক্ত সঞ্চালন দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের কোষে ফ্রি রেডিকাল হ্রাস করতে সাহায্য করবে। তাই রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকবে।
পুষ্টিবিদদের মতে আপনার নার্ভের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য ঘি উপকার করবে। এছাড়াও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ভালো কাজ করে। এর মধ্যে ওমেগা-৬ ও ৩ ফ্যাটি এসিড আছে। যা আমাদের শরীরের মস্তিষ্ককে ভালো রাখবে এবং নার্ভকে সুস্থ রাখবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই দুই ধরনের ফ্যাটি এসিড গুলো যা আমাদের এলজাইমার রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করতে ভালো ভূমিকা পালন করে থাকে। যারা ওজন নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন তারা ওজন কমানোর জন্য নিয়মিতভাবে ঘি খেতে পারেন। কেননা এটা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে, এবং অতিরিক্ত চর্বিগুলো ঝরিয়ে ফেলতে পারে।
তাই সারাদিন যত আপনি চর্বিযুক্ত খাবারগুলো খেয়েছেন সেটা দূর করার জন্য ঘি এবং উষ্ণ পানির মাঝে মিশিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। দেখবেন আপনার শরীর থেকে এই ধরনের চর্বিগুলো দূর হয়ে গেছে। এছাড়াও শরীরে যদি ক্যালোরি বেশি হয়ে থাকে সেটাও কমাতে সাহায্য করবে। শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য ঘি খেতে পারেন। কেননা এর মধ্যে অনেক পুষ্টি রয়েছে যা আপনার ক্যালোরি এবং শক্তি যোগাতে সাহায্য করে থাকে। এজন্য গরম ভাতের সাথে এক চামচ পরিমাণ ঘি খাওয়া যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে এর মাঝে ফ্যাটের পরিমাণ অনেক আছে। এজন্য ওজনের সাথে সমন্বয় করে খাওয়া যেতে পারে।
আমাদের শরীরে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং ত্বক মলিন হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের সমস্যা দূর করতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরানোর জন্য আপনি ঘি খেতে পারেন। যদি খালি পেটে প্রতিদিন খেতে পারেন, তাহলে আপনার শরীর শক্তিশালী হবে। এছাড়াও ত্বকের ভিতরে কোলাজনের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, এজন্য আপনার সৌন্দর্য ফিরে পাবেন। তাছাড়া রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য পরিমাণ হাতের উপরে নিয়ে খেতে পারেন অথবা পাশাপাশি মুখে হালকা লাগাতে পারেন। এরপরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে।
আপনার শরীরে জয়েন্ট গুলোতে অনেক সময় ব্যথা করে থাকে। এই ধরনের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করার জন্য ঘি খেতে পারেন। কেননা এর মাঝে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড থাকে যা আপনার জয়েন্টের ব্যথাগুলো দূর করতে সাহায্য করবে। সে জন্য আপনি সকালবেলা গরম পানির সাথে হালকা পরিমাণ ঘি নিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার জয়েন্টের ব্যথা এবং তৈলাক্ততা দূর করতে সাহায্য করবে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম রয়েছে, তারা এটা খেতে পারেন। কেননা এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই জন্য আপনি প্রতিদিন হালকা গরম পানির মাঝে ঘি মিশিয়ে খেতে পারেন।
আপনার শরীরে তাপমাত্রা যদি কম থাকে সে ক্ষেত্রে এটা খাওয়া যেতে পারে। এটা আপনার দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে বিশেষ করে শীতকালে আমাদের শরীর ঠান্ডা হয়ে থাকে। শরীরকে গরম করার জন্য হালকা পরিমাণ ঘি খাওয়া যেতে পারে। এতে দেখবেন আপনার শরীরের তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাবে। আপনি যদি ঘি নিয়মিত ভাবে খেতে পারেন সে ক্ষেত্রে আপনার ওমেগা থ্রি ফাটি এসিড বৃদ্ধি পাবে যা আপনার রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করবে এবং যার কারণে আপনার হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কম থাকবে।
ঘি এর মধ্যে এমন কিছু উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আপনার শরীরের ফ্যাটি এসিড এর চাহিদা বৃদ্ধি করবে। এছাড়াও আপনার ভিটামিন যেগুলো চর্বিযুক্ত রয়েছে সেগুলো দ্রবণীয় করতে সাহায্য করে। এটা আপনার মস্তিষ্কের সেলের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে শরীর থেকে খারাপ টক্সিন গুলো দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ক্যান্সারের যে কোষ গুলো বৃদ্ধি পায় সেগুলো প্রতিহত করতে সাহায্য করবে। আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা বা প্রদাহ যদি হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি এটা খেতে পারেন। কেননা এটা প্রাকৃতিক উপাদান যা বিভিন্ন ধরনের জয়েন্টে ব্যথা দূর করে।
যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য খেতে পারে না বিশেষ করে যাদের পেটের এলার্জির সমস্যা অর্থাৎ লেক্টস ইন টলেন্স ইন টলারেন্স বা দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার গুলো পেটের ভিতর গেলেই তার ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা যায়। এছাড়াও আইবিএস এর সমস্যা আছে তারা সাধারণত দুধের তৈরি খাবার গুলো খেতে পারেনা তাদের জন্য এই ঘি হতে পারে ভালো একটি খাবার। এটা আপনার বিভিন্ন ধরনের চর্বি ভাঙতে সাহায্য করবে। চিকিৎসকরা বলেন যে, যদি আপনি চর্বিযুক্ত খাবার খান তার সাথে অল্প পরিমাণ ঘি খান তাহলে এই চর্বিগুলো ভেঙ্গে দিতে সাহায্য করবে এবং শরীরে ক্ষতি করবে না।
ঘি কাদের জন্য খাওয়া উচিত নাঃ যে সকল লোক ওজন কমাতে চাচ্ছেন এবং শারীরিক গঠন নিয়ে খুবই চিন্তিত আছেন, তারা ঘি খাবেন না। কেননা অতিরিক্ত যদি ঘি খান সেক্ষেত্রে আপনার শরীরে ফ্যাট জমবে এজন্য অল্প পরিমাণ আপনি খেতে পারেন। এতে আপনার উপকার হবে এছাড়াও যাদের লিভারের সমস্যা তারাও ঘি খাওয়া ঠিক হবে না খাওয়া যাবে না।
এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url