গর্ভাবস্থায় আমাশয় হলে কি করনীয় ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানুন

অনেক গর্ভবতী মায়ের এই সময় পেটের সমস্যার হয়ে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় আমাশয় হলে কি করনীয়? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। চলুন, কিভাবে আপনি জীবন যাপন করলে আমাশয় হবে না, সে সম্পর্কে জেনে যা নেওয়া যাক।
ছবি
গর্ভবতী মায়েরা যদি অতিরিক্ত মানসিক টেনশন এবং খাবার দাবার বিশ্রাম এইগুলো বিষয়ে অসচেতন হয়। সাধারণত তাদেরই আমাশয় বা আইবিএস এর সমস্যা দেখা যায়। তাই গর্ভাবস্থায় আমাশয় হলে কি করনীয়? সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পোস্টসূচিপত্রঃগর্ভাবস্থায় আমাশয় হলে কি করনীয় ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানুন

গর্ভাবস্থায় আমাশয় হলে কি করনীয়

গর্ভবতী মায়েদের এই সময় বিভিন্ন কারণে আমাশয় হতে পারে, তাই গর্ভাবস্থায় আমাশয় হলে কি করনীয়? কেননা প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানা থাকলে আপনার সুবিধা হবে। তাই কিভাবে আপনি চিকিৎসা নিবেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

গর্ভাবস্থায় যদি আপনার আমাশয় হয়ে থাকে, সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজেকে হাইড্রেট রাখা লাগবে এবং হালকা খাবার খাওয়া যেতে পারে। এর পাশাপাশি চিকিৎসা করতে হবে, যদি এটা বেশি সমস্যা দেখা দেয় এবং অসুস্থ লাগে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। যদি ডায়রিয়া অনেকদিন থাকে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন রেজিস্টার চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কেননা এতে ডিহাইড্রেশন হলে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে। যদি মারাত্মকভাবে ডিহাইড্রেশন হয় সে ক্ষেত্রে যে লক্ষণ গুলো দেখা যেতে পারে, গাড়ো হলুদ প্রসব হবে, তৃষ্ণা লাগবে, মাথা ব্যথা করবে, মাথা ঘুরাতে থাকবে।

তাছাড়া আরো কিছু নির্দিষ্ট সমস্যা রয়েছে যেগুলো কারণেও হতে পারে যেমন গর্ভাবস্থায় ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে হতে পারে। এজন্য আপনি একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে ওষুধ খেতে পারেন। তবে অবশ্যই একজন রেজিস্টার চিকিৎসকের সাথে কথা বলবেন। আপনার যেকোনো কারণেই পাতলা পায়খানা বা আমাশয় হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখবেন যেন পানিশূন্যতা না হয় এবং এই জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে। তাছাড়াও তরল জাতীয় খাবার গুলো খাবেন। এছাড়া একজন চিকিৎসকের পরামর্শ শিরায় সালাইন নেওয়া যেতে পারে।

তবে দুধ ও দুধ দুগ্ধ জাতীয় খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়াও এই সময় শাক খাবে না। সাধারণত দেখা যায় অনেকের এমনিতেই সেরে যায় কিন্তু যাদের সমস্যা বেশি হয়, তারা অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। কখনোই ওষুধের দোকান থেকে আমাশয় হওরয়া ওষুধ কিনে খাবেন না, এতে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে। কঠিন ব্যায়ামগুলো করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য দুপুরের পরে বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে।

আমাদের শরীরে কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে যা আমাশয় এর বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। তাই প্রোবায়োটিক খাবার গুলো বেশি খাবেন। যেমন আঁশ জাতীয় খাবারগুলো খাবেন। এছাড়াও দই খেতে পারেন, কেননা এর মাঝে প্রচুর পরিমাণে ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে। আপনার শরীর থেকে তরল জাতীয় খাবার যেহেতু বের হয়ে যাচ্ছে, সেজন্য এর পরিপূরক খাবার হিসেবে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর সর্বনিম্ন ১ লিটার পানি খাবেন এবং তরল জাতীয় খাবার গুলো খেতে হবে।

গর্ভাবস্থায় আমাশয় কেন হয়

অনেক গর্ভবতীর আমাশয় হয়ে থাকে, তাই গর্ভাবস্থায় আমাশয় কেন হয়? সম্পর্কে জানা থাকলে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। চলুন, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

গর্ভবতী নারীদের সাধারণত এই সময়ে অনেকের পেটের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে আমাশয় দেখা যায় কেননা এই সময় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। যার কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু সহজেই সংক্রমণ করতে পারেন। তাছাড়া অনেকে বেশি পরিমাণে এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়ার কারণে হতে পারে। আমাশয় বিভিন্ন কারণে হতে পারে, এ সময় হরমোনের পরিবর্তন হয়। এছাড়াও পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম কমে যায়। তাছাড়া গর্ভস্থ শিশুর পুষ্টির জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য খেতে হয়। যার কারণে হজমের সমস্যা দেখা যায়। তাছাড়া আয়রন, ক্যালসিয়ামের কারণে খাদ্য হজমের কারণে আমাশয় হয়।

এছাড়াও অনেকের মানসিক চাপের কারনে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা দেখা দেয়। অনেক গর্ভবতীর সাধারণত এমনিতেই ঘন ঘন পায়খানা হয় এবং আমাশার সমস্যা দেখা যায়। বিভিন্ন জীবানু ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস এর কারণে সাধারণত গর্ভবতী মায়েদের আমাশয় দেখা যায়। কেননা বিভিন্ন ধরনের জীবানু সাধারণত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে শরীরের ভিতরে ঢুকে থাকে এবং পেটের সমস্যা দেখা দেয়, ঘন ঘন আমাশয় হয়। অনেকের ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে হতে পারে, আবার অনেকের আইবিএস রয়েছে তাদের বিভিন্ন ধরনের শাক ও দুধ, চর্বিযুক্ত খাবার, মশলা জাতীয় খাবার খাওয়ার কারণে আমাশয় হয়।

আমাশয় দূর করার ঘরোয়া উপায়

গর্ভাবস্থায় যদি পেটের সমস্যা দেখা দেয় বা আমাশয় হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে আমাশয় দূর করার ঘরোয়া উপায় চিকিৎসা করতে পারেন। এতে আপনার কিছু পরিকল্পনা এবং ডায়েট প্লান করতে হবে। চলুন, সেই প্রতিকারগুলো সম্পর্কে জেনে নেই।

এই সময় যেহেতু ডিহাইড্রেশন সমস্যা দেখা দিতে পারে সেজন্য অবশ্যই আপনি তরল জাতীয় খাবারগুলো খাবেন। এছাড়াও জুস জাতীয় খাবার, ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে। তবে কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া যাবে না। এতে আরো সমস্যা হবে। এই সময় আপনি কলা, আপেল এবং টোস্ট বিস্কুট জাতীয় খাবার গুলো খেতে পারেন। তাহলে দেখবেন আপনার শরীরের ভিতরে ভালো লাগবে না। চর্বিযুক্ত খাবার ও ভাজা খাবারগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এই সময় আপনি আদা চা খেতে পারেন। কেননা হজমের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে।

আপনি কয়েক টুকরো আদা ও চা দিয়ে সিদ্ধ করে খেতে পারেন, এর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে আরো ভালো উপকার পাবেন। সে ক্ষেত্রে শরীর হালকা গরম হবে। অতএব ৩ থেকে ৪ চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে আপনার এনজাইম ও অ্যামাইনো এসিড, আন্টিঅক্সিডেন্ট ও এন্টিবাইরাল উপাদান থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে। এছাড়া লেবু খাওয়া যেতে পারে, কেননা এর মধ্যে ভিটামিন সি থাকে যা আপনার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে এবং আমাশয় থেকে রক্ষা করবে। এছাড়াও পেটের সমস্যা দূর হবে এবং আইবিএস এর ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে থাকে।

আমাশয় রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ

আপনার যদি আমাশয় হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে পূর্বেই প্রতিরোধ করতে হবে। তাই আমাশয় রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে আপনি প্রতিকার প্রতিরোধ করতে পারবেন। চলুন, কিভাবে প্রতিকার ও প্রতিরোধ করবেন সে সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে এবং অভ্যাস গঠন করে তুলতে হবে। তাহলে আপনার এই পেটের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবেন। সাধারণত গ্রামের যে কলের পানি থাকে সেই পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এর মাঝে ব্যাকটেরিয়া এবং রোগ জীবাণু প্রচুর পরিমাণে থাকে। যদি এই পানি খেতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন কারণ থেকে বলা যেতে পারে যে আপনি ব্রাশ করার সময় খেয়াল রাখবেন, যেন ভালো পানি দ্বারা আপনার কুলি করা যেতে পারে। পানির ভিতরে যদি সমস্যা থাকে সে ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে হবে।

রাস্তাঘাটে বিভিন্ন ধরনের বিক্রেতারা মুখরোচক খাবার বিক্রি করে থাকে। সেই খাবার গুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে খোসা ছাড়ানো খাবার গুলো খাওয়া যাবেনা, এছাড়াও চেষ্টা করবেন আপনি খোসা সহ ফলগুলো খাওয়ার যেগুলো নিজে খোসা ছাড়িয়ে খেতে পারবেন। যেমন কলা, কমলা মাল্টা ইত্যাদি ফল খেতে হবে। এছাড়া সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, যে কোন জায়গায় মলত্যাগ করা যাবে না। কেননা এই মলের মাধ্যমেই কিন্তু ভাইরাসের সৃষ্টি হবে, যার কারণে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া শরীরের প্রবেশ করতে পারে, এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

যেকোনো সবজি কাঁচা, আধা সিদ্ধ করে রান্না করা যাবে না, বিশেষ করে অর্ধ সিদ্ধ মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এর মধ্যে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থাকার সম্ভাবনা থাকে বেশি। তাই মাংস সিদ্ধ করার সময় অবশ্যই ভালো করে সিদ্ধ করতে হবে যেন এর ভিতরে কোন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া না থাকে। মোট কথা হলো আপনাকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং পানি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এছাড়াও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থাকার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এম আর মাহমুদ ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url